 |
|
 |
আমাদের টাইপ করা বইগুলোতে বানান ভুল রয়ে গিয়েছে প্রচুর। আমরা ভুলগুলো ঠিক
করার চেষ্টা করছি ক্রমাগত। ভুল শুধরানো এবং টাইপ সেটিং জড়িত কাজে সহায়তা
করতে যোগাযোগ করুন আমাদের সাথে।
রাসায়েল ও মাসায়েল ৬ষ্ঠ খন্ড |
|
|
লিখেছেন সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী
|
Monday, 28 February 2011 |
পাতা 38 মোট 74
<h1>৩৬। কুরবানীর চামড়া সম্পর্কে শরিয়তের বিধান</h1>
প্রশ্ন : আমি কুরবানীর চামড়া সম্পর্কে শরিয়তের বিধান জানতে ইচ্ছুক। কোনো কোনো আলেম বলেন, কুরবানীর চামড়া কোনো অভাবি কিংবা মিসকিনকে দেয়া উচিত, অথবা দরিদ্র ছাত্র বা এতিমদের কল্যাণে ব্যয় করবে এমন প্রতিষ্ঠানের হাতে অর্পণ করা উচিত। এই সব আলেমদের মতে, চামড়া বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর তা যাকাতের বিধানের আওতায় চলে যায়। তাই এগুলোকে যাকাতের জন্য নির্দিষ্ট খাতে ও নির্দিষ্ট শর্তানুসারে ব্যয় করতে হবে। সব ধরণের জনকল্যাণমূলক কাজে এর অর্থ ব্যয় করা জায়েয নয়।
কেউ কেউ এ কথাও বলেন, যারা কুরবানী করার পর নির্বিচারে যাকে তাকে কুরবানীর চামড়া দিয়ে দেয় এবং তা কোন্ খাতে ব্যয় করা হবে, তা ভেবে দেখেনা ও খোঁজ নেয়না, তাদের কুরবানী হয়না। আমি তো মনে করেছিলাম, যে ব্যক্তি করবানী করে তার উপর হাদিস অনুযায়ী শুধু এতোটুকু বাধ্যবাধকতা থাকে যে, সে নিজে চামড়া বেচে খেতে পারবেনা। জনসেবা ও জনকল্যাণমলূক কাজের জন্য তা অন্যের কাছে সোপর্দ করতে হবে। এর পর কুরবানীকারীর আর কোনো দায়দায়িত্ব থাকেনা। যার কাছে সোপর্দ করা হলো, সে যদি তা কোনো ভালো কাজে ব্যয় করে, তা হলে সেও দায়মুক্ত হয়ে যায়। তথাপি এ বিষয়টি বিশ্লেষণ করে সংশয়মুক্ত করলে ভালো হয়, যাতে কারো মনে আর কোনো জটিলতার সৃষ্টি হতে না পারে।
জবাব : হজ্জের সময় হাজী সাহেবদের কৃত কুরবানী এবং ঈদুল আযহা উদযাপনকালে সারা দুনিয়ার মুসলমানদের কৃত কুরবানী উভয়ের গোশত ও চামড়ার ব্যাপারে শরিয়তের বিধান একই রকম। কুরবানীর চামড়া সম্পর্কে রসূলূল্লাহ সা. বলেছেন :
-------------------------------------------
"তোমরা কুরবানীর পশুর চামড়া দ্বারা উপকৃত হও, বিক্রি করে দিও না।"
হযরত আলী রা. বর্ণনা করেন, রসূলুল্লাহ সা. আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন :
------------------------------------------------
"আমি যেনো কুরবানীর মজুরি বাবদ গোশত বা চামড়া থেকে কসাইকে কিছু না দিই।"
