পাঠ - ১
ইসলামের ভিত্তি
ইসলাম আল্লাহর দীন। ‘ দীন’ মানে জীবন যাপন পদ্ধতি বা জীবন যাপনের নিয়ম কানুন। সঠিকভাবে জীবন যাপন করার জন্যে আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা মানুষকে ইসলাম নামক জীবন যাপন পদ্ধতি প্রদান করেছেন। ইসলামই আল্লাহর দেয়া এবং আল্লাহর মনোনীত একমাত্র দীন :
(আরবী -------------------------------------------)
অর্থ : ইসলামই আল্লাহর মনোনীত একমাত্র দীন।’(সূরা ৩ আলে ইমরান : আয়াত -১৯ )
সহীহ্ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে,রসূলুল্লাহ সা.বলেছেন :
আরবী ---------------------------------------------------------------------------------------------
অর্থ : ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত।সেগুলো হলো : (১) এই সাক্ষ্য দেয়া যে,আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর দাস ও রসূল, (২) সালাত কায়েম করা, (৩)যাকাত প্রদান করা, (৪) হজ্জ করা এবং (৫) রমযান মাসে রোযা রাখা। (সূত্র :সহীহ বুখারি ও মুসলিম )
প্রথম ভিত্তি পয়লা ভিত্তির প্রথম অংশ হলো : আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই ’ - এই ঘোষণা দেয়া। এই ঘোষণার অর্থ হলো : আমি শুধুমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলার ইবাদত ( অর্থাৎ উপাসনা , আনুগত্য ও দাসত্ব ) করবো এবং তাঁর ছাড়া আর কারো ইবাদত করবো না।
সুতরাং আমাদের সালাত , যাকাত , হজ্জ , রোযা , দু’আ , সাহায্য প্রার্থনা , পশু যবেহ , মান্নত প্রভৃতি ইবাদত শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যে এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে হতে হবে। যে ব্যক্তি এগুলোর কোনো একটি ইবাদত আল্লাহ ছাড়া অন্য করো উদ্দেশ্যে করে , সে আল্লাহর সাথে শিরক করে । অর্থাৎ সে অপরকে আল্লাহর সমকক্ষ বানিয়ে নেয়। অথচ আল্লাহ তা’আলা পরিস্কার নির্দেশ দিয়েছেন : ‘ তোমরা কাউকেও আল্লাহর সমকক্ষ ও সমতুল্য বানিয়োনা , যেহেতু তোমরা প্রকৃত বিষয়ে অবহিত রয়েছো। ’ ( সূরা আল বাকারা : আয়াত - ২২)
আর ‘মুহাম্মদ আল্লাহর দাস ও রসূল ’ এই ঘোষণা প্রদানের অর্থ হলো : মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ সা. আল্লাহর পক্ষ থেকে যে বার্তা ও জীবন ব্যবস্থা নিয়ে এসেছেন , তার প্রতি ঈমান আনা এবং তার ভিত্তিতে জীবন - যাপন করা । আল্লাহর রসূল হিসেবে তাঁর আনুগত্য ও অনুসরণ করা । তিনি যা যা করতে বলেছেন , সেগুলো করা । তিনি যেসব কাজ করতে নিষেধ করেছেন, সেগুলো থেকে বিরত থাকা । তাঁর দেখানো ও প্রতিষ্ঠিত পন্থায় আল্লাহর ইবাদত করা । তাছাড়া একথার প্রতি ঈমান রাখা যে ,তিনিই আল্লাহর সর্বশেষ নবী , তাঁর পরে আর কোনো নবী আসবে না।
দ্বিতীয় ভিত্তিপ্রথম ভিত্তির পর ইসলামের দ্বিতীয় ভিত্তি হলো সালাত । সালাত দীন ইসলামের স্তম্ভ । সহীহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে , রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন : সালাত ত্যাগ করলে বান্দা এবং শিরক ও কুফরির মধ্যে কোনো ব্যবধান থাকেনা। ( সূত্র : সহীহ মুসলিম , জাবির রা. কর্তৃক বর্ণিত )
এ বইতে আমরা ইসলামের দ্বিতীয় ভিত্তি সালাত সম্পর্কেই আলোচনা করবো।
কা’বা শরীফ ( চিত্র : কা’বা শরীফ) এ হলো কা’বা শরীফ্ কা’বা মক্কায় অবস্থিত । কা’বার দিকে ফিরে সালাত আদায় করতে হয়। সারা পৃথিবীর মুসলিমরা কা’বার দিকে ফিরে সালাত আদায় করেন।
পাঠ - ২
সালাত কায়েম করো
সালাতের গুরুত্ব: প্রত্যেক ঈমানদার মুসলিম নারী পুরুষের জন্যে সালাত আদায় করা ফরয।আল্লাহ তা’আলা নির্দেশ দিয়েছেন :
(আরবী -----------------------------)
অর্থ : সালাত কায়েম করো।’( সূরা ২ আল বাকারা :আয়াত -১১০ )
আল্লাহর তা’আলা আরো বলেছেন :
(আরবী ----------------------------------------)
অর্থ : অবশ্যি সময়মতো সালাত আদায় করা মুমিনদের উপর ফরয করে দেয়া হয়েছে। (সূরা ৪আন নিসা :আয়াত -১০৩)
মহান আল্লাহ আল কুরআনে অনেক বার সালাত আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে মুমিনদের জন্য সালাত সবচেয়ে বড় ফরয ইবাদত।। সালাত ত্যাগ করা কুফরি। রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন :
কোনো ব্যক্তির কুফুরিকে নিমজ্জিত হবার পথ হলো সালাত ত্যাগ করা। (মুসলিম শরীফ )
তিনি আরও বলেছেন :‘যে ব্যক্তি সালাত ত্যাগ করলো সে কুফরি করলো।’(তিরমিযি শরীফ)
সালাতের সুফলসালাত কায়েম করলে দুনিয়াতেও ভালো মানুষ হওয়া যায়। আবার সালাত আদায়ের মাধ্যমে আখিরাতের সফলতাও অর্জন করা যায়। আল্লাহ তা’আলা বলেন :
(আরবী ---------------------------------------)
অর্থ :‘সফল হলো সেই সব মুমিন ,যারা বিনয়ের সাথে সালাত আদায় করে।’(সূরা মু’মিনুন: আয়াত ১-২ )
রাসূল সা.বলেছেন :‘আল্লাহর কাছে বান্দার সবচেয়ে প্রিয় আমল হলো সময়মতো সালাত আদায় করা।’তিনি আরো বলেছেন : সালাত জান্নাতের চাবি।’
মসজিদ বানাওসালাতের সময় হলে মসজিদে সমবেত হওয়া এবং জামাতের সাথে সালাত আদায় করা আল্লাহর পাক মুসলমানদের কর্তব্য করে দিয়েছেন।এ উদ্দেশ্যে আল্লাহ এবং তাঁর রসূল মুমিনদেরকে মসজিদ নির্মাণ করতে বলেছেন। মসজিদ মানে -আল্লাহকে সিজদা করার জায়গা। প্রিয় নবী সা.বলেছেন :
‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একটি মসজিদ বানায়, আল্লাহ তার জন্য বেহেশতে একটি ঘর বানান।’(বুখারি শরীফ )
আযান দাওআযান মানে- আহ্বান করা বা ডাকা।
সালাতের সময় হলে সালাতের জন্য আযান দেয়া ইসলামের একটি জরুরি কাজ। যিনি আযান দেন তাঁকে বলা হয় -মুয়াজ্জিন। কিয়ামতের দিন মুয়াজ্জিনকে আল্লাহ পাক অনেক মর্যাদা দান করবেন।
কয়েকটি বাক্য উচ্চারণ করে আযান দিতে হয়।সেগুলো হলো :
(আরবী -------------------------)
অর্থ :আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ।(৪বার )
(আরবী --------------------------------------------)
অর্থ :আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া আর কোনা হুকুমদাতা নেই।(২ বার )
(আরবী -------------------)
অর্থ :আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মদ আল্লাহর রসূল।( ২ বার )
(আরবী -------------------------------)
অর্থ : সালাতের দিকে আসো।( ২ বার )
(আরবী -------------------------------------------------------------)
অর্থ :সাফল্য অর্জনের কাজে আসো। (২ বার )
(আরবী ---------------------------------------------)
অর্থ : ঘুমের চেয়ে সালাত ভালো । (২ বার ফজর সালাতে )
(আরবী ---------------------------------)
অর্থ :আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ। (২ বার )
(আরবী ----------------------------------------------------------)
অর্থ :আল্লাহ ছাড়া কারো হুকুম মানা যায়না। (১ বার ) আযান শুনামাত্র কাজকর্ম ও ঘুম ত্যাগ করে নামাযের জন্য প্রস্তুতি নেয়া প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অবশ্য কর্তব্য।
পাঠ -৩
সালাতের শর্তসমুহসালাত সহীহ -শুদ্ধ হবার জন্যে কিছু শর্ত আছে। নিম্নোক্ত শর্তসমূহ পূরণ হওয়া ছাড়া সালাত আদায় হয়না:
১. ইসলাম ।অর্থাৎ -সালাত আদায়কারীকে মুসলিম হতে হবে।কাফিরের সালাত নেই।
২. মানসিক সুস্থতা।কারণ,পাগল ও অজ্ঞানের সালাত নেই।
৩. মুসল্লি নাপাক থাকলে গোসল করে পাক হওয়া।
৪. অযু করা ।
৫. পোশাক পাক -পবিত্র হওয়া।
৬. গোপন অংগসমূহ ঢেকে নেয়া।পুরুষের গোপন অংগ হলো নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত।মহিলাদের গোপন অংগ হলো : হাত -পায়ের তালু এবং মুখমন্ডল ছাড়া পুরো শরীর।
৭. সালাত আদায়ের জায়গা পাক হওয়া।
৮. ওয়াক্ত (সময় )হওয়া।পাঁচ ওয়াক্ত সালাতেরই সময় নির্ধারিত আছে।
৯. কিবলামুখী হওয়া।মক্কায় অবস্থিত কা’বা শরীফ আমাদের কিবলা।
১০. মনে মনে আল্লাহর জন্যে সালাত আদায়ের নিয়্যত বা সংকল্প করা।
সালাত শুরু করার আগে এই শর্তগুলো পূরণ হওয়া জরুরি।
পাঠ -৪
সালাতের জন্য পবিত্রতা অর্জন
হদস্ ও পবিত্রতাকোনো মুসলিম যখন সালাত আদায়ের উদ্যোগ গ্রহণ করে,তখন তাকে অবশ্যি দৈহিকভাবে পবিত্র হয়ে নিতে হয়।
দৈহিক পবিত্রতা বলতে বুঝায় মুসল্লির দেহ হদস্ থেকে মুক্ত হওয়া।হদস্ মানে দৈহিক অপবিত্রতা।
‘হদস্’দুই প্রকার।যথা:
১.লঘু হদস।
২.গুরু হদস্ ।
১.লঘু হদস্ হলো সেগুলো , যেগুলো সংঘটিত হলে অযু করা ফরয হয়ে পড়ে। যেমন : দুটি নির্গমন পথ দিয়ে , মূত্র , বায়ু নির্গত হওয়া ।
২. গুরু হদস হলো সেগুলো , যেগুলো সংঘটিত হলে গোসল করা ফরয হয়ে পড়ে যেমন : স্বপ্নদোষ , সহবাস , হায়েয , কিংবা নিফাস।
গোসলগোসল মানে পবিত্র পরিচ্ছন্ন পানি দিয়ে পুরো শরীর ধৌত করা। গোসলের জন্যে চুল থেকে নিয়ে পুরো শরীরে পানি প্রবাহিত করা বা পুরো শরীর ধুইয়ে নেয়া জরুরি।
গোসল করার নিয়মদেহকে হদস থেকে পবিত্র করার মানসিক সংকল্প (নিয়্যত )নিয়ে গোসলের জন্যে প্রস্তুতি হও । সুন্নত পদ্ধতি হলো : শুরুতে তোমার দু’হাত (কব্জি পর্যন্ত) তিনবার করে ধুইয়ে নাও। তারপর তোমার লজ্জাস্থানকে ভালোভাবে দুইয়ে পরিস্কার করে নাও। অতপর সালাতের জন্যে যেভাবে অযু করতে হয় , সেভাবে অযু করো।
