আমাদের টাইপ করা বইগুলোতে বানান ভুল রয়ে গিয়েছে প্রচুর। আমরা ভুলগুলো ঠিক করার চেষ্টা করছি ক্রমাগত। ভুল শুধরানো এবং টাইপ সেটিং জড়িত কাজে সহায়তা করতে যোগাযোগ করুন আমাদের সাথে।
রাসায়েল ও মাসায়েল ৬ষ্ঠ খন্ড প্রিন্ট কর ইমেল
লিখেছেন সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী   
Monday, 28 February 2011
আর্টিকেল সূচি
রাসায়েল ও মাসায়েল ৬ষ্ঠ খন্ড
গ্রন্থকার পরিচিতি
১। আল্লাহর অস্তিত্ব সম্পর্কে সংশয় নিরসন
২। আল্লাহ ও তাঁর রসুলগণের মধ্যে পার্থক্য করা
৩। জীবজন্তুর উপর দয়া
৪। পাঁচ ওয়াক্ত ও পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায
৫। হানাফি মাযহাবে কি কিছু কিছু মাদক দ্রব্য হালাল?
৬। আদালতের রায় কি শুধু জাহেরীভাবেই কার্যকর, নাকি বাতেনীভাবেও কার্যকর?
৭। সুন্নাহর আইনগত মর্যাদা
৮। সাহরির শেষ সময় কোনটি?
৯। একটি হাদিস থেকে সুদের বৈধতা প্রমাণের অপচেষ্টা
১০। মুসলিম উম্মাহর বহু গোষ্ঠিতে বিভক্তি এবং মুক্তি লাভকারি গোষ্ঠি
১১। কালো খেজাব লাগানো কি বৈধ?-১
১২। কালো খেজাব কি বৈধ?-২
১৩। তাকদীর প্রসঙ্গ
১৪। গোমরাহী ও হেদায়েত
১৫। সূরা আন নাজমের প্রাথমিক আয়াত কয়টির ব্যাখ্যা
১৬। যাকাতকে প্রচলিত করের সাথে যুক্ত করা যায় না
১৭। পিতামাতার অধিকার
১৮। লোহার আংটি পরা কি জায়েয?
১৯। উশর ও খারাজের কয়েকটি সমস্যা
২০। উশরযোগ্য ফল ফসল কি কি?
২১। মোজার উপর মসেহ করার বিধান
২২। কারো সম্মানে দাঁড়ানো কি জায়েয?
২৩। 'প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ দান করা' সংক্রান্ত কুরআনের আদেশের ব্যাখ্যা
২৪। অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানদের ভরণ পোষণ প্রসঙ্গে
২৫। কবর আযাব
২৬। কুরআন শিক্ষাদান ও অন্যান্য ধর্মীয় কাজের পারিশ্রমিক নেয়া কি বৈধ?
২৭। ইসলামের ফৌজদারী দণ্ডবিধি সংক্রান্ত কিছু ব্যাখ্যা
২৮। বেতের নামাযে দোয়া কুনূত
২৯। লাইসেন্স ক্রয় বিক্রয়
৩০। কিবলার দিক নির্ণয়ের শরিয়তসম্মত বনাম বিজ্ঞানসম্মত পন্থা
৩১। মৃত ব্যক্তির জন্য ফিদিয়া দান, শোক ও কুরআন খতম
৩২। কয়েদি সৈন্যরা কি নামায কসর করবে
৩৩। পবিত্র কুরআন ও গুপ্ত ওহি
৩৪। ব্যভিচারের অপবাদ
৩৫। কোন কোন প্রাণী হালাল বা হারাম
৩৬। কুরবানীর চামড়া সম্পর্কে শরিয়তের বিধান
৩৭। মৃত ব্যক্তির চামড়া সম্পর্কে শরিয়তের বিধান
৩৮। মৃত প্রাণীর চামড়া সম্পর্কে আরো আলোচনা
৩৯। জবাই হালাল হওয়ার জন্য কি বিস্
৪০। যাকাত সংক্রান্ত কিছু খোলামেলা কথা
৪১। নগদ পুঁজির যাকাত ও তার নিসাব
৪২। বাইয়ে সালাম
৪৩। হযরত আলী রা.-এর জন্য সূর্যকে ফিরিয়ে দেয়ার ঘটনা কি সত্য?
৪৪। কুরাইশের ১২ জন খলিফা ও 'ফিতনায়ে আহলাস'
৪৫। আল্লাহ ও রসূলের কোনো উক্তি কি মানুষকে কর্মবিমুখ করতে পারে?
৪৬। আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করা সত্ত্বেও দৈন্যদশার কারণ কি?
৪৭। হযরত আলী রা.-এর বর্ম চুরি-১
৪৮। হযরত আলী রা.-এর বর্ম চুরি-২
৪৯। ইসলামের দৃষ্টিতে গানবাজনা ও নারী পুরুষের মেলামেশা
৫০। আব্দুল্লাহ বিন উবাইর জানাযা
৫১। ইমাম ইবনে তাবারি কি শিয়া ছিলেন?
