 |
|
 |
আমাদের টাইপ করা বইগুলোতে বানান ভুল রয়ে গিয়েছে প্রচুর। আমরা ভুলগুলো ঠিক
করার চেষ্টা করছি ক্রমাগত। ভুল শুধরানো এবং টাইপ সেটিং জড়িত কাজে সহায়তা
করতে যোগাযোগ করুন আমাদের সাথে।
রাসায়েল ও মাসায়েল ৬ষ্ঠ খন্ড |
|
|
লিখেছেন সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী
|
Monday, 28 February 2011 |
পাতা 33 মোট 74
<h1>৩১। মৃত ব্যক্তির জন্য ফিদিয়া দান, শোক ও কুরআন খতম</h1>
প্রশ্ন : আলেম ও মুফতিগণের নিকট নিম্নোক্ত কয়েকটি বিষয়ে শরিয়তের বিধান জানতে চাওয়া হয়েছে :
১. আমাদের এলাকায় দীর্ঘকাল যাবত এরূপ প্রথা চালু রয়েছে যে, যখন কোনো বয়স্ক নারী বা পুরুষ মারা যায়, যখন তার পরকালীন মুক্তির জন্য কিছু সংখ্যক আলেম জানাযার নামাযের পর বৃত্তাকারে বসে যান। ইতিপূর্বে লাশের সাথে কুরআন শরিফ আনা হয় এবং তার সাথে কিছু টাকাও রক্ষিত থাকে। বৃত্তাকারে বসা আলেমগণ ঐ কুরআন ও টাকা এক এক করে একজন অপর জনকে হস্তান্তর করতে থাকেন। এভাবে তিনবার চক্রাকারে ঘুরিয়ে আনা হয়। অতপর ঐ টাকা বৃত্তের মধ্যে বসা ধনী, গরিব, মুফতি সকলের মধ্যে বন্টন করা হয়। অতপর দোয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়। এই অনুষ্ঠানকে হিলায়ে ইসকাত [মৃত ব্যক্তির পরিত্যাক্ত নামায রোযার দায় থেকে অব্যাহতি দানের কৌশল] বলা হয়।
২. যখন লাশ তুলে কবরস্থানের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন নারীরাও পুরুষের পাশাপাশি চলে এবং কবরের কাছে হাজির হয়। জানাযায় নামায পড়ার পর যখন লাশ দাফনের কাছে আনা হয়, তখন নারীরা সেখানেও কান্নাকাটি করে।
৩. এ প্রথাও চালু রয়েছে যে, যখন কেউ মারা যায়, তখন উত্তরাধিকারীরা এতিম কি বিধবা, ধনী কি গরিব, নিজস্ব অর্থ দিয়ে হোক অথবা ধার করে আনা অর্থ দিয়ে হোক- সর্বসাধারণের জন্য ঠিক মৃত্যুর দিনে ভোজের আয়োজন করে থাকে। সেই ভোজে ধনী, গরিব, মেম্বার, চৌকিদার, আলেম, কাযী নির্বিশেষে সকলে অংশগ্রহণ করে। একে 'খয়রাত' নামে আখ্যায়িত করা হয়। অথচ সেদিন শোকসন্তপ্ত পরিবারেই খানা খাওয়ানো দরকার।
উল্লেখিত অনুষ্ঠানগুলোতে যারা অংশগ্রহণ করেনা, তাদেরকে 'গায়রে মুকাল্লিদ' (চারি মাযহাবের বহির্ভুত) আখ্যা দিয়ে জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়। জনগণ পূর্ণাঙ্গ ফতোয়া জানিয়ে তাদের দ্বন্দ্ব নিরসন করা হোক। আপনার প্রতিষ্ঠান একটা ইসলামি প্রতিষ্ঠান এবং সারা পাকিস্তান আপনার ফতোয়া চালু আছে। উল্লেখিত অনুষ্ঠানগুলো সম্পর্কে কুরআন, হাদিস ও ফেকাহ শাস্ত্রের আলোকে বিশদভাবে আলোচনা লিপিবদ্ধ করে দুনিয়া ও আখেরাতের অশেষ পুরস্কার লাভ করুন। উল্লেখ থাকে যে, আমরা হানাফি মাযহাবের অনুসারী।