এবার মাথায় তিন আঁজলা পরিমাণ পানি দাও এবং হাতের আঙ্গুল দিয়ে ঘষে চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছে দাও।
উপরের কাজগুলো সম্পন্ন হবার পর পুরো শরীরে পানি ঢেলে দাও। পানি পৌঁছে দাও পুরো শরীরের সবখানে। পুকুর বা নদীতে নেমেও গোসল করে নিতে পারো।
ব্যাস , সম্পন্ন হয়ে গেলো গোসলের কাজ। এভাবে গোসল করার মাধ্যমে শরীর পবিত্র পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়। এর মাধ্যমে দৈহিক ও মানসিক তৃপ্তি এবং সুস্থতা অর্জিত হয়। তাছাড়া এটি একটি ইবাদত , যার মাধমে আল্লাহ তা’আলার নৈকট্য অর্জিত হয়।
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সা. বলেছেন :
‘পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক’।
পাঠ -- ৫
অযু আল্লাহ তা’আলা বলেন :
‘হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা সালাতের জন্যে প্রস্তুতি নেবে , তখন তোমাদের মুখমন্ডল এবং দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধুইয়ে নাও , মাথা মাসেহ করে নাও এবং টাখনু পর্যন্ত দুই পা ধুইয়ে নাও , (সূরা আলা মায়িদা : আয়াত ৬)
এই আয়াতে কারিমা দ্বারা সালাত আদায় করার জন্যে অযু করে নেয়া ফরয বলে প্রমাণিত । অযু করা ছাড়া সালাত বৈধ হয়না , বাতিল হয়ে যায়। আল্লাহ তা’আলা বিনা অযুর সালাত কবুল করেননা।
অযু করবে কিভাবে? মনে মনে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে অযু করার সংকল্প (নিয়্যত) করো। আল্লাহর নামে আরম্ভ করো। মনোযোগের সাথে নিচের ছবিটি দেখো:
(চিত্র - ১) (চিত্র -- ২) আনাস অযু করার উদ্দেশ্যে ‘বিসমিল্লাহির ঐ রাহমানির রাহীম ’ বলে হাত ধয়ে নিচ্ছে -বলো : বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম ( পরম দয়ালু ও পরম করুণাময় আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি)।
এসময় দুই হাত কব্জি পর্যন্ত তিনবার করে ধুইয়ে নাও।
- ডান হাতে করে মুখের ভিতর পানি দাও এবং গড়গড়া করে কুল্লি করো। এমনটি তিন বার করো।
(চিত্র - ১) (চিত্র - ২) আনাস ডান হাতে করে পানি নিয়ে কুল্লি করছে, সুমাইয়া ডান হাতে করে পানি নিয়ে কুল্লি করছে - ডান হতে করে পানি নিয়ে নাকে পানি দাও । বাম হাতে নাক পরিস্কার করো। এভাবে তিনবার নাক পরিস্কার করো।
(চিত্র - ১)আনাস পরিস্কার করছে (চিত্র - ২) সুমাইয়া নাম পরিস্কার করছে - মুখমন্ডল ধৌত করো - তিনবার । পুরো মুখমন্ডলে নিশ্চিতভাবে পানি পৌঁছে দাও।
(চিত্র- ১) আনাস মুখমণ্ডল ধৌত করছে (চিত্র - ২ ) সুমাইয়া মুখমণ্ডল ধৌত করছে - ডান হাত কনুইসহ তিনবার ধৌত করো।
(চিত্র - ১) আনাস ডান হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করছে (চিত্র - ২) সুমাইয়া ডান হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করছে। - অতপর বাম হাত কনুইসহ তিনবার ধৌত করো।
(চিত্র -১ ) আনাস বাম হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করছে (চিত্র- ২) সুমাইয়া বাম হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করছে - এবার মাতা মাসেহ করো। হাতে পানি নাও এবং মাথার সামনে থেকে পেছনের দিকে মাসেহ করো।
আনাস মাথা মাসেহ করছে সুমাইয়া মাথা মাসেহ করছে - মাথা মাসেহ শেষ করে দুই কানের ভেতর এবং বাইরে দিকে মুছে নাও শাহাদাত আংগুল এবং বুড়ো আংগুল দিয়ে।
আনাস দুই হাত দিয়ে তার দুই কান মাসেহ করছে সুমাইয়া দুই হাত দিয়ে তার দুই কান মাসেহ করছে -এবার টাখনুসহ ডান পা ধুইয়ে নাও - তিনবার
আনাস টাখনুসহ ডান পা ধৌত করছে সুমাইয়া টাখনুসহ ডান পা ধৌত করছে -অতপর একইভাবে বাম পা ধুইয়ে নাও - তিনবার
আনাস টাখনুসহ বাম পা ধৌত করছে সুমাইয়া টাখনুসহ বাম পা ধৌত করছে এবার অযুর সব কাজ শেষ হলো ।
ধারাবাহিকতা ও ডান থেকে শুরু করা অযুর একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত হলো - ডান দিক থেকে শুরু করা । অর্থাৎ ডান অংগ থেকে শুরু করো এবং বাম অংগে শেষ করো। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত হলো তরতিব বা ধারাবাহিকতা রক্ষা করা।
অযু নষ্ট হয় কেন ? নিম্নোক্ত কারণ গুলো ঘটলে অযু নষ্ট হয়ে যায় এবং নতুন করে অযু করা জরুরি হয়ে পড়ে :
১. প্রশ্রাব কিংবা পায়খানার রাস্তা দিয়ে মল , মূত্র , বায়ু বা অনুরূপ কিছু নির্গত হলে।
২. গভীর নিদ্রায় মগ্ন হয়ে পড়লে।
৩. যে কোনো কারণে অজ্ঞান হয়ে পড়লে ।
তাইয়াম্মুম ( অযুর বিকল্প ব্যবস্থা )নিম্নোক্ত আয়াত দ্বারা তাইয়াম্মুম শরীয়ত সম্মত বলে প্রমাণিত : “তোমরা যদি রোগগ্রস্ত হয়ে পড়ো, কিংবা সফরে থকো , অথবা তোমাদের কেউ যদি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে এসে থাকে , কিংবা স্ত্রীর সান্নিধ্যে গিয়ে থাকে এবং এমতাবস্তায় অযু বা গোসল করার জন্যে ) পানি না পাও , তবে পাক মাটি দিয়ে তাইয়াম্মুম করো। পাক মাটিতে হাত মেরে মুখমণ্ডল এবং দুই হাত মাসেহ করে নাও।”( সূরা আন নিসা : আয়াত - ৪৩)
এ আয়াত থেকে একথাও পরিস্কার হয়ে গেলো যে , তাইয়াম্মুম কেবল তখনকার জন্যেই বিকল্প ব্যবস্থা যখন পানি পাওয়া না যায় , কিংবা পানি ব্যবহার করা না যায়।
তাইয়াম্মুম করবে কিভাবে ?তুমি যদি সফরে থাকো এবং অযু করার জন্যে পানি না পাও , কিংবা অসুস্থতার কারণে পানি ব্যবহার করে গোসল বা অযু করলে যদি তোমার ক্ষতি হবার আশংকা থাকে , সে অবস্থায় তাইয়াম্মুম করবে। তাইয়াম্মুম করার নিয়ম হলো :
পবিত্র পরিচ্ছন্ন মাটিতে দুই হাতের তালু একবার মেরে নিয়ে মুখমন্ডল এবং আরেকবার মেরে দুই হাত কনুই পর্যন্ত মাসেহ করে নাও। ব্যাস , এবার সালাত আদায় করো।
পাঠ - ৬
সালাতের সময় ও রাকাত সংখ্যা
১.ফজর সালাত রাকাত সংখ্যা : ২ রাকাত ।
সময় : ভোর রাতে পূবাকাশে অন্ধকার ছিন্ন করে যখন সাদা রেখা দেখা দেয় , তখন থেকে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত। কোন কারণে ঘুম থেকে জেগে উঠতে যদি দেরি হয় এবং যদি জেগে দেখো সূর্য উঠে গেছে , তবে দেরি না করে সাথে সাথে সালাত আদায় করে নাও।
কোনো কারণে আল্লাহর নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করতে না পারলে পরে পড়াকে ‘ কাযা ’ বলা হয়। কাযা মানে ফউত ( বাদ ) হয়ে যাওয়া সালাত পূর্ণ করা।
২. যুহর সালাতরাকাত সংখ্যা : ৪ রাকাত ।
সময় : দুপুরে সোজা মাথার উপরের সূর্য পশ্চিম দিকে হেলার সাথে সাথে যুহরের সময় শুরু হয় এবং আসরের পূর্ব পর্যন্ত থাকে।
৩. আসর সালাতরাকাত সংখ্যা : ৪ রাকাত ।
সময় : যখন কোনো কিছুর ছায়া তার দ্বিগুণ ছাড়িয়ে যায় , তখন থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
৪. মাগরিব সালাত রাকাত সংখ্যা : ৩ রাকাত।
সময় : সূর্যাস্তের পর থেকে পশ্চিম আকাশের লাল রেখা নিঃশেষ হয়ে যাওয়া পর্যন্ত । সময় সংক্ষিপ্ত হবার কারণে মাগরিব সালাত সূর্যাস্তের পরপর আদায় করাই উত্তম।
৫. ইশা সালাত রাকাত সংখ্যা : ৪ রাকাত।
সময় : পশ্চিম আকাশের লাল রেখা বিলীণ হয়ে যাবার পর থেকে ভোরের আকাশে সাদা রেখা দেখা দেবার পূর্ব পর্যন্ত।
প্রতিদিনের সালাত ফজর যোহর আসর মাগরিব ইশা ২ রাকাত ৪ রাকাত ৪ রাকাত ৩ রাকাত ৪রাকাত
পাঠ - ৭
ফরযের আগে পরে সুন্নত সালাত রসূলুল্লাহ সা. পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাতের আগে পরে দশ বা বার রাকাত নফল সালাত আদায় করতেন। তিনি এই সালাতগুলো প্রায় নিয়মিত আদায় করতেন। তাই এগুলো আদায় করা সুন্নত।
এই সালাতগুলো হলো :
-ফজরের আগে ২ রাকাত।
-যুহরের আগে ২ বা ৪ রাকাত ।
-যুহরের পরে ২ রাকাত।
-মাগরিবের পরে ২ রাকাত।
-ইশার পরে ২ রাকাত ।
- জুমার পরে ২ রাকাত বা ৪ রাকাত।
-ফরয সালাতের সাথে এই সুন্নত সালাতগুলো আল্লাহর নৈকট্য অর্জন এবং জান্নাতের মর্যাদা সহায়ক।
-এই সালাতগুলো ফরয সালাতকে পূর্ণতা দান করে।
-রসূলুল্লাহ সা. এই সালাতগুলো আদায় করার জন্যে সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছেন।
-সুন্নত সালাত ঘরে পড়া উত্তম। তবে মসজিদেও পড়া যায়।
পাঠ -- ৮
সালাতের আরকান ও ওয়াজিবসমূহ
সালাতের আরকারসালাতের মধ্যে যে বিষয়গুলো ফরয বা অবশ্য করণীয় , সেগুলোই সালাতের আরকান। এগুলো সালাতের স্তম্ভ। এর কোনটি সঠিকভাবে আদায় না হয়ে সালাত বাতিল হয়ে যাবে এবং পুনরায় সালাত আদায় করতে হবে। এই হলো সালাতের আরকান :
১. কিয়াম : কিয়াম মানে সালাতের জন্যে দাঁড়ানো। আল্লাহর নির্দেশ হলো:
সালাতসমূহের হিফাযত করো , বিশেষ করে মধ্যবর্তী সালাতের ; আর আল্লাহর সামনে অনুগত দাসের মতো দাঁড়াও । (সূরা আল বাকারা : আয়াত - ২৩৮)
অসুস্থতা বা অন্য কোনো অসুবিধার কারণে দাঁড়াতে না পারলে সে অবস্থায় বসে বা শুয়ে সালাত আদায় করা যায় ।
২. ‘আল্লাহু আকবার ’ বলে সালাত আরম্ভ করা। এই তাকবীরকে বলা হয় ‘ তাকবীরে তাহরীমা’ । রসূল সা. বলেছেন : সালাতের চাবি হলো পবিত্রতা । ‘ তাকবীর ’ সালাতের বাইরের হালাল কাজগুলো সালাতের মধ্যে হারাম করে দেয়। আর সেগুলোকে পুনরায় হালাল করে দেয় ‘ সালাম’ (আবু দাউদ , তিরমিযী)