৫২। ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে আপোস নিষ্পত্তির অধিকার
৫৩। ইসলামের উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে অভিযোগ
৫৪। শরিয়তের দৃষ্টিতে ওয়াকফের সংজ্ঞা ও বিধান
৫৫। আত্মহননকারীর জানাযা নামায
৫৬। হারুত মারুত ফেরেশতাদ্বয় সম্পর্কে এক ভিত্তিহীন অলীক কাহিনী
৫৭। 'চাটান' সম্পাদকের নিকট দুটো চিঠি
৫৮। হাদিস অস্বীকার করা ও স্বীকার করা
৫৯। হাদিস বিরোধী গোষ্ঠির বিভ্রান্তিকর প্রচারণা
৬০। একটি হাদিস সম্পর্কে আপত্তি ও তার জবাব
৬১। সন্তান পালনে নারীর অধিকার
৬২। স্তনের দুধ পানে বিয়ে হারাম হওয়া
৬৩। পারিবারিক আইন ও অর্পিত তালাক
৬৪। ফাসিদ বিয়ে ও বাতিল বিয়ে
৬৫। রসূল সা. কি হযরত সওদা রা. কে তালাক দিতে চেয়েছিলেন?
৬৬। উম্মুল মুমিনীন হযরত সওদার বিয়ে সম্পর্কে আরো আলোচনা
৬৭। কতোখানি দুধ পান করলে বিয়ে হারাম হয়?
৬৮। পিতামাতার আদেশে স্ত্রী তালাক দেয়া যায় কি?
৬৯। রসুল সা.-এর একাধিক বিয়ের যৌক্তিকতা ও সার্থকতা
৭০। বেলুচিস্তানের বাগদান প্রথা
৭১। লটারি ও নির্বাচনী লটারি
৭২। সমবায় সমিতি

<h1>৫৭। 'চাটান' সম্পাদকের নিকট দুটো চিঠি</h1>
[ à§§ ]
লাহোর, ২৬ জুন ১৯৫৪
জনাব আগা শোরেশ কাশ্মীরী সাহেব,
আস্‌সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
চাটানের বিগত সংখ্যায় হাদিস অস্বীকারকারী জনৈক ভদ্রলোকের একটা চিঠি প্রকাশিত হয়েছে। এই চিঠিতে তিনি দাসত্ব প্রথা সম্পর্কেও মতামত ব্যক্ত করেছেন। দাসত্ব সম্পর্কে কুরআন, হাদিস ও ফেকাহ শাস্ত্রীয় গ্রন্থাবলীতে শরিয়তের বিধানের যেরূপ বিশদ বিবরণ রয়েছে, সাধারণ মুসলমানদের তা জানা নেই। এর ফলে যে মহলটি ইসলামের উৎস হিসেবে হাদিসকে  মানেনা এবং অন্য যারা পাশ্চাত্যের মানসিক গোলামীতে লিপ্ত ও প্রাচ্যবাদীদের বই পুস্তক পড়ে নিদারুণভাবে প্রভাবিত ও দিশেহারা, তার বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি দাসত্বের বিষয়টাকেও ছুতা হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং এই ছুতা ধরে সাধারণ মুসলমানদের ইসলাম সম্পর্কে বীতশ্রদ্ধ করে তোলার অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে। এই সংক্ষিপ্ত চিঠিতে দাসত্ব সম্পর্কে ইসলামের বিস্তারিত বিধান তুলে ধরা ও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন আপত্তি ও অভিযোগের জবাব দেয়া তো সম্ভব নয়। তথাপি পত্রলেখক যেহেতু নিজের ধারণা মোতাবেক চরম আপত্তিকর হাদিস বাছাই করে উল্লেখ করেছেন, তাই সে সম্পর্কে কিছু বক্তব্য তুলে ধরছি। পত্রলেখক বুখারি শরিফের একটি উদ্ধৃতি দিয়েছেন : --------------------------------- তিনি এর অনুবাদ করেছেন  এভাবে যে, 'গর্ভবতী দাসির যোনি ব্যতিত অন্য কোথাও সহবাস করলে আপত্তি নেই।' দু:খের বিষয়, তিনি বুখারির সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ে ও পরিচ্ছেদের নাম উল্লেখ করেননি। তা যদি করতেন তা হলে জানা যেতো যে, এই উক্তিটি কোন হাদিসের অংশ, না হাদিস বর্ণনাকারীর বক্তব্য। আর এটা হাদিসের অংশ হয়ে থাকলে তা সরাসরি রসূল সা. পর্যন্ত তার সনদের ধারাবাহিকতা সংরক্ষিত কিনা। যেহেতু ইমাম বুখারি নিছক হাদিস সংগ্রাহক নন, বরং সেই সাথে একজন ফেকাহবিদও, তাই তিনি বহু জায়গায় নিজস্ব ফেকাহ শাস্ত্রীয় যুক্তিও উপস্থাপন  করেছেন। আর সেই যুক্তি ও সিদ্ধান্তের সপক্ষে সাহাবি বা বর্ণনাকারীর মতামত উদ্ধৃত করেছেন। এ ধরনের যুক্তি বা মতামত আর যাই হোক, তার সংগৃহীত হাদিসের সমমানের নয়।