উল্লেখিত নির্দেশাবলীর যে নিগুঢ় মর্ম স্পষ্টতই উপলব্ধি করা যাচ্ছে তা এই যে, যে ব্যক্তি কুরবানী করবে, সে কুরবানীর চামড়া বা গোশত বিক্রি করে তার মূল্য নিজের কাজেও লাগাতে পারবেনা, চামড়া ও গোশত দিয়ে কসাইর মজুরিও দিতে পারবেনা। চামড়াকে চামড়ার আকারে রেখে প্রক্রিয়াজাত করে কুরবানীকারী নিজের কাজেও ব্যবহার করতে পারবে, ইচ্ছে করলে তা প্রিয়জনকে উপহার হিসেবেও দিতে পারবে, ইচ্ছে করলে তা সদকাও করতে পারবে। অন্যকথায় বলা যায়, রসূলুল্লাহ সা.-এর উক্ত নির্দেশাবলীর তাৎপর্য হলো, কুরবানীকারী চামড়া বিক্রি করে তার মূল্য নিজের ব্যক্তিগত কাজে না খাটিয়ে তার পক্ষে চামড়াকে হুবুহু নিজের ব্যবহারে লাগানো, অথবা কোনো দরিদ্র ও নি:স্ব ব্যক্তিকে দান করা কিংবা কোনো ধনী ব্যক্তিকে বিনামূল্যে উপহার বা উপঢৌকন হিসেবে দেয়া বৈধ। উপরোক্ত তিনটি কর্মপন্থাই শরিয়তের দৃষ্টিতে জায়েয। এ ব্যাপারে ইমাম ও ফকীহগণের মধ্যে কোনো মতভেদ নেই।
এখানে অবশ্য আরো একটা প্রশ্ন জাগে যে, কুরবানীকারী যদি চামড়া বিক্রি করে দেয়, তাহলে তার মূল্য কোন্ খাতে ব্যয় করা যাবে। অনুরূপভাবে, কুরবানীকারী যদি চামড়া কোনো স্বচ্ছল ব্যক্তিকে উপহার হিসেবে দিয়ে দেয় এবং সেই স্বচ্ছল ব্যক্তি তা বিক্রি করে দেয়, তবে সে তা কোথায় করবে? এ কথা তো সুস্পষ্ট যে, উভয় ক্ষেত্রে বিক্রয়কারীর পক্ষে চামড়ার মূল্য ব্যক্তিগত কাজে খাটানো জায়েয হবেনা, বরং তা সদকা হিসেবে দান করা তার জন্য বাধ্যতামূলক। তবে প্রতিপাদ্য বিষয় এই যে, এই সদকা কি ওয়াজিব না নফল হিসেবে গণ্য হবে? এটাকে যদি যাকাতের ন্যায় আবশ্যিক সদকা মনে করা হয়, তবে তার ব্যয়ের খাত যাকাতের ব্যয়ের খাতের মতোই হবে। আর যদি এটা নফল সদকা হয়, তবে তা যে কোনো সৎ কাজে ব্যয় করা যাবে এর দ্বারা দরিদ্র লোকেরা ছাড়া ক্ষেত্র বিশেষে ধনী লোকেরাও উপকৃত হলে দোষ নেই।
আধুনিক হানাফি ফকীহগণের মতানুসারে কুরবানীর চামড়ার বিক্রয়লব্ধ অর্থ অবিকল যাকাতের ব্যয়ের খাতেই ব্যয় করতে হবে। আমি এ বিষয়ে যথাসাধ্য চিন্তা গবেষণা ও তত্ত্বানুসন্ধান চালিয়েছি যে, কুরআন ও হাদিসের কোথাও এই মতের সপক্ষে কোনো দলিল পাওয়া যায় কিনা, এবং হানাফি মাযহাবের ফেকাহ শাস্ত্রীয় গ্রন্থাবলীতেও খুঁজে দেখিছি যে, এই মতের সপক্ষে কোনো যুক্তি লিপিবদ্ধ আছে কিনা? কিন্তু আমি এখন পর্যন্ত এমন কোনো মজবুত দলিল পাইনি। কুরবানী যদিও হানাফিদের পরিভাষা অনুসারে ওয়াজিব, কিন্তু কুরবানীর গোশত ও চামড়া সম্পর্কে শরিয়তের যেসব নির্দেশ রয়েছে, যাকাত ও উশরের নির্দেশের সাথে তার কোনো সাদৃশ্য নেই। গোশত ও চামড়া দ্বারা কুরবানীকারী নিজেও কিছু না কিছু উপকৃত হতে পারে। কিন্তু যাকাতের সম্পদ দ্বারা এধরণের উপকৃত হওয়া নাজায়েয। 