৩. সূরা ফাতিহা পাঠ করা । রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন : যে ব্যক্তি সূরা ফতিহা পাঠ করেনি , তার সালাত হয়নি। (বুখারি , মুসলিম) তবে ইমাম উচ্চস্বরে পাঠ করার সময় ইমামের পাঠ শুনলেই চলে।
৪. রুকূ করা।
৫. রুকূ থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানো ।
৬. সাজদা করা। প্রতি রাকাতে দুটি সাজদা করতে হবে ।হে আল্লাহ তা’আলা বলেন “ হে ঈমানদার লোকেরা ! তোমরা রুকু করো এবং সাজদা করো। ’ (সূরা আল হজ্জ : আয়াত ৭৭ )
৭. দুই সাজদার মাঝখানে সোজা হয়ে বসা।
৮. শেষ তাশাহহুদের বৈঠক। অর্থাৎ শেষ রাকাত শেষ করে বসা এবং তাতে তাশাহহুদ পাঠ করা।
৯. তারতীব। অর্থাৎ সালাতের আরকান আহকাম পালনে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা।
১০. প্রশান্তি । সালাতের প্রতিটি আরকান প্রশান্তির সাথে পালন করা।
১১. ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ’ বলে সালাত শেষ করা।
সালাতের ওয়াজিবসমূহ১. তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া উঠা - বসার বাকি তাকবীরসমূহ উচ্চারণ করা ।
২. সূরা ফাতিহার সাথে ( প্রথম দুই রাকাতে ) কুরআনের কিছু অংশ পাঠ করা।
৩. প্রথম তাশাহহুদের বৈঠক। অর্থাৎ তিন ও চার রাকাতের সালাতে দুই রাকাত পর বসা এবং তাতে তাশাহহুদ পাঠ করা।
৪. রুকূতে ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম , পাঠ করা।
৫. রুকূ থেকে দাঁড়াবার সময় ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ্’ এবং ‘রাব্বানা অলাকাল হামদ ’ বলা।
৬. সাজদায় ‘ সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা ’ পাঠ করা। ভুল বশত কোনো ওয়াজিব ছুটে গেলে সালামের পূর্বে ‘ ভুলের সাজাদা ’ ( সাহু সাজদা ) দিতে হবে।
পাঠ - ৯
সালাত আদায়ের ধারাবাহিক পদ্ধতি
পদ্ধতির গুরুত্ব :আমাদের প্রিয় রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন :
আরবী ------------------------------------------------------
অর্থ : তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখেছো , ঠিক সেভাবে সালাত আদায় করো। ’ ( সহীহ বুখারি ) আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্ম্দ সা. যেভাবে সালাত আদায় করেছেন এবং যেভাবে আদায় করতে বলে গেছেন,আমাদেরকে ঠিক সেভাবেই সালাত আদায় করতে হবে।
নিয়মের ধারাবাহিকতাকে বলা হয় তরতীব। সালাত আদায়ে তরতীব রক্ষা করা ফরয।
এখানে সালাত আদায়ের ধারাবাহিক নিয়ম পেশ করা হলো।এখানে সালাত আদায়ের ধারাবাহিক নিয়ম পেশ করা হলো এখান থেকে আমরা জানতে পারবো সালাতের আরকান আহকাম কোন্টির পর কোনটি ?
সালাতের ধারাবাহিক নিয়ম বা পদ্ধতিসালাত আদায়ের ধারাবাহিক পদ্ধতি হলো :
১.সময় অনুযায়ী সালাত আদায় করা।
২.দৈহিক পাক পবিত্র হওয়া।
৩. অযু করা।
৪. পরিধানের কাপড় চোপড় পাক থাকা।
৫.সালাতের জায়গা পাক থাকা।
৬. সতর ঢাকা।
৭. নিয়্যত করা। (নিয়্যত মানে এখন কোন ওয়াক্তের কোন সালাত আদায় করবো মনে মনে তা স্থির করা।)
৮. কা’বা শরীফের দিকে মুখ করে দাঁড়ানো ।
৯. “আল্লাহু আকাবার ’বলে সালাত শুরু করা।এটিকে ‘তাকবীরে তাহরীমা’বলা হয়।
১০. বুকে বা নাভিতে হাত বাঁধা।
১১.সানা পড়া।
১২.‘আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম’পড়া।
১৩.‘বিসল্লাহির রাহমানির রাহীম’পড়া।
১৪.সূরা ফাতিহা পড়া।
১৫.সূরা ফাতিহা শেষ করে ‘আমীন’ বলা।
১৬.সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরা বা কিরাত পড়া।
১৭.‘আল্লাহু আকবার’বলে রুকূ করা।
১৮.রুকূতে তাসবীহ পড়া (সূবহানা রাব্বিয়াল আজিম )
১৯.‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ’বলে থেকে উঠা।
২০.রুকূ থেকে উঠে ‘রাব্বানা হামদ’বলে কিছুক্ষণ স্থির হয়ে দাঁড়ানো।
২১.‘আল্লাহু আকবার’ বলে সাজদায় যাওয়া।
২২.সাজদায় নাক,কপাল,দুই হাঁটু,দুই হাতের তালু ও দুই পায়ের পাতার অগ্রভাগ যমীনে স্থাপন করা।
২৩.সাজদায় তাসবীহ পড়া (সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা )।
২৪.‘আল্লাহু আকবার’বলে সাজদা থেকে উঠে কিছুক্ষণ বসা।
২৫.প্রথমটির মতো আরেকটি সাজদা করা।
২৬.দুই সাজদার মাঝ খানে আল্লাহর কাছে দোয়া করা ও ক্ষমা চাওয়া।
২৭.দ্বিতীয় সাজদা শেষ করে ‘আল্লাহু আকবার ’বলে সোজা হয়ে দাঁড়ানো।
২৮.প্রথম রাকাতের মতোই সূরা ফাতিহা,কিরাত,রুকু ও সাজাদা সহ দ্বিতীয় রাকাত আদায় করা।
২৯.দ্বিতীয় রাকাতে দুই সাজদা শেষ করে উঠে বসা এবং বসে আত্তাহিয়্যাতু .... পড়া।
৩০.চার রাকাত বা তিন রাকাতের নামায হলে ‘আত্তাহিয়্যাতু শেষ করে ‘আল্লাহু আকবার’বলে দাঁড়ানো।
৩১.বাকি রাকাতগুলো প্রথম দুই রাকাতের মতো আদায় করা। তবে সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরা বা কিরাত পড়ার প্রয়োজন নেই।
৩২. শেষ বৈঠকে ‘ আত্তাহিয়্যা ’ এবং নবীর প্রতি ‘ দরূদ’ পাঠ করা।
৩৪ .সালাম ফেরানেরা পূর্বে দোয়া করা।
৩৫. ‘ আসসালুমু আলাইকুম ওয়ারাহ মাতুল্লাহ’ বলে ডান ও বাম দিকে সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করা।
পাঠ -- ১০
সালাতে যা যা পাঠ করতে হয়সালাতের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার তসবীহ এবং দোয়া যিকির রয়েছে। সেগুলো মুখস্থ করা এবং যথাস্থানে পাঠ করা জরুরি। এখানে সেগুলো জানিয়ে দেয়া হলো :
১ . তকবীর : সালাতের শুরু এবং উঠানামার সময় বলতে হয় :
আরবী -----------------------------------
অর্থ : আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ । ’
২ . সানা : তাকবীর তাহরীমার পরে পাঠ করতে হয়।
আরবী ---------------------------------------------------------------------
অর্থ : হে আল্লাহ !সমস্ত দোষ -ত্রুটি থেকে তুমি মুক্ত। আমি তোমারই প্রশংসা করি। মহান তোমার নাম। সবার উপরে তোমার শান। আর তুমি ছাড়া কোনো ইলাহ্ নাই।
রুকুর তসবীহ :আরবী----------------------------------------------------------
অর্থ : আমার মহান প্রভু সকল দোষ - ত্রুটি থেকে পবিত্র।’
রুকু থেকে দাঁড়াবার তসবীহ : আরবী -----------------------------------------------------------------------------
অর্থ : আল্লাহ শুনেছেন তাঁর বান্দা কার প্রশংসা করেছে ?’
এবং আরবী ---------------------------------
অর্থ : হে প্রভু !সমস্ত প্রশংসা তোমার ।
সাজাদার তসবীহ :আরবী -------------------------------------------------------------------------------
অর্থ : আমার মহান প্রভু সকল ত্রুটি থেকে পবিত্র।
দুই সাজদার মধ্যবর্তী দু’আ:আরবী -----------------------------------------------------------------------
অর্থ : আয় আল্লাহ ! আমাকে মাফ করে দাও,আমার প্রতি দয়া করো,আমাকে সঠিক পথে চালাও,আমাকে সুস্থ রাখো এবং আমাকে জীবিকা দান করো।’
তাশাহ্হুদআরবী ----------------------------------------------------------------------------------
অর্থ : সমস্ত সম্মানজনক সম্বোধন আল্লাহর জন্যে।সমস্ত শান্তি কল্যাণ ও পবিত্রার মালিক আল্লাহ।হে নবী !আপনার প্রতি শান্তি,আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।আমাদের প্রতি এবং আল্লাহর সকল নেক বান্দার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক।আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি - আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই।আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মদ আল্লাহর দাস এবং রসূল।’
দরূদআরবী ----------------------------------------------------------------------------------------
অর্থ : হে আল্লাহ !তুমি মুহাম্মদের প্রতি এবং মুহাম্মদের অনুসারীদের প্রতি রহমত বর্ষণ করো,যেমন করে তুমি ইবরাহিম ও তাঁর অনুসারীদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেছিলে । নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও মহাসম্মানিত। হে আল্লাহর !তুমি মুহাম্ম্দ এবং তাঁর অনুসারীদের প্রতি কল্যাণ নাযিল করো,যেমন করে ইবরাহিম ও তাঁর অনুসারীদের প্রতি কল্যাণ নাযিল করেছিলে।’
দু’আ কনূতআরবী -----------------------------------------------------------------------------------------
অর্থ : হে আল্লাহ,তুমি যাদেরকে সঠিক পথ দেখিয়েছো,আমাকে সঠিক পথ দেখিয়ে তাদের অন্তর্ভুক্ত করো ! যাদেরকে তুমি ক্ষমা ও সুস্থতা দান করেছো,আমাকেও ক্ষমা এবং সুস্থতা দান করে তাদের অন্তর্ভুক্ত করো।তুমি যাদের অভিভাবক হয়েছো,আমাকেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করো !তুমি আমাকে যা কিছু প্রদান করেছো,তাতে বরকত (প্রচুর্য )দান করো।তোমার মন্দ ফারসালা থেকে আমাকে রক্ষা করো। তুমিই তো প্রকৃত ফায়সালাকারী,আর তোমার উপর কারো ফায়সালাই চলেনা।তুমি যার অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছো,তাকে কেউ অপদস্ত করতে পারেনা।যে তোমার শত্রু হয়েছে তকে ইয্যত দান করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়।আমাদের প্রভ বিরাট প্রাচুর্যশীল তুমি,অতিশয় মহান তুমি !’