উদ্ধৃত কথাটি যদি কোনো সহীহ হাদিসের অংশ হয়ে থাকে, তাহলে এর যে অনুবাদ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত ভ্রান্ত ও বিভ্রান্তিকর। যে ব্যক্তি আরবি ভাষা সম্পর্কে অজ্ঞ, অথবা জেনে শুনে স্বল্প জ্ঞানের অধিকারী লোকদেরকে বিভ্রান্ত ও বীতশ্রদ্ধ করতে চায়, কেবলমাত্র তার পক্ষেই এ রকম অনুবাদ করা সম্ভব। এ হাদিসের সঠিক অনুবাদ হলো : 'গর্ভবতী দাসির যোনি ছাড়া শরীরের অন্যান্য অংশ স্পর্শ করা জায়েয।' এর তাৎপর্য এই যে, গর্ভবতী দাসির সাথে মেলামেশা  ও স্পর্শ করা জায়েয আছে।  কিন্তু সহবাস করা জায়েয নেই। একাধিক হাদিসে বলা হয়েছে, দাসীদের মাসিক ঋতুস্রাব শুরু ও শেষ হওয়ার মাধ্যমে জরায়ু পরিষ্কার হয়ে সন্তান সম্ভাবা না হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েই তাদের সাথে সহবাস করা যাবে, তার আগে নয়। আর গর্ভবতী হয়ে থাকলে সন্তান ভূমিষ্ট না হওয়া পর্যন্ত সহবাস করা যাবেনা। কেননা এতে করে সন্তানের পিতৃপরিচয় সন্দেহজনক হয়ে যায়। উপরোক্ত হাদিসেও গর্ভবতী দাসীর সাথে সহবাস নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং শুধুমাত্র শরীরের বাদবাকী অংশ স্পর্শ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু অনুবাদে ------------ শব্দের অর্থ স্পর্শ করার পরিবর্তে  সহবাস করা লিখে প্রকারান্তরে প্রতারণাপূর্ণ পন্থায় শব্দটিকে তার আসল অর্থের পরিবর্তে একটা অবাঞ্ছিত অর্থের বাহন করা হয়েছে। অথচ অভিধানে ও আরবদের চলতি কথাবার্তায় এ শব্দটি কখনো সহবাস অর্থে ব্যবহৃহ হয়নি। বস্তুত, এ বাক্যটির এরূপ অনুবাদ করা যে যোনি ব্যতিত অন্য জায়গায় সহবাস করতে আপত্তি নেই। কোনো সুস্থ বিবেক সম্পন্ন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। ইবনে আসীর প্রণীত নিহায়া হাদিসের অভিধান বিষয়ে একটি বিস্তৃত ও প্রামাণ্য গ্রন্থ। এতে ------------------ শব্দটির অর্থ সহবাস বলা হয়নি। এমনকি এ শব্দের কর্মবাচক পদে  যদি স্ত্রীলোক থেকে  থাকে তাহলেও তার অর্থ চুম্বন লেখা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, উল্লেখ করা দরকার যে, স্ত্রীলোক ও যৌন বিষয়ক  হাদিস ও ফেকাহ শাস্ত্রীয় মাসয়ালাগুলো নিয়ে অতিশয় আলোচনা ও মাতামাতি করা হাদিস অস্বীকারকারী মহলের একটা প্রিয় নৈমিত্তিক কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা এর দ্বারা বুঝাতে চেষ্টা করে যে, যারা এসব বিষয় নিজ নিজ কিতাবে লিখেছেন, তার যৌন বিকৃতির শিকার। অথচ এ রোগে তারাই আক্রান্ত, যারা হাজারো বিষয়ের হাদিস, ফেকাহ শাস্ত্রীয় হাজারো মাসয়ালা থাকতে এই ক'টা হাতে গোনা বিষয়েকে বেছে নিয়ে এগুলোর চর্চায় মুখর থাকে। নচেৎ এ কথা কাউকে বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, মানুষের সমস্যাবলী নিয়ে যখনই ব্যাপক ও সার্বিক আলোচনা করা হবে, তখন যৌন বিষয়কে তা থেকে বাদ দেয়া যাবেনা। এমনকি কুরআনেও যৌন ও দাম্পত্য বিষয় আলোচিত হয়েছে। এ বিষয় সংক্রান্ত হাদিসগুলো সম্পর্কে এই মহলটি আরো একটি আপত্তি তুলে থাকে। সেটি হলো, রসূল সা. ও তাঁর স্ত্রীগণের পক্ষে এটা শোভনীয় হতে পারেনা যে, নিজেদের ঘরোয়া ব্যক্তিগত ও দাম্পত্য বিষয়গুলো মানুষের কাছে বলে বেড়াবেন। এ ধরণের যাবতীয় হাদিস রসূল সা.