রাসায়েল ও মাসায়েল ৬ষ্ঠ খন্ড |
|
|
লিখেছেন সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী
|
Monday, 28 February 2011 |
পাতা 14 মোট 74
<h1>১২। কালো খেজাব কি বৈধ?-২</h1>
প্রশ্ন : সেপ্টেম্বর ১৯৬৪ সালের 'তরজমানুল কুরআনে' খেজাবের বৈধতা অবৈধতা সম্পর্কে একটি প্রশ্নের জবাব দেয়া হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে জটিলতা নিরসন হয়নি। হাদিসে কালো খেজাবের ব্যবহার নিষেধ থাকা সত্ত্বেও কেমন করে তা বৈধ হবার অবকাশ থাকতে পারে? হানাফি ফকীহ্গণ ও তা ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। সহীহ হাদিসে চুল কালো করার বিপক্ষে নির্দেশ রয়েছে এবং মেহেদী লাগানোর সপক্ষে নির্দেশ রয়েছে। এ হাদিসের ভিত্তিতেই হযরত আবু বকরের রা. পিতাকে মেহেদী লাগানো হয়েছিলো। আমাদেরও হাদিসের উপরই আমল করা উচিত।
জবাব : খেজাব সংক্রান্ত হাদিসগুলোর মধ্যে নি:সন্দেহে সনদগত দিক থেকে সেটিই সহীহ হাদিস, যেটি মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে। হাদিসটি হলো, হযরত আবু কোহাফাকে যখন নবী করীম সা.-এর সম্মুখে আনা হলো, তখন তিনি তার সাদা দাড়ি দেখে বলেছিলেন : "গাইয়িরু হাযা বিশাইয়িন ওয়া জান্নিবুহুস সাওয়াদ" "তার চুল (দাড়ি) গুলোকে রং করে দাও। তবে কালে রং লাগাবেনা।"
এ হাদেসে মেহেন্দী লাগানোর কথা উল্লেখ নেই। অবশ্য অন্যান্য বর্ণনা থেকে জানা যায়, আবু কোহাফাকে রা. লাল খেজাব লাগানো হয়েছিলো।
ইবনে মাযাহর 'পোশাক অধ্যায়ে' বর্ণিত একটি হাদিসের বক্তব্য এর বিপরীত। তাতে বলা হয়েছে : "তোমরা যে খেজাব ব্যবহার করো তন্মধ্যে কালো রং সবচেয়ে সুন্দর।"
এ হাদিস কালো খেজাবের ব্যবহার বৈধ হবার প্রতি ইঙ্গিত করে। কিন্তু কোনো কোনো মুহাদ্দিস এ হাদিসটির সনদকে জয়ীফ বলেছেন। পূর্বে প্রকাশিত জবাবে আমি উভয় মতকেই অপরিহার্য ধরে নেয়ার পরিবর্তে তানযীহী বা মুস্তাহাব পর্যায়ে ধরে উভয় মতের সামঞ্জস্য বিধানের চেষ্টা করেছিলাম। মুসলিমের হাদিসে অবশ্যি কালো রং এর খেজাব ব্যবহার না করার নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু আমি সেই নিষেধকে তাহরীমীর পরিবর্তে তানযীহী মনে করাকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। কারণ এই নিষেধকে যদি অপরিহার্য (ফরয) পর্যায়ের ধরে নেয়া হয়, তবে সাদা চুল বা দাড়িতে খেজাব লাগানোর নির্দেশকেও অপরিহার্য ধরে নিতে হয় এবং সে অবস্থায় চুল বা দাড়ি সাদা রাখাও নিষেধ হয়ে পড়ে। অথচ কেউই এ ধরণের মত পোষণ করেননা। এমনটি কিছুতেই সঠিক হতে পারেনা। এ উদাহরণের ভিত্তিতে মুসলিমের হাদিসে কালো খেজাবের ব্যবহার সম্পর্কে যে নিষেধ এসেছে, সেটাকে অকাট্য নিষেধ (হারাম) মনে না করাই উচিত।
অতীত মুহাদ্দিসগণের কেউ কেউ এভাবেই এ বিষয়টির জটিলতা নিরসন করেছেন। ইমাম নববী সহীহ মুসলিমের উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় তাবরানীর এ মতটি উল্লেখ করেছেন :
"এখানে নির্দেশ এবং নিষেধাজ্ঞার অপরিহার্যতা বুঝায় না। এটাই সর্বসম্মত মত। এ কারণেই এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণকারীর একে অপরের সমালোচনা করেননি।"
ইমাম নববী আরো বলেছেন, ইমাম যুহরী ছাড়াও অতীতের অনেক বুযুর্গই কালো খেজাব লাগিয়েছেন। যেমন আবু হুরাইয়া বা. উসমান রা. হাসান রা. হুসাইন রা. উকবা ইবনে আমের রা. ইবনে সীরান রা. এবং অন্যান্য বুযুর্গ। হানাফিগণের দৃষ্টিভঙ্গি নি:সন্দেহে নিষেধাজ্ঞার দিকে। কিন্তু তারা কোনো কোনো ক্ষেত্রে কালো খেজাবের ব্যবহার বৈধ হবার সপক্ষে ফতোয়া দিয়েছেন যেমন, সৈনিকদের জন্যে। অথচ অকাট্য হারাম জিনিস তো কেবল তখনই বৈধ হতে পারে, যখন তা অকাট্য দলিল দ্বারা অনুমতিপ্রাপ্ত হবে, কিংবা বাধ্য হবার পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, অথবা সহজতরটি গ্রহণের প্রশ্ন দেখা দেবে। এ কারণে এ বিষয়ে হানাফি ফকীহগণের না জায়েযের দৃষ্টিভঙ্গি মাকরূহ তানযীহি পর্যায়ের বলেই প্রমাণিত হয়।
আপনি যদি কালো খেজাবের ব্যবহারকে নিষেধ বলে মনে করেন, তবে নিজে অবশ্যি সে অনুযায়ী আমল করুন। আমি নিজেও এটা ব্যবহার করিনা। প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করিনা। কিন্তু শরিয়ত যে বিষয়ে প্রশস্ত মতামতের অবকাশ রেখেছে, সে বিষয়ে অন্যদের মতকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা এবং তা নিয়ে ঝগড়া বিবাদ করা ঠিক নয়। [তরজমানুল কুরআন, জানুয়ারি ১৯৬৭]
|
সর্বশেষ আপডেট ( Friday, 04 March 2011 )
|