তাশাহহুদ ও দরূদের পরের দোয়াআরবী ----------------------------------------------------------------------
অর্থ :আয় আল্লাহ!(কিয়ামতের দিন )আমার হিসাব নিও সহজ করে।’
সালাম :আরবী --------------------
অর্থ : আপনদের প্রতি শান্তি এবং আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।’
সালামের পরে করণীয়সালামের পর রসূল সা. প্রথমে একবার ‘আল্লাহু আকবার’ পাঠ করে তিন বার আসতাগফিরুল্লাহ (অর্থ :আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই )পাঠ করতেন।
তারপর বলতেন :
আরবী ------------------------------------
অর্থ :হে আল্লাহ !তুমিই শান্তির উৎস।তোমার থেকেই শান্তি আসে।হে অতি মহান !মর্যাদার অধিকারী অতিশয় কল্যাণময় তুমি।’অতপর তিনি নিম্নরূপ যিকির করতে পারামর্শ দিয়েছেন :
৩৩ বার আরবী ----------সুবহানাল্লাহ।
৩৩ বার আরবী -------- আল হামদুলিল্লাহ ।
৩৪ বার আরবী-------- আল্লাহু আকবার।
তাছাড়া সালামের পর তিনি ১০ বার পড়তেন :
আরবী --------------------------------------------------------
অর্থ :‘আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই।তিনি একক।তাঁর কোনো শরীক নেই।সমগ্র সম্রাজ্য তাঁর।এবং তিনি সর্ব শক্তিমান।’
পাঠ -১১
সালাত আদায়ের সচিত্র পদ্ধতিসালাতের প্রস্তুতিমূলক শর্তসমূহ পূর্ণ করার পর এবার তুমি কিবলামুখী হও এবং আল্লাহর প্রতি মনোযোগী হও।তার পর এভাবে সালাত আদায় করো :
তাকবীরে তাহরীমা ‘আল্লাহু আকবার’বলে সালাত আরম্ভ করো।আল্লাহ আকবার বলার সময় দুই হাত কান বা ঘাড় পর্যন্ত উঠাও।এই তাকবীরকে ‘তাকবীরে তাহরীমা’বলা হয়।
চিত্র : ১. আনাস কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে ‘তাকবীরে তাহরীমা’বলছে। চিত্র: ২.সুমাইয়া কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে ‘তাকবীরে তাহরীমা’ বলেছ।
সানা পাঠ তাকবীরে তাহরীমার মাধ্যমে সালাত শুরু করার পর দুই হাত বুকে অথবা নাভীতে রাখো।বাম হাতের উপর ডান হাত রাখবে।এর পর সানা পাঠ করো।
সূরা ফাতিহা এবং কুরআনের আরো কিছু অংশ পাঠ সানা পাঠ শেষে ‘আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম’এবং ‘বিসমিল্লাহির রাহীম’পড়ো এবং তারপর সূরা ফাতিহা পাঠ করো। সূরা ফাতিহা পাঠ শেষে বলো : আমীন (হে আল্লাহ কবুল করো )।সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর তোমার স্মৃতি (মুখস্থ ) থেকে কুরআনের কিছু অংশ (সূরা বা আয়াত )পাঠ করো।
চিত্র :৩.আনাস সালাতে সূরা ফাতিহা সহ কুরআন পাঠ করছে।চিত্র :৪.সুমাইয়া সালাতে সূরা ফাতিহা সহ কুরআন পাঠ করছে। চার ও তিন রাকাতের সালাতে কেবল পয়লা দুই রাকাতেই সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা বা আয়াত মিলিয়ে পড়বে।
রুকূসূরা ফাতিহা এবং কুরআনের কিছু অংশ পাঠ করার পর ‘আল্লাহু আকবার’বলে রুকূ করো।রুকূতে দুই হাত দিয়ে দুই হাঁটু জাড়িয়ে ধরো এবং তিনবার বলো :সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম।
চিত্র: ৫.আনাস রুকূ করছে। চিত্র :৬.সুমাইয়া রুকূ করছে।
রুকূ থেকে দাঁড়ানোএবার রুকূ থেকে দাঁড়াও।দাঁড়াবার কালে বলো :সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ।সোজা হয়ে দাঁড়াবার পর বলো :রাব্বানা লাকাল হামদ।’
চিত্র :৭.আনাস রুকূ থেকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছে।চিত্র :৮.সুমাইয়া রুকূ থেকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাজদা এবার ‘আল্লাহু আকবার ’বলে মাথা উঠিয়ে বসো।সাজদারত অবস্থায় তিনবার বলো :সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা।
চিত্র :৯.আনাস প্রথম সাজদা করছে ।চিত্র :১০.সুমাইয়া প্রথম সাজদা করছে।
দুই সাজদার মধ্যবর্তী বৈঠক ও দু’আ
এবার ‘আল্লাহু আকবার ’বলে মাথা উঠিয়ে বসো।বাম পায়ের পাতা বিছিয়ে দিয়ে তার উপর বসো,ডান পায়ের পাতা খাড়া করে রাখো এবং বলো :
‘রাব্বিগফির লী ওয়ারহামনী ওয়াহদিনী ওয়া আফিনী ওয়ারযুকনী।’
অর্থ :প্রভু !আমাকে ক্ষমা করে দাও,আমার প্রতি রহম করো,আমাকে সঠিক পথে চালাও,আমার প্রতি কোমল হও এবং আমাকে জীবিকা দান করো।’
চিত্র :১১.আনাস প্রথম সাজদা থেকে সোজা হয়ে বসে দু’আ পাঠ করছে।চিত্র :১২.সুমাইয়া প্রথম সাজদা থেকে সোজা হয়ে বসে দু’আ পাঠ করছে।
দ্বিতীয় সাজদা এবার ‘আল্লাহু আকবার’বলে পূর্বের মতো আরেকটি সাজদা করো।সাজদায় তিনাবার বলো :সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা।’
প্রথম সাজদার মতোই দ্বিতীয় সাজদা করো : চিত্র :১৩.আনাস দ্বিতীয় সাজদা করছে। চিত্র: ১৪.সুমাইয়া দ্বিতীয় সাজদা করছে।
দ্বিতীয় রাকাত দ্বিতীয় সাজদা শেষ করে ‘আল্লাক আকবার ’বলে সোজা হয়ে দাঁড়াও।ব্যাস,তোমার সালাত প্রথম রাকাত শেষ হলো এবং শুরু হলো দ্বিতীয় রাকাত।এবার প্রথম রাকাতের মতোই সূরা ফাতিহা পাঠ করো এবং কুরআনের কিছু অংশ পাঠ করো।
চিত্র :১৫.আনাস দ্বিতীয় রাকাতের জন্যে দাঁড়িয়েছে।চিত্র: ১৬.সুমাইয়া দ্বিতীয় রাকাতের জন্যে দাঁড়িয়েছে। এরপর হুবহু প্রথম রাকাতে মতোই রুকূ করো এবং দুটি সাজদা করো।
তাশাহহুদের বৈঠক দ্বিতীয় রাকাতের সাজদা শেষ করে ঠিক সেভাবে বসো,যেভাবে বসতে হয় দুই সাজদার মাঝখানে।স্থির হয়ে বসার তাশাহহুদ পাঠ করো।
চিত্র:১৭.আনাস তাশাহহুদ পাঠের জন্য বসেছে।চিত্র :১৮.সুমাইয়া তাশাহহুদ পাঠের জন্য বসেছে।
তামাহহুদের দুই বৈঠক সালাত যদি তিন বা চার রাকাতের হয়,তাবে তাশাহহুদ পাঠ শেষ করে ‘আল্লাহু আকবার ’বলে দাঁড়াবে।এই বাকি রাকাতগুলোতে সূরা ফাতিহার পর অন্য সূরা বা কিরাত পড়ার প্রয়োজন নেই।অতপর সব রাকাত শেষ করে দ্বিতীয়বার বসে তাশাহহুদ পাঠ করো।
তর্জনি দ্বারা সাক্ষ্য প্রদানতাশাহহুদ পাঠের সময় সাক্ষ্যদানের স্থানে এলে ডান হাতে ‘শাহাদাতের আংগুল’(তর্জনি )উপরের দিকে উঠিয়ে সাক্ষ্য দাও এবং বলো :
আরবী ------------------------------------------------------------------
চিত্র :১৯.আনাস ‘আশহাদু আনলা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’বলার সময় তর্জনি উঁচু করে আল্লাহর একত্বে সাক্ষ্য দিচ্ছে।চিত্র:২০.সুমাইয়া ‘আশহাদু আনলা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’বলার সময় তর্জনি উঁচু করে আল্লাহর একত্বের সাক্ষ্য দিচ্ছে। অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি,আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই,তিনি এক,তাঁর কোনো শরীক নেই।আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি,মুহাম্মদ আল্লাহর দাস এবং রসূল।
দরূদ পাঠযদি দুই রাকাতের সালাত হয় যেমন ফজর সালাত,তবে প্রথম বৈঠকেই তাশাহহুদের পর নবী করিম সা.এর প্রতি সালাত (দরূদ ) পাঠ করো।
কিন্তু সালাত যদি তিন রাকাতের হয় যেমন মাগরিব কিংবা যদি চার রাকাতের হয়,যেমন যুহর,আসর,ইশা,তবে দরূদ পাঠ করতে হবে দ্বিতীয় বৈঠকে।
দরূদ পাঠের পর দু’আ করোপাঠের পর আল্লাহর কাছে চাও,দু’আ করো.তিনি দান করবেন।একটি দু’আ আমার আগে উল্লেখ করেছি।হাদিসে আরো অনেক দু’আ আছে।
সালাম তাশাহহুদ,দরূদ এবং দু’আ পাঠ শেষে ডান দিকে মাথা ফিরিয়ে বলো : আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।
চিত্র :২১.আনাস ডান দিকে সালাম বলছে। চিত্র :২২.সুমাইয়া ডান দিকে সালাম বলছে। তার পর বাম ফিরে বলো : আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।
চিত্র :২৩.আনসা বাম দিকে সালাম বলছে।চিত্র :২৪.সুমাইয়া বাম দিকে সালাম বলছে। ব্যস ,এবার শেষ হলো তোমার সালাত।
পাঠ -১২
জামাত কায়েম করোআল্লাহ তা’আলা কুরআন মজিদে বলেছেন :আরবী ------------------------- অর্থ :সালাত কায়েম করো।
তিনি আরো বলেছেন :আরবী ---------------------------- অর্থ :রুকূকারীদের সাথে রুকূ করো।
কুরআন মজিদের এসব নির্দেশ অনুযায়ী ফরয সালাত জামাতের সাথে আদায় করা অবশ্য কর্তব্য।রসূলুল্লাহ সা.ফরয সালাত সবসময় জামাতের আদায় করেছেন।
-একাকী আদায় করার চাইতে জামাতে সালাত আদায় করার মর্যাদা সাতাশগুণ বেশি।
-অধিক লোক পাওয়া না গেলে দুজনে একত্রে আদায় করলেও জামাতের মর্যাদা পাওয়া যায়।
-জামাতে সালাত আদায় করার জন্য একজনকে ইমাম (নেতা ) বানাতে হয়। বাকিরা তাকে অনুসরণ করবে।
-ইমাম কে হবেন? হ্যাঁ, ইমাম হবেন তিনি -
ক.যিনি আল্লাহর কিতাব আল কুরআন সম্পর্ক অন্যদের চেয়ে অধিক জ্ঞান রাখেন।
খ. কুরআনের জ্ঞানে সমকক্ষ একাধিক লোক বর্তমান থাকলে,তাদের মধ্যে যিনি রসূলুল্লাহ সা. এর সুন্নাহ সম্পর্কে অধিকতর জ্ঞানে রাখেন,তাকেই ইমাম বানাতে হবে।
গ.এক্ষেত্রেও একাধিক সমকক্ষ ব্যক্তি বর্তমানে থাকলে,তাঁদের মধ্যে যাঁর বয়স বেশি,তাঁকেই ইমাম বানাতে হবে।
-ইমাম পয়লা কাতারের মাঝামাঝি সামনে দাঁড়াবেন।
-ইমাম তাঁর স্থানে দাঁড়াবার পর মুয়াযযিন ইকামত দেবেন।
-ইকামতের পর ইমাম মুসল্লিদের দিকে ফিরে কাতার ( সারি )সোজা করার নির্দেশ দেবেন।