-এর দুর্নাম রটানোর উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। এই আপত্তিটা যারা তোলেন, তারা ভুলে যান যে, আল্লাহর নবী ও দুনিয়ার সাধারণ সংস্কারকদের মধ্যে একটা মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। দুনিয়ার সাধারণ সংস্কারকরা এসব বিষয়কে বাহ্যত গুরুত্বহীন ও অশালীন মনে করে এড়িয়ে যান। কিন্তু নবী রসূলগণ যেহেতু জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের সংস্কার ও সংশোধনের নিমিত্তে পৃথিবীতে আগমন করে থাকেন, তাই জীবনের কোনো দিককে তারা উপেক্ষা করতে পারেননা। কিছু কিছু পাশ্চত্য চিন্তাবিদও এ কথা স্বীকার করেছেন, রসূল সা. মানব জীবনের এই অপরিহার্য দিক সম্পর্কে যে শিক্ষা দিয়েছেন, তাও সংরক্ষণ করতে পারা মুসলমানদের এক পরম সৌভাগ্যের ব্যাপার। নচেৎ পাশ্চাত্যের সভ্যতা ও কৃষ্টির দাবিদাররা আজো সুস্পষ্টভাবে প্রকৃতির ডাকে  সাড়া দিতে এবং  পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হতেও শিখেনি।

বিভিন্ন বর্ণনা থেকে জানা যায়, যে বিকৃত ও বিরূপ মানসিকতা নিয়ে এ জাতীয় আপত্তি ও অভিযোগ আজকাল মুসলিম নামধারী লোকেরা তুলেছে, ঠিক একই ধরনের আপত্তি রসূল সা.-এর জীবদ্দশায় ইহুদি ও খৃস্টানরাও মুসলমানদের কাছে তুলতো। হাদিসে আছে, একবার জনৈক ইহুদি হযরত সালমান ফারসী রা. কে উপহাসচ্ছলে বলে : "তোমাদের নবী তোমাদেরকে সব কাজ, এমনকি পেশাব করাও শেখায়।" হযরত সালমান একজন বয়োবৃদ্ধ, বহুদর্শী ও পরিপক্ক ঈমান আকীদাসম্পন্ন সাহাবি ছিলেন। তিনি দুনিয়ার বেশ কয়েকটি ধর্ম গ্রহণ ও বর্জনের পর ইসলাম গ্রহণের সৌভাগ্য লাভ করেন। তাই স্বীয় রসূল সা.-এর সুমহান মর্যাদা তিনি যথাযথভাবে উপলব্ধি করতেন। তিনি বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে এবং কিছুমাত্র ইতস্তত ও বিব্রত বোধ না করে ঝটপট্‌ বলে দিলেন ঠিকই তো, আমাদের নবী সা. আমাদেরকে সব কিছুই শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি আমাদেরকে বলেছেন, 'পেশাব পায়খানা করতে নরম ও ঢাকা- ঘেরা জায়গা সন্ধান কর, মানুষের চলাচলের পথ ও ছায়াশীতল জায়গা এড়িয়ে চল, কেবলা সামনে বা পেছনে রেখো বসোনা, পরিষ্কার ঢিলা ব্যবহার করো এবং নোংরা ও অপবিত্র জিনিস ব্যবহার করোনা।' প্রশ্নটি শুনে হযরত সালমান রা. কোনো রকম ঘাবড়ে যাননি। বরঞ্চ তিনি রসূল সা.-এর শিক্ষা হুবুহু বর্ণনা করে দিলেন। একটুও ভাবলেন না যে, এসব জিনিস শেখানো একজন নবীর মর্যাদার সাথে বেমানান এবং তা বর্ণনা করা একজন সাহাবির পক্ষে অশোভন কিনা।

বস্তুত, রসূল সা. প্রত্যেক ব্যাপারে সাহাবায়ে কিরামকে এমনভাবে প্রশিক্ষণ দিতেন যেমন একজন স্নেহশীল পিতা নিজের সন্তানদের হাতে কলমে শিক্ষা দিয়ে থাকেন। পবিত্রতা সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে কিছু বলার সময় রসূল সা. বলতেন, আমি তোমাদের জন্য পিতৃস্থানীয়। পিতা যেভাবে পুত্রকে শিক্ষা দেয়, আমি সেভাবেই তোমাদেরকে শিক্ষা দেই। সাহাবায়ে কিরাম এবং মহিলা সাহাবিগণও রসূল সা.-এর নিকট সেভাবেই প্রতিটি সমস্যা নিয়ে যেতেন, যেমন সন্তানরা সকল ব্যাপারে পিতার কাছে যায়। অনুরূপভাবে রসূল সা.-এর জীবদ্দশায় এবং বিশেষত তাঁর ইন্তিকালের পর মুসলিম পুরুষ ও মহিলারা এ ধরণের গোপনীয় বিষয়ে ইসলামের শিক্ষা জানার জন্য উম্মুল মুমিনীনদের কাছে যেতেন। একটু ভাবলে বুঝা যাবে যে, রসূল সা. এবং উম্মুল  মুমিনীনদের কাছে যেতেন। একটু ভাবলে বুঝা যাবে যে, রসূল সা. এবং উম্মুল মুমিনীনগণের এটা কতো বড় ত্যাগ যে, তাঁরা শুধুমাত্র ইসলামের শিক্ষা বিস্তারের খাতিরে নিজেদের ব্যক্তিগত ও দাম্পত্য বিষয়ও উম্মতের সামনে প্রকাশ করতে দ্বিধা করেননি। অথচ সাধারণ পিতামাতা নিজের সন্তানদের কাছে এসব বিষয় প্রকাশ করতে কুণ্ঠাবোধ করে।

বস্তুত, রসূল সা. ও তাঁর পরিজনদের এ এক অনুপম ও মহৎ কোরবানি যে, তারা তাঁদের একান্ত ব্যক্তিগত জীবনকে শরিয়তের কল্যাণের জন্য  অকাতরে 'বিসর্জন দিয়েছেন এবং নিজেদের কোনো কিছুতেই গোপন রাখেননি, বরং সবকিছুই প্রকাশ করে দিয়েছেন। কিন্তু আজকাল  মানুষের ভালো মন্দের মাপকাঠি এমনভাবে পাল্টে গেছে যে, কবির ভাষায় বলতে গেলে বলা যায় : "বুদ্ধিমত্তাই হয়ে গেছে পাগলামী, আর পাগলামির নাম হয়েছে বুদ্ধিমত্তা।"

