 |
|
 |
আমাদের টাইপ করা বইগুলোতে বানান ভুল রয়ে গিয়েছে প্রচুর। আমরা ভুলগুলো ঠিক
করার চেষ্টা করছি ক্রমাগত। ভুল শুধরানো এবং টাইপ সেটিং জড়িত কাজে সহায়তা
করতে যোগাযোগ করুন আমাদের সাথে।
রাসায়েল ও মাসায়েল ৬ষ্ঠ খন্ড |
|
|
লিখেছেন সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী
|
Monday, 28 February 2011 |
পাতা 67 মোট 74
<h1>৬৫। রসূল সা. কি হযরত সওদা রা. কে তালাক দিতে চেয়েছিলেন?</h1>
প্রশ্ন : তিরমিযী শরিফ ও সিহাহ সিত্তার অন্যান্য হাদিস গ্রন্থে এই মর্মে একাধিক হাদিস রয়েছে যে, উম্মুল মুমিনীন হযরত সওদা রা. যখন বার্ধক্যে উপনীত হন, তখন রসূল সা. তাকে তালাক দিতে মনস্থ করেছিলেন। এ কথা জানতে পেরে হযরত সওদা বলেছিলেন, আমি নিজের পালা আয়েশাকে দিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু আপনার বিচ্ছেদ বিশেষত এই বয়সে আমার মনোপূত নয়। রসূল সা. এতে সম্মত হন এবং তালাক দেয়ার ইচ্ছে পরিত্যাগ করেন। এ ব্যাপারে মনে কিছু প্রশ্ন জন্মে। রসূল সা. তালাককে 'বৈধ কাজসমূহের মধ্যে সবচেয়ে ঘৃণিত কাজ' বলে আখ্যায়িত করেছেন। মাত্র একজন স্ত্রী থাকলে এবং সে অত্যাধিক বৃদ্ধা হয়ে গেলে তাকে তালাক দিয়ে কিংবা শুধু খোরপোষে সম্মত করে দ্বিতীয় বিয়ে করা যেতে পারে। কিন্তু রসূল সা.-এর অন্যান্য স্ত্রী থাকা অবস্থায় তালাক দেয়ার ইচ্ছার যৌক্তিকতা বুঝে আসেনা। 'নাইরুল আওতার' গ্রন্থের লেখক এর যে যুক্তি বর্ণনা করেছেন তাও আমার কাছে সন্তোষজনক মনে হয়নি। এ হাদিস কয়টি পড়লে যে কোনো ব্যক্তির মনে এ ধরনের ঘটকা জন্ম নিতে পারে। আশা করি আপনি তরজমানুল কুরআনের মাধ্যমে সন্তোষজনক জবাব দেবেন। সর্বশেষে এ কথাও নিবেদন করছি যে, প্রকৃত তথ্য উদঘাটন ছাড়া আমার আর কোনো উদ্দেশ্য নেই। চিঠিতে যদি কোনো উগ্র শব্দ লেখা হয়ে গিয়ে থাকে, তবে আমি সে জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থী।
জবাব : উম্মুল মুমিনীন হযরত সওদা বিনতে যাময়া রা. সংক্রান্ত হাদিসগুলোতে বর্ণিত যে ঘটনার ব্যাপারে আপনি প্রশ্ন তুলেছেন, তার দুটো অংশ রয়েছে। প্রথমত, হযরত সওদা তাঁর পালার দিন হযরত আয়েশাকে দিয়ে দিয়েছিলেন এবং রসূল সা.-কে তাঁর পালার দিনেও হযরত আয়েশার গৃহে অবস্থান করার অনুমতি দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় অংশে হযরত সওদার নিজের প্রাপ্য অধিকার ত্যাগ করার কারণ বর্ণিত হয়েছে। ঘটনার প্রথমাংশ সম্পর্কে ঐতিহাসিক হাদিসবেত্তাদের পূর্ণ মতৈক্য রয়েছে। হযরত সওদা যে নিজের পালার দিন হযরত আয়েশাকে দিয়ে দিয়েছিলেন, সে কথা সম্পূর্ণ সঠিক ও সত্য বলে প্রমাণিত। তবে হযরত সওদা এরূপ কোনো করলেন, সে ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে এবং এর জবাব জানতে হলে গভীর চিন্ত ভাবনার প্রয়োজন রয়েছে।
