রাসায়েল ও মাসায়েল ৬ষ্ঠ খন্ড |
|
|
লিখেছেন সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী
|
Monday, 28 February 2011 |
পাতা 34 মোট 74
<h1>৩২। কয়েদি সৈন্যরা কি নামায কসর করবে</h1>
প্রশ্ন : ১. রসূল সা. এবং সাহাবায়ে কিরামের রা. যুগেও যুদ্ধবিগ্রহ হয়েছিল। একপক্ষের লোকেরা অন্য পক্ষের লোকদের হাতে বন্দি হয়েছিল। যুদ্ধবন্দি অবস্থায় কোনো সাহাবি নামায কসর করেছিলো কি? নাকি এ অবস্থায়ও তারা পূর্ণ নামায আদায় করতেন? এ ব্যাপারে কোনো দৃষ্টান্ত থাকলে অনুগ্রহ করে তা উল্লেখ করুন। গ্রন্থসূত্র অবশ্যি উল্লেখ করবেন। কারণ, জনৈক ব্যক্তি বলে বেড়াচ্ছেন ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান পতনের পরে যেসব পাকিস্তানী সৈন্য ভারতের হাতে বন্দি ছিলো। তাদের মধ্যে যারা নামায কসর করেছে এখন তাদের সমস্ত নামায পুনরায় পড়তে হবে। এ ব্যাপারে অনেকেই পেরেশানী বোধ করছেন এবং সঠিক নির্দেশনা কামনা করছেন।
২. যাকাতের মতো সদকায়ে ফিতরও কি কেবলমাত্র সাহেবে নিসাবের উপরই ওয়াজিব, নাকি সকল মুসলমানদের উপর?
জবাব : আপনার চিঠি পেয়েছি। নিম্নে আপনার প্রশ্ন দু'টির জবাব দেয়া গেলো :
১. যিনি বলে বেড়াচ্ছেন ১৯৭১ সালে ভারতের হাতে আটককৃত পাকিস্তানী সৈন্যরা নামায কসর করে থাকলে, এখন তাদের সমস্ত নামায পুনরায় পড়তে হবে, আমরা তার সাথে একমত নই। যেসব মুসলমান দূর পথে রওয়ানা করে, তারা যতোক্ষণ না কমপক্ষে পনের দিন অবস্থানের নিয়ত করবে ততোক্ষণ তাদের ব্যাপারে মুসাফিরের সংজ্ঞাই প্রযোজ্য হবে। মুসলিম মুজাহিদরা দারুল হরবে স্বাধীন অবস্থায় যুদ্ধরত থাকুক, কিংবা বন্দি অবস্থায়ই থাকুক। দারুল হরবে অবস্থানটা আসলে অনির্দিষ্টকালীন ব্যাপার। অবস্থানের মেয়াদ নির্ধারণ এরূপ ক্ষেত্রে তাদের এখতিয়ার থাকেনা। তাই তাদের জন্যে মুসাফিরের সংজ্ঞাই সঠিক। যেখানে বাধ্য হয়ে অবস্থান করতে হয় এবং প্রতিবন্ধকতা দূর হবার সাথে সাথেই প্রত্যাবর্তনের নিয়ত থাকে, সেখানে যতোদিনই অবস্থান করতে হোকনা কেন, নামায কসর করতে হবে। এ ব্যাপারে অধিকাংশ ফকীহ ও মুহাদ্দিস একমত। যুদ্ধাবস্থার কারণে কোনো কোনো সাহাবিকে কোথাও কোথাও অনিচ্ছাকৃতভাবে বাধ্য হয়ে কয়েক মাস পর্যন্ত অবস্থান করতে হয়। এ সময় তারা নামায কসর করতেন।
হযরত আনাস রা. দুই বছর পর্যন্ত সিরিয়ায় আটকা পড়ে থাকেন। দু'বছরই তিনি সেখানে নামায কসর করেন। বিখ্যাত হানাফি ফিকাহ গ্রন্থ কবীরীর গ্রন্থকার লিখেছেন : "এ ব্যাপারে আলেমদের ইজমা রয়েছে যে, মুসাফির যতোদিন অবস্থানের ইচ্ছে ও নিয়ত করবেনা, ততোদিন কসর পড়বে।"
তিনি বলেন, হযরত উমরের রা. ও এটাই মত। অতপর লিখেন, সাহাবায়ে কিরাম বাধ্য হয়ে হরমুযানে নয় মাস অবস্থান করেন এবং পুরো সময় নামায কসর করেন। এরপর বায়হাকি থেকে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. সম্পর্কে উল্লেখ করেন যে, এক যুদ্ধের সময় তিনি বরফ জমে যাবার কারণে ছয়মাস আজারবাইজানে অবস্থান করেন, এই পুরো সময় তিনি এবং অন্যান্য সাহাবি রা. নামায কসর করেন। সামনে অগ্রসর হয়ে গ্রন্থকার আরো উল্লেখ করেন, দারুল হরবে যদি অবস্থানের নিয়তও করা হয়, তবু তা নির্ভরযোগ্য নয়। কারণ, হতে পারে তারা শত্রুদের পরাজিত করে সেখানে অবস্থান করবে, আবার এমনও হতে পারে যে তারা নিজেরা পরাজিত হয়ে সেখান থেকে পিছু হটবে। তাদের অবস্থায় এই নিশ্চয়তা তাদের অবস্থানের ইচ্ছেকে বাতিল করে দেয়। অথচ অবস্থানের জন্যে অটল সিদ্ধান্ত অপরিহার্য। গ্রন্থকার আলোচনা আরো দীর্ঘায়িত করেছেন। সবটা উল্লেখ করা সম্ভবও নয়। প্রয়োজনও নেই।
২. সদকায়ে ফিতরের নিসাব আর যাকাতের নিসাব একই রকম। তবে যাকাতের নিসাব সোনা, রূপা, নগদ অর্থ, পুঁজি, ব্যবসায়ের মাল প্রভৃতির ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়, কিন্তু সদকায়ে ফিতর ঐ ব্যক্তির জন্যেও ওয়াজিব, যার কাছে তার অপরিহার্য প্রয়োজনের বাইরে যে মাল সামগ্রিই থাকবে, তার মূল্যও যাকাতের নেসাবের মতো গণ্য করতে হবে। [তরজমানুল কুরআন, এপ্রিল ১৯৮১]
|
সর্বশেষ আপডেট ( Friday, 04 March 2011 )
|