[ ২ ]
জনাব,
আস্‌সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
আমি ইতিপূর্বে হাদিস অস্বীকারকারী গোষ্ঠির নেতা চৌধুরী গোলাম আহমদ পারভেজের জনৈক শিষ্যের বক্তব্যের জবাবে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলাম। সে চিঠি চাটানে ছাপা হয়েছে। ঐ চিঠিতে আমি উল্লেখিত পত্রলেখকের উদ্ধৃত আরবি কথাটির প্রকৃত মর্ম বিশ্লেষণ করেছিলাম। তিনি ওটিকে হাদিস হিসেবে পেশ করে বলেছিলেন, কুরআনের পর যে কিতাবকে বিশুদ্ধতম কিতাব বলা হয়, সেই বুখারিতে বলা হয়েছে, এটি রসূল সা.-এর উক্তি, গর্ভবতী দাসির সাথে সহবাস সংক্রান্ত ঐ উক্তিটির সঠিক ব্যাখ্যা দেয়ার সাথে  সাথেই আমি একথাও বলেছিলাম যে, এটা রসূল সা.-এর উক্তি, না কোনো সাহাবির বক্তব্য, না কোনো ফেকাহ শাস্ত্রবিদদের অভিমত, তা বুখারির সংশ্লিষ্ট অধ্যায় ও পরিচ্ছেদের বরাত উল্লেখ করা ছাড়া বলা সম্ভব নয়। সম্প্রতি এক বন্ধু আমাকে 'ইদারায়ে তুলূয়ে ইসলাম' থেকে প্রকাশিত দু'খানা পুস্তিকা 'কুরআনি ফায়সালে' (কুরআনি সিদ্ধান্ত) এবং 'মিযাজ শিনাসে রসূল' (রসূলের স্বভাব সম্পর্কে অবগতি) এনে আমাকে দেন এবং বলেন, বিতর্কিত উদ্ধৃতিটি কোথা থেকে নেয়া হয়েছে, তা এই পুস্তিকায় উল্লেখ করা হয়েছে। পুস্তিকা দু'টি পড়ে আমি বুঝতে পারলাম, পারভেজ সাহেব অথবা তার প্রতিষ্ঠান 'ইদারায়ে তুলূয়ে ইসলামের' অন্য কোনো হোমরা-চোমরা ব্যক্তি অনেক আগেই তুলূয়ে ইসলাম পত্রিকায় ঐ উক্তিটিকে হাদিস আখ্যায়িত করেছিলেন। পরে সেই লেখাটিই এবং সেই সাথে উক্তিটিও আলোচ্য বই দুটিতে পুন:মুদ্রণ করা হয়েছে। সম্ভবত চাটানের পত্রলেখক ঐ লেখাটি পড়ে তা থেকে কথিত 'হাদিসটি পরম সমাদরে নোট করে নিজের কাজে রেখে দিয়েছিলেন। অতর চাটানে নিজের চিঠিতে তা উদ্ধৃত করে দিয়েছেন।'

যা হোক উল্লেখিত বই দুটিতে উক্তিটির উৎসের সন্ধান পর যখন আমি বুখারির সংশ্লিষ্ট স্থান খুঁজে বের করলাম, দেখলাম উক্তিটির শুরুতেই লেখা রয়েছে -------------- অর্থাৎ আতা বলেছেন .................। অর্থাৎ কিনা, যে উক্তিকে হাদিস আখ্যায়িত করে মনগড়া অর্থ করা হয়েছে, তা রসূল সা.-এর উক্তি তো নয়ই, কোনো সাহাবির উক্তিও নয়। বরং ওটা আতা বিন আবি রাবাহের ব্যক্তিগত অভিমত। যে কথা নবী সা. বলেননি, তাকে হাদিস বলে চালিয়ে দেয়া যে একটি বিরাট ধৃষ্টতা, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এ ধৃষ্টতা দেখে আমি মর্মাহত হলেও অবাক হইনি। কারণ হাদিস অস্বীকারকারীদের একাধিক লেখা পড়ে আমি বুঝেছি, তারা বিভিন্ন উদ্ধৃতির উৎসের বরাত দিতে গিয়ে ওলটপালট ও হেরফের করতে এবং যেনতেন প্রকারে তাকে  নিজের মতলবসিদ্ধির সহায়ক বানাতে এতো সিদ্ধহস্ত যে, তা দেখে নিবন্ধকারের উদ্দেশ্যের সততা ও জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে তার বিশ্বস্ততায় আস্থাবান হওয়া যায়না। আমি এই মহলের দ্বিতীয় ও তৃতীয় কাতারের লোকদের বাদ দিয়ে তাদের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের মধ্য থেকে  মাত্র একজনের দৃষ্টান্ত তুলে ধরছি। ইনি হাফেয মুহাম্মদ আসলাম জীরাজপুরী মরহুম। তিনি 'তারীখে নাজদ্‌' (নাজদের ইতিহাস) এবং 'তারীখুল উম্মাত' (মুসলিম জাতির ইতিহাস) নামক দু'খানা বই লিখেছেন। এ দু'খানা বই জীরাজপুরী সাহেবের নিজের মৌলিক রচনা নয়, বরং প্রথমটি মুহাম্মদ শুকরী আলূসী লিখিত 'তারীখে নাজদ্‌' এবং দ্বিতীয়টি শেখ মুহাম্মদ বেগ আল