-তারপর ইমাম তাকবীর (আল্লাহু আকবার )বলে সালাত আরম্ভ করবেন।এই পয়লা তাকবীরকে বলা হয় ‘তাকবীরে তাহরীমা’।
-তাকবীরে তাহরীমা মানে সেই তাকবীর যার মাধ্যমে সালাত ছাড়া অন্য সকল কাজ হারাম হয়ে যায়।
-ইমাম তাকবীর বলার পর পরই মুক্তাদিরা তাকবীর বলে সালাতে প্রবেশ করবেন।
-অতপর সবাই ইমামের সাথে সাথে কিয়াম (দাঁড়ানো )রকূ ,সাজদা ,কুঊদ; (বসা) ও সালাম করবেন। কোনো ক্ষেত্রেই মুক্তাদি ইমামকে অতিক্রম করবেন না। অর্থাৎ ইমামের আগে যাবেন না।
-যিনি সালাতের নের্তত্ব দেন তাকে বলা হয় ইমাম।ইমাম মানে নেতা - (Leader )।ইমামকে অনুসরণ করা ওয়াজিব।
-যারা ইমামের সাথে সালাত আদায় করেন,তাদের বলা হয় মুক্তাদি।মুক্তাদি মানে -অনুসারী (follower)।
-মেয়েরা সালাতের জামাতে হাযির হতে পারবে।তবে তাদের জন্যে নিজ ঘরে সালাত আদায় করাই উত্তম।
-মসজিদে যাবার সময় মহিলারা সুগন্ধি ব্যবহার করবে না।
-মহিলাদের জামাতে আসার দুটি হাদিস :
ক. আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন,নবী সা.বলেছেন :তোমাদের মহিলাদেরকে মসজিদে আসতে বাধা দিওনা।
খ.আবু হুরাইরা রা. বলেন,নবী সা.বলেছেন : তোমরা আল্লাহর দাসীদেরকে আল্লাহর মসজিদসমূহে আসতে মানা করোনা।তবে তারা যেনো সুগন্ধি ব্যবহার না করে বের হয়। (সূত্র : আবু দাউদ )
-জামাত কায়েম করতে হয় মসজিদে।
-যেখানে মসজিদ নেই,সেখানে ঘরে,অফিসে,মাঠ,রাস্তা -ঘাঠে,যানবাহনে অর্থাৎ যেকোনো স্থানেই জামাত কায়েম করা যায়।
চিত্র: ২৪.ইমাম সাহেব সালাতের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
পাঠ -১৩
অন্যান্য সালাত
জুমার সালাত-আল্লাহ তা’আলা মুসলিমদের উপর প্রতি শুক্রবার যুহরের পরিবর্তে জুমার সালাত ফরয করেছেন।
-জুমার সালাত আদায় করতে হয় মসজিদে,যেখানে সাধারণ মুসলমানদের উপস্থিত হতে কোনো বাধা নেই।
-জুমার উদ্দেশ্যে মসজিদে এসে দু’রাকাত সুন্নত সালাত আদায় করে ইমামের ভাষণ শোনার জন্যে অপেক্ষা করতে হয়।
-ইমাম যখন ভাষণ (খুতবা ) শুরু করেন,তখন নিরবে মনোযোগের সাথে তাঁর ভাষণ শুনো।তিনি ভাষণ যেসব উপদেশ,নসীহত এবং আদেশ -নিষেধ প্রদান করেন সেগুলো আমল করতে হয়।
-ভাষণ শেষে ইমামের সাথে দুই রাকাত জুমার সালাত আদায় করো।জুমার ফরয সালাত দুই রাকাত।ফরযের পর দুই বা চার রাকাত সুন্নত সালাত আদায় করা উত্তম।
-অন্যান্য ফরয সালাতের মতো জুমার সালাতের মহিলারা উপস্থিত হতে পারে।বরং তাদের উপস্থিত হওয়া উচিত।
-জুমার সালাত আদায় করলে যুহর সালাত আদায় করতে হয় না।
-কোনো কারণে কেউ জুমার সালাতে শরীক হতে না পারলে,তাকে যুহর সালাত আদায় করতে হবে।
-জুমার সালাত সর্ব সাধারনের জন্যে উন্মুক্ত মসজিদ এবং জামাত ছাড়া আদায় হয়না।
বিতর সালাত-বিতর মানে - বিজোড়।বিতর সালাত তিন রাকাত।
-বিতর সালাত তাহাজ্জদের পরে অথবা ইশার পরে আদায় করতে হয়।
-রসূলুল্লাহ সা.এই সালাত নিয়মিত আদায় করতেন।তিনি তাঁর সাথীদেরকেও এই সালাত আদায় করার জন্যে তাকিদ করতেন।
-দুয়েকটি হাদিস থেকে জানা যায়,রসূল সা.বিতর সালাতে দু’আ কুনূত পাঠ করতে বলেছেন।
-তৃতীয় রাকাতে রুকূ থেকে দাঁড়িয়ে,কিংবা রুকূতে যাবার আগে দু’আ কুনূত পাঠ করবে।
তাহাজ্জ্দ সালাত-তাহাজ্জদ মানে রাত জাগা।ঘুম থেকে উঠে রাত জেগে যে সালাত আদায় করতে হয়,তাকে ‘তাহাজ্জদ সালাত’বলে।
-তাহজ্জদের সময় হলো মধ্যরাত থেকে ফজরের আযানের পূর্ব পর্যন্ত
-প্রিয় নবী সা.নিয়মিত তাহাজ্জদ সালাত আদায় করতেন।
-তাহাজ্জদ সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক সৃষ্টি করা যায় এবং আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করা যায়।
-তাহাজ্জ্দ সালাত আদায়করীকে আল্লাহ তা’আলা অনেক অনেক ভালো বাসেন।
ঈদের সালাতপ্রিয় নবী সা.দুই ঈদের সকালে মাঠে গিয়ে সর্ব সাধারণ মুসলমানদের সাথে নিয়ে দুই রাকাত সালাত আদায় করার সুন্নত চালু করে গেছেন। এই সালাতকে বলা ‘ঈদের সালাত’।
-ঈদের সালাতে আযান ও ইকামত নেই ।
-ঈদের সালাতে মহিলারাও শরীক হতে পারে।
-প্রিয় নবী সা.ঈদের সালাতের পরে মুসলমানদের উদ্দেশ্যে উপদেশমূলক ভাষণ দিতেন।
-ঈদের সালাত দুইরাকাত এবং তা সুন্নত বা ওয়াজিব।
সাধারণ নফল সালাত-এই সব নিয়ম করা সালাত ছাড়াও সুযোগ পেলেই নফল সালাত পড়া ভালো।নফল মানে -অতিরিক্ত।নফল সালাত মানে বাধ্য বাধ্যকতা নেই -এমন অতিরিক্ত সালাত।
-নফল সালাতে অনেক নেকী ও সোয়াব রয়েছে ।
- নফল সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করা যায়।
-নফল সালাত আল্লাহর প্রিয় ইবাদত ।
পাঠ - ১৪
কয়েকটি জানার বিষয়
সফর কালের সালাত -তুমি যদি সফরে বের হও,তবে ঘরে ফিরে আসা পর্যন্ত চার রাকাতের সালাত দুই রাকাত আদায় করবে। রাকাত কর্তন করা এই সালাতকে বলা হয় ‘কসর সালাত’।কসর মানে কর্তন করা বা সংক্ষিপ্ত করা।
-সফরকালে যুহর ও আসর এবং মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করা যায়।
-সফরের সময় সুবিধা মতো তুমি যুহরের সাথে আসর,অথবা আসরের সাথে যুহর আদায় করতে পারো।
-একইভাবে মাগরিবের সাথে ইশা,কিংবা ইশার সাথে মাগরিব আদায় করতে পারো।
-সফরকালে সুন্নত পড়া জরুরি নয়।
রোগীর সালাততুমি যদি কখনো অসুস্থ হয়ে পড়ো , তবে সেক্ষেত্রে সালাত আদায়ের পদ্ধতি সহজ করা হয়েছে। তাহলো :
-অযু করতে না পারলে তাইয়াম্মুম করবে।
-দাঁড়াতে না পারলে নিজের বিছানায় বসে আদায় করবে।
-বসতে না পারলে শুয়ে শুয়েই পড়বে।
-রুকূ সাজদা করতে না পারলে ইশারা করে রুকূ সাজদা করবে। তবে রুকূর চাইতে সাজদায় মাথা একটু বেশি ঝুঁকবে।
যেসব কারণে সালাত নষ্ট হয়ে যায় -সালাতের মধ্যে ইচ্ছাকৃত কথা বললে , তা সামান্য হলেও।
-ইচ্ছাকৃতভাবে পুরো শরীর কিবলার দিক থেকে অন্য দিকে ফিরালে।
-পিছনে রাস্তা দিয়ে বায়ূ বের হলে। তাছাড়া যেসব করণে অযু ও গোসল ফরয হয় , তার কোনটি ঘটলে।
-বিনা কারণে অধিক নড়াচড়া করলে ।
-হাসাহাসি করলে।
-নির্ধারিত নিয়মের বাইরে কোনো কাজ অতিরিক্ত করলে। যেমন - রুকূ , সাজদা , রাকাত ও বসার সংখ্যা বাড়িয়ে করলে সালাত বাতিল হয়ে যাবে ।
-ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ব্যাপারে ইমামকে অতিক্রম করলে , যেমন - কিয়াম , রুকূ , সাজদা , উঠা , বসা , তাকবীর তাসলীম ইত্যাদি ইমামের আগে করলে সালাত বাতিল হয়ে যাবে।
-সে ক্ষেত্রে পুনরায় সালাত আদায় করতে হবে।
সাহু সাজদা ( ভুলের সাজদা ) -যেসব কারণে সালাত বাতিল হয়ে যায় , সেগুলো ছাড়া বাকি বড় ধরনের ত্রুটিগুলোর জন্য সাহু সাজদা করলেই সালাত সহীহ হয়ে যাবে।
-কেউ যদি ভুলবশত রুকূ , সাজদা , কিয়াম , কিংবা বৈঠক নির্ধারিত সংখ্যার চাইতে বেশি করে ফেলে , তবে , তাকে সালামের পূর্বে ভুলের সাজদা করতে হবে।
-ভুলবশত সালাতের কোনো ওয়াজিব ছুটে গেলে সাহু সাজদা করতে হবে।
-সাহু সাজদার নিয়ম হলো : তাশাহহুদের পর ডান দিকে একটি সালাম ফিরিয়ে সালাতের অন্যান্য সাজদার মতো দুটি সাজদা করতে হবে তারপর আবার তাশাহহুদ ও দরূদ শেষে সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করতে হবে।
পাঠ - ১৫
সালাতের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি বিষয় সালাত আদায়ের সময় নিম্নের বিষয়গুলোর প্রতি বিশেষভাবে যত্নবান ও সচেতন থাকবে :
-সালাত আদায়ের সময় আল্লাহর হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্যে সালাত আদায় করছো এই নিয়্যত বা সংকল্প করো।
-সালাত আদায়কালে এদিক সেদিক তাকাবেনা এবং বিনা প্রয়োজনে নড়াচড়া করবেনা।
-সালাত আদায় কালে হাসাহাসি করবেনা।
-সালাতের আরকানগুলো যথাযথভাবে পালন করো।
-সময়মতো সালাত আদায় করো।
-জামাতের সাথে সালাত আদায় করো।
-সালাত আদায়ের সময় তোমরা মহান স্রষ্টা আল্লাহ তা’ আলার সম্মুখে দাঁড়িয়েছো - এই অনুভূতি জাগ্রত রাখো ।
-সালাতের আদায়কালে তাড়াহুড়া করোনা।
-অত্যন্ত ধীরেস্থির ও শান্ত ভাবে সালাত আদায় করো।
-সালাতের মধ্যে সব সময় আল্লাহকে স্মরণ রাখো ।মন অন্যদিকে চলে গেলে আবার আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে আনো।
-সালাতে যা কিছু উচ্চারণ ও পাঠ করো , সেগুলো বুঝে বুঝে উচ্চারণ ও পাঠ করো।
-রুকূর সময় মনে করবে - আমি আমার স্রষ্টা ও প্রভু মহান আল্লাহর সামনে মাথা নত করেছি।
-সাজদার সময় মনে করবে - আমি গোটা দেহ ও মনসহকারে মহান আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করলাম।
-পরিবারের অন্যান্যদের সালাত আদায় করতে উদ্বুদ্ধ করো।
-বন্ধু ও সহপাঠীদের সালাত আদায় করতে উদ্বুদ্ধ করো।
-অন্যদেরকে সালাতের সঠিক নিয়ম শিখাও।
-ফরযের আগে পরের সুন্নত সালাতগুলোও আদায় করো।
-সুযোগ পেলেই এবং বিশেষ করে রাত্রে রফল সালাত আদায় করো।
-সুন্দরভাবে সালাত আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করো।
-সালাত জান্নাতের চাবি। সুন্দরভাবে সালাত আদায়ের মাধ্যমে জান্নাতের চাবি সংগ্রহ করো।
