ইসলামী বিপ্লবের স্বাভাবিক পদ্ধতি প্রিন্ট কর ইমেল
লিখেছেন এ.কে.এম. নাজির আহমদ   
Thursday, 27 September 2012

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম

ইসলামী বিপ্লবের স্বাভাবিক পদ্ধতি


বিপ্লব

বিপ্লব মানে হচ্ছে সমাজ-ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন।

ইসলামী বিপ্লব

সমাজ-ব্যবস্থার সকল স্তর, দিক ও বিভাগে ইসলামের বিধি-বিধান কার্যকর হওয়ার নাম ইসলামী বিপ্লব।

‘ইকামাতুদ্ দীন’, ‘ইযহারু দীনিল হাক’, ‘খিলাফাত প্রতিষ্ঠা’ ইত্যাদি পরিভাষা ‘ইসলামী বিপ্লব’ পরিভাষার সমার্থক।

ইসলামী বিপ্লবের দুইটি শর্ত

ইসলামী বিপ্লবের জন্য দুইটি শর্ত পূরণ হওয়া অত্যাবশ্যক। শর্ত দুইটি হচ্ছে :

ক. একদল যোগ্য ইসলামী ব্যক্তিত্বের উদ্ভব।

খ. ইসলামী গণ-ভিত্তি সৃষ্টি।

ইসলামী চিন্তা-চেতনা, ইসলামী মন-মানসিকতা ও ইসলামী চরিত্রসম্পন্ন ব্যক্তিকেই বলা হয় ইসলামী ব্যক্তিত্ব।

একজন ইসলামী নৈতিকতাসম্পন্ন ব্যক্তি যদি মৌলিক মানবীয় গুণেও সমৃদ্ধ হন, তিনি হন যোগ্য ইসলামী ব্যক্তিত্ব। ইসলামী বিপ্লব সাধনের জন্য এই ধরনের বহু সংখ্যক ব্যক্তির বিদ্যমানতা অত্যাবশ্যক।

কোন ভূ-খন্ডের জনগোষ্ঠীর বিরাট অংশের ইসলামী চিন্তা-চেতনা, ইসলামী মন-মানসিকতা ও ইসলামী চরিত্রসম্পন্ন রূপে গড়ে ওঠার নাম ইসলামী গণ-ভিত্তি।

এই গণ-ভিত্তি গড়ে না ওঠা পর্যন্ত কোন ভূ-খন্ডে ইসলামী বিপ্লব সংঘটিত হওয়া স্বাভাবিক নয়। আলকুরআনের সূরা আর রা‘দের à§§à§§ নাম্বার আয়াত সেই কথারই ইংগিত দেয়।

اِنَّ اللهَ لاَ يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتّى يُغَيِّرُوْا مَا بِاَنْفُسِهِمْ.

 ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন কাউমের অবস্থার পরিবর্তন ঘটান না যেই পর্যন্ত না তারা তাদের চিন্তা ও চরিত্রের পরিবর্তন ঘটায়।’’

নবী-রাসূলদের ব্যক্তি গঠন ও গণ-ভিত্তি সৃষ্টির প্রয়াস

নবী-রাসূলগণ (আলাইহিমুস্ সালাম) ইসলামী ব্যক্তি গঠন ও ইসলামী গণ-ভিত্তি সৃষ্টির জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।

সমাজের সাধারণ মানুষের কাছে তাঁরা যেমন ইসলামের মর্মকথা পৌঁছাবার চেষ্টা করেছেন, তেমনিভাবে চেষ্টা করেছেন সমাজের চালিকা শক্তি অর্থাৎ নেতৃত্ব দানকারী ব্যক্তিদের কাছে তা পৌঁছাবার জন্য।

সমাজের চালিকা শক্তি ইসলাম গ্রহণ করলে অপরাপর মানুষের পক্ষে ইসলাম গ্রহণ করা সহজ হয়ে যায়। সেই জন্যই নবী-রাসূলগণ (আলাইহিমুস্ সালাম) সমাজের চালিকা শক্তিকে বিশেষভাবে টার্গেট বানিয়ে ছিলেন।

