রাসায়েল ও মাসায়েল ৬ষ্ঠ খন্ড |
|
|
লিখেছেন সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী
|
Monday, 28 February 2011 |
পাতা 30 মোট 74
<h1>২৮। বেতের নামাযে দোয়া কুনূত</h1>
প্রশ্ন : ১. খুতুবাত (হাকিকত সিরিজ) ১৯৭৪ সালের আগষ্টে মুদ্রিত ২৩তম সংস্করণ- এর ১৫৬ পৃষ্ঠায় যে দোয়া কুনূত লেখা রয়েছে তাতে প্রচলিত দোয়া কুনূতের চেয়ে দুটো শব্দ বেশি রয়েছে : (১) প্রথম লাইনে ---------- শব্দটি (২) তৃতীয় লাইনে ---------- শব্দটি। খুতুবাত ২য় খন্ডের নবম সংস্করণের ৩৩ পৃষ্ঠায় যে দোয়া কুনূত লেখা রয়েছে, তাতে উল্লেখিত দুটো শব্দ ছাড়া -------------- শব্দটিও অতিরিক্ত রয়েছে। এটি দোয়ার শেষে ------------ এর আগে লেখা রয়েছে।
উল্লেখিত শব্দগুলো যদি দোয়া কুনূতেরই অংশ হয়ে থাকে তবে তার দলিল কি? তাছাড়া আহলে হাদিস মতের অনুসারীরা রুকুর পর হাত উঠিয়ে ভিন্ন রকমের দোয়া পড়ে থাকেন। এটাই বা কোথা থেকে প্রমাণিত হয়? অনুগ্রহপূর্বক ব্যাপারটা বিশ্লেষণ করুন, যাতে মনের দ্বিধা সংশয় দূরীভূত হয়।
জবাব : বেতের নামাযের শেষ রাকাতে যে দোয়া কুনূত পড়া হয়, তা হাদিসে একাধিকভাবে উল্লেখিত রয়েছে। এর সনদ যদিও বিশুদ্ধভাবে সর্বোচ্চ মানে উত্তির্ণ নয়। তথাপি অধিকাংশ হাদিসবেত্তা ও ফেকাহ শাস্ত্রকারগণ সেগুলোকে মেনে নিয়েছেন ও তদানুসারে কাজ করেছেন। সাহাবায়ে কেরামের একটি গোষ্ঠিও বেতের নামাযে দোয়া কুনূত পড়তেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে নামাযের কোন পর্যায়ে তা পড়তেন এবং কি ভাষায় পড়তেন তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে।
হানাফি মাযহাবে দোয়া কুনূত রুকুর আগে এবং শাফেয়ী ও হাম্বলী মাযহাবে রুকুর পরে পড়া সুন্নাহসিদ্ধ রীতি। শেখ মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন আলবানী স্বীয় গ্রন্থ 'সালাতুন্নবী'তে ইবনে আবি শায়বা, আবু দাউদ, নাসায়ী, আহমদ, তাবরানী, বায়হাকী প্রভৃতির বরাত দিয়ে লিখেছেন :
"রসূল সা. কখনো কখনো বেতেরের শেষ রাকাতে রুকুর আগে দোয়া কুনূত পড়তেন।"
'আলফিকহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া' (চার মাযহাবের ফেকাহ) গ্রন্থে হানাফি মাযহাবের ওয়াজিব দোয়া কুনূত হযরত ইবনে মাসউদের বরাতে নিম্নরূপ উদ্ধৃত হয়েছে :
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
'মুনিয়াতুল মুসাল্লি' নামক গ্রন্থের ব্যাখ্যা 'গুনিয়াতুল মুসতামলী' হানাফি মাযহাবের একখানি প্রামাণ্য নামায সংক্রান্ত গ্রন্থ। এটি 'আশশারহুল কবির' বা 'কবিরি' নামে ব্যাপকভাবে পরিচিত ও প্রসিদ্ধ।
এতে দোয়া কুনূতের ভাষা অবিকল উপোরক্ত দোয়া কুনূতের অনুরূপ, যা আপনি 'খুতুবাত'-এর নবম সংস্করণ থেকে তুলে দিয়েছেন। হেদায়ার ব্যাখ্যা 'ফাতহুল ক্বাদিরে' মারাসিলে আবু দাউদের বরাত দিয়ে হযরত খালেদ বিন আবি ইমরান থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, জিবরীল আ. রসূল সা.-কে নিম্নরূপ দোয়া কুনূত শিক্ষা দিয়েছেন :
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