'চামড়া বিক্রি করোনা' হাদিসের এই উক্তি থেকে চামড়ার বিক্রয়লব্ধ অর্থ দ্বারা উপকৃত হওয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রমাণিত হয়, সে কথা সত্য। তবে কেউ যদি চামড়ার মূল্য কোনো সৎ কাজে বা কল্যাণমূলক কাজে খাটায় এবং বিক্রয়কারী নিজের ব্যক্তিগত ভোগে না লাগায়, তা হলেও নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য সফল হয়।
কুরবানীর চামড়ার বিক্রয়লব্ধ অর্থকে যদি যাকাতের সমতুল্য ধরা হয়, তাহলে এ অর্থ সংগ্রহ করা ও যাকাতের খাতে তার বন্টন নিশ্চিত করাকেও ইসলামি সরকারের দায়িত্ব বলে গণ্য করতে হবে। সেটা যদি করা হয়, তবে তা এমন একটা বিদ্য়াত হবে, যার সমর্থনে রসূলুল্লাহ সা.-এর কিংবা খোলাফায়ে রাশেদীনের কোনো মৌখিক উক্তি কিংবা বাস্তব উদাহরণ পাওয়া যাবেনা। প্রসঙ্গত এ কথাও উল্লেখযোগ্য যে, হানাফি ফকীহগণ চামড়ার বিক্রয়লব্ধ অর্থ দ্বারা একেবারেই উপকৃত হওয়া যাবেনা, এ কথা মেনে নেননি। কোনো কোনো ক্ষেত্রকে বরং বিশেষ ক্ষেত্ররূপে চিহ্নিত করে তাতে এই অর্থ খাটানো জায়েয বলে তারা রায় দিয়েছেন এবং সে রায় বিশুদ্ধ কিয়াস ও ইসতিহসানের সূত্র অনুযায়ী সম্পূর্ণ যুক্তিসঙ্গত। আল্লামা সারাখসী স্বীয় 'আল মাসবুত' গ্রন্থের ১২শ খণ্ডে বলেছেন :
-----------------------------------------
"কুরবানীকারী যদি কুরবানীর চামড়া দিয়ে গৃহের কোনো আসবাবপত্র খরিদ করে তবে তাতে আপত্তি নেই।"
তিনি এর আরো বিশদ বিবরণ দিতে গিয়ে বলেছেন যে, এমন আসবাবপত্র খরিদ করা চাই যা টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী হয়, যেমন চালনি বা ব্যাগ ইত্যাদি। লবণ, সিরকা বা ইত্যাকার ক্ষণস্থায়ী জিনিস চামড়ার বিনিময়ে খরিদ করা উচিৎ নয়। চামড়া বিক্রি করে নগদ অর্থ সংগ্রহ করা হলে সে সম্পর্কেও ইমাম সারখসী শুধু এ কথা বলেই ক্ষান্ত থেকেছেন যে -------------- 'তার মূল্য সদকা করে দিতে হবে।'
এর অর্থ এই দাঁড়ায় যে, তিনি সদকাকে সাধারণ ও ব্যাপক অর্থে বহাল রেখেছেন। ফলে ওয়াজিব সদকা ও নফল সদকা দু'টোই এর আওতায় আসে। তাই এটিকে যাকাতের খাতেই ব্যয় করতে হবে এরূপ কোনো বাধ্যবাধকতা আছে বলে তিনি মনে করেননা। চামড়ার মূল্যকে আল্লাহর পথে ও তার বান্দাদের কল্যাণার্থে ব্যয় করলেই চলবে। [তরজমানুল কুরআন, জুলাই ১৯৬৮]
|
সর্বশেষ আপডেট ( Friday, 04 March 2011 )
|
|
|
|