ইবরাহীম (আ) উর সাম্রাজ্যের সম্রাট নামরূদের কাছে এই উদ্দেশ্যেই ইসলামের মর্মকথা পৌঁছিয়েছিলেন।

একই উদ্দেশ্যে মূসা ইবনু ইমরান (আ) মিসরের ফিরআউন মারনেপতাহ-র কাছে ইসলামের মর্মকথা তুলে ধরেছিলেন।

ঠিক এই উদ্দেশ্যেই মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলআরাবীয়ার শীর্ষ স্থানীয় নেতা আবু জাহল, উতবাহ ইবনু রাবীয়াহ, শাইবাহ ইবনু রাবীয়াহ, আলওয়ালীদ ইবনুল মুগীরাহ প্রমুখের কাছে ইসলামের মর্মকথা উপস্থাপন করেছিলেন।

মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ব্যক্তি গঠন পদ্ধতি

ইসলামী ব্যক্তি গঠনের জন্য মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন অস্বাভাবিক পদ্ধতি অবলম্বন করেননি।

তাঁর অনুসৃত পদ্ধতি ছিলো সহজ ও স্বাভাবিক। তদুপরি তাঁর অনুসৃত পদ্ধতি ছিলো আল্লাহ কর্তৃক নির্দেশিত।

আলকুরআনের জ্ঞান বিতরণ এবং আলকুরআনের জ্ঞানের ভিত্তিতে চরিত্র গঠনের জন্য লোকদেরকে উদ্বুদ্ধকরণই ছিলো মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ব্যক্তি গঠন পদ্ধতি।

আলকুরআনের সূরা আলে ইমরানের ১৬৪ নাম্বার আয়াতে ও সূরা আল জুমু‘আর ২ নাম্বার আয়াতে

يَتْلُوْا عَلَيْهِمْ ايتِه وَيُزَكِّيْهِمْ

(যাতে সে লোকদেরকে আয়াতগুলো পড়ে শুনায় এবং তাদের তাযকিয়া করে) এবং

সূরা আল বাকারার ১৫১ নাম্বার আয়াতে

يَتْلُوْا عَلَيْكُمْ ايتِناَ وَيُزَكِّيْكُمْ

(যাতে সে তোমাদেরকে আমার আয়াতগুলো পড়ে শুনায় এবং তোমাদের তাযকিয়া করে) বলে সেই পদ্ধতির কথাই উল্লেখ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আহবানে সাড়া দিয়ে যাঁরা মুমিন হতেন তাঁরাও সংগে সংগেই ইসলামের মুবাল্লিগ বা দা‘à§Ÿà§€ ইলাল্লাহ হয়ে যেতেন।

তাঁরাও আলকুরআনের জ্ঞান বিতরণ এবং আলকুরআনের জ্ঞানের ভিত্তিতে চরিত্র গঠনের জন্য লোকদেরকে উদ্বুদ্ধকরণের কাজে আত্মনিয়োগ করতেন।

মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিপ্লব সাধনের জন্য অস্ত্র ব্যবহার করেননি

মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবির্ভাবকালে আলআরাবীয়ার প্রত্যেক ব্যক্তি নিজস্ব নিরাপত্তার জন্য অস্ত্র বহন করতো। অর্থাৎ তখন অস্ত্র রাখা ও অস্ত্র বহন করা বৈধ ছিলো।

আবু জাহল ও তার অনুসারীদের হাতে যেমন তলোয়ার, বল্লম ও তীর ছিলো, তেমনিভাবে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাথীদের হাতে তলোয়ার, বল্লম ও তীর ছিলো।

উভয় পক্ষের অস্ত্রের মান ছিলো সমান।

ইসলামী ব্যক্তি গঠন ও গণ-ভিত্তি রচনার প্রয়াস চালাতে গিয়ে মাক্কায় অবস্থান কালের তেরোটি বছর মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাথীরা নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছেন।

মুশরিকদের হামলায় হারিছ ইবনু আবী হালাহ (রা), ইয়াসির (রা), সুমাইয়া (রা) ও আবদুল্লাহ ইবনু ইয়াসির (রা) শাহাদাত বরণ করেন।

