আমাদের টাইপ করা বইগুলোতে বানান ভুল রয়ে গিয়েছে প্রচুর। আমরা ভুলগুলো ঠিক
করার চেষ্টা করছি ক্রমাগত। ভুল শুধরানো এবং টাইপ সেটিং জড়িত কাজে সহায়তা
করতে যোগাযোগ করুন আমাদের সাথে।
<< সূরা তালিকাআয যুখরুফ
ভূমিকা (নামকরণ, শানে নুযূল, পটভূমি ও বিষয়বস্তুর জন্য ক্লিক করুন)
নামকরণ
সূরার ৮৫ আয়াতের ------আরবী----- শব্দ থেকে এর নাম গৃহীত হয়েছে, অর্থাৎ যে সূরার মধ্যে ---আরবী--‘যুখরুফ’ এটা সেই সূরা।
নাযিল হওয়ার সময়-কাল
কোন নির্ভরযোগ্য বর্ণনা থেকে নাযিল হওয়ার সময়-কাল সম্পর্কে জানা যায়নি। তবে সূরার বিষয়বস্তু সম্পর্কে চিন্তা- ভাবনা করলে স্পষ্ট উপলব্ধি করা যায়, যে যুগে সূরা আল-মু’মিন, হা-মীম আস সাজদা ও আশ্ শূরা নাযিল হয়েছিলো এ সূরাটিও সেই যুগেই নাযিল হয়। মক্কার কাফেররা যে সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রাণ সংহার করতে বদ্ধ পরিকর হয়েছিলো সেই সময় যে সূরাগুলো নাযিল হয়েছিলে এ সূরাটিও তারই একটি বলে মনে হয়। সেই সময় মক্কার কাফেররা সভায় বসে বসে নবীকে (সা) কিভাবে হত্যা করা যায় তা নিয়ে পরামর্শ করতো । তাকে হত্যা করার জন্য একটি আক্রমন সংঘটিত হয়েছিলো ।৭৯ ও ৮০ আয়াতে এ পরিস্থিতির প্রতি ইংগিত রয়েছে।
বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য
কুরাইশ ও আরববাসীরা যেসব জাহেলী আকীদা -বিশ্বাস ও কুসংস্কার আঁকড়ে ধরে চলছিলো এ সূরায় প্রবলভাবে তার সমালোচনা করা হয়েছে এবং অত্যন্ত মজবুত ও হৃদয়গ্রাহী পন্থায় ঐগুলোর অযৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়েছে যাতে সমাজের যেসব ব্যক্তির মধ্যে কিঞ্চিত যুক্তিবাদিতাও আছে তারা সবাই একথা চিন্তা করতে বাধ্য হয় যে, এসব কেমন ধরনের অজ্ঞতা যা আমাদের জাতি চরমভাবে আঁকড়ে ধরে বসে আছে আর যে ব্যক্তি এই আবর্ত থেকে আমাদের উদ্ধারের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন আদাপানি খেয়ে তার বিরুদ্ধে লেগেছে।
বক্তব্যের সূচনা করা হয়েছে এভাবে যে, তোমরা চাচ্ছো তোমাদের দুষ্কর্মের ফলে এই কিতাব নাযিল হওয়া বন্ধ করে দেয়া হবে। কিন্তু আল্লাহ দুষ্কৃতিকারীদের কারণে কখনো নবী-রসূল প্রেরণ ও কিতাব নাযিল বন্ধ করেননি। বরং যে জালেমেরা তার হিদায়াতের পথ রোধ করে দাঁড়িয়েছিলো তাদেরকেই ধবংস করে দিয়েছেন। এখনো তিনি তাই করবেন। পরে আরো একটু অগ্রসর হয়ে আয়াত ৪১,৪৩ ও ৭৯, ৮০ তে এ বিষয়টির পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। যারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রাণ সংহার করতে বদ্ধপরিকর ছিল তাদের শুনিয়ে নবীকে (সা) বলা হয়েছে, তুমি জীবিত থাক বা না থাক এ জালেমদের আমি শাস্তি দেবই॥ তাছাড়া দুস্কৃতিকারীদেরকেও পরিষ্কার ভাষায় সাবধান করে দেয়া হয়েছে যে, তোমরা যদি আমর নবীর বিরুদ্ধে একটি পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাক তাহলে আমিও সে ক্ষেত্রে একটি চরম পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।
এরপর যে ধর্মকে তারা বুকে আঁকড়ে ধরে আছে তা-কি সে সম্পর্কে বলা হয়েছে এবং যেসব যুক্তি প্রমাণ দেখিয়ে তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরোধিতা করছে তা তুলে ধরা হয়েছে।
এরা নিজেরাও স্বীকার করে যে, আল্লাহই যমীন, আসমান এবং এদের নিজেদের ও এদের উপাস্যদের সৃষ্টিকর্তা। এরা একথাও জানে এবং বিশ্বাস করে যে, যে নিয়ামত রাজি থেকে তারা উপকৃত হচ্ছে তা সবই আল্লাহর দেয়া। তারপরও আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্বের ব্যাপারে আল্লাহর সাথে অন্যদের শরীক করার ব্যাপারে গোঁ ধরে থাকে।
বান্দাদেরকে আল্লাহর সন্তান বলে ঘোষনা করে তাও আবার মেয়ে সন্তান হিসেবে। অথচ নিজেদের জন্য মেয়ে সন্তানকে লজ্জা ও অপমান বলে মনে করে।
তারা ফেরেশতাদেরকে দেবী মনে করে নিয়েছে। নারীর আকৃতি দিয়ে তাদের মূর্তি নির্মান করে রেখেছে। তাদেরকে মেয়েদের কাপড় ও অলংকার পরিধান করায় এবং বলে, এরা সব আল্লাহর কন্যা সন্তান। তাদের ইবাদত করা হয়, তাদের উদ্দেশ্যে মানত করা হয় এবং তাদের কাছেই উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য দোয়া করা হয়। তারা একথা কি করে জানলো যে ফেরেশতারা নারী?
এসব অজ্ঞতার কারণে সমালোচনা করা হলে তাকদীরের বাহানা পেশ করে এবং বলে, আল্লাহ আমাদের এসব কাজ পছন্দ না করলে আমরা কি করে এসব মূর্তির পূজা করছি। অথচ আল্লাহর পছন্দ -অপছন্দ জানার মাধ্যম তাঁর কিতাব। পৃথিবীতে তাঁর ইচ্ছাধীনে যেসব কাজ হচ্ছে তা তার পছন্দ অপছন্দ অবহিত হওয়ার মাধ্যম নয়। তার ইচ্ছা বা অনুমোদনে শুধূ এক মূর্তি পূজাই নয়, চুরি, ব্যভিচার, ডাকাতি, খুন সব কিছুই হচ্ছে। পৃথিবীতে যত অন্যায় সংঘটিত হচ্ছে তার সবগুলোকেই কি এই যুক্তিতে বৈধ ও ন্যায় বলে আখ্যায়িত করা হবে?
