মদীনার ফযীলত প্রিন্ট কর ইমেল
লিখেছেন ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া   
Monday, 26 November 2007
আর্টিকেল সূচি
মদীনার ফযীলত
বরকমতময় মদীনা নগরীর কিছু ফযীলতঃ
মসজিদে নববীর সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণঃ
মদীনায় বসবাসের আদবসমুহঃ
মদীনা যিয়ারতের আদবসমূহঃ
বিদ
শরীয়ত সমর্থিত যিয়ারতের উপকারিতা এবং বিদ
মদীনার ফযীলত এবং সেখানে বসবাস ও যিয়ারতের আদবসমূহ

মূলঃ

শাইখ আব্দুল মুহসিন ইবনে হামাদ আল আব্বাদ আল বাদর

শিক্ষক মসজিদে নববী, ভূতপূর্ব প্রো-ভিসি, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

মদীনা মুনাওয়ারা, সাউদী আরব।

অনুবাদকের কথা

আল্লাহর জন্যই যাবতীয় প্রশংসা আদায় করছি, যিনি আমাকে হিদায়াত দিয়েছেন, আর তাঁর রাসূলের পবিত্র মদীনা নগরীতে জীবনের এক বিরাট অংশ পড়ালেখা ও বসবাসে কাটাবার সুযোগ দিয়েছেন। পবিত্র মদীনায় অবস্থানকালে আমার দেশীয় বাংলাভাষাভাষীগণ আমাকে ও আমার কিছু বন্ধু বান্ধব ছাত্র ভাইদেরকে প্রায়ই মদীনা শরীফ সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্ন করতো। তখন থেকেই এমন একটি গ্রন্থের সন্ধান করছিলাম যা কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর ভিত্তিতে ‘মদীনা’ সংক্রান্ত সকল গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জওয়াব হতে পারে। ইতিমধ্যেই পেয়ে গেলাম আমারই উস্তাদ শাইখ আব্দুল মুহ্সিন আল্ বাদ্র এর অধিকাংশ জিজ্ঞাসার জবাব সমৃদ্ধ এমন একখানা গ্রন্থ। তাই বিভিন্ন ব্যস্ততার মধ্যেও বইটি অনুবাদ করতে দেরী করা সমীচিন মনে করিনি।

শাইখ আব্দুল মুহসিন আল আব্বাদ “আল্লাহ তাকে তাঁর দ্বীনের খেদমতের জন্য দীর্ঘজীবি করুন” তিনি বর্তমান যমানার মুহাদ্দিসদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর নিকট আমি আক্বীদা বিষয়ের সবক গ্রহণ করি আমার অনার্স পর্বে । তার পর মাঝে মধ্যে মাসজিদুন নববীতে তার দারসে বসার সুযোগ পাই, যেখানে তিনি পর্যায়ক্রমে হাদীসের ছয়টি কিতাবের দারস দিয়ে যাচ্ছেন। যার দারসের সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব হলো হাদীসের সনদ ও মতন দু’ অংশের সঠিক জ্ঞান দান, যার তুলনা বিরল। তার ছাত্র হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। আশা করছি এ ছোট বইটি মদীনা বসবাস ও যিয়ারতের পক্ষে যথেষ্ট সহায়ক হবে। আল্লাহ আমার এ প্রচেষ্টা কবুল করুন।

আমীন।

আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

পবিত্র মদীনা নগরী।

১৯/০২/১৪২৪ হিঃ

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

আল্লাহর জন্যই সমস্ত প্রশংসা, আমরা তাঁর প্রশংসা করছি, তার কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করছি, তার কাছেই ক্ষমা চাচ্ছি, আমাদের আত্মার সমূহ অনিষ্ট ও কর্মকান্ডের খারাপি হতে আল্লাহর কাছেই আশ্রয় নিচ্ছি, যাকে আল্লাহ হিদায়াত করেন তাকে পথভ্রষ্ট করার কেউ নেই, আর যাকে পথভ্রষ্ট করেন তাকে হিদায়াত দেয়ার কেউ নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা‘বুদ নেই, তাঁর কোন শরীক নেই, আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা, রাসূল, অন্তরঙ্গ বন্ধু ও তাঁর সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তি। তাকে আল্লাহ কিয়ামতের আগে সুসংবাদদান কারী ও ভয়প্রদর্শনকারী রূপে, আল্লাহর দিকে তাঁর নির্দেশে আহ্বানকারী হিসাবে এবং প্রজ্জলিত আলোকবর্তিকা রূপে প্রেরণ করেছেন। তিনি উম্মতকে যাবতীয় কল্যাণের পথনির্দেশ করেছেন, আর যাবতীয় অকল্যাণকর বস্তু থেকে সাবধান করেছেন। হে আল্লাহ, আপনি তার উপর সালাত, সালাম ও বরকত দিন, অনুরূপভাবে তার বংশধর ও সাহাবী গণ সহ যারা কিয়ামত পর্যন্ত তার পথে চলবে, তার আদর্শের অনুসরণ করবে তাদের উপর।