অনেকেই হন আহত।

কিন্তু বৈধ অস্ত্র থাকা সত্ত্বেও মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাথীরা এই যুল্মের প্রতিকারের জন্য অস্ত্র ব্যবহার করেননি।

আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ ছিলো ‘‘কুফ্ফু আইদিয়াকুম’’ (তোমাদের হাত গুটিয়ে রাখ) অর্থাৎ অস্ত্র ব্যবহার করো না।

এই নির্দেশ এসেছিলো ওহী গায়রে মাতলূ-র মাধ্যমে। পরবর্তী কালে সূরা আন্ নিসার à§­à§­ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন এই বিষয়টি উল্লেখ করেন।

ইসলাম-বৈরী শক্তি হামলার পর হামলা চালাতে থাকে। আর আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন বিভিন্ন সূরা নাযিল করে মুমিনদেরকে বার বার ছবর অবলম্বন করার তাকিদ দিতে থাকেন।

উল্লেখ্য যে, ছবরের বহুবিধ অর্থের কয়েকটি হচ্ছে-

নিজের আবেগ সংযত রাখা,

রাগের বশবর্তী হয়ে কোন কাজ না করা,

বিপদ-আপদে ঘাবড়ে না যাওয়া,

ত্বরা-প্রবণতা পরিহার করা,

কাংখিত ফল পেতে দেরি দেখে অস্থির না হওয়া,

অশোভন আচরণে উত্তেজিত না হওয়া,

প্রতিকূলতা সত্ত্বেও নিজের কর্তব্যে অবিচল থাকা।

আরো উল্লেখ্য যে, কোন নবীই ইসলামী বিপ্লব সাধনের জন্য সশস্ত্র তৎপরতা চালাননি। আর নবীরা তো আল্লাহ রাববুল ‘আলামীনের ইচ্ছারই প্রতিনিধিত্ব করতেন।

একদল মুমিন অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি চেয়েও অনুমতি পাননি

প্রতি বছর আলআরাবীয়ার উকায নামক স্থানে যুল কা‘দাহ মাসের à§§ তারিখ থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত মেলা অনুষ্ঠিত হতো। দূর-দূরান্ত থেকে আগত হাজার হাজার মানুষ বিশ দিন পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে ভালো-মন্দ বহু প্রকারের কর্মকান্ড করতো। অতঃপর তারা যুল কা‘দাহ মাসের ২১ তারিখ যুলমাজান্না নামক স্থানে এসে অবস্থান গ্রহণ করতো। এখানে তারা থাকতো দশ দিন।

এর পর তারা যুলমাজায নামক স্থানে এসে তাঁবু গাড়তো। তারা এখানে অবস্থান করতো যুলহিজ্জা মাসের ১ তারিখ থেকে ৭ তারিখ পর্যন্ত।

অতঃপর তারা যুলহিজ্জা মাসের ৮ তারিখে মিনাতে অবস্থান গ্রহণ করতো।

মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের কাছে ইসলামের বাণী পৌঁছাবার জন্য এই মেলাগুলোতে যেতেন এবং সময় সুযোগ বুঝে তাঁবুতে তাঁবুতে গিয়ে লোকদের সাথে আলাপ করতেন, তাদেরকে আলকুরআনের আয়াত পড়ে শুনাতেন এবং আলকুআনের ভিত্তিতে জীবন গড়ে তোলার আহবান জানাতেন।

নবুওয়াতের দশম সনে মিনারই একটি পার্বত্য খন্ড আকাবাতে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছয় জন ইয়াসরিববাসীর (মাদীনাবাসীর) সাথে আলাপ করেন। তাঁরা ইসলামের দা‘ওয়াত কবুল করেন।

নবুওয়াতের একাদশ সনে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঐ আকাবাতেই ইয়াসরিব থেকে আগত বারো জন ব্যক্তির সাথে আলাপ করেন। তাঁরা মনে প্রাণে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং সর্বাবস্থায় ইসলামের ওপর অবিচল থাকার অংগীকার করেন। এই ঘটনাকেই বলা হয় প্রথম বাই‘আতে আকাবা।