যদি জিজ্ঞেস করা হয়, এই শিরকের সপক্ষে তোমাদের কাছে এই ভ্রান্ত যুক্তি-প্রমাণ ছাড়া কি আর কোন প্রমান আছে তখন জাবাব দেয়, বাপ-দাদার সময় থেকে তো এ কাজ এভাবেই হয়ে আসছে। এদের কাছে যেন কোন ধর্মের ন্যায় ও সত্য হওযার জন্য এই যুক্তি -প্রমানই যথেষ্ট। অথচ ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-যার অধস্তন পুরুষ হওয়ার ওপরেই তাদের গর্ব ও মর্যাদার ভিত্তি-তার বাপ-দাদার ধর্মকে পদাঘাত করে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন এবং পূর্ব পুরুষদের এমন অন্ধ অনুসরণ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন যার সপক্ষে কোন যুক্তিসংগত দলিল-প্রমাণ ছিল না। এসব সত্ত্বেও যদি তাদেরকে পূর্ব পুরুষদের অন্ধ অনুসরণই করতে হয় তাহলেও তো সর্বাপেক্ষা মর্যাদাবান পূর্ব পুরুষ ইবরাহীম ও ইসমাঈল আলাইহিমুস সালামকে ছেড়ে এরা নিজেদের চরম জাহেল পূর্ব পুরুষদের বাছাই করলো কেন?
এদের যদি জিজ্ঞেস করা হয়, আল্লাহর সাথে অন্যারাও উপাসনা লাভের যোগ্য, কোন নবী বা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত কোন একটি কিতাবও কি কখনো এ শিক্ষা দিয়েছে? এর জবাবে তারা খৃষ্টানদের হযরত ঈসা ইবনে মার্য়ামকে আল্লাহর বেটা হিসেবে মানার ও উপাসনা করাকে এ কাজের দলীল হিসেবে পেশ করে। অথচ কোন নবীর উম্মত শিরক করেছে বা করেনি প্রশ্ন সেটা ছিল না। প্রশ্ন ছিল কোন নবী শিরকের শিক্ষা দিয়েছেন কিনা? কবে ঈসা ইবনে মার্য়াম বলেছিলেন, আমি আল্লাহর পুত্র, তোমরা আমার উপাসনা করো। দুনিয়ার প্রত্যেক নবী যে শিক্ষা দিয়েছিলেন তার শিক্ষাও তাই ছিল। প্রত্যেক নবীর শিক্ষা ছিল আমাদের ও তোমাদের প্রত্যেকের রব আল্লাহ। তোমরা তারই ইবাদত করো।
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রিসালত মেনে নিতে তাদের মনে দ্বিধা শুধু এ কারণে যে, তার কাছে ধন-সম্পদ এবং ক্ষমতা ও জাঁকজমক তো মোটেই নেই। তারা বলে, আল্লাহ যদি আমাদের এখানে কাউকে নবী মনোনীত করতে চাইতেন তাহলে আমাদের দুটি বড় শহরের (মক্কা ও তায়েফ) গন্য মান্য ব্যক্তিদের কাউকে মনোনীত করতেন। এই যুক্তিতে ফিরাউনও হযরত মূসাকে নগণ্য মনে করে বলেছিলো, আসমানের বাদশা যদি যমীনের বাদশার কাছে (আমার কাছে) কোন দূত পাঠাতেন তাহলে তাকে স্বর্ণের বালা পরিয়ে এবং তার আর্দালী হিসেবে একদল ফেরেশতা সহ পাঠাতেন । এ মিসকীন কোত্থেকে আমার সামনে এসে হাজির হয়েছে হয়েছে। আমিই মর্যাদার অধিকারী। কারণ, মিসরের বাদশাহী আমার এবং এই নীল নদ আমার আজ্ঞাধীনেই প্রবাহিত হচ্ছে। আমর তুলনায় এ ব্যক্তির এমন কি মর্যাদা আছে! এর না আছে ধন-সম্পদ না আছে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব।
এভাবে কাফেরদের এক একটি অজ্ঞতাপ্রসূত কথার সমালোচনা করা এবং অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত ও সপ্রমাণ জবাব দেয়ার পর পরিস্কার বলা হয়েছে, না আল্লাহর কোন সন্তানাদি আছে, না আসমান ও যমীনের আল্লাহ আলাদা, না এমন কোন সুপারিশকারী আছে যে জেনে বুঝে গোমরাহীর পথ অনুসরণকারীদের আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা করতে পারে।আল্লাহর সন্তানাদি থাকবে এমন অবস্থা থেকে তার সত্তা পবিত্র। তিনি একাই গোটা বিশ্ব জাহানের খোদা। আর কেউ তার খোদায়ীর গুণাবলী এবং ক্ষমতা ও ইখতিয়ারে শরীক নয়, বরং সবাই তার বান্দা। তার দরবারে শাফায়াত কেবল সেই ব্যক্তিই করতে পারে যে নিজে ন্যায় ও সত্যপন্থী এবং তাদের জন করতে পারে যারা পৃথিবীতে ন্যায় ও সত্যের পথ অবলম্বন করেছিলো।
﴿بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ حم﴾ ১) হা-মীম৷  
﴿وَالْكِتَابِ الْمُبِينِ﴾ ২) এই সুস্পষ্ট কিতাবের শপথ৷  
﴿إِنَّا جَعَلْنَاهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لَّعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ﴾ ৩) আমি একে আরবী ভাষার কুরআন বানিয়েছি যাতে তোমরা তা বুঝতে পারো৷১ 
﴿وَإِنَّهُ فِي أُمِّ الْكِتَابِ لَدَيْنَا لَعَلِيٌّ حَكِيمٌ﴾ ৪) প্রকৃতপক্ষে এটা মূল কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে ২ যা আমার কাছে অত্যন্ত উচুঁ মর্যাদা সম্পন্ন ও জ্ঞানে ভরা কিতাব৷৩ 