হাজরামীর লেখা 'মুহাদারাতুল উমামিল ইসলামিয়া' গ্রন্থের অনুবাদ। জ্ঞান চর্চা ও পুস্তক রচনার জগতে একটি সর্বস্বীকৃত নৈতিক নীতি চালু রয়েছে যে, কোনো লেখক যদি কোনো পূর্বসুরী বা সমকালীন লেখকের রচিত কোনো গ্রন্থ থেকে অনুবাদ, সারসংক্ষেপ বা উদ্ধৃতি দেয়, তবে সে যে মূল  গ্রন্থ থেকে তা গ্রহণ করেছে, তার উল্লেখ করেও স্বীকৃতি দেয়। এই রীতির লংঘনকে বিজ্ঞ মহলে "লেখা চুরি করা কাফন চুরি করার চেয়েও জঘণ্য অপরাধ।" অথচ এখানে বিশালকায় গ্রন্থের অনুবাদ করে তাকে নিজস্ব কীর্তি হিসেবে পেশ করা হয়েছে। আরো মজার ব্যাপার এই যে, একদিকে গায়ে মনেনা আপনি মোড়ল গোছের এইসব পণ্ডিত নিজেদেরকে পণ্ডিতকুল শিরোমনি হিসেবে জাহির করতে উদগ্রীব এবং মুসলমানদের সর্বজনমান্য আলেমদের মাথার উপরে গদা ঘুরাতে সদা ব্যস্ত। অপরদিকে সেইসব আলেমেরই বড় বড় গ্রন্থকে চুরি করে বেচে খেতে তাদের বিবেকে কিছুমাত্র বাধেনা। এখন জীরাজপুরী সাহেবের সতীর্থদের ঔদ্ধত্য এতোদুর বেড়ে গেছে যে, রসূল সা. ব্যতিত অন্য মানুষের বক্তব্যকে দোর্দণ্ড প্রতাপে রসূলের হাদিস বলে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে এবং একবার নয়, বারবার চালানো হচ্ছে। অথচ রসূল সা. দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছেন, "আমার উপর মিথ্যা আরোপ করা সাধারণ মানুষের উপর মিথ্যা আরোপ করার সমান নয়। যে ব্যক্তি ইচ্ছাপূর্বক আমার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে, সে যেনো দোযখে নিজের ঠিকানা বানিয়ে নেয়।" এটা বিচিত্র নয় যে, হাদিস অমান্যকারী গোষ্ঠির কেউ হয়তো রসূল সা.-এর এই হুশিয়ারীকেও মনগড়া হাদিস বলে অবলীলায় অগ্রাহ্য করবে। কিন্তু আমাদের কাছে এ হাদিস এমন সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে যে, কোনো মুসলমানের সাধ্য নেই একে অস্বীকার করার।  এসব অপকৌশল দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, এ মহলটি হাদিস বিশারদগণের বিরুদ্ধে এতো সহজে বিষোদগার করা শুরু করেছে কেন? সম্ভবত তারা অন্যদেরকেও নিজেদের সাথে তুলনা করে এবং মনে করে, যে কোনো ছলিমুদ্দীনের কথাকে মনগড়া আখ্যায়িত করা আর যে কোনো কলিমুদ্দীনের কথাকে হাদিস বলে চালিয়ে দেয়া তাদের কাছে যেমন সহজ, তাদের ধারণামতে হাদিস বর্ণনার কালজয়ী শাস্ত্রটিও বোধ হয় সেই ধরণের কোনো কারসাজি।

প্রসঙ্গত, আরো একটি মাজার উল্লেখ  করা প্রয়োজন। উপরোক্ত লেখাগুলো পড়ে বুঝা যায়, তথাকথিত উক্ত হাদিসটি যখন প্রথমে 'তুলূয়ে ইসলাম' প্রত্রিকায় উল্লেখ করা হয়, তখন তার চরম অরচিকর মনগড়া কদর্থ করার  পর টীকায় লেখা হয়েছে যে, "তুলূয়ে ইসলামের জন্য  এটি বড়ই মর্মন্তুদ ও বেদনাদায়ক মুর্হূত্ব, যখন এর পাতায় এমন কোনো কথা লিখতে বাধ্য হতে হয়, যা দুনিয়ায় মানুষের সামনে তুলে ধরতে গিয়ে আমাদের মাথা হেট হয়ে যায়.............।" কিন্তু পরক্ষণেই পত্রিকাটির কর্তৃপক্ষ নিজেদের মনটাকে শক্ত করে এতোটা হিম্মত ও সাহস সঞ্চয় করে ফেলেন যে, সেই মাথা হেট করা বক্তব্য সম্বলিত লেখাটি নিজেদের প্রকাশিত দুই-দু'টো পুস্তকে একই সময় ছেপে দিতে কুণ্ঠিত হননি। আর 'মেযাজে শিনাসে রসূল' নামক বইটিতে তো এই তথাকথিত হাদিসের অনুবাদ ও ব্যাখ্যার উপর 'অস্বাভাবিক যৌনক্রিয়া' উপ শিরোনামও ছুড়ে দেয়া হয়েছে। এরপর এখন 'তুলূয়ে ইসলাম' এর সংশ্লিষ্ট মহলের স্থায়ী নীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে এই যে, তারা এই তথাকথিত হাদিস ও শিরোনামকে গোটা  হাদিস শাস্ত্রের বিরুদ্ধে একটি যুৎসই কার্যকর হাতিয়ার ভেবে তাকে নিজেদের মস্তিকের অস্ত্রাগারে সংরক্ষিত করে রেখেছেন এবং এসব 'লড়াকু সিপাই' এই হাতিয়ারে সজ্জিত হয়ে যত্রতত্র লড়াই করতে নেমে পড়েছেন।