নবুওয়াতের দ্বাদশ সনে ৭৫ জন ইয়াসরিববাসী আকাবাতে গভীর রাতে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে মিলিত হন।

তাঁরা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করার শপথ নেন। এই ঘটনাটিকে বলা হয় দ্বিতীয় বাই‘আতে আকাবা।

এই সময় ইয়াসরিববাসীরা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাথীদের ওপর পরিচালিত নির্যাতনের কথা জানতে পেরে তাঁকে ইয়াসরিবে (মাদীনায়) হিজরাত করার আহবান জানান।

আলাপ-আলোচনার এক পর্যায়ে ইয়াসরিববাসীদের পক্ষ থেকে মিনাতে সমবেত যালিম মুশরিকদের ওপর হামলা চালাবার অনুমতি চাওয়া হয়।

ইয়াসরিববাসীদের অন্যতম লড়াকু ব্যক্তি আববাস ইবনু উবাদাহ ইবনু নাদলা (রা) বলেন,

‘‘ইয়া রাসূলাল্লাহ, যেই আল্লাহ আপনাকে সত্য জীবন-বিধানসহ পাঠিয়েছেন তাঁর শপথ করে বলছি, আপনি চাইলে আমরা আগামীকালই মিনায় অবস্থানকারীদের ওপর হামলা চালাবো।’’ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘‘আমাকে এইরূপ কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়নি। তোমরা নিজ নিজ কাফিলায় ফিরে যাও।’’

দ্রষ্টব্য : সীরাতে ইবনে হিশাম, পৃষ্ঠা-১২০

ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি লাভ

নবুওয়াতের ত্রয়োদশ সনে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ রাববুল ‘আলামীনের পক্ষ থেকে হিজরাতের অনুমতি লাভ করেন।

ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে নিরবে মাক্কা ত্যাগ করে তাঁর সাথীরা ইয়াসরিব হিজরাত করেন। শেষের দিকে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবু বাকর আছ্ ছিদ্দিককে (রা) সাথে নিয়ে হিজরাত করেন।

মহানবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইয়াসরিব আসার পর এর নাম হয় মাদীনাতুর্ রাসূল। মাদীনা একটি রাষ্ট্রের রূপ লাভ করে। আর নব-গঠিত রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান হন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। মাদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র ও ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর নাযিল হয় সূরা আলহাজের ২৫ থেকে ৭৮ নাম্বার আয়াত।

আর এই অংশটির একাংশে আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাথীদেরকে অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করেন।

اُذِنَ لِلَّذِيْنَ يُقَاتَلُوْنَ بِاَنَّهُمْ ظُلِمُوْا Ø· وَاِنَّ اللهَ عَلى نَصْرِهِمْ لَقَدِيْرٌ 0نِ الَّذِيْنَ اُخْرِجُوْا مِنْ دِيَارِهِمْ بِغَيْرِ حَقٍّ اِلاَّ اَنْ يَقُوْلُوْا رَبُّنَا اللهُ Ø· ...                                        à¦¸à§‚রা আলহাজ: ৩৯, ৪০

‘‘লড়াইয়ের অনুমতি দেওয়া হলো তাদেরকে যাদের প্রতি যুল্ম করা হয়েছে, আর আল্লাহ অবশ্যই তাদেরকে সাহায্য করার ক্ষমতা রাখেন, যাদেরকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে শুধু এই জন্য যে, তারা বলেছিলো : আল্লাহ আমাদের রব।’’

অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ

সূরা আলহাজের ৩৯ ও ৪০ নাম্বার আয়াতে অস্ত্র ব্যবহারের ‘অনুমতি’ দেওয়া হয়েছে। আর সূরা আলবাকারাহর ১৯০ নাম্বার আয়াতে দেওয়া হয়েছে অস্ত্র ব্যবহারের ‘নির্দেশ’।

وَقَاتِلُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ الَّذِيْنَ يُقَاتِلُوْنَكُمْ وَلاَ تَعْتَدُوْا Ø· اِنَّ اللهَ لاَ يُحِبُّ الْمُعْتَدِيْنَ  à¦¸à§‚রা আল বাকারাহ্: ১৯০                                    