﴿أَفَنَضْرِبُ عَنكُمُ الذِّكْرَ صَفْحًا أَن كُنتُمْ قَوْمًا مُّسْرِفِينَ﴾ ৫) তোমরা সীমালংঘনকারী, শুধু এ কারণে কি আমি তোমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে উপদেশমূলক শিক্ষা পাঠানো পরিত্যাগ করবো?৪ 
﴿وَكَمْ أَرْسَلْنَا مِن نَّبِيٍّ فِي الْأَوَّلِينَ﴾ ৬) পূর্ববর্তী জাতিসমূহের মধ্যেও আমি বার বার নবী পাঠিয়েছি৷  
﴿وَمَا يَأْتِيهِم مِّن نَّبِيٍّ إِلَّا كَانُوا بِهِ يَسْتَهْزِئُونَ﴾ ৭) এমন কখনো ঘটেনি যে তাদের কাছে কোন নবী এসেছে৷ কিন্তু তাকে বিদ্রুপ করা হয়নি৷ ৫ 
﴿فَأَهْلَكْنَا أَشَدَّ مِنْهُم بَطْشًا وَمَضَىٰ مَثَلُ الْأَوَّلِينَ﴾ ৮) যারা এদের চাইতে বহুগুনে শক্তিশালী ছিল তাদেরকে আমি ধ্বংস করে দিয়েছি ৷ পূর্ববর্তী জাতিসমূহের উদাহরণ অতীত হয়ে গিয়েছে৷ ৬ 
﴿وَلَئِن سَأَلْتَهُم مَّنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ لَيَقُولُنَّ خَلَقَهُنَّ الْعَزِيزُ الْعَلِيمُ﴾ ৯) তোমরা যদি এসব লোকদের জিজ্ঞেস করো, যমীন ও আসমান কে সৃস্টি করেছে, তাহলে এরা নিজেরাই বলবে, ঐগুলো সেই মহাপরাক্রমশালী ও মহাজ্ঞানী সত্তা সৃষ্টি করেছেন৷৭ 
﴿الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ مَهْدًا وَجَعَلَ لَكُمْ فِيهَا سُبُلًا لَّعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ﴾ ১০) তিনিই তো সৃষ্টি করেছেন যিনি পৃথিবীকে তোমাদের জন্য দোলনা বানিয়েছেন এবং সেখানে তোমাদের জন্য রাস্তা তৈরী করে দিয়েছেন৷ ৮ যাতে তোমাদের গন্তব্যস্থলের পথ খুজেঁ পাও৷৯ 
﴿وَالَّذِي نَزَّلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً بِقَدَرٍ فَأَنشَرْنَا بِهِ بَلْدَةً مَّيْتًا ۚ كَذَٰلِكَ تُخْرَجُونَ﴾ ১১) যিনি আসমান থেকে একটি বিশেষ পরিমানে পানি বর্ষণ করেছেন১০  এবং তার সাহায্যে মৃত ভূমিকে জীবিত করে তুলেছেন৷ তোমাদের এভাবেই একদিন মাটির ভেতর থেকে বের করে আনা হবে৷১১ 
﴿وَالَّذِي خَلَقَ الْأَزْوَاجَ كُلَّهَا وَجَعَلَ لَكُم مِّنَ الْفُلْكِ وَالْأَنْعَامِ مَا تَرْكَبُونَ﴾ ১২) তিনিই সেই মহান সত্তা যিনি সমস্ত জোড়া সৃষ্টি করেছেন৷১২  যিনি তোমাদের জন্য নৌকা - জাহাজ এবং জীব -জন্তুকে সওয়ারি বানিয়েছেন যাতে তোমরা তার পিঠে আরোহণ করো  
﴿لِتَسْتَوُوا عَلَىٰ ظُهُورِهِ ثُمَّ تَذْكُرُوا نِعْمَةَ رَبِّكُمْ إِذَا اسْتَوَيْتُمْ عَلَيْهِ وَتَقُولُوا سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَٰذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ﴾ ১৩) এবং পিঠের ওপর বসার সময় তোমাদের রবের ইহসান স্মরন করে বলোঃ পবিত্র সেই সত্তা যিনি আমাদের জন্য এসব জিনিসকে অনুগত করে দিয়েছেন৷ তা না হলে এদের আয়ত্বে আনার শক্তি আমাদের ছিল না৷ ১৩ 
﴿وَإِنَّا إِلَىٰ رَبِّنَا لَمُنقَلِبُونَ﴾ ১৪) এক দিন আমাদের রবের কাছে আমাদের ফিরে যেতে হবে৷১৪ 
﴿وَجَعَلُوا لَهُ مِنْ عِبَادِهِ جُزْءًا ۚ إِنَّ الْإِنسَانَ لَكَفُورٌ مُّبِينٌ﴾ ১৫) (এসব কিছু জানা এবং মানার পরেও) এসব লোক তার বান্দাদের মধ্য থেকেই কোন কোন বান্দাকে তার অংশ বানিয়ে দিয়েছে৷১৫ প্রকৃত সত্য এই যে, মানুষ সুস্পষ্ট অকৃতজ্ঞ৷  
﴿أَمِ اتَّخَذَ مِمَّا يَخْلُقُ بَنَاتٍ وَأَصْفَاكُم بِالْبَنِينَ﴾ ১৬) আল্লাহ কি তার সৃষ্টির মধ্যে থেকে নিজের জন্য কন্যা বেছে নিয়েছেন এবং তোমাদের পুত্র সন্তান দিয়ে পুরস্কৃত করেছেন৷  
﴿وَإِذَا بُشِّرَ أَحَدُهُم بِمَا ضَرَبَ لِلرَّحْمَٰنِ مَثَلًا ظَلَّ وَجْهُهُ مُسْوَدًّا وَهُوَ كَظِيمٌ﴾ ১৭) অথচ অবস্থা এই যে, এসব লোক সেই দয়াময় আল্লাহর সাথে যে ধরনের সন্তানকে সম্পর্কিত করে এদের নিজেদের কাউকে যদি সেই সন্তানের জন্মলাভের সুসংবাদ দেয়া হয় তাহলে তার মুখমন্ডলে কালিমা ছেয়ে যায় এবং মন দু:খ ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে৷১৬ 
﴿أَوَمَن يُنَشَّأُ فِي الْحِلْيَةِ وَهُوَ فِي الْخِصَامِ غَيْرُ مُبِينٍ﴾ ১৮) আল্লাহর ভাগে কি সেই সব সন্তান যারা অলঙ্কারাদির মধ্যে বেড়ে ওঠে এবং বিতর্ক ও যুক্তি পেশের ক্ষেত্রে নিজের লক্ষ্য পুরোপুরি সুস্পষ্ট করতেও পারে না৷১৭ 