যাহোক, এই উক্তি  সম্পর্কে যখন সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে, এটা হাদিসও নয়, কোনো সাহাবির উক্তিও নয়, তখন এ কথা বলাই বাহুল্য যে, এই উক্তি আমাদের জন্য শরিয়তের কোনো দলিল হতে পারেনা, আর তার এমন কোনো গুরুত্ব থাকেনা যে, তার প্রকৃত মর্ম ও তাৎপর্য উদ্ধার করতে কিংবা তার সমর্থন ও প্রতিবাদে বেশি গলদঘর্ম হবার কোনো প্রয়োজন থাকতে পারে। তথাপি যেহেতু এই উক্তিটি অত্যন্ত জঘণ্য ও বিভ্রান্তিকরভাবে কদর্থ করে বেশ খানিকটা প্রচারণা চালানো হয়েছে এবং যেহেতু এর এমন ন্যক্কারজনক ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে, যা আরবি ভাষারই শুধু পরিপন্থি নয় বরং একাধিক হাদিসেরও সম্পূর্ণ বিপরীত, তাই আমি এ সম্পর্কে আরো একটুখানি ব্যাখ্যা দিচ্ছি।  আমার পূর্ববর্তী চিঠিতে আমি ইবনুল আসীরের গ্রন্থ 'নিহায়া'র বক্তব্য তুলে ধরেছি। পরে আমি হাদিসের শব্দার্থ সম্বলিত আরো  একখানা বিস্তৃত ও প্রামাণ্য গ্রন্থ 'মাজমায়ু বিহারিল আনোয়ার' (শেখ আলী বিন তাহের ফিতনী সংকলিত) দেখার সুযোগ পেয়েছি। এতেও ---------------- এর অর্থ করা হয়েছে 'চুম্বন ও মেলামেশা'। সেই সাথে এ ধরনের শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে এমন কয়েকটি হাদিসের উদ্ধৃতিও দেয়া হয়েছে। যেমন :
---------------------------------------------------------------------------------
"রসূল সা. রোযা থাকা অবস্থায় স্বীয় স্ত্রীগণের কারো কারো মাথায় চুমু খেতেন।" এখন ভাবনার বিষয়, এখানে -------------- শব্দের অর্থ যদি হাদিস অস্বীকারকারীদের কথামত 'সহবাস' গ্রহণ করা হয়, তাহলে এ হাদিসের অর্থ দাঁড়ায় এ রকম- "রসূল সা. রোযাদার অবস্থায় স্ত্রীগণের মাথায় সহবাস করতেন।" নাউজুবিল্লাহ! আল্লাহ আমাদের এমন প্রলাপ বকা থেকে রক্ষা করুন! কি বাজে ও কুৎসিত অর্থ দাঁড়ায় তাদের অনুবাদ মেনে নিলে, ভাবতেও গা শিউরে ওঠে। রূপক অর্থে যদি ------------- কে সহবাস অর্থে গ্রহণ করার অবকাশ থেকেও থাকে, তবুও -------------- এর --------------- বা অব্যয় প্রয়োগ করার পর এর অর্থ স্পর্শ বা মেলামেশা ও ঢলাঢলির অতিরিক্ত কিছু হতে পারেনা। আমি বুখারির কয়েকটি ব্যাখ্যা গ্রন্থও দেখেছি। সেগুলোতেও এ কথাটার অর্থ আমার প্রথম চিঠিতে বর্ণিত অর্থের অনুরূপই ব্যক্ত করা হয়েছে। এই সাথে আমি এ কথাও উল্লেখ করতে চাই যে, আতার উক্তিতে গর্ভবতী দাসীর সাথে যে ধরণের যৌন সম্ভোগের বৈধতার কথা বলা হয়েছে, মুজতাহিদ ইমামগণের বিপুল সংখ্যাগুরু অংশের মতে তাও অবৈধ ও অবাঞ্ছিত। কেননা এ ধরনের ব্যতিক্রম কোনো সহীহ হাদিস বা সাহাবির উক্তি থেকে প্রমাণিত হয়না। খোদ ইমাম বুখারি যে ব্যাপারে শুধুমাত্র আতার বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন, তা থেকে বুঝা যায় যে, তাঁর মতেও আর কেউ এ বক্তব্য সমর্থন করেনি। আমি যে চিঠির জবাবে আমার প্রথম  চিঠিটা লিখেছিলাম, তাতে যেহেতু এই অস্বাভাবিক সহবাসের সুস্পষ্ট উল্লেখ ছিলনা, তাই আমার কাছেও এটা রুচিকর মনে হয়নি, পত্রলেখক এসব কথা বলেছেন ধরে নিয়ে খামাখা এই বিশ্রী বিষয়ে আলোচনা চালাই। আমি শুধু আভাসে ইঙ্গিতে এবং সংক্ষিপ্তভাবে এতোটুকু বলেই ক্ষান্ত থেকেছিলাম যে, ঐ অনুবাদ দ্বারা অন্যায়ভাবে কথাটার একটা  ঘৃণ্য অর্থ বুঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এখন এই চিঠির উৎস দেখে আমি নিশ্চিত হয়েছি যে, এই কথাটা দ্বারা স্পষ্ট অস্বাভাবিক সহবাসই বুঝানো হচ্ছে, তাই আমি সর্বশেষে এটা স্পষ্ট করে দিতে চাই যে- এ ব্যাপারে রসূল সা.-এর সুস্পষ্ট বক্তব্য রয়েছে এবং সে অনুসারে এ কাজ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও অবৈধ। সকল সুন্নি আলেম ও চার মাযহাব এ কাজ হারাম হওয়ার ব্যাপারে একমত। কয়েকটি হাদিস এখানে উল্লেখ করছি, যা দ্বারা এ কাজ সুস্পষ্টভাবে হারাম বলে প্রমাণিত হয় :