‘‘আর তোমরা আল্লাহর পথে তাদের সাথে লড়াই কর যারা তোমাদের সাথে লড়াই করে, কিন্তু বাড়াবাড়ি করো না। যারা বাড়াবাড়ি করে আল্লাহ তাদেরকে পছন্দ করেন না।’’

‘‘অনুমতি’ ও ‘নির্দেশ’ দেওয়ার মধ্যে মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধান। আমাদের অনুসন্ধান অনুযায়ী ‘অনুমতি’ দেওয়া হয় হিজরী প্রথম সনের যুলহিজ্জা মাসে এবং ‘নির্দেশ’ নাযিল হয় হিজরী দ্বিতীয় সনের রজব কিংবা শা‘বান মাসে।’’

দ্রষ্টব্য : তাফহীমুল কুরআন, সাইয়েদ আবুল আ‘লা মওদূদী, সূরা আলহাজের তাফসীরের à§­à§® নাম্বার টীকা।

ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগের ও পরের কর্ম-পদ্ধতি

ক. ইমাম ইবনু তাইমিয়া (রহ) বলেন,

‘‘ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় মহানবীর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি কেবল ইসলামী দা‘ওয়াত পৌঁছানোর আদেশ ছিলো, জিহাদের (যুদ্ধের) অনুমতি দেওয়া হয়নি। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে তিনি যখন মাদীনায় হিজরাত করলেন এবং সেখানে ইসলামের দুশমনেরা তাঁর ও তাঁর অনুসারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেলো তখন আল্লাহ তা‘আলা মহানবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সাহাবীদেরকে জিহাদের (যুদ্ধের) অনুমতি দান করেন।’’

দ্রষ্টব্য : আস্ সিয়াসাতুশ্ শারইয়াহ, ইমাম ইবনু তাইমিয়া, পৃষ্ঠা-২০৩

খ. ইবনুল কাইয়েম (রহ) বলেন,

‘‘এইভাবে প্রায় তের বছরকাল পর্যন্ত তিনি তাবলীগের মাধ্যমে মানুষের মনে আল্লাহ-ভীতি সৃষ্টির প্রয়াস পান। এই সময় তিনি কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেননি এবং কাউকে জিয্ইয়া দিতেও বলেননি। বরং ঐ সময় হাত গুটিয়ে রাখা, ধৈর্য ধারণ করা এবং সহনশীলতার পথ অবলম্বন করার জন্যই তাঁকে নির্দেশ দেওয়া হয়। তারপর তিনি হিজরাতের নির্দেশ লাভ করেন। হিজরাতের পর সশস্ত্র সংগ্রামের অনুমতি দেওয়া হয়। তারপর যারা রাসূলের (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ (যুদ্ধ) করার এবং যারা নিরপেক্ষতা অবলম্বন করে তাদের ওপর হস্তক্ষেপ না করার নির্দেশ অবতীর্ণ হয়। পরবর্তীকালে আল্লাহর দীন পরিপূর্ণরূপে বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত মুশরিকদের বিরুদ্ধে লড়াই করার নির্দেশ দেওয়া হয়।’’

দ্রষ্টব্য : যাদুল মা‘আদ, হাফিয ইবনুল কাইয়েম, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা-à§­à§§

গ. সাইয়েদ আবুল আ‘লা মওদূদী (রহ) বলেন,

‘‘এর আগে মুসলিমরা যদ্দিন দুর্বল ও বিক্ষিপ্ত-বিচ্ছিন্ন ছিলো তাদেরকে কেবল ইসলাম প্রচারের হুকুম দেওয়া হয়েছিলো এবং বিপক্ষের যুল্ম-নির্যাতনে ছবর অবলম্বন করার তাকিদ করা হচ্ছিলো। এখন মাদীনায় তাদের একটি ছোট্ট স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবার পর এই প্রথমবার তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে : যারাই এই সংস্কারমূলক দা‘ওয়াতের পথে সশস্ত্র প্রতিরোধ সৃষ্টি করে অস্ত্র দিয়েই তাদের অস্ত্রের জবাব দাও।’’