এ দোয়া ও পূর্বোক্ত দোয়াতে অল্পবিস্তর শাব্দিক পার্থক্য সুস্পষ্ট। এরপর 'ফাতহুল ক্বাদির' প্রণেতা ইমাম ইবনে হুমাম আরো বলেন : "নামাযী যদি উপরোক্ত দোয়া ছাড়া অন্য কোনো দোয়া পড়ে তাহলেও চলবে।"
তবে এর পরে রসূল সা. কর্তৃক হযরত ইমাম হাসানকে শিখানো নিম্নোক্ত দোয়া কুনূতটাও পড়া উত্তম :
---------------------------------------------------------------------------------
কবিরিতে তিরমিযী, আব দাউদ, নাসায়ী ও ইবনে মাজার বরাত দিয়ে বেতেরের নিম্নোক্ত দোয়াও লিপিবদ্ধ রয়েছে :
---------------------------------------------------------------------------------
কবিরির গ্রন্থকার শেখ ইবরাহীম হালবি এ কথাও বলেন যে : ---------------- এর সাথে সেই দোয়াটিও মিলিয়ে পড়লে ভালো হয় যা রসূল সা. ইমাম হাসান রা. কে শিখিয়েছেন। সেই দোয়াটি হলো :
.......................-----------------------------------------------------
অত:পর শেখ হালবি লিখেছেন :
"উল্লেখিত দোয়াগুলো ছাড়া অন্য যে কোনো দোয়াও পড়া যেতে পারে। তবে তা এমন হওয়া চাই যেনো মানুষের সাধারণ কথাবার্তার সাথে তার সাদৃশ্য না থাকে।"
এই সংক্ষিপ্ত জবাব থেকে আপনি হয়তো বুঝতে পেরেছেন যে, বেতেরে দোয়া কুনূত রুকুর আগেও পড়া চলে, রুকুর পরেও পড়া চলে।আহলে হাদিস অনুসারীগণ যে দোয়া পড়েন এবং হানাফিগণ যে দোয়া পড়েন, উভয়টিই হাদিস থেকে প্রমাণিত। বরঞ্চ হানাফিগণ উভয়টি পড়াই উত্তম মনে করেণ। 'আলফিকহু আলাল মাযাহিবিল আরবায়া' গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, হাম্বলীদের নিকট যে দোয়া কুনূত প্রচলিত ও উত্তম তা নিম্মরূপ :
---------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
এর অব্যবহিত পরেই হযরত হাসান রা. থেকে বর্ণিত, দোয়াটি উদ্ধৃত রয়েছে। অত:পর ফাহহুল ক্বাদিরে উল্লেখিত দোয়া ------------------------------ উদ্ধৃত রয়েছে।
উক্ত গ্রন্থে আরো বলা হয়েছে যে, হাম্বলী মাযহাবের মতানুসারে হাদিসে বর্ণিত দোয়াগুলো উত্তম বিবেচিত হলেও অন্য কোনো দোয়া পড়াতেও আপত্তি নেই। মোটকথা, ভাষাগত দিক দিয়ে হানাফি ও হাম্বলীদের দোয়া কুনূতে তেমন কোনো প্রভেদ নেই। অবশ্য হাম্বলীগণ রুকুর পরে দোয়া কুনূত পড়া উত্তম মনে করেন, দোয়াতে হাত জোড় করে উত্তোলন করেন এবং দোয়া শেষে মুখে হাত ফেরান, ঠিক যেমনটি আমাদের অঞ্চলে আহলে হাদিস গোষ্ঠি করে থাকেন। তাদের যুক্তি এই যে, দোয়ায় হাত উঠানো এবং তা মুখে ফেরানো সুন্নত তরিকা এবং কোনো কোনো সাহাবি এরূপ করতেন বলে প্রমাণ রয়েছে। হানাফিদের বক্তব্য এই যে, নামাযের অন্যান্য দোয়া যেমন হাত না তুলে পড়তে হয়, দোয়া কুনূতও তেমনিভাবে পড়তে হবে। ইমাম বায়হাকীসহ কেউ কেউ বলেন, হাত তুলতে হবে তবে মুখ ফেরাতে হবে না। আমরা মনে করি, এগুলো নিতান্তই খুঁটিনাটি মতভেদ। এতে প্রত্যেকেই নিজ নিজ মতের সপক্ষে যক্তি দিতে পারেন এবং প্রত্যেক মতই সঠিক ও বৈধ। [তরজমানুল কুরআন, আগস্ট ১৯৭৮]
|
সর্বশেষ আপডেট ( Friday, 04 March 2011 )
|