﴿وَجَعَلُوا الْمَلَائِكَةَ الَّذِينَ هُمْ عِبَادُ الرَّحْمَٰنِ إِنَاثًا ۚ أَشَهِدُوا خَلْقَهُمْ ۚ سَتُكْتَبُ شَهَادَتُهُمْ وَيُسْأَلُونَ﴾ ১৯) এরা ফেরেশতাদেরকে - যারা দয়াময় আল্লাহর খাস বান্দা৷১৮  স্ত্রীলোক গন্য করেছে৷ এরা কি তাদের দৈহিক গঠন দেখেছে? ১৯  এদের সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করে নেয়া হবে এবং সে জন্য এদেরকে জবাবদিহি করতে হবে৷  
﴿وَقَالُوا لَوْ شَاءَ الرَّحْمَٰنُ مَا عَبَدْنَاهُم ۗ مَّا لَهُم بِذَٰلِكَ مِنْ عِلْمٍ ۖ إِنْ هُمْ إِلَّا يَخْرُصُونَ﴾ ২০) এরা বলে:“দয়াময় আল্লাহ যদি চাইতেন (যে আমরা তাদের ইবাদত না করি) তাহলে আমরা কখনো পূজা করতাম না ৷ ২০ এ বিষয়ে প্রকৃত সত্য এরা আদৌ জানে না, কেবলই অনুমানে কথা বলে৷  
﴿أَمْ آتَيْنَاهُمْ كِتَابًا مِّن قَبْلِهِ فَهُم بِهِ مُسْتَمْسِكُونَ﴾ ২১) আমি কি এর আগে এদেরকে কোন কিতাব দিয়েছিলাম (নিজেদের এই ফেরেশতা পূজার সপক্ষে) এরা যার সনদ নিজেদের কাছে সংরক্ষন করছে?২১ 
﴿بَلْ قَالُوا إِنَّا وَجَدْنَا آبَاءَنَا عَلَىٰ أُمَّةٍ وَإِنَّا عَلَىٰ آثَارِهِم مُّهْتَدُونَ﴾ ২২) তা নয়, বরং এরা বলে, আমরা আমাদের বাপ-দাদাকে একটি পন্থার ওপর পেয়েছি, আমরা তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরন করে করছি৷২২ 
﴿وَكَذَٰلِكَ مَا أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ فِي قَرْيَةٍ مِّن نَّذِيرٍ إِلَّا قَالَ مُتْرَفُوهَا إِنَّا وَجَدْنَا آبَاءَنَا عَلَىٰ أُمَّةٍ وَإِنَّا عَلَىٰ آثَارِهِم مُّقْتَدُونَ﴾ ২৩) এভাবে তোমার পূর্বে আমি যে জনপদেই কোন সতর্ককারীকে পাঠিয়েছি, তাদের স্বচ্ছল লোকেরা একথাই বলেছে, আমরা আমাদের বাপ দাদাদেরকে একটি পন্থার করতে দেখেছি৷ আমরাও তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরন করছি৷২৩ 
﴿قَالَ أَوَلَوْ جِئْتُكُم بِأَهْدَىٰ مِمَّا وَجَدتُّمْ عَلَيْهِ آبَاءَكُمْ ۖ قَالُوا إِنَّا بِمَا أُرْسِلْتُم بِهِ كَافِرُونَ﴾ ২৪) প্রত্যেক নবীই তাদের বলেছেন, তোমরা তোমাদের বাপ দাদাদের যে পথে চলতে দেখেছো আমি যদি তোমাদের তার চেয়ে অধিক সঠিক রাস্তা বলে দেই তাহলেও কি তোমরা সেই পথেই চলতে থাকবে? তারা সব রসূলকে এই জবাবই দিয়েছে, যে দীনের দিকে আহবান জানানোর জণ্য তুমি প্রেরিত হয়েছো, আমরা তা অস্বীকার করি৷  
﴿فَانتَقَمْنَا مِنْهُمْ ۖ فَانظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ﴾ ২৫) শেষ পর্যন্ত আমি তাদেরকে মার দিয়েছি এবং দেখে নাও, অস্বীকারকারীদের পরিণাম কি হয়েছে৷  
﴿وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ لِأَبِيهِ وَقَوْمِهِ إِنَّنِي بَرَاءٌ مِّمَّا تَعْبُدُونَ﴾ ২৬) স্মরণ করো সেই সময়টি যখন ইবরাহীম তার বাপ এবং কওমকে বলেছিলো৷২৪  “তোমরা যাদের দাসত্ব করো তাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই৷  
﴿إِلَّا الَّذِي فَطَرَنِي فَإِنَّهُ سَيَهْدِينِ﴾ ২৭) আমার সম্পর্ক শুধু তারই সাথে যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন৷ তিনিই আমাকে পথপ্রদর্শন করবেন৷২৫ 
﴿وَجَعَلَهَا كَلِمَةً بَاقِيَةً فِي عَقِبِهِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ﴾ ২৮) ইবরাহীম এ কথাটি২৬  তার পেছনে তার সন্তানদের মধ্যেও রেখে গিয়েছিলো, যাতে তারা এ দিকে ফিরে আসে৷২৭ 
﴿بَلْ مَتَّعْتُ هَٰؤُلَاءِ وَآبَاءَهُمْ حَتَّىٰ جَاءَهُمُ الْحَقُّ وَرَسُولٌ مُّبِينٌ﴾ ২৯) (এসব সত্ত্বেও যখন এরা অন্যদের দাসত্ব করতে শুরু করলো তখন আমি এদের ধবংস করে দিলাম আমি বরং এদের ও এদের বাপ দাদাদেরকে জীবনোপকরন দিতে থাকলাম এমনকি শেষ পর্যন্ত এদের কাছে ন্যায় ও সত্য এবং সুস্পষ্ট বর্ণনাকারী রসূল এসে গেল৷২৮ 
﴿وَلَمَّا جَاءَهُمُ الْحَقُّ قَالُوا هَٰذَا سِحْرٌ وَإِنَّا بِهِ كَافِرُونَ﴾ ৩০) কিন্তু ন্যায় ও সত্য যখন এদের কাছে আসলো তখন এরা বললোঃ এতো যাদু৷২৯ আমরা তা মানতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছি৷  