দ্রষ্টব্য : তাফহীমুল কুরআন, সাইয়েদ আবুল আ‘লা মওদূদী, সূরা আলবাকারার তাফসীরের ২০০ নাম্বার টীকা।

আরো উল্লেখ্য যে, আলমাদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার একবছর পর মাক্কার মুশরিকগণ এই নব গঠিত রাষ্ট্রের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়। তিনগুণ বেশি শক্তিশালী মুশরিক বাহিনীর ওপর মুসলিমগণ বিজয় লাভ করেন বদর প্রান্তরে আল্লাহর মহা অনুগ্রহে।

আল্লাহ ভালো করেই জানতেন যে অ-মুসলিম শক্তি এই পরাজয় মেনে নিয়ে শত্রুতা বন্ধ করে দেবে না। বরং আরো বেশি সামরিক শক্তি যোগাড় করে আবারও আক্রমণ চালাবার জন্য এগিয়ে আসবে। এই প্রেক্ষাপটে আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন নাযিল করেন সূরা আলআনফাল। এই সূরার একাংশে তিনি ইসলামী রাষ্ট্র আলমাদীনার কর্ণধারদেরকে প্রয়োজনীয় সামরিক শক্তি অর্জনের নির্দেশ প্রদান করেন।

আল্লাহ বলেন,

وَاَعِدُّوْا لَهُمْ مَّااسْتَطَعْتُمْ مِّنْ قُوَّةٍ. সূরা আল আনফাল: ৬০          

‘‘তাদের মুকাবিলার জন্য তোমরা যতো বেশি সম্ভব শক্তি সঞ্চয় কর।’’

ইসলামী আন্দোলনের স্বাভাবিক বর্ধন

ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহর নবী-রাসূলগণ অত্যন্ত স্বাভাবিক পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন। প্রধানত মানুষের চিন্তাধারায় পরিবর্তন সাধনের দিকে লক্ষ্য রেখেই তাঁরা তাঁদের প্রয়াস চালিয়েছেন। মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহও (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিরলসভাবে চালিয়ে গেছেন ‘আদ্ দাওয়াতু ইলাল্লাহ’র কাজ। আর তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে এগিয়ে এসেছেন মাক্কার সত্য-সন্ধানী ও সাহসী একদল যুবক-যুবতী। তিনি এঁদেরকে সংঘবদ্ধ করে ও প্রশিক্ষণ দিয়ে ব্যতিক্রম ব্যক্তিত্ব- ইসলামী ব্যক্তিত্ব-রূপে গড়ে তোলেন।

নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের প্রায় অধিকাংশ ইসলাম-বিরোধী হওয়ায় মাক্কাবাসীরা গণ-হারে তাঁর আহবানে সাড়া দিতে পারেনি। ফলে মাক্কায় গড়ে ওঠেনি ইসলামী গণ-ভিত্তি।

পক্ষান্তরে ইয়াসরিবের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের অধিকাংশ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আহবানে সাড়া দিয়ে তাঁর প্রতি সর্বাত্মক সহযোগিতার হাত বাড়ান। নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা ইসলাম গ্রহণ করায় সাধারণ মানুষের ইসলাম গ্রহণ করা সহজ হয়ে যায়। ফলে দারুণ উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে এগিয়ে আসে ইয়াসরিবের বিপুল সংখ্যক মানুষ। গড়ে ওঠে ইসলামী ভাবধারা পুষ্ট গণ-ভিত্তি, ইসলামী সমাজ-সভ্যতা-সংস্কৃতি বিনির্মাণের বুনিয়াদ।

মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম ও সরকার গঠনের সংগ্রাম একটির পর একটি স্তর অতিক্রম করে সামনে এগিয়েছে।

আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন আলকুরআনের সূরা আলফাত্হে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরিচালিত সংগ্রামের স্বাভাবিক বর্ধনের একটি চমৎকার উপমা পেশ করেছেন। আল্লাহ বলেন,

كَزَرْعٍ اَخْرَجَ شَطْئَه فَازَرَه فَاسْتَغْلَظَ فَاسْتَوى عَلى سُوْقِه.