পাঠ - ১৬
ব্যক্তি জীবন ও সামাজিক জীবনে সালাতের শিক্ষাসালাত নিঃসন্দেহে শ্রেষ্ঠ ইবাদত। সেই সাথে সালাত মুসলমানদের একটি নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও বটে। মুসলিম হিসেবে সর্বোত্তমভাবে জীবন যাপন করার শিক্ষাও সালাত থেকে পাওয়া যায়। মহান আল্লাহ এবং তাঁর রসূল সা. সালাত আদায়ের জন্যে বেশ কিছু শর্ত ও নিয়ম - পদ্ধতির নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এসব শর্ত ও নিয়ম - পদ্ধতির মধ্যেই রয়েছে আদর্শ জীবন - যাপনের শিক্ষা।
এসো , আমার জেনে নিই সালাতের কিছু বড় বড় শিক্ষা :
১.ওয়াক্ত বা সময় : প্রতি ওয়াক্ত সালাতেরই সময় নির্দিষ্ট করা আছে । ঐ সময়ের মধ্যে সালাত আদায় করতে হয়। বরং ওয়াক্তের শুরুতে আদায় করাই উত্তম।
শিক্ষা : পড়া লেখা , খাওয়া দাওয়া , খেলা ধূলাসহ সকল কাজের জন্যেই সময় নির্দিষ্ট করে নেয়া উচিত। আর সময়ের কাজ সময়ের মধ্যেই করা উচিত। সময়ের শুরুতেই কাজ আরম্ভ করা উচিত।
২.আযান : সালাতের সময় হবার সাথে সাথে আযান দেয়া হয়। আযানের মাধ্যমে মানুষকে সালাত আদায় বা আল্লাহর হুকুম পালন করতে আসার আহবান জানানো হয়। ডাকা হয় জামাতে শরীক হবার জন্যে এবং সফলতা লাভ করার জন্যে ।
শিক্ষা : সব সময় মানুষকে আল্লাহর হুকুম মতো জীবন যাপন করতে আহবান জানানো উচিত। ভালে কাজ করতে আহবান জানানো উচিত। দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা অর্জনে দলবদ্ধ হয়ে কাজ করতে আহবান জানানো উচিত।
৩. অযু ও গোসল :সালাত শুরু করার আগে মুসল্লিকে অযু করে , প্রয়োজনে গোসল করে পবিত্র পরিচ্ছন্ন হতে হয়।
শিক্ষা : প্রত্যেক মুসলিমকে সব সময় পবিত্র পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করা উচিত। মহান আল্লাহ পবিত্র পরিচ্ছন্ন থাকা লোকদের পছন্দ করেন। পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক।
৪. পরিচ্ছন্ন পোশাক : মুসল্লি ( নামাযী ) যে পোশাক পরে সালাত আদায় করবে , তা পবিত্র পরিচ্ছন্ন থাকা আবশ্যক।
শিক্ষা : মুসলিম হিসেবে তোমার পোশাক - পরিচ্ছদ সব সময় পবিত্র পরিচ্ছন্ন থাকা উচিত । আবিলতা মুক্ত থাকা উচিত।
৫. সালাতের জায়গা পরিচ্ছন্ন হওয়া : সালাত আদায়ের জায়গা মসজিদ হোক কিংবা অন্য কোনো স্থান , তা অবশ্যি পবিত্র পরিচ্ছন্ন থাকতে হয়।
শিক্ষা : নিজেদের ঘর বাড়ি , অফিস আদালত , পথ ঘাট পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা প্রত্যেক মুসলমানের অবশ্য কর্তব্য।
৬. নিয়্যত : নিয়্যত মানে - সংকল্প। সালাত শুরু করার আগে মুসল্লিকে ‘ শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যে , আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে সালাত আদায় করছি ’ এই নিয়্যত বা সংকল্প করতে হয়।
শিক্ষা : একজন মুসলিমকে সারাজীবন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে কাজ করে যাওয়া উচিত । সকল ভালো কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের নিয়্যতে করা উচিত। আল্লাহর সন্তুষ্টির লাভের নিয়্যতে সকল মন্দ ও নিষিদ্ধ কাজ ত্যাগ করা উচিত।
৭. কা’বা মুখী হওয়া : কা’বা আল্লাহর ঘর। কা’বামুখী হয়ে কিংবা কা’বার দিকে ফিরে সালাত আদায় করা জরুরি।
শিক্ষা : একজন মুসলমানকে বিশ্বাসে ও কর্মে সবসময় আল্লাহমুখী থাকা উচিত।
৮. রুকূ ও সাজদা : প্রতি রাকাত সালাতেই আল্লাহর কাছে মাথানত করে রুকূ ও সাজদা করতে হয়।
শিক্ষা : একজন মুসলমানকে সব সময় আল্লাহর কাছে অবনত থাকা উচিত। সকল ব্যাপারে অল্লাহর আনুগত্য করা উচিত । আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে জীবন যাপন করা উচিত।
৯. সঠিক পথের প্রার্থনা : একজন মুসল্লি প্রতি রাকাত সালাতে ‘ ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাকিম ’ উচ্চারণ করে করে আল্লাহর কাছে সরল সঠিক পথের প্রার্থনা করে।
শিক্ষা : কোনো মুসলিমের অন্যায় , অসত্য , বক্র ও ভ্রান্ত পথে চলা উচিত নয়। সব সময় সঠিক পথে চলা উচিত।
১০. একাগ্রতা : তাকবীরে তাহরীমা থেকে শুরু করে সালাম ফেরানো পর্যন্ত একজন মুসল্লি একগ্রভাবে কেবল সালাতের প্রতিই মনোযোগী থাকে। সালাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন কোনো কাজই সে এসময় করেনা।
শিক্ষা : একজন মুসলমানকে তার প্রতিটি কাজ একাগ্রচিত্তে এবং মনোযোগের সাথে করা উচিত।
১১ . জামাত : ফরয সালাত জামাতে সাথে আদায় করা আবশ্যক।
শিক্ষা : নিজেদের দীনি , সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কার্য সম্পাদনের জন্যে প্রত্যেক মুসলিমের জামাতবদ্ধ হওয়া এবং থাকা উচিত।
১২ . ইমাম:জামাতে সালাত আদায়ের জন্যে একজনকে ইমাম বানাতে হয়। ইমাম মানে - নেতা । ইমামকে জ্ঞান ও চরিত্রের দিক থেকে সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তি হতে হয়।
শিক্ষা : মুসলমানদের উচিত, তাদের দীনি , সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কাজে সবচেয়ে জ্ঞানী ও চরিত্রবান ব্যক্তিকে নেতা বানানো।
১৩ . ইমামের আনুগত্য : সালাতে ইমামের কুরআন তিলাওয়াত মনোযোগ দিয়ে শুনতে হয়। ইমামের সাথে সাথে সালাতের যাবতীয় নিয়ম - কানুন পালন করতে হয়। কোনো ব্যাপারে তাকে অমান্য করা যায় না।
শিক্ষা : মুসলমানদের জামাতের বা রাষ্ট্রের নেতা যদি ঠিক ঠিকভাবে আল্লাহর আনুগত্য ও রসূলের অনুসরণ করে , তবে তার আনুগত্য ও অনুসরণ মুসলমানদের কর্তব্য।
১৪. ইমামের ভুল সংশোধন : ইমাম যদি নামাযের মধ্যে কোনো ভুল করে বসেন , তবে ‘ আল্লাহু আকবার ’ বলে ইমামকে সতর্ক করে দেয়া মুক্তাদিদের কর্তব্য। আর ভুল সংশোধন করে নেয়া ইমামের কর্তব্য।
শিক্ষা :দলীয় , সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নেতৃবৃন্দের ভুল ধরিয়ে দেয়া তাদের জনগণের কর্তব্য । ভুল ধরা পড়লে তা সংশোধন করে নেয়া নেতৃ বৃন্দের কর্তব্য।
১৫ . সকল মুসল্লির সমান অধিকার : মসজিদে আসার এবং সালাতের জামাতে যে কোনো কাতরে দাঁড়াবার ব্যাপারে সকল মুসল্লির অধিকার সমান।
শিক্ষা :ইসলামী জামাত , সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল সদস্য ও নাগরিকের অধিকার সমান। কেউ কারো অধিকার ক্ষুন্ন করতে পারে না।
আল্লাহ তা’আলা বলেন : সালাত যাবতীয় অশ্লীল , অন্যায় ও মন্দ কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখে ।’ ( আল কুরআন )
পাঠ -- ১৭
সালাতে বেশী পঠিত কয়েকটি সূরা সালাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর কুরআনের আরো কিছু অংশ পাঠ করতে হয়। সেজন্যে কুরআনের বিভিন্ন অংশ মুখস্থ করো। সেগুলো সালাতে পাঠ করো।
এখানে সূরা ফতিহা সহ কুরআনের শেষ দিকের কয়েকটি ছোট ছোট সুরা উল্লেখ করা হলো। সেগুলো অর্থও লিখে দেয়া হলো।
এই সূরাগুলো মুখস্থ করার চেষ্টা করো। সেইসাথে অর্থও শিখার চেষ্টা করো । মনে রেখো , সালাতে কুরআনের যেসব অংশ পাঠ করবে , সেগুলোর অর্থ জানা থাকা খুবই জরুরি। বুঝে পাঠ করা আর না বুঝে পাঠ করার মধ্যে বিরাট ফারাক। বুঝে পাঠ করলে যা পাঠ করা হয় , সে অনুযায়ী আমল করা যায় এবং জীবন যাপন করা যায়। না বুঝে পাঠ করলে সালাতে যা পাঠ করা হয় , বাস্তব জীবনে তার বিপরীত কাজ করে ফেলার আশংকা থাকে । বুঝে পাঠ করলে সালাতে মনোযোগী হওয়া যায় । না বুঝে পাঠ কররে সালাতের মধ্যে মন এদিক সেদিক চলে যাবার আশংকা থাকে।
সূরা আল ফাতিহা
মক্কায় অবতীর্ণ # আয়াত সংখ্যা : ৭ আরবী -------------------------------------------------------
১. আল্লাহর নামে শুরু করছি , যিনি অতি দয়ালু , পরম করুণাময়।
আরবী -----------------------------------------------------------
২. সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর , যিনি মহাজগতের মালিক , পরিচালক ,প্রভু ও প্রতিপালক ,
আরবী --------------------------------------------------------------
৩. যিনি অতি দয়ালু , পরম করুণাময় ,
আরবী ------------------------------------------------------------
৪. যিনি প্রতিফল দিবসের মালিক ।
আরবী -------------------------------------------------------------
৫ . ( হে আল্লাহ ! ) আমরা শুধু তোমারই দাসত্ব করি এবং কেবল তোমারই কাছে সাহায্য চাই।
আরবী ------------------------------------------------------------
৬. আমাদেরকে সোজা - সঠিক পথে চালাও ।
আরবী ----------------------------------------------------------
৭.তাদের পথে ( চালাও ) , যাদের প্রতি তুমি অনুগ্রহ অনুকম্পা করেছো। তাদের পথে নয় , যারা ( তোমার) গজবে নিপতিত হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।
সূরা আল কারি ’ আ
মক্কায় অবতীর্ণ # আয়াত সংখ্যা : ১১আরবী ------------------------------------
পরম দয়ালু ও পরম করুণাময় আল্লাহর নামে।
১. মহা আঘাতকারী ( সময়) !