﴿وَقَالُوا لَوْلَا نُزِّلَ هَٰذَا الْقُرْآنُ عَلَىٰ رَجُلٍ مِّنَ الْقَرْيَتَيْنِ عَظِيمٍ﴾ ৩১) তারা বলে, দুটি শহরের বড় ব্যক্তিদের কারো ওপর এ কুরআন নাযিল করা হলো না কেন?৩০ 
﴿أَهُمْ يَقْسِمُونَ رَحْمَتَ رَبِّكَ ۚ نَحْنُ قَسَمْنَا بَيْنَهُم مَّعِيشَتَهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۚ وَرَفَعْنَا بَعْضَهُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِّيَتَّخِذَ بَعْضُهُم بَعْضًا سُخْرِيًّا ۗ وَرَحْمَتُ رَبِّكَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ﴾ ৩২) তোমার রবের রহমত কি এরা বণ্টন করে? দুনিয়ার জীবনে এদের মধ্যে জীবন যাপনের উপায় উপকরণ আমি বণ্টন করেছি এবং এদের মধ্য থেকে কিছু লোককে অপর কিছু সংখ্যক লোকের ওপর অনেক বেশী মর্যাদা দিয়েছি, যাতে এরা একে অপরের সেবা গ্রহণ করতে পার৷৩১  (এদের নেতারা) যে সম্পদ অর্জন করছে তোমার রবের রহমত তার চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান ৷ ৩২ 
﴿وَلَوْلَا أَن يَكُونَ النَّاسُ أُمَّةً وَاحِدَةً لَّجَعَلْنَا لِمَن يَكْفُرُ بِالرَّحْمَٰنِ لِبُيُوتِهِمْ سُقُفًا مِّن فِضَّةٍ وَمَعَارِجَ عَلَيْهَا يَظْهَرُونَ﴾ ৩৩) সমস্ত মানুষ একই পথের অনুসারি হয়ে যাবে যদি এই আশংকা না থাকত তাহলে যারা দয়াময় আল্লাহর সাথে কুফরি করে আমি তাদের ঘরের ছাদ,  
﴿وَلِبُيُوتِهِمْ أَبْوَابًا وَسُرُرًا عَلَيْهَا يَتَّكِئُونَ﴾ ৩৪) যে সিঁড়ি দিয়ে তারা তাদের বালাখানায় ওঠে সেই সিঁড়ি, দরজাসমূহ এবং যে সিংহাসনের ওপর তারা বালিশে হেলান দিয়ে বসে তা সবই রৌপ্য এবং স্বর্ণের বানিয়ে দিতাম৷৩৩ 
﴿وَزُخْرُفًا ۚ وَإِن كُلُّ ذَٰلِكَ لَمَّا مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۚ وَالْآخِرَةُ عِندَ رَبِّكَ لِلْمُتَّقِينَ﴾ ৩৫) এগুলে তো শুধু পার্থিব জীবনের উপকরণ, তোমার রবের দরবারে আখেরাতে শুধু মুত্তাকীদের জন্য নির্দিষ্ট৷  
﴿وَمَن يَعْشُ عَن ذِكْرِ الرَّحْمَٰنِ نُقَيِّضْ لَهُ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهُ قَرِينٌ﴾ ৩৬) যে ব্যক্তি রহমানের স্মরণ ৩৪ থেকে গাফিল থাকে আমি তার ওপর এক শয়তান চাপিয়ে দেই, সে তার বন্ধু হয়ে যায়৷  
﴿وَإِنَّهُمْ لَيَصُدُّونَهُمْ عَنِ السَّبِيلِ وَيَحْسَبُونَ أَنَّهُم مُّهْتَدُونَ﴾ ৩৭) এ শয়তানরা এসব লোকদেরকে সঠিক পথে আসতে বাধা দেয়, কিন্তু এরা মনে করে আমরা ঠিক পথেই চলছি৷  
﴿حَتَّىٰ إِذَا جَاءَنَا قَالَ يَا لَيْتَ بَيْنِي وَبَيْنَكَ بُعْدَ الْمَشْرِقَيْنِ فَبِئْسَ الْقَرِينُ﴾ ৩৮) অবশেষে যখন এ ব্যক্তি আমার কাছে পৌঁছবে তখন তার শয়তানকে বলবে : “আহা, যদি আমার ও তোমার মাঝে পূর্ব ও পশ্চিমের ব্যবধান হতো তুমি তো জঘন্যতম সাথী প্রমাণিত হয়েছো৷”  
﴿وَلَن يَنفَعَكُمُ الْيَوْمَ إِذ ظَّلَمْتُمْ أَنَّكُمْ فِي الْعَذَابِ مُشْتَرِكُونَ﴾ ৩৯) সেই সময় এদের বলা হবে, তোমরা যখন জুলুম করেছো তখন আজ একথা তোমাদের কোন উপকারে আসবে না৷ তোমরা ও তোমাদের শয়তানরা সমানভাবে আযাব ভোগ করবে৷৩৫ 
﴿أَفَأَنتَ تُسْمِعُ الصُّمَّ أَوْ تَهْدِي الْعُمْيَ وَمَن كَانَ فِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ﴾ ৪০) হে নবী, তাহলে এখন কি তুমি বধিরদের শোনাবে ? নাকি অন্ধ ও সুস্পষ্ট গোমরাহীর মধ্যে পড়ে থাকা লোকদের পথ দেখাবে?৩৬ 
﴿فَإِمَّا نَذْهَبَنَّ بِكَ فَإِنَّا مِنْهُم مُّنتَقِمُونَ﴾ ৪১) আমি তোমাকে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নেই কিংবা এদেরকে যে পরিণামের প্রতিশ্রুতি আমি দিয়েছি তা তোমাকে চাক্ষুষ দেখিয়ে দেই এখন তো আমার এদেরকে শাস্তি দিতে হবে৷  
﴿أَوْ نُرِيَنَّكَ الَّذِي وَعَدْنَاهُمْ فَإِنَّا عَلَيْهِم مُّقْتَدِرُونَ﴾ ৪২) এদের বিরুদ্ধে আমি পূর্ণ ক্ষমতা রাখি৷৩৭ 
﴿فَاسْتَمْسِكْ بِالَّذِي أُوحِيَ إِلَيْكَ ۖ إِنَّكَ عَلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ﴾ ৪৩) অহীর মাধ্যমে তোমার কাছে যে কিতাব পাঠানো হয়েছে সর্বাবস্থায় তুমি দৃঢ়ভাবে তা আঁকড়ে থাকো নিশ্চয়ই তুমি সোজা পথে আছো ৷৩৮ 