আপনি লিখেছেন, ছয়খানা বিশুদ্ধ হাদিস গ্রন্থে এই মর্মে একাধিক হাদিস রয়েছে যে, হযরত সওদার বার্ধক্য হেতু রসূল সা. তাকে তালাক দিতে চেয়েছিলেন। এতে হযরত সওদা নিজের পালা হযরত আয়েশাকে দিয়ে দেন এবং তালাকের ইচ্ছে পরিত্যক্তি হয়। এই সংক্ষিপ্ত অস্পষ্ট বর্ণনা থেকে সঠিক তথ্য উদঘাটিত হয়না, বরং ভুল বুঝাবুঝির অবকাশ থেকে যায়। সিহাহ সিত্তার সংকলকগণের মধ্যে ইমাম বুখারি ও ইমাম মুসলিম তালাক বা তালাকের ইচ্ছের কথা উল্লেখ করেননি। বুখারিতে এ হাদিস বিয়ে সংক্রান্ত অধ্যায়ে এবং 'হিবা' তথা দান সংক্রান্ত অধ্যায়ে দু'জায়গায় উদ্ধৃত হয়েছে। কিন্তু উভয় জায়গায় পালার দিন ছাড়া দেয়ার কারণ উল্লেখ করা হয়েছে এভাবে ----------------------------------- এর সরল ও সোজা মর্ম এই যে, হযরত সওদা স্বেচ্ছায় রসূল সা.-এর সন্তুষ্টির খাতিরেই এ প্রস্তাব দিয়েছিলেন। রসূল সা.-এর রুগ্ন অবস্থায় যেমন উম্মুল মুমিনীনগণের সকলে নিক নিক পালা ছেড়ে দিয়ে তাকে কেবল হযরত আয়েশার গৃহে অবস্থানের সুযোগ করে দিয়েছিলেন, যাতে রসূল সা.-কে নিষ্প্রয়োজনে ঝামেলা পোহাতে না হয়, এটাও ছিলো তেমনি। কোনো ভীতি বা হুমকির কারণে নয় বরং গভীর মমত্ববোধ ও ভক্তি শ্রদ্ধার বশেই তিনি এই ত্যাগে সম্মত হয়েছিলেন। ইমাম মুসলিমের বর্ণনার ভাষা এরূপ :
---------------------------------------------------------------------------------
"হযরত সওদা নিজের পালা হযরত আয়েশাকে ছেড়ে দেন এবং বলেন হে আমার রসূল। আমি আমার পালা আয়েশাকে দিয়ে দিচ্ছি।"
অন্তত বুখারি ও মুসলিমের কোথাও যথাসাধ্য অনুসন্ধান চালিয়ে আমি তালাকের কথার কোনোই উল্লেখ পাইনি। বুখারি ও মুসলিম উভয়ে এ ঘটনা সংক্রান্ত হাদিসগুলো গ্রহণ ও বর্ণনা করলেন, অথচ তালাকের উল্লেখ সম্বলিত একটি হাদিসও গ্রহণ করলেননা, এটা খুবই গুরুত্ববহ ও তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার।
তবে আবু দাউদ ও তিরমিযীতে তালাকের উল্লেখ রয়েছে। আবু দাউদের বিয়ে সংক্রান্ত অধ্যায়ে যে হাদিস রয়েছে, তার ভাষা নিম্নরূপ :
---------------------------------------------------------------------------------