---------------------------------------------------------------------------------
"হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রসূল সা. বলেছেন : যে ব্যক্তি স্বীয় স্ত্রীর গুহ্যদ্বারে সহবাস করে তার উপর অভিসম্পাত।"
---------------------------------------------------------------------------------
"হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত, রসূল সা. বলেছেন : যে ব্যক্তি কোনো পুরুষ বা স্ত্রীর সাথে অস্বাভাবিক পন্থায় যৌরক্রিয়া করবে, আল্লাহ তার দিকে তাকাবেন না।"
---------------------------------------------------------------------------------
"হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, রসূল সা. বলেছেন : যে ব্যক্তি  ঋতুবর্তী স্ত্রীর সাথে সহবাস করে অথবা অস্বাভাবিক পন্থায় সহবাস করে অথবা কোনো জ্যোতিষীর নিকট যায় এবং তার কথায় বিশ্বাস করে, সে মুহাম্মদ সা.-এর উপর নাযিলকৃত বিধানকে অস্বীকার করে।"
---------------------------------------------------------------------------------
"হযরত আলী রা. বর্ণনা করেন যে, রসূল সা. বলেছেন : তোমরা স্ত্রীদের সাথে অস্বাভাবিক পন্থায় সহবাস করোনা। আর আল্লাহা হক কথা বলতে লজ্জা পাননা।"

"হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত ------------- আয়াতটি আনসারদের কয়েকজন সম্পর্কে নাযিল হয়েছিল। তারা রসূল সা.-এর কাছে জিজ্ঞেস করলে তিনি উত্তর দেন : স্ত্রীর সাথে সকল পন্থায় সহবাস করা যায় যদি তা যোনিতে হয়" [মুসনদে আহমদ]
---------------------------------------------------------------------------------
"হযরত খুযায়মা বিন সাবেত থেকে বর্ণিত, রসূল সা. স্ত্রীর পশ্চাদ্বারে সহবাস করতে নিষেধ করেছেন।"
আমার বুঝে আসেনা, উল্লেখিত হাদিসসমূহ থাকতে রসূল সা. বলেননি এমন একটা কথাকে বুখারির হাদিস আখ্যায়িত করে হৈ চৈ করা, তার সঠিক ও স্বাভাবিক অর্থ বিকৃত করে মনগড়া অস্বাভাবিক অর্থ করা এবং কুরআনের পর সবচেয়ে বিশুদ্ধ কিতাবে এমন কথা রসূলের হাদিস হিসেবে বর্ণিত হয়েছে, যা প্রকাশ করতে গিয়ে মাথা হেট হয়ে যায়- এই বলে ঢাকঢোল পিটানো কি ধরণের  সততা এবং কোথাকার সুবিচার। আমি এই মহলের কাছে জানতে চাই :
                              -------------------------------------
"তোমাদের মাঝে কি একজনও বিবেকবান মানুষ নেই?"

বিচিত্র নয় যে, উপরোক্ত হাদিসগুলো সম্পর্কেও হয়তো এসব লোক অবলীলাক্রমে বলে বসবেন, একজন নবী কিভাবে এ ধরণের অশালীন কথাবার্তা বলে নিজের মুখকে কলংকিত করতে পারেন? এ জাতীয় আপত্তি ও অভিযোগের একটা জবাব তো আমি চিঠিতেই দিয়েছি। এর একটা জবাব এখানে এই বলে সংযোজন করতে চাই, যেহেতু আল্লাহ অদৃশ্য ও ভবিষ্যতের খবর জানেন এবং সেই সুবাদে তাঁর পূর্বাহ্নে জানা ছিলো যে, কিছু বিকৃত রুচিসম্পন্ন ও নির্বোধ মানুষ কিছু কিছু মানুষের উক্তির ভ্রান্ত ও বিকৃত অর্থ করে তাকে রসূলের হাদিস বলে চালাবার চেষ্টা করবে, তাই আল্লাহ স্বীয় রসূলের মুখ দিয়ে এমন বক্তব্য পেশ করিয়েছেন, যা দ্বারা এ ধরণের অপচেষ্টা আগে থেকেই রোধ করা সম্ভব হয়।



সর্বশেষ আপডেট ( Friday, 04 March 2011 )