আরবী ------------------------------------
২. কী সেই মহা আঘাতকারী ( সময় ) ?
আরবী ----------------------------
৩. তুমি কিভাবে জানবে সেই মহা আঘাতকারী ( সময় ) কী ?
আরবী -------------------------
৪. তা হলো একটি দিন , যেদিন মানুষ বিক্ষিপ্ত পোকার মতো হয়ে যাবে। ।
আরবী ----------------------
৫. আর পাহাড়গুলো হয়ে পড়বে রঙিণ ধূনা পশমের মতো ।
আরবী --------------------------
৬. সেদিন যার ( নেক কাজের ) পাল্লা ভারি হবে ,
আরবী --------------------------------
৭. সে জান্নাতে আনন্দের জীবন যাপন করবে ।
আরবী -----------------------------------
৮. আর যার ( নেক কাজের) পাল্লা হালকা হবে ,
আরবী-------------------------------------
৯ . তার আবাস হবে হাবিয়া ।
আরবী -------------------------------------
১০. সেটা ( হাবিয়া ) যে কী - তা তুমি কেমন করে জানবে ?
আরবী ---------------------------
১১ . হ্যাঁ , তা হলো প্রচন্ড তেজস্বী আগুনের লেলিহান শিখা ।
আরবী ----------------------------
সূরা আত তাকাসুর
মক্কায় অবর্তীর্ণ # আয়াত সংখ্যা : ৮আরবী ------------------------------------
পরম করুণাময় ও পরম দয়ালু আল্লাহর নামে ।
আরবী ------------------------------------
১. বেশী পাবার ধান্ধা তোমাদের পথভ্রষ্ট করেছে।
আরবী ----------------------------------------
২. এমনি করে তোমার কবর যিয়ারত ( মৃত্যুবরণ ) করছো।
আরবী ---------------------------------------------
৩. না , অচিরেই তোমরা জানতে পারবে ( এর পরিণতি ) !
আরবী ---------------------------------------------
৪. পুনরায় বলছি , না , অচিরেই তোমরা জানতে পারবে !
আরবী --------------------------------------------
৫. না , তোমরা যদি নিশ্চিত জ্ঞানের ভিত্তিতে জানতে পারতে, ( তবে এমনটি করতে না। ) ।
আরবী -------------------------------------------------
৬ . অবশ্যি তোমরা প্রচন্ড আগুনের লেলিহান শিখা দেখতে পাবে।
আরবী ------------------------------------------------------
৭. হ্যাঁ , তোমরা অবশ্যি নিশ্চিত চোখে তা দেখতে পাবে।
আরবী ----------------------------------------------------
৮. হ্যাঁ , সেদিন অবশিই তোমরা ( পৃথিবীর জীবনে ভোগ করা) নিয়ামতসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।
সূরা আল আসর
মক্কায় অবতীর্ণ # আয়াত সংখ্যা : ৩আরবী ------------------------------------
পরম করুণাময় ও পরম দয়ালু আল্লাহর নামে।
আরবী ------------------------------------
১. সময়ের শপথ!
আরবী ------------------------------------
২. অবশ্য অবশ্যি মানুষ ক্ষতির মধ্যে রয়েছে।
আরবী --------------------------------------------------------------
৩. তবে তারা নয় , যার ঈমান এনেছে এবং আমলে সালেহ ( ন্যায় ও উত্তম কাজ ) করেছে ; তাছাড়া একে অপরকে সঠিক পথে চলার এবং তার উপর অটল থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
শিক্ষা : এই সূরা থেকে আমরা ৪টি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পাই। তাহলো মানুষকে দুনিয়া ও আখিরাতের ধবংস থেকে রক্ষা করতে পারে কেবল :
১ . ঈমান ;
২. আমলে সালেহ ;
৩. মানুষকে সঠিক পথে চলার আহবান ;
৪. মানুষকে সঠিক পথে অটল থাকার আহ্বান।
সূরা আল হুমাযাহ
মক্কায় অবতীর্ণ # আয়াত সংখ্যা : ৯আরবী ------------------------------------
পরম করুণাময় ও পরম দয়ালু আল্লাহর নামে।
আরবী ----------------------------------------------------------
১. ধবংস এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যে যে কলঙ্ক আরোপ করে এবং অসাক্ষাতে ( মানুষের নিন্দা করে বেড়ায়।
আরবী ----------------------------------------------------------
২. যে ধনমাল জমা করে আর তা গণনায় নিরত থাকে।
আরবী ---------------------------------------------------------
৩. সে মনে করে তার ধন মাল তাকে চিরদিন বাঁচিয়ে রাখবে।
আরবী --------------------------------------------------------
৪. কখনো নয় , বরং তাকে হুতামায় নিক্ষেপ করা হবে।
আরবী --------------------------------------------------------
৫. আর তুমি কেমন করে জানবে হুতামা কী ?
আরবী ---------------------------------------------------------
৬. তা হলো আল্লাহর জ্বলন্ত আগুন !
আরবী ----------------------------------------------------------
৭. যা অন্তরের অভ্যন্তরে গিয়েও দগ্ধ করবে।
আরবী ------------------------------------------------------------
৮. ( তাদেরকে ঢুকানোর পর ) সেই অগ্নি গহবরের মুখ বন্ধ করে দেয়া হবে।
আরবী ---------------------------------------------------------
৯. বিস্তৃত থামের মধ্যে ( তাদেরকে বেঁধে রেখে অগ্নিদগ্ধ করা হবে) ।
সূরা আল ফীল
মক্কায় অবতীর্ণ # আয়াত সংখ্যা : ৭আরবী ------------------------------------
পরম করুণাময় ও পরম দয়ালু আল্লাহর নামে।
আরবী --------------------------------------------------------------
১. তুমি কি দেখনি ( হে মুহাম্মদ ! ) তোমার প্রভু হাতীওয়ালা বাহিনীর সাথে কী আচরণ করেছেন ?
আরবী -------------------------------------------------------------
২. তিনি কি তাদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেননি ?
আরবী ------------------------------------------------------------
৩. আর তিনি তাদের উপর ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি পাঠিয়েছিলেন।
আরবী ------------------------------------------------------------
৪. তারা তাদের উপর পাকা মাটির পাথর ছুঁড়ে মেরেছিল।
আরবী -------------------------------------------------------------
৫. এভাবে তিনি তাদেরকে চিবানো ভূষির মতো ( নাস্তানাবুদ) করে দিয়েছিলেন।
শিক্ষা : আল্লাহ সর্বশক্তিমান। তিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। তাঁর ক্ষমতার কাছ সবাই অসহায়। তাই সকলেরই আল্লাহর অনুগত হয়ে থাকা উচিত।
সূরা কুরাইশ
মক্কায় অবতীর্ণ # আয়াত সংখ্যা : ৪আরবী ------------------------------------
পরম করুণাময় ও পরম দয়ালু আল্লাহর নামে ।
আরবী ----------------------------------------------------------
১. যেহেতু কুরাইশদের পরিচিত করানো হয়েছে।
আরবী ----------------------------------------------------------
২. শীতকালের ও গরমকালের সফরে তাদেরকে পরিচিত করানো হয়েছে।
আরবী -----------------------------------------------------------
৩. ( সেজন্যে ) তাদের উচিত (শুধুমাত্র ) এই (কাবা) ঘরের মালিকের ইবাদত করা ।
আরবী -----------------------------------------------------------
৪. যিনি ( তাঁর এই ঘরের উসিলায় ) আহার যুগিয়ে তাদের ক্ষুধা নিবারণ করেছেন এবং ভয়ভীতি থেকে তাদের নিরাপদ করেছেন।
শিক্ষা : মানুষের কর্তব্য কেবলমাত্র নিজেদের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর ইবাদত করা , যিনি তাদের জীবন সামগ্রী দান করেন এবং তাদের প্রতিপালন করেন।
সূরা আল মাঊন
মক্কায় অবতীর্ণ # আয়াত সংখ্যা : ৭ আরবী ------------------------------------
পরম করুণাময় ও পরম দয়ালু আল্লাহর নামে ।
আরবী -------------------------------------------------------------
১. তুমি কি ঐ ব্যক্তিকে দেখেছো , যে ( পরকালের ) প্রতিফলকে অস্বীকার করে ?