জবাব : প্রচলিত 'হিলায়ে ইসকাত' নামক প্রথার পক্ষে কুরআন সুন্নাহ, সাহাবায়ে কেরামের বাস্তব দৃষ্টান্ত ও ফেকাহ শাস্ত্রবিদদের রায় থেকে কোনোই প্রমাণ পাওয়া যায়না। প্রশ্নকর্তা জানিয়েছেন, তারা হানাফি মাযহাবের অনুসারী। এ জন্য কুরআন ও সুন্নাহর মৌলিক দলিলসমূহের বিবরণ আপাতত বাদ রেখে এবং যতোটা সম্ভব সংক্ষেপে ফেকাহ শাস্ত্রীয় বিধান প্রামাণ্য গ্রন্থবলী থেকে উদ্ধৃত করে দিচ্ছি :
হানাফি মাযহাবের সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ রদ্দুল মুখতারের নামায সংক্রান্ত অধ্যায়ে কাযা নামাযের বিধি আলোচনা প্রসঙ্গে 'মৃত ব্যক্তির নামাযের দায় থেকে অব্যাহতি' শিরোনামে আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহ. বলেন :
জেনে রাখা দরকার যে, মৃত ব্যক্তি যদি রোযার ফিদিয়া দেয়ার ওসিয়ত করে গিয়ে থাকে, তাহলে এই ফিদিয়া দেয়া নিশ্চিতভাবে জায়েয। কেননা এই ফিদিয়ার কথা সুস্পষ্ট ওহির মাধ্যমে ঘোষিত হয়েছে। কিন্তু মৃত ব্যক্তি যখন এ ধরনের ফিদিয়া দেয়, সে ক্ষেত্রেও ইমাম মুহাম্মদ বলেছেন, ইনশাআল্লাহ (আল্লাহ চাহেন তো) এতে তার উপকার হবে। এখানে তিনি ইনশাআল্লাহ কথাটা এ জন্যই বলেছেন যে, এ ব্যাপারে কোনো সুস্পষ্ট ঘোষণা ওহির মাধ্যমে আসেনি। অনুরূপভাবে যদি নামাযের ফিদিয়ার জন্য ওসিয়ত করেও গিয়ে থাকে, তবে ফেকাহ শাস্ত্রীয়বিদগণ তাকে সতর্কবশত রোযার সমপর্যায়ে গণ্য করেন। কেননা রোযা না রাখার জন্য সম্ভাব্য শারীরিক অক্ষমতাকে হাদিসে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। নামাযে এ কারণটি উপস্থিত না থাকলেও তাকে উপস্থিত ধরে নিয়ে নামায ও ফিদিয়ার আওতাভুক্ত হতে পারে। নামাযীর নামায ত্যাগ যদি শারীরিক অক্ষমতার কারণে না হয়ে থাকে, তাহলে ফিদিয়া দ্বারা তার গুণাহ মাফের সম্ভাবনা আছে। তবে সে ক্ষেত্রে সন্দেহ বিরাজমান, ঠিক যেমন রোযার ফিদিয়া দিতে ওসিয়ত করা না হলেও যদি ফিদিয়া দেয়া হয়, তবে সেক্ষেত্রেও সন্দেহ বিরাজ করে। এ জন্য ইমাম মুহাম্মদ রোযার ফিদিয়ার ওসিয়ত করা হলে নিশ্চয়তার সাথে তা জায়েয বলে ফতোয়া দিয়েছেন। কিন্তু রোযা বা নামাযের ওসিয়ত না করা হলে নিশ্চয়তার সাথে জায়েয বলে ফতোয়া দেননি। এ থেকে বুঝা গেল যে, মৃত ব্যক্তি যদি নামাযের ফিদিয়া দিতে ওসিয়ত না করে থাকে, তাহলে সে ক্ষেত্রে ফিদিয়ার ব্যাপারে সন্দেহ প্রবলতর।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে জানা গেছে যে, প্রথমত ফিদিয়ার আদেশ কেবল রোযার সাথে সংশ্লিষ্ট। যারা ঐ আদেশকে পরিত্যক্ত নামাযের উপর প্রয়োগ করেছেন, তারাও এটা করেছেন সন্দেহেরই সাথে। দ্বিতীয়ত নামাযের ক্ষেত্রে ফিদিয়া বা কাফফারা যেটারই সুপারিশ করা হোক না কেন, তা এই ব্যাখ্যামূলক গ্রন্থেরই (অর্থাৎ রদ্দে মুখতারের) মূল গ্রন্থ দুররে মুখতারে সন্নিবেশিত হয়েছে। ঐ গ্রন্থের বক্তব্য নিম্মরূপ :