﴿وَإِنَّهُ لَذِكْرٌ لَّكَ وَلِقَوْمِكَ ۖ وَسَوْفَ تُسْأَلُونَ﴾ ৪৪) প্রকৃত সত্য হলো, এ কিতাব তোমার ও তোমার কর্মের জন্য অনেক বড় একটি মর্যাদা এবং এ জন্য অচিরেই তোমাদের জবাবদিহি করতে হবে৷ ৩৯ 
﴿وَاسْأَلْ مَنْ أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ مِن رُّسُلِنَا أَجَعَلْنَا مِن دُونِ الرَّحْمَٰنِ آلِهَةً يُعْبَدُونَ﴾ ৪৫) তোমার পূর্বে আমি যত রসূল পাঠিয়েছিলাম তাদের সবাইকে জিজ্ঞেস করে দেখো, আমি উপাসনার জন্য রহমান খোদা ছাড়া আর কোন উপাস্য নির্দিষ্ট করেছিলাম কিনা?৪০ 
﴿وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مُوسَىٰ بِآيَاتِنَا إِلَىٰ فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهِ فَقَالَ إِنِّي رَسُولُ رَبِّ الْعَالَمِينَ﴾ ৪৬) আমি ৪১  মূসাকে আমার নিদর্শনসমূহসহ৪২  ফেরাউন ও তার সভাসদদের কাছে পাঠিয়েছিলাম৷ সে গিয়ে তাদের বলেছিলো : আমি বিশ্ব জাহানের রবের রসূল৷  
﴿فَلَمَّا جَاءَهُم بِآيَاتِنَا إِذَا هُم مِّنْهَا يَضْحَكُونَ﴾ ৪৭) তারপর সে যখন তাদের সামনে আমার নিদর্শনসমূহ পেশ করলো তখন তারা বিদ্রূপ করতে লাগলো৷  
﴿وَمَا نُرِيهِم مِّنْ آيَةٍ إِلَّا هِيَ أَكْبَرُ مِنْ أُخْتِهَا ۖ وَأَخَذْنَاهُم بِالْعَذَابِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ﴾ ৪৮) আমি তাদেরকে একের পর এক এমন সব নিদর্শন দেখাতে থাকলাম যা আগেরটার চেয়ে বড় হতো৷ আমি তাদেরকে আযাবের মধ্যে লিপ্ত করলাম যাতে তারা তাদের আচরণ থেকে বিরত থাকে৷ ৪৩ 
﴿وَقَالُوا يَا أَيُّهَ السَّاحِرُ ادْعُ لَنَا رَبَّكَ بِمَا عَهِدَ عِندَكَ إِنَّنَا لَمُهْتَدُونَ﴾ ৪৯) প্রত্যেক আযাবের সময় তারা বলতো,হে যাদুকর তোমার রবের পক্ষ থেকে তুমি যে পদমর্যাদা লাভ করেছো তার ভিত্তিতে আমাদের জন্য তার কাছে দোয়া করো৷ আমরা অবশ্যই সঠিক পথে এসে যাবো৷  
﴿فَلَمَّا كَشَفْنَا عَنْهُمُ الْعَذَابَ إِذَا هُمْ يَنكُثُونَ﴾ ৫০) কিন্তু আমি সেই মাত্র তাদের ওপর থেকে আযাব সরিয়ে দিতাম তারা তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতো৷৪৪ 
﴿وَنَادَىٰ فِرْعَوْنُ فِي قَوْمِهِ قَالَ يَا قَوْمِ أَلَيْسَ لِي مُلْكُ مِصْرَ وَهَٰذِهِ الْأَنْهَارُ تَجْرِي مِن تَحْتِي ۖ أَفَلَا تُبْصِرُونَ﴾ ৫১) একদিন ফেরাউন তার কওমের মাঝে ঘোষনা করলো:৪৫ হে জনগণ, মিসরের বাদশাহী কি আমার নয় এবং এসব নদী কি আমার অধীনে প্রবাহিত হচ্ছে না? তোমরা কি তা দেখতে পাচ্ছ না ?৪৬ 
﴿أَمْ أَنَا خَيْرٌ مِّنْ هَٰذَا الَّذِي هُوَ مَهِينٌ وَلَا يَكَادُ يُبِينُ﴾ ৫২) আমিই উত্তম না এই ব্যক্তি যে হীন ও নগণ্য৪৭ এবং নিজের বক্তব্যও স্পষ্ট করে বর্ণনা করেত পারে না৷ ৪৮ 
﴿فَلَوْلَا أُلْقِيَ عَلَيْهِ أَسْوِرَةٌ مِّن ذَهَبٍ أَوْ جَاءَ مَعَهُ الْمَلَائِكَةُ مُقْتَرِنِينَ﴾ ৫৩) তার কাছে সোনার বালা কেন পাঠানো হলো না? অথবা তার আরদালী হিসেবে একদল ফেরেশতা কেন আসলো না ৷ ৪৯ 
﴿فَاسْتَخَفَّ قَوْمَهُ فَأَطَاعُوهُ ۚ إِنَّهُمْ كَانُوا قَوْمًا فَاسِقِينَ﴾ ৫৪) সে তার জাতিকে হালকা ও গুরুত্বহীন মনে করেছে এবং তারাও তার আনুগত্য করেছে৷ প্রকৃতপক্ষে তারা ছিল ফাসেক৷ ৫০ 
﴿فَلَمَّا آسَفُونَا انتَقَمْنَا مِنْهُمْ فَأَغْرَقْنَاهُمْ أَجْمَعِينَ﴾ ৫৫) অবশেষে তারা যখন আমাকে ক্রোধান্বিত করলো তখন আমি তাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করলাম , তাদের সবাইকে এক সাথে ডুবিয়ে মারলাম  
﴿فَجَعَلْنَاهُمْ سَلَفًا وَمَثَلًا لِّلْآخِرِينَ﴾ ৫৬) এবং পরবর্তীদের জন্য অগ্রবর্তী ও শিক্ষণীয় উদাহরণ বাণিয়ে দিলাম৷ ৫১ 
﴿وَلَمَّا ضُرِبَ ابْنُ مَرْيَمَ مَثَلًا إِذَا قَوْمُكَ مِنْهُ يَصِدُّونَ﴾ ৫৭) আর যেই মাত্র ইবনে মারয়ামের উদাহরণ দেয়া হলো তোমার কওম হৈ চৈ শুরু করে দিলো  
﴿وَقَالُوا أَآلِهَتُنَا خَيْرٌ أَمْ هُوَ ۚ مَا ضَرَبُوهُ لَكَ إِلَّا جَدَلًا ۚ بَلْ هُمْ قَوْمٌ خَصِمُونَ﴾ ৫৮) এবং বলতে শুরু করলো : আমাদের উপাস্য উৎকৃষ্ট না সে?৫২  তারা শুধু বিতর্ক সৃষ্টির জন্য তোমার সামনে এ উদাহরণ পেশ করেছে৷ সত্য কথা হলো, এরা মানুষই কলহ প্রিয়৷  