আরবী -------------------------------------------------------------
২. এই ব্যক্তিই এতীমকে ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেয় ।
আরবী ------------------------------------------------------------
৩. এবং সে মিসকীনকে খাওয়াতে উৎসাহ দেয়না।
আবরী -----------------------------------------------------------
৪. আর ঐ নামাযীদের জন্যে রয়েছে ধবংস ,
আরবী ------------------------------------------------------
৫. যারা তাদের নামাযে গাফলতি করে ।
আরবী ------------------------------------------------------
৬. যারা লোক দেখানোর জন্যে (ভালো) কাজ করে ,
আরবী ------------------------------------------------------
৭. এবং ছোট খাটো জিনিস ( যেমন লবণ , পেঁয়াজ , পানি বাটি ) পর্যন্ত দিতে মানা করে।
সূরা আল কাউসার
মক্কায় অবতীর্ণ # আয়াত : ৩আরবী ------------------------------------
পরম করুণাময় ও পরম দয়ালু আল্লাহর নামে ।
আরবী ----------------------------------------------------------
১. ( হে নবী ! ) নিশ্চয়ই আমি তোমাকে কাউসার দান করেছি।
আরবী ----------------------------------------------------------
২. সুতরাং তুমি তোমার প্রভুর উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করো এবং কুরবানি করো।
আরবী --------------------------------------------------------
৩. আসলে তোমার শত্রুই শিকড় কাটা।
শিক্ষা : এই সূরার দ্বিতীয় আয়াত থেকে জানা যায় , সালাত আদায় করতে হবে কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে।
সূরা আল কাফিরূণ
মক্কায় অবতীর্ণ # আয়াত সংখ্যা : ৬আরবী ------------------------------------
পরম করুণাময় ও পরম দয়ালু আল্লাহর নামে।
আরবী --------------------------------------------------------
১. (হে নবী ! ) বলে দাও : ওহে কাফিররা !
আরবী --------------------------------------------------------
২. তোমরা যাদের ইবাদত করো , আমি তাদের ইবাদত করিনা।
আরবী ------------------------------------------------------
৩. আর আমি যাঁর ইবাদত করি , তোমরা তাঁর ইবাদতকারী নও।
আরবী --------------------------------------------------
৪. আর তোমরা যাদের ইবাদত করেছো , আমি তাদের ইবাদতকারী নই।
আরবী ---------------------------------------------------------
৫. আর আমি যার ইবাদত করি , তোমরা তার ইবাদতকারী নও।
আরবী --------------------------------------------------------
৬. তোমাদের জন্যে তোমাদের দীন , আর আমার জন্যে আমার দীন।
সূরা আন নাসর
মদীনায় অবতীর্ণ # আয়াত সংখ্যা :৩আরবী ------------------------------------
পরম করুণাময় ও পরম দয়ালু আল্লাহর নামে।
আরবী ----------------------------------------------------------
১. যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এসেছে ,
আরবী ------------------------------------------------------------
২. এবং তুমি দেখতে পাচ্ছ যে , লোকেরা দলে দলে আল্লাহর দীনে প্রবেশ করছে ,
আরবী -----------------------------------------------------------
৩.তখন তোমার প্রভুর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো , নিশ্চয়ই তিনি তওবা কবুলকারী।
শিক্ষা : একজন মুমিন যখন ভালো কাজে সফল হয় , বিজয়ী হয় ; তখন তার উচিত এর জন্যে আল্লাহর প্রশংসা করা , তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং নিজের ভুল ত্রুটির জন্যে তাঁর কছে ক্ষমা চাওয়া।
সূরা আল লাহাব
মক্কায় অবতীর্ণ # আয়াত সংখ্যা : ৫ আরবী ------------------------------------
পরম করুণাময় ও পরম দয়ালু আল্লাহর নামে
আরবী ----------------------------------------------------------------
১.ধবংস হোক আবু লাহাবের দুই হাত , ধবংস হোক সে।
আরবী ---------------------------------------------------------------
২. তার ধন - সম্পদ এবং তার উপার্জন তার কোনো উপকারে আসলোনা।
আরবী -----------------------------------------------------------------
৩. অচিরেই তাকে আগুনের লেলিহান শিখায় পোড়ানো হবে।
আরবী --------------------------------------------------------------
৪. এবং তা স্ত্রীকেও ( পোড়ানো হবে ) , যে (নবীকে কষ্ট দেয়ার জন্যে ) ঘাড়ে করে কাঠ কেটে এনে ( নবীর পথে) রাখে।
আরবী ---------------------------------------------------------------
৫. (সেদিন) তার গলায় থাকবে খেজুরের আঁশের পাকানো দড়ি।
সূরা আল ইখলাস
মক্কায় অবতীর্ণ # আয়াত সংখ্যা : ৪আরবী ------------------------------------
পরম করুণাময় ও পরম দয়ালু আল্লাহর নামে ।
আরবী ----------------------------------------------------
১. ( হে নবী ! ) বলে দাও ” তিনি আল্লাহ , তিনি এক ও একক।
আরবী -----------------------------------------------------
২. আল্লাহ স্বয়ং সম্পূর্ণ - মুখাপেক্ষাহীন।
আরবী -----------------------------------------------------
৩. তিনি জন্ম দেননা এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি ।
আরবী -----------------------------------------------------
৪. তাঁর সমকক্ষ এবং সমতুল্য কেউ নেই।
শিক্ষা : এই সূরায় ইখলাস বা নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর একত্বের ঘোষনা দিতে বলা হয়েছে। তাই প্রত্যেকেরই উচিত আল্লাহর একত্বের প্রতি ঈমান পোষণ করা এবং শিরক থেকে মুক্ত থাকা ।
সূরা আল ফালাক
মক্কায় অবতীর্ণ # আয়াত সংখ্যা : ৫আরবী ------------------------------------
পরম করুণাময় ও পরম দয়ালু আল্লাহর নামে ।
আরবী -------------------------------------------------------
১. ( হে নবী ! ) বলো : আমি ভোরের প্রভুর কাছে আশ্রয় চাই।
আরবী -----------------------------------------------------
২. সেই সবের অনিষ্ট থেকে , যা তিনি সৃষ্টি করেছেন।
আরবী -----------------------------------------------------
৩. আর অন্ধকার রাতের অনিষ্ট থেকে , যখন তার অন্ধকার ছেয়ে যায়।
আরবী -------------------------------------------------------
৪. আর সেই সব নারী (বা) পুরুষদের অনিষ্ট থেকে , যারা গিরায় ফুঁক দেয়।
আরবী -----------------------------------------------------------
৫. আর হিংসুকের অনিষ্ট থেকে , যখন সে হিংসা করে।
সূরা আন নাস
মক্কায় অবতীর্ণ # আয়াত সংখ্যা : ৬ আরবী ------------------------------------
পরম করুণাময় ও পরম দয়ালু আল্লাহর নামে।
আরবী ---------------------------------------------------------
১. ( হে নবী ) বলো : আমি আশ্রয় চাই মানবজাতির প্রভুর কাছে।
আরবী ---------------------------------------------------
২. মানব জাতির সম্রাটের কাছে ।
আরবী ----------------------------------------------------
৩. মানব জাতির ত্রাণকর্তার কাছে।
আরবী ----------------------------------------------------
৪. কুমন্ত্রণাদাতা খান্নাসের অনিষ্ট থেকে ।
আরবী --------------------------------------------------
৫. (সেই খান্নাস থেকে) যে মানুষের মনে (বার বার এসে) কুমন্ত্রণা দেয়।
আরবী ---------------------------------------------------
৬. সে জিন হোক কিংবা মানুষ।
পাঠ - ১৮
সালাত সম্পর্কে কুরআনের বাণী ও হাদিস
কুরআনের বাণী এখানে সালাত সম্পর্কে কুরআনের কয়েকটি বাণী উল্লেখ করা হলো । এগুলোর অর্থ জানায় এবং মুখস্ত করার চেষ্টা করো।
আরবী ----------------------------------------------
অর্থ : আর সালাত কায়েম করো আমাকে স্মরণ করার জন্য । ’ ( সূরা ২০ তোয়াহা : আয়াত - ১৪ )
আরবী --------------------------------------------
অর্থ : সালাত কায়েম করো এবং যাকাত দিয়ে দাও। আর যারা রুকু করে তাদের সাথে রুকু করো (অর্থাৎ জামাতে সালাত আদায় করো)। ’ (সূরা ২ আল বাকারা : আয়াত - ৪৩ )
আরবী ----------------------------
অর্থ : যে কিতাব তোমার প্রতি অহী করা হয়েছে , তা থেকে তিলাওয়াত করো এবং সালাত কায়েম করো। ’ ( সূরা ২৯ আনকাবূত : আয়াত - ৪৫)
আরবী -----------------------------------
অর্থ : অবশ্যি সালাত বিরত রাখে অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে । ’ ( সূরা ২৯ আনকাবূত : আয়াত - ৪৫)
আরবী ----------------------------------
অর্থ : তোমার পরিবার পরিজনকে সালাতের আদেশ করো। এবং এর উপর অটল থাকো। ’ ( সূরা ২০তোয়াহা : ১৩২ )
আরবী ------------------------------------
অর্থ : (লোকমান তার ছেলেকে এই বলে উপদেশ দিয়েছিল :) হে আমার পুত্র ! সালাত কায়েম করবে , ভালো কাজের নির্দেশ দেবে , অসৎ ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে , আর ( এতে বিপদ আপদ আসলে ) ধৈর্য ধরবে। ’ ( সূরা ৩১ লোকমান : আয়াত - ১৭)
আরবী ---------------------------------------
অর্থ : তোমরা সাহায্য প্রার্থনা করো সবর ( ধৈর্য ) ও সালাতের মাধ্যমে। ’ ( সূরা ২ আল বাকারা : আয়াত - ৪৫)
আরবী ---------------------------------------------
অর্থ : একদল লোক আছে , তাদেরকে ব্যস্ততা এবং ব্যবসা - বানিজ্য আল্লাহর স্মরণ এবং সালাত কায়েম করা থেকে বিরত রাখেনা। ’ (সূরা ২৪ নূর : আয়াত - ২৭)
আরবী ---------------------------------------------
অর্থ : ( একদল লোক আছে ) তাদেরকে যদি আমি দেশের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করি , তবে তারা সালাত কায়েম করবে .....................।’ (সূরা ২২ আল হজ্জ : আয়াত ৪১ )
আরবী ----------------------------------------------
অর্থ : ( ইবরাহিম দোয়া করেছিল : ) হে আমার প্রভু ! আমাকে সালাত কায়েমকারী বানাও আর আমার বংশধরদের মধ্য থেকেও । ( সূরা ১৪ ইবরাহিম : আয়াত - ৪০ )
সালাত সম্পর্কে দুটি হাদিস আরবী -------------------------------------------
অর্থ : আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , আমি আল্লাহর নবী সা. কে জিজ্ঞাসা করলাম : আমল সমূহের ( কর্মসমূহের ) মধ্যে কোন আমলটি ( কাজটি ) আল্লাহর কাছে সবচে ’ প্রিয় ? তিনি বললেন : সময়মতো সালাত আদায় করা । ’ আমি বললাম তারপর কোন কাজটি ? তিনি বললেন : মা বাবার সাথে ভালো ব্যবহার করা । ’ আমি বললাম , তারপর কোন কাজটি ? তিনি বললেন : আল্লাহর দীন বাস্তবায়নের জন্যে প্রচেষ্টা চালানো। ” ( সূত্র : সহীহ বুখারি ও মুসলিম )
আরবী -------------------------------------------
অর্থ : উবাদা বিন সামিত রা. থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন , রসূলুল্লাহ সা. বলেছেন : আল্লাহ তা’আলা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করে দিয়েছেন। যে কেউ সেগুলো আদায়ের উদ্দেশ্যে সুন্দরভাবে অযু করবে , নির্ধারিত সময় অনুযায়ী সেগুলো আদায় করবে , সেগুলোর রুকূ সজদা পূর্ণ ভাবে আদায় করবে , তার জন্যে আল্লাহর অংগীকার হলো , তিনি তাকে ক্ষমা করে দেবেন । ” ( সূত্র : আহমদ , আবু দাউদ , নাসায়ী , মালিক )
-----------সমাপ্ত-------------
|