"মৃত ব্যক্তি যদি ছুটে যাওয়া নামাযগুলো কাফরারা দিতে ওসিয়ত করে যায়। তবে প্রত্যেক ছুটে যাওয়া নামায বাবদ ফেৎরার ন্যায় অর্ধ সা' গম দিতে হবে।"
অন্য কথায় বলতে গেলে এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে, কোনো কোনো ফেকাহ শাস্ত্রবিদ যে ইসকাতের কথা বলেছন, তার জন্য মৃত ব্যক্তির যতোগুলো নামায ও রোযা ওজরের কারণে কাযা হয়েছে, সেগুলো হিসেব করে প্রত্যেক নামায ও রোযার বদলে দু'সের বা পৌনে দু'সের করে খাদ্যশস্য দরিদ্র লোকদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে। কিন্তু বর্তমান যুগে পবিত্র কুরআন ও তার সাথে কিছু খাদ্যশস্য বা টাকার পুটুলি রেখে চক্রাকারে ঘোরানোর যে প্রথা রয়েছে, তার প্রমাণ কোথাও পাওয়া যায়না। এটা আসলে কুরআনের অবমাননা। হাদিস বা ফেকাহ গ্রন্থে যে ফিদিয়ার উল্লেখ রয়েছে, এটাকে সেই ফিদিয়াও বলা চলেনা।
আল্লামা শামী স্বীয় আলোচনায় নিজের একটি পুস্তিকার উল্লেখও করেছেন। সেই পুস্তকের নাম '------------------------------------------------------------' (রোগ নিরাময়ে বিভিন্ন রকমের খতম ও কলেমা পাঠ অনুষ্ঠানের ওসিয়তের অবৈধতা প্রসঙ্গ) পুস্তিকার নাম থেকেই বুঝা যায় যে, মৃত ব্যক্তির জন্য খতম বা যিকিরের অনুষ্ঠানাদি করার যে প্রথা চালু রয়েছে, আল্লামা শামী তার ঐ পুস্তিকায় তাকে অবৈধ বলে প্রমাণ করেছেন। উপরোক্ত আলোচনার কিছু পর তিনি পুনরায় এরূপ একটি শিরোনাম লিখেছেন : "খতম ও যিকির অনুষ্ঠানাদির ওসিয়তের অবৈধতা সম্পর্কে কিছু বক্তব্য।"
এই শিরোনামের অধীনে তিনি লিখেছেন :
আমাদের সময়কার লোকেরা যে ওসিয়ত করে থাকেন, তার ধরণ আমার আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে। মৃত ব্যক্তিদের অনেকেরই অবস্থা এরূপ যে, তাদের অনেক নামায, যাকাত, কুরবানি, কসমের কাফফারা ইত্যাদি ছুটে গেছে এবং তারা এ সবের কাফফারা আদায়ের জন্য সামান্য কিছু টাকা দান করার ওসিয়ত করে যায়। (আজকাল তো অনেকে তাওবাও করেনা।) তারা প্রায়ই এই মর্মে ওসিয়ত করে যায় যে, খতম পড়িয়ে দাও, আল্লাহর যিকির করিয়ে দিও। অথচ আমাদের ওলামায়ে কেরাম এ ধরণের ওসিয়ত যে আদৌ জায়েয নয়, তা অকাট্যভাবে ব্যক্ত করেছেন। পার্থিব স্বার্থের লোভে কোনো পাঠ জপ করা মোটেই জায়েয নেই। এ ধরণের কাজের জন্য অর্থদানকারী ও গ্রহণকারী উভয়েই গুণাহগার। কেননা কুরআনের জন্য মজুরি আদান প্রদানের সাথে এর সাদৃশ্য রয়েছে। কুরআনের জন্য মজুরি আদান প্রদান মূলত অবৈধ। কাজেই এ কাজের সাথে যে কাজের সাদৃশ্য থাকবে তাও অবৈধ হবে। আমাদের মাযহাবের বড় বড় বিখ্যাত গ্রন্থাবলিতে এ কথা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা হয়েছে। আমাদের সাম্প্রতিককালের ফেকাহশাস্ত্রবিদগণ শুধুমাত্র