﴿إِنْ هُوَ إِلَّا عَبْدٌ أَنْعَمْنَا عَلَيْهِ وَجَعَلْنَاهُ مَثَلًا لِّبَنِي إِسْرَائِيلَ﴾ ৫৯) ইবনে মারয়াম আমার বান্দা ছাড়া আর কিছুই ছিল না৷ আমি তাকে নিয়ামত দান করেছিলাম এবং বনী ইসরাঈলদের জন্য আমার অসীম ক্ষমতার একটি নমুনা বানিয়েছিলাম৷ ৫৩ 
﴿وَلَوْ نَشَاءُ لَجَعَلْنَا مِنكُم مَّلَائِكَةً فِي الْأَرْضِ يَخْلُفُونَ﴾ ৬০) আমি চাইলে তোমাদের পরিবর্তে ফেরেশতা সৃষ্টি করে দিতে পারি ৫৪ যারা পৃথিবীতে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত হবে৷  
﴿وَإِنَّهُ لَعِلْمٌ لِّلسَّاعَةِ فَلَا تَمْتَرُنَّ بِهَا وَاتَّبِعُونِ ۚ هَٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيمٌ﴾ ৬১) আর প্রকৃতপক্ষে সে তো কিয়ামতের একটি নিদর্শন৷ ৫৫ অতএব সে ব্যাপারে তোমরা সন্দেহ পোষণ করো না এবং আমার কথা মেনে নাও৷ এটাই সরল-সোজা পথ৷  
﴿وَلَا يَصُدَّنَّكُمُ الشَّيْطَانُ ۖ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ﴾ ৬২) শয়তান যেন তা থেকে তোমাদের বিরত না রাখে৷ ৫৬ সে তো তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন৷  
﴿وَلَمَّا جَاءَ عِيسَىٰ بِالْبَيِّنَاتِ قَالَ قَدْ جِئْتُكُم بِالْحِكْمَةِ وَلِأُبَيِّنَ لَكُم بَعْضَ الَّذِي تَخْتَلِفُونَ فِيهِ ۖ فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَطِيعُونِ﴾ ৬৩) ঈসা যখন সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নিয়ে এসেছিলো, বলেছিলো আমি তোমাদের কাছে হিকমত নিয়ে এসেছি যে, তোমরা যেসব বিষয়ে মতানৈক্য পোষণ করছো তার কিছু বিষয়ের তাৎপর্য প্রকাশ করবো৷ অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো৷  
﴿إِنَّ اللَّهَ هُوَ رَبِّي وَرَبُّكُمْ فَاعْبُدُوهُ ۚ هَٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيمٌ﴾ ৬৪) প্রকৃত সত্য এই যে, আল্লাহই আমার ও তোমাদের রব৷ তারই ইবাদত করো৷ এটাই সরল-সোজা পথ৷৫৭ 
﴿فَاخْتَلَفَ الْأَحْزَابُ مِن بَيْنِهِمْ ۖ فَوَيْلٌ لِّلَّذِينَ ظَلَمُوا مِنْ عَذَابِ يَوْمٍ أَلِيمٍ﴾ ৬৫) কিন্তু (তার এই সুস্পষ্ট শিক্ষা সত্ত্বেও) বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠী পরস্পর মত পার্থক্য করলো৷ ৫৮ যারা জুলুম করেছে তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক দিনের আযাব৷  
﴿هَلْ يَنظُرُونَ إِلَّا السَّاعَةَ أَن تَأْتِيَهُم بَغْتَةً وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ﴾ ৬৬) এখন এসব লোকেরা কি শুধু এ জন্যই অপেক্ষমান যে অকস্মাত এদের ওপর কিয়ামত এসে যাক এবং এরা আদৌ টের না পাক?  
﴿الْأَخِلَّاءُ يَوْمَئِذٍ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ إِلَّا الْمُتَّقِينَ﴾ ৬৭) যখন যে দিনটি আসবে তখন মুত্তাকীরা ছাড়া অবশিষ্ট সব বন্ধুই একে অপরের দুশমন হয়ে যাবে৷ ৫৯ 
﴿يَا عِبَادِ لَا خَوْفٌ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ وَلَا أَنتُمْ تَحْزَنُونَ﴾ ৬৮) যারা আমার আয়াতসমূহের ওপর ঈমান এনেছিলো এবং আমার আদেশের অনুগত হয়েছিল  
﴿الَّذِينَ آمَنُوا بِآيَاتِنَا وَكَانُوا مُسْلِمِينَ﴾ ৬৯) সেই দিন তাদের বলা হবে, “হে আমার বান্দারা, আজ তোমাদের কোন ভয় নেই এবং কোন দুঃখও আজ তোমাদের স্পর্শ করবে না৷  
﴿ادْخُلُوا الْجَنَّةَ أَنتُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ تُحْبَرُونَ﴾ ৭০) তোমরা এবং তোমাদের স্ত্রীরা ৬০ জান্নাতে প্রবেশ করো৷ তোমাদের খুশী করা হবে৷”  
﴿يُطَافُ عَلَيْهِم بِصِحَافٍ مِّن ذَهَبٍ وَأَكْوَابٍ ۖ وَفِيهَا مَا تَشْتَهِيهِ الْأَنفُسُ وَتَلَذُّ الْأَعْيُنُ ۖ وَأَنتُمْ فِيهَا خَالِدُونَ﴾ ৭১) তাদের সামনে স্বর্ণের প্লেট ও পেয়ালাসমূহ আনা নেয়া করানো হবে এবং মনের মত ও দৃষ্টি পরিতৃপ্তকারী প্রতিটি জিনিস সেখানে থাকবে৷ তাদের বলা হবে, “এখন তোমরা এখানে চিরদিন থাকবে৷ পৃথিবীতে তোমরা যেসব কাজ করেছো  
﴿وَتِلْكَ الْجَنَّةُ الَّتِي أُورِثْتُمُوهَا بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ﴾ ৭২) তার বিনিময়ে এ জান্নাতের উত্তরাধিকারী হয়েছো৷  