তার পরঃ মদীনা নগরী; রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মদীনা, যার অপর নাম ত্বাইবাতুত্বাইবা তথা পবিত্র পূণ্যভূমি, ওহী নাযিল হওয়ার স্থান, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে জিব্রীল আল-আমীনের অবতরণ স্থান, ঈমানের আশ্রয়স্থল, মুহাজির ও আনসারদের মিলনকেন্দ্র, যারা ঈমান এনেছিল ও বসতি স্থাপন করেছিল তাদের জন্মভূমি, মুসলমানদের প্রথম রাজধানী, এখান থেকেই আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য পতাকাসমূহ উত্তোলিত হয়েছিল, সত্যের পতাকাবাহী সেনানীগণ মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসার জন্য বের হয়ে পড়েছিল। আর এখান থেকেই আলোর বিচ্ছুরণ ঘটেছিল, ফলে হিদায়াতের আলোয় আলোকিত হয়েছিল জমীন। মুহাম্মাদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হিজরতের স্থান, এদিকেই তিনি হিজরত করেছিলেন, এখানেই তিনি জীবনের শেষ দিনগুলো কাটিয়েছিলেন, এখানেই তার মৃত্যু হয়েছে, এখানেই তাকে কবর দেয়া হয়েছে, আবার এখান থেকেই (তাঁকে হাশরের জন্য) পূনরুত্থিত করা হবে। আর তার কবরই প্রথম কবর যা তার বাসিন্দাকে (হাশরের জন্য) প্রথম বের করবে। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কবর ব্যতীত অন্য কোন নবীর কবর কোথায় আছে সে সম্পর্কে অকাট্য কোন প্রমাণ নেই।

এ বরকতময় মদীনা নগরীকে আল্লাহ তা‘আলা সম্মানিত করেছেন এবং শ্রেষ্টত্ব প্রদান করেছেন, আর একে করেছেন মক্কা নগরীর পরে সবচেয়ে উত্তম স্থান। মক্কা নগরী মদীনা নগরী থেকে শ্রেষ্ঠ এ কথার প্রমাণ রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী- যখন তাকে কাফেরগণ মক্কা থেকে বের করে দিচ্ছিল আর তিনি মদীনার দিকে হিজরতের উদ্দেশ্যে বের হয়ে পড়লেন তখন তিনি মক্কা নগরীকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ

"وَاللهِ إنّكِ لَخَيْرُ أرْضِ اللهِ، وَأَحَبُّ أَرْضُ اللهِ إلى اللهِ، ولو لا أنِّي أُخْرِجْتُ منكِ مَا خَرَجْتُ"

“আল্লাহর শপথ নিশ্চয়ই তুমি আল্লাহর জমিনের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম জায়গা, আর আল্লাহর নিকট আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় ভূমি, যদি আমাকে তোমার থেকে বের করে না দেয়া হতো আমি বের হতাম না”। এটা একটি সহীহ হাদীস যা ইমাম তিরমিযি এবং ইবনে মাজাহ বর্ণনা করেছেন।

অপরপক্ষে যে হাদীসটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিকে সম্পর্কিত করা হয়ে থাকে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দো‘আ করেছেন এবং বলেছেনঃ

"اللهُمَّ إِنَّكَ أَخْرَجْتَنِيْ مِنْ أَحَبِّ الْبِلاَدِ إليّ ـ يعني مكةَ ـ فَأَسْكِنِّيْ فِيْ أَحَبِّ البِلادِ إلَيْكَ ـ يعني المدينةَ ـ"

“হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আমার সবচেয়ে প্রিয় দেশ থেকে বের করেছেন অর্থাৎ, মক্কা নগরী- সুতরাং আপনি আমাকে আপনার নিকট সবচেয়ে প্রিয় দেশের অধিবাসী করুন অর্থাৎ, মদীনা নগরী-” এ হাদীসটি বানোয়াট। অর্থের দিক থেকেও তা সঠিক নয়; কেননা তাতে এ কথা বুঝা যায় যে, আল্লাহর কাছে যা সর্বাধিক প্রিয় রাসূলের কাছে তা সর্বাধিক প্রিয় নয়, আর রাসূলের কাছে যা প্রিয় তা আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় নয়। অথচ জানা কথা যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভালোবাসা মহান আল্লাহর ভালোবাসার অনুগত। আল্লাহর কাছে যা সবচেয়ে বেশী প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছেও তা সবচেয়ে বেশী প্রিয়।

এ বরকতময় মদীনা নগরীর ফযীলত, বসবাসের আদব কায়দা এবং যিয়ারত সম্পর্কে আলোচ্য বইটি লিখতে ইচ্ছা করছি, এতে এর কিছু ফযীলত , বসবাস ও যিয়ারতের কিছু আদব বা নিয়মনীতির উল্লেখ করব।



সর্বশেষ আপডেট ( Saturday, 07 November 2009 )