"সওদা যখন বৃদ্ধা হয়ে গেলেন এবং রসূল সা. থেকে বিচ্ছেদের আশংকা বোধ করলেন, তখন বললেন : হে আল্লাহর রসূল! আমার দিনটি এখন থেকে আয়েশার।" কিন্তু উল্লেখিত হাদিসের ভাষা থেকেও এ কথা প্রতীয়মান হয়না যে, রসূল সা. তালাক দেয়ার ইচ্ছে করেছিলেন। শুধু এতোটুকুই জানা যায় যে, স্বয়ং হযরত সওদার মনে এরূপ আশংকা জন্মে যে, আমাকে পরিত্যাগ করা হয় কিনা? এই আশংকা ভিত্তিহীন হয়ে থাকতে পারে এবং তালাকের বর্ণিত কারণটি সঠিকও না হতে পারে। এ ধরণের আশংকা তো যখন আয়েশার নামে অপবাদ রটেছিল এবং যখন উম্মুল মুমিনীনদেরকে নিজ নিজ ভবিষ্যতে বেছে নেয়ার স্বাধীনতা দেয়া হয়েছিল, তখনও চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু সে আশংকা সত্য প্রমাণিত হয়নি। তাছাড়া এ হাদিসের বর্ণনাকারীদের মধ্যে একজন রয়েছেন আব্দুর রহমান বিন আবু যুনাদ, যার সম্পর্কে হাফেয মুনযিরী 'সংক্ষিপ্ত আবু দাউদ' গ্রন্থে মন্তব্য করেছেন, "একাধিক হাদিসবেত্তা এই ব্যক্তি সম্পর্কে বিতর্ক তুলেছেন।"
এই বর্ণনায় সওদার উদ্বেগের যে কারণ উল্লেখ করা হয়েছে তাও বিস্ময়োদ্দীপক। এ কথা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত, হযরত সওদার বিয়ে হযরত খাদিজার ইন্তি কালের পরে মক্কায় অনুষ্ঠিত হয়। হযরত আয়েশার সাথে বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর হিজরতের প্রাক্কালে তাঁর বিয়ে হয়। ৫ম হিজরীতে সূরা আহযাব নাযিল করে রসূল সা.-কে স্ত্রী পরিবর্তন করতে নিষেধ করা হয়। হযরত ইবনে আব্বাসের বর্ণনা অনুসারে তালাকও এই নিষেধাজ্ঞার শামিল। হযরত সওদা তো আগেই বর্ষিয়সী মহিলা ছিলেন। পাঁচ বছরে তাঁর বয়সে কি এমন বিরাট পরিবর্তন দেখা দিলো যে, সেই কারণে তালাকের আশংকা সৃষ্টি হবে? ব্যপারটা দুবোর্ধ্য বটে। আমরা তো দেখতে পাই উম্মুল মুমিনীনদের বেশির ভাগই নবীর গৃহিনী হয়ে আসার সময় পৌঢ়াই ছিলেন এবং বিধবা কিংবা স্বামী পরিত্যক্তা ছিলেন। অথচ তাঁদের কারো বেলায় এ আশংকা দেখা দিলনা। শুধুমাত্র হযরত সওদার বেলায়ই তালাকের প্রশ্ন উঠবে এটা খুবই অস্বাভাবিক বলে মনে হয়। বস্তুত, রসূল সা. কোনো বিয়ে নিছক বিয়ের খাতিরেই করেননি। প্রত্যেক বিয়েতে হয় বৃহত্তর ধর্মীয় ও জাতীয় স্বার্থ নিহিত থাকতো, নচেত এসব মহীয়সী মুসলিম রমণীর মনকে প্রবোধ দেয়া ও তাদেরকে আশ্রয় ও সহায়তা দানের উদ্দেশ্যেই এইসব বিয়ে সম্পন্ন হতো। কেননা শুধুমাত্র ইসলামের খাতিরে তারা ইতিপূর্বে বড় বড় দুর্ভোগ ভোগ করে এসেছিলেন। কেউবা নিজের পরিবার ও গোত্র, কেউবা নিজের জন্মভূমি পরিত্যাগ করে এসেছিলেন।
হযরত সওদার অবস্থাও তদ্রুপ। তিনি নিজের সাবেক স্বামীর সাথে মুসলমান হয়ে আবিসিনিয়ায় হিজরত করেছিলেন। তারপর বিধবা হয়ে অসহায় অবস্থায় পতিত হন। তাঁর মনকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য রসূল সা. তাঁকে স্ত্রী হিসেবে বরণ করে দুর্লভ সম্মানে ভূষিত করেন। হযরত আয়েশা থাকা অবস্থায় হযরত সওদাকে বিয়ে করার আরো একটি কারণ ছিলো এই যে, হযরত খাদিজার ইন্তিকালের পর গৃহে রসূল সা.