﴿لَكُمْ فِيهَا فَاكِهَةٌ كَثِيرَةٌ مِّنْهَا تَأْكُلُونَ﴾ ৭৩) তোমাদের জন্য এখানে প্রচুর ফল মজুদ আছে যা তোমরা খাবে৷  
﴿إِنَّ الْمُجْرِمِينَ فِي عَذَابِ جَهَنَّمَ خَالِدُونَ﴾ ৭৪) আর অপরাধীরা তারা তো চিরদিন জাহান্নামের আযাব ভোগ করবে৷  
﴿لَا يُفَتَّرُ عَنْهُمْ وَهُمْ فِيهِ مُبْلِسُونَ﴾ ৭৫) তাদের আযাব কখনো কম করা হবে না এবং তারা সেখানে নিরাশ অবস্থায় পড়ে থাকবে৷  
﴿وَمَا ظَلَمْنَاهُمْ وَلَٰكِن كَانُوا هُمُ الظَّالِمِينَ﴾ ৭৬) আমি তাদের প্রতি জুলুম করিনি৷ বরং তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি জুলুম করেছে৷  
﴿وَنَادَوْا يَا مَالِكُ لِيَقْضِ عَلَيْنَا رَبُّكَ ۖ قَالَ إِنَّكُم مَّاكِثُونَ﴾ ৭৭) তারা চিৎকার করে বলবে “হে মালেক৷ ৬১ তোমার রব আমাদেরকে একেবারে ধ্বংস করে দেন তাহলে সেটাই ভাল” সে জবাবে বলবে : “তোমাদের এভাবেই থাকতে হবে৷  
﴿لَقَدْ جِئْنَاكُم بِالْحَقِّ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَكُمْ لِلْحَقِّ كَارِهُونَ﴾ ৭৮) আমরা তোমাদের কাছে ন্যায় ও সত্য নিয়ে গিয়েছিলাম৷ কিন্তু তোমাদের অধিকাংশের কাছে ন্যায় ও সত্য ছিল অপছন্দনীয়”৷ ৬২ 
﴿أَمْ أَبْرَمُوا أَمْرًا فَإِنَّا مُبْرِمُونَ﴾ ৭৯) এ লোকেরা কি কোন পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে? ৬৩ বেশ তো! তাহলে আমিও একটি সিদ্ধান্ত নিচ্ছি৷  
﴿أَمْ يَحْسَبُونَ أَنَّا لَا نَسْمَعُ سِرَّهُمْ وَنَجْوَاهُم ۚ بَلَىٰ وَرُسُلُنَا لَدَيْهِمْ يَكْتُبُونَ﴾ ৮০) এরা কি মনে করেছে, আমি এদের গোপন এবং এদের চুপিসারে বলা কথা শুনতে পাই না!  
﴿قُلْ إِن كَانَ لِلرَّحْمَٰنِ وَلَدٌ فَأَنَا أَوَّلُ الْعَابِدِينَ﴾ ৮১) আমি সব কিছু শুনছি এবং আমার ফেরেশতা তাদের কাছে থেকেই তা লিপিবদ্ধ করছে৷ এদের বলো, “সত্যিই যদি রহমানের কোন সন্তান থাকতো তাহলে তার সর্বপ্রথম ইবাদতকারী হতাম আমি”৷৬৪ 
﴿سُبْحَانَ رَبِّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ رَبِّ الْعَرْشِ عَمَّا يَصِفُونَ﴾ ৮২) আসমান ও যমীনের শাসনকর্তা আরশের অধিপতি এমন সমস্ত বিষয় থেকে পবিত্র যা এরা তার প্রতি আরোপ করে থাকে৷  
﴿فَذَرْهُمْ يَخُوضُوا وَيَلْعَبُوا حَتَّىٰ يُلَاقُوا يَوْمَهُمُ الَّذِي يُوعَدُونَ﴾ ৮৩) ঠিক আছে, যে দিনের ভয় তাদের দেখানো হচ্ছে সেই দিন না দেখা পর্যন্ত তাদেরকে বাতিল ধ্যান-ধারণার মধ্যে ডুবে এবং নিজেদের খেলায় মেতে থাকতে দাও৷  
﴿وَهُوَ الَّذِي فِي السَّمَاءِ إِلَٰهٌ وَفِي الْأَرْضِ إِلَٰهٌ ۚ وَهُوَ الْحَكِيمُ الْعَلِيمُ﴾ ৮৪) সেই একজনই আসমানেও আল্লাহ এবং যমীনেও আল্লাহ৷  
﴿وَتَبَارَكَ الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَعِندَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ﴾ ৮৫) তিনি মহাকুশলী ও মহাজ্ঞানী৷ ৬৫ অনেক উচ্চ ও সম্মানিত সেই মহান সত্তা যার মুঠিতে যমীন ও আসমানসমূহ এবং যমীন ও আসমানের যা কিছু আছে তার প্রতিটি জিনিসের বাদশাহী৷ ৬৬  তিনিই কিয়ামতের সময়ের জ্ঞান রাখেন এবং তোমাদের সবাইকে তার কাছেই ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে৷৬৭ 
﴿وَلَا يَمْلِكُ الَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِهِ الشَّفَاعَةَ إِلَّا مَن شَهِدَ بِالْحَقِّ وَهُمْ يَعْلَمُونَ﴾ ৮৬) এরা তাকে বাদ দিয়ে যাদের ডাকে তারা শাফায়াতের কোন ইখতিয়ার রাখে না৷ তবে যদি কেউ জ্ঞানের ভিত্তিতে ন্যায় ও সত্যের সাক্ষ্য দান করে৷ ৬৮ 
﴿وَلَئِن سَأَلْتَهُم مَّنْ خَلَقَهُمْ لَيَقُولُنَّ اللَّهُ ۖ فَأَنَّىٰ يُؤْفَكُونَ﴾ ৮৭) ঐদিন তোমরা এদের জিজ্ঞেস করো, কে এদের সৃষ্টি করেছে তাহলে এরা নিজেরাই বলবে, আল্লাহ৷৬৯ তাহলে কোথা থেকে এরা প্রতারিত হচেছ?  
﴿وَقِيلِهِ يَا رَبِّ إِنَّ هَٰؤُلَاءِ قَوْمٌ لَّا يُؤْمِنُونَ﴾ ৮৮) রসূলের এই কথার শপথ, হে রব, এরাই সেই সব লোক যারা মানছে না৷৭০ 
﴿فَاصْفَحْ عَنْهُمْ وَقُلْ سَلَامٌ ۚ فَسَوْفَ يَعْلَمُونَ﴾ ৮৯) ঠিক আছে, হে নবী, এদের উপেক্ষা করো এবং বলে দাও, তোমাদের সালাম জানাই৷৭১ অচিরেই তারা জানতে পারবে৷  
|