 à¦¸à§‚রা আল ফাতহ \  ২৯ 

‘‘এ এমন এক কৃষি যা অংকুর বের করলো, অতপর শক্তি সঞ্চয় করলো, অতপর মোটা-তাজা হলো এবং অবশেষে নিজ কান্ডের ওপর দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে গেলো।’’

এই আয়াতাংশে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরিচালিত আন্দোলনের ক্রমবিকাশ ও প্রতিষ্ঠা লাভের চারটি স্তরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যথা :

১. অংকুর বের করা,

২. শক্তি সঞ্চয় করা,

৩. মোটা-তাজা হওয়া,

৪. কান্ডের ওপর দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে যাওয়া।

‘অংকুর বের করা’র অর্থ হচ্ছে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের সূচনাকরণ।

‘শক্তি সঞ্চয় করা’র অর্থ হচ্ছে আহবানে সাড়া দানকারী ব্যক্তিদেরকে সংঘবদ্ধ ও সংশোধিত করে সাংগঠনিক শক্তি অর্জন।

‘মোটা-তাজা হওয়া’র অর্থ হচ্ছে কর্ম-এলাকার সর্বত্র প্রভাব সৃষ্টি ও গণ-মানুষের সমর্থন লাভ। আর গণ-মানুষের সমর্থন লাভেরই আরেক নাম গণ-ভিত্তি অর্জন।

‘কান্ডের ওপর দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে যাওয়া’র অর্থ হচ্ছে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অর্জন।

প্রকৃতপক্ষে, এটাই হচ্ছে ইসলামী বিপ্লবের স্বাভাবিক পদ্ধতি।

 

উপসংহার

মুমিনদের জন্য মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হচ্ছেন ‘উসওয়াতুন হাসানা’ (সর্বোত্তম উদাহরণ)। জীবনের সকল ক্ষেত্রেই তিনি ‘উসওয়াতুন হাসানা’। ইসলামী বিপ্লব সাধন তথা আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম পরিচালনার ক্ষেত্রেও তিনিই ‘উসওয়াতুন হাসানা’।

আরো উল্লেখ্য যে, আল্লাহ রাববুল ‘আলামীন এই ‘উসওয়াতুন হাসানা’র অনুসরণকেই তাঁর ভালোবাসা পাওয়ার শর্ত বানিয়েছেন।

___________________________সমাপ্ত__________________বই সংক্রান্ত অন্যান্য তথ্য

বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার

ঢাকা

 

 

প্রকাশনায়

এ কে এম নাজির আহমদ

পরিচালক

বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার

২৩০ নিউ এলিফ্যান্ট রোড (৪র্থ তলা), ঢাকা-১২০৫

ফোন : ৮৬২৭০৮৬, ফ্যাক্স : ৯৬৬০৬৪৭

web : www.bicdhaka.com; E-mail : info@ bicdhaka.com

বিক্রয় বিভাগ : কাঁটাবন মসজিদ কমপ্লেক্স, ঢাকা-১০০০

ফোন : ৮৬২৭০৮৭, ০১৭৩২৯৫৩৬৭০

 

 

গ্রন্থস্বত্ব                :           লেখকের

 

প্রথম প্রকাশ          :           মে ২০০৩

তৃতীয় প্রকাশ         :           রজব ১৪৩২

                                    আষাঢ় ১৪১৮

                                    জুন ২০১১

 

মুদ্রণ

আল ফালাহ প্রিন্টিং প্রেস

মগবাজার, ঢাকা-১২১৭

 

 

বিনিময় : দশ টাকা মাত্র

 

Islami Biplober Sawabhik Poddhoti

Written & Published by AKM Nazir Ahmad Director Bangladesh Islamic Centre 230 New Elephant Road Dhaka-1205 Sales & Circulation Kataban Masjid Campus Dhaka-1000 1st Edition May 2003  3rd Edition June 2011 Price Taka 10.00 only.