-এর কয়েকজন ছোট ছোট মেয়ে ছিলো। তিনি চেয়েছিলেন, তাদের দেখাশুনা ও লালন পালনের জন্য তাঁর একজন বয়স্কা গৃহিনী আসুক। রসূল সা.-এর সহধর্মিনীদের পারস্পরিক সম্পর্ক ছিলো অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ। হাদিস থেকে জানা যায়, যেদিন যে স্ত্রীর গৃহে রসূল সা. অবস্থান করতেন, সেদিন সেই গৃহে কিছুক্ষণের জন্য সকল স্ত্রীগণের সমবেত হওয়া একটা নৈমিত্তিক ব্যাপার ছিলো। বিশেষত হযরত আয়েশা ও হযরত সওদার সম্পর্ক খুবই গভীর ও সৌহার্দপূর্ণ ছিলো। সহীহ মুসলিমে হযরত আয়েশার বর্ণনা উদ্ধৃত হয়েছে নিম্নরূপ :
"আমি সওদা বিনতে যাময়া ব্যতীত আর কোনো মহিলাকে এমন দেখিনি যার হৃদয় ও দেহের সাথে মিশে যেতে আমার ইচ্ছে হয়।"
এখন এ কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, হযরত সওদার বিয়ের পেছনে যখন বৃহত্তর ধর্মীয় ও সামাজিক কল্যাণের ভাবধারা সক্রিয় ছিলো এবং হযরত আয়েশার সাথে তাঁর সম্পর্ক এতো গভীর ছিলো, তখন এটাই অধিকতর যুক্তিযুক্ত মনে হয় যে, কোনো আশংকার কারণে নয় বরং সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় ও স্বতপ্রবৃত্ত হয়েই হযরত সওদা এই প্রস্তাব দিয়েছিলেন এবং নিজের পালা হযরত আয়েশাকে অর্পণ করেছিলেন।
এ ব্যাপারে তিরমিযী শরিফে যে হাদিস রয়েছে তা নিম্নরূপ :
---------------------------------------------------------------------------------
"সওদা সংকিত হলেন, রসূল সা. তাঁকে তালাক দিতে পারেন। তাই বললেন, আমাকে তালাক দেবেন না, আমাকে বহাল রাখুন এবং আমি আমার দিন আয়েশাকে দিয়ে দিচ্ছি। রসূল সা. এতে সম্মতি দিলেন। এ উপলক্ষে আয়াত নাযিল হলো, (কোনো মহিলা স্বামীর পক্ষ থেকে কোনো ঔদ্ধত্য বা উপেক্ষার আশংকা করলে) সেই দম্পত্তি নিজেদের মধ্যে যে কোনো ধরনের আপোষ নিষ্পত্তি করে নিতে পারে। আপোষই উত্তম।" [এটি একটি ভালো ও বিরল হাদিস]
অস্বীকার করা যাবেনা, এ হাদিস থেকে বুঝা যায়, হযরত সওদার নিজের পালা পরিত্যাগের পেছনে তালাকের আশংকা সক্রিয় ছিলো এবং সে কথা রসূল সা.-এর কাছেও বলা হয়েছিল। কিন্তু এ হাদিস সম্পর্কে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি বিবেচনার দাবি রাখে তা হলো, ইমাম তিরমিযী এ হাদিসটি স্বীয় গ্রন্থের তাফসির অধ্যায়ে উদ্ধৃত করেছেন। আর জানা কথা যে, হাদিস শাস্ত্রকারগণ তাফসির সংক্রান্ত হাদিস বর্ণনায় সাধারণত উদারতার আশ্রয় নিয়ে থাকেন। দ্বিতীয়ত, ইমাম তিরমিযী এ হাদিসটি মুহাম্মদ ইবনুল মুসান্না থেকে এবং মুহাম্মদ ইবনুল মুসান্না আবু দাউদ তারালিসী থেকে সংগ্রহ করেছেন। অথচ খোদ ইমাম তারালিসী স্বীয় হাদিস গ্রন্থ মুসনদে হযরত আয়েশা থেকে যে হাদিস বর্ণনা করেছেন তাতে তালাকের উল্লেখ নেই। সেই হাদিসের ভাষা এরূপ :