কুরআন শিক্ষাদানের জন্য মজুরি জায়েয বলে ফতোয়া দিয়েছেন। কিন্তু কুরআন আবৃত্তির জন্য মজুরি জায়েয বলে ফতোয়া দেননি। কুরআন শিক্ষাদানের জন্য মজুরি বৈধ বলে যে ফতোয়া দেয়া হয়েছে, তাও একটা অনিবার্য করণে দেয়া হয়েছে। নচেত কুরআনের শিক্ষা বিলীন হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। কিন্তু কুরআন পাঠের বিনিময়ে মজুরি লেনদেনের পেছনে সে ধরণের কোনো অনিবার্য কারণ সক্রিয় নেই। আমার পুস্তিকা 'শিফাউল আলীলে' (রোগ নিরাময়) এ বিষয়টি আমি ব্যাখ্যা করেছি। সর্বশেষে আল্লামা শামী লিখেছেন, ইমাম হাসান বিন আলী রা. কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, অন্তিম রোগ শয্যায় নামাযের ফিদিয়া দিতে ওসিয়ত করা কি জায়েয? তিনি বলেছেন, 'না।'
ফেকাহ শাস্ত্রীয় বিভিন্ন মতামতের আলোকে এটা ছিলো সংক্ষিপ্ত জবাব। কিন্তু কুরআন, সুন্নাহ ও মুজতাহিদ ফকীহগণের বিশদ মতামতের আলোকে দেখতে গেলে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কথা এই যে, ফিদিয়া, ইসকাত, কাফফারা ইত্যাদির যে ক'টি বৈধ নিয়ম চালু আছে, তা শুধুমাত্র ওযর ও অক্ষমতাবশত ছুটে যাওয়া ইবাদতের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কোনো প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের যদি শরিয়তসম্মত ওজরের কারণে কোনো ইবাদত যথা নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি ছুটে যায়, ছুটে যাওয়ার দরুণ সে অনুতপ্ত থাকে এবং জীবদ্দশাতেই সে শরিয়ত নির্দেশিত পন্থায় তার প্রতিকারের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে বা অন্ততপক্ষে চেষ্টা করার সংকল্প পোষণ করে এবং সে কোনো প্রতিকার করতে সক্ষম হওয়ার আগেই মারা যায়, তবে তার ক্ষেত্রেই ফিদিয়া, কাফফারা ইত্যাদি দেয়া যায়। কিন্তু যে ব্যক্তি ক্রমাগতভাবে এবং ব্যাপকভাবে শরিয়ত সম্মত ওযর ছাড়াই ফরয কাজসমূহ তরক করতে থাকে, সে যদি জীবদ্দশায় বিভিন্ন নফল কাজ যথা নামাযের বদলে কিছু দান সদকা দিয়ে প্রতিকারের চেষ্টা করে, তবে তা তার নিজের পক্ষ থেকেও গ্রহণযোগ্য হবেনা। তার মৃত্যুর পর অন্যেরা এরূপ পন্থা অবলম্বন করলে গ্রহণযোগ্য হওয়ার তো প্রশ্নই ওঠেনা। ফরয কাজ ছুটে গেলে নফল কাজ দ্বারা যে তার ক্ষতিপূরণ হতে পারেনা, সে ব্যাপারেও আলেমদের সর্বসম্মত অভিমত (ইজমা) রয়েছে। যেমন কেউ কেউ ফরয নামায পড়েনা, যাকাত ও উশর ফরয হওয়া সত্ত্বেও দেয়না এরূপ ব্যক্তি যতো নফল নামাযই পড়ুক, যতো নফল সদকাই দিক, তা দ্বারা ফরয তরকের গুণাহ কোনোক্রমেই মাফ হবেনা।
২. লাশের সাথে মহিলাদের গমন, মৃত ব্যক্তির জন্য পুরুষ বা মহিলাদের কান্নাকাটি করা, অর্থাৎ উচ্চশব্দের হায় হায় করা ও শোক বিলাপ করা নিষিদ্ধ। মুনিয়াতুল মুসাল্লির ব্যাখ্যা 'আশ্শারহুল কবীর' বা 'কবিরী' গ্রন্থের শেষাংশে জানাযা সংক্রান্ত আলোচনায় হিদায়া ও অন্যান্য প্রামাণ্য গ্রন্থের বরাত দিয়ে লেখা হয়েছে : 'ফকিহগণের বৃহত্তর অংশের মতে লাশের সাথে মহিলাদের গমন করা জায়েয নয়।'
পরবর্তী পর্যায়ে তিনি আরো লিখেছেন :
"মহিলাদের লাশের সাথে চলা জায়েয কি নাজায়েয সে প্রশ্ন করা চাইনা। বরং এরূপ মহিলার উপর কি পরিমাণ অভিশাপ বর্ষিত হবে সেটাই জিজ্ঞাসার ব্যাপার হওয়া উচিত। জেনে রেখ, কোনো মহিলা যখনই লাশের সাথে গমনের ইচ্ছে করে, অমনি সে আল্লাহ ও ফেরেশতাদের অভিসম্পাতের কবলে পড়ে। যখন সে সত্য সত্যই বেরিয়ে পড়ে, অমনি তাকে শয়তান চারদিক থেকে ঘিরে ধরে। যখন সে কবর পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তখন মৃতব্যক্তির আত্মা তাকে অভিশপ্ত করে। আর যখন সে ফিরে আসে তখনো সে আল্লাহর অভিশাপের ভেতরে অবস্থান করে। ফাতওয়ায়ে তাতারখানিয়া দ্রষ্টব্য।"
তিনি আরো লিখেছেন : "লাশের সাথে যদি কোনো বিলাপকারিনী থেকে থাকে তবে তাকে ধমক দিয়ে সাথে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে।"
৩. রদ্দুল মুখতার গ্রন্থের জানাযা নামায সংক্রান্ত অধ্যায়ে 'বিপদ মুসিবতে পুণ্য লাভ' শিরোনামে বলা হয়েছে :
"মৃত ব্যক্তির পরিবারের জন্য খাবার সরবরাহ করা প্রতিবেশি ও দূরবর্তী আত্মীয় স্বজনের জন্য মুস্তাহাব, যাতে তাদের ঐ দিন ও রাতের পরিতৃপ্তির ব্যবস্থা হয়। কেননা রসূল সা. হযরত জাফরের ইন্তিকালের খবর শুনে বলেছিলেন : তোমরা জাফরের পরিবারের জন্য খাবার তৈরি কর। কেননা তারা বিপদাপন্ন ও শোকাহত।"
পরবর্তীতে পুনরায়, 'মৃত ব্যক্তির পরিবারে অতিথি হওয়া অনুচিত' শিরোনামে লিখেছেন :
"মৃত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে ভোজের আয়োজন সহকারে অতিথি আপ্যায়ন করা অনুচিত এবং জঘণ্য বিদয়া'ত। কেননা অতিথি আপ্যায়ন সুখের সময়ের কাজ, দুর্যোগের সময়ের নয়।"
আরো কিছু দূর গিয়ে মুসনাদে আহমদ ও ইবনে মাজার বরাত দিয়ে হযরত জারীর বিন আব্দুল্লাহর বর্ণনা উদ্ধৃত করা হয়েছে : "মৃত ব্যক্তির গৃহে লোকজনের সমবেত হওয়া এবং ভোজের আয়োজন করাকে আমরা নিষিদ্ধ বিলাপ অনুষ্ঠানের অংশ বলে গণ্য করতাম।"
দুররে মুখতারে আছে : "তিন দিন পর্যন্ত শোক পালন করাতে আপত্তি নেই। কিন্তু এর পরে তা মাকরূহ। তবে কেউ যদি প্রবাস থেকে আসে তবে তার কথা আলাদা। দ্বিতীয়বার শোক জ্ঞাপন করতে আসা মাকরূহ।"
দ্বিতীয়বার শোক জ্ঞাপন মাকরূহ হওয়ার তাৎপর্য হলো, যারা জানাযার নামাযে শরিক হতে পারেনি, তারা এসে একবার শোক জ্ঞাপন করলে তাতে দোষ নেই। কিন্তু জানাযায় শরিক হওয়ার পর কিংবা একবার শোক জ্ঞাপন করার পর পুনরায় শোক জানাতে আসা মাকরূহ। [তরজমানুল কুরআন, নভেম্বর ১৯৮০]
|
সর্বশেষ আপডেট ( Friday, 04 March 2011 )
|
|
|
|