---------------------------------------------------------------------------------
"রসূলূল্লাহর নিকট হযরত আয়েশার অনন্য মর্যাদার পরিপেক্ষিতে হযরত সওদা নিজের পালা তাকে দিয়ে দেন।"
বস্তুত, ইমাম বুখারির হাদিসে একটু ভিন্ন ভাষায় যে তথ্য বর্ণিত হয়েছে, এ হাদিসের বক্তব্য তারই কাছাকাছি।
সিহাহ সিত্তাহ ছাড়া ও ঘটনা তাবাকাতে ইবনে সা'দে একাধিক সনদে বর্ণিত হয়েছে। সে বর্ণনায় শুধু তালাকের ইচ্ছে নয়, তালাক দিয়ে দেয়া হয়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এখান থেকেই তালাকের কাহিনী এতো খ্যাতি লাভ করেছে। কিন্তু তাবাকাতের এই বর্ণনাগুলোতে বহু বিভিন্নতা ও বিভ্রাট রয়েছে। কোনো বর্ণনার সনদে বিতর্কিত অনির্ভরযোগ্য আব্দুর রহমান বিন আবু যুনাদ রয়েছেন। কোথাও তালাকের বার্তা পাঠানোর উল্লেখ রয়েছে। কোথাও তালাকের ইঙ্গিতবহ শব্দ উদ্ধৃত হয়েছে। এর চেয়েও বিস্ময়কর বর্ণনা এই যে, হযরত সওদা রসূল সা.-এর যাতায়াতের রাস্তায় বসে রইলেন এবং তিনি যখন এলেন, তখন সওদা আল্লাহর দোহাই দিয়ে তালাক প্রত্যাহার করার জন্য অনুরোধ করতে লাগলেন। ভেবে স্তম্ভিত হতে হয় যে, তালাক যদি রজয়ী অর্থাৎ প্রত্যাহারযোগ্য হয়ে থাকে এবং দাম্পত্য সম্পর্ক চূড়ান্তভাবে ছিন্ন না হয়ে থাকে, তাহলে নবীগৃহ থেকে বেরিয়ে রাস্তায় যেয়ে বসার কাহিনী কিভাবে সঠিক হতে পারে। এসব প্রশ্ন ছাড়াও আল্লামা ইবনে হাজার স্বীয় গ্রন্থ 'ইসবাতে' বলেছেন, এসব বর্ণনার সনদে কোনো পুরুষ বা মহিলা সাহাবি নেই। সম্ভবত এ কারণে ইমাম বুখারি ও মুসলিম তালাকের উল্লেখ সম্বলিত হাদিসগুলো সম্পূর্ণরূপে বাদ দিয়েছেন। বুখারি ও মুসলিমের মোকাবিলায় তাবাকাতে ইবনে সা'দ যে নির্ভরযোগ্য হতে পারেনা, তা কারো অজানা নয়। তালাক সংক্রান্ত এ হাদিসের পর্যালোচনা করে ইমাম ইবনে হাযম স্বীয় গ্রন্থ 'আল মুহাল্লাতে' বলেছেন, 'এসব মিথ্যা ও মনগড়া।'
এই সমস্ত আলোচনা থেকে ঘটনার যে বিশুদ্ধ, নির্ভুল, যুক্তিগ্রাহ্য ও তথ্যনির্ভর চিত্র পাওয়া যায়, সেটা এই যে, হযরত সওদা অবশ্যই হযরত আয়েশাকে নিজের পালা দিয়ে দিয়েছিলেন, তবে সেটা ছিলো তাঁর স্বেচ্ছায়প্রণোদিত কাজ। তিনি পূর্ণ আন্তরিকতা ও আনন্দের সাথে এই ত্যাগের মহত্ব দেখিয়েছেন। এর একমাত্র উদ্দেশ্য রসূল সা. হযরত আয়েশাকে খুশি করা। সতর্কতা ও সত্য নিষ্ঠার দাবি এই যে, ঘটনার এই চিত্রটিকেই সঠিক বলে মেনে নেয়া উচিত এবং অনাবশ্যক সন্দেহ সংশয় ও দ্বন্দ্বের উদ্রেক করে, এমন যে কোনো ব্যাখ্যা ও বিবরণ এড়িয়ে চলা উচিত। [তরজমানুল কুরআন, আগষ্ট ১৯৬৪]
|
সর্বশেষ আপডেট ( Friday, 04 March 2011 )
|
|
|
|