আল্লাহকে পেতে মাধ্যম গ্রহণ প্রিন্ট কর ইমেল
লিখেছেন শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ   
Thursday, 11 June 2009
আর্টিকেল সূচি
আল্লাহকে পেতে মাধ্যম গ্রহণ
রাসূলগণ দ্বীন প্রচার ও দাওয়াতের মাধ্যম
রাসূলরা কোন প্রকার লাভ ও কল্যাণ বয়ে আনতে পারেননা
শরীয়ত গর্হিত (নিষিদ্ধ) মাধ্যম সমুহ
শরীয়ত সমর্থিত শাফায়াত আর শরীয়ত নিষিদ্ধ শাফায়াত
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাওহীদ পুংখানুপুংখভাবে বাস্তবায়ন করে গেছেন

রাসূলরা কোন প্রকার লাভ ও কল্যাণ বয়ে আনতে পারেননা

আর যদি মাধ্যম দ্বারা ঐ ব্যক্তি (যে বলেছিল যে,"আমাদেরকে অবশ্যই মাধ্যম ধরতে হবে") উদ্দেশ্য নিয়ে থাকেন যে, উপকার লাভ করা ও ক্ষতিকর বিষয় সমুহ প্রতিহত করার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই মাধ্যম ধরতে হবে, যেমনঃ বান্দার জন্য রিজিক, সাহায্য বা হেদায়াত আহরণের জন্য তাদেরকে মাধ্যম হিসাবে সাব্যস্ত করে তাদের কাছে তা প্রার্থনা করতে হবে, বা তাদের দিকেই এ সব ব্যাপারে প্রত্যাবর্তন করতে হবে তবে এটা আল্লাহর সাথে সবচেয়ে বড় শির্কের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত, যার কারণে আল্লাহ তা'আলা মুশরিকদেরকে কাফের বলেছেন। কেননা তারা আল্লাহ ছাড়া অনেক অলী এবং সুপারিশকারী নির্ধারণ করে তাদের কাছে উপকার লাভ ও অপকার ঠেকানোর আহবান করত। অথচ আল্লাহ যাকে অনুমতি দিবেন সে ছাড়া অন্য কেহ সুপারিশ করার ক্ষমতা রাখেনা, আল্লাহ তা'আলা বলেন : (আল্লাহই আসমান, জমীন ও তার মাঝের যা কিছু আছে সব গুলিকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। তারপর আরশের উপর উঠেছেন। তোমাদের জন্য তিনি ছাড়া আর কোন অভিভাবক, কোন সুপারিশকারী নেই, তোমরা কি উপদেশ গ্রহণ করছনা?) {সূরা আস্-সাজদাহ: ৪}

আরো বলেন : (আর আপনি (কুরআন) এর দ্বারা যারা তাদের রব এর কাছে একত্রিত হওয়াকে ভয় পায় তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করুন তিনি ছাড়া তাদের কোন সাহায্যকারী (গার্জিয়ান) ও সুপারিশকারী নেই।) {সূরা আল-আন’আম: à§«à§§}

আল্লাহ আরো বলেন : (বলুনঃ তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে উপাস্য বলে বিশ্বাস করে থাক তাদের আহবান কর, দেখবে তারা তোমাদের উপর আপতিত বিপদ থেকে তোমাদেরকে মুক্তি ও (সে বিপদকে) অন্যদের দিকে ফিরিয়ে দিবার ক্ষমতা রাখেনা। তারা যাদেরকে ডাকছে তারাই তাদের প্রভূর নৈকট্য লাভের জন্য অসীলা (বা সৎকাজের মাধ্যমে নৈকট্য) খুঁজে বেড়াচ্ছে যে তাদের মধ্যে কে সর্বাধিক নিকটবর্তী (অর্থাৎ তারা বেশী নৈকট্য লাভের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত), তাঁরা (আল্লাহর) রহমতের আশা করছে, তার শাস্তিকে ভয় করছে, (কেননা) নিশ্চয়ই আপনার রব এর শাস্তি ভীতিপ্রদ।) {সূরা আল-ইসরা: ৫৬-৫৭}

আরো বলেন : (বলুন: আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে তোমরা (সাহায্যকারী) বিশ্বাস করে নিয়েছিলে তাদের আহবান কর, দেখবে তারা আসমান ও জমীনের অণূ পরিমাণ বস্তুরও অধিকারী নহে, আর এ দুটোতে তাদের জন্য কোন শরীক ও নেই, এবং তাদের মধ্য হতে কোন সাহায্যকারীও নেই, আর তার কাছে তার অনুমতি প্রাপ্ত ব্যক্তিগণ ছাড়া কারও কোন সুপারিশ কাজে আসবেনা।) {সূরা সাবা: ২২, ২৩}

সলফে সালেহীনদের একদল বলেছেন যে, কোন কোন সম্প্রদায় ঈসা, উযায়ের (আঃ) এবং ফেরেশ্তাদেরকে বিপদাপদে সাহায্য করার জন্য ডাকত তখন আল্লাহ তা'আলা এ কথা ঘোষণা করলেন যে, ফেরেশ্তা আর নবীরা বিপদ দুর করতে বা বিপদের মোড় ঘুরিয়ে দিতে অপারগ বরং তারা নিজেরাই আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টায় বিভোর, তারা তার রহমতের আশা ও আজাবের ভয় করছে।

আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন : কোন মানুষের জন্য এটা উচিত নয় যে, আল্লাহ তাকে কিতাব, জ্ঞান, নবুওত দিবার পর সে লোকদের বলবে যে, তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে আমার ইবাদত কর, বরং (বলবে) তোমরা কিতাবের জ্ঞান শিক্ষা দেয়া ও পাঠ নেয়ার পর সংস্কারক হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে, আর সে (নবী) ফেরেশ্তা ও নবীদেরকে রব মানারও নির্দেশ দিতে পারেনা, সে কি তোমাদেরকে মুসলমান হওয়ার পরে কুফরীর নির্দেশ দিবে?) {সূরা আলে-ইমরান: ৭৯, ৮০}

উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ তা'আলা বলছেন যে, ফেরেশ্তা ও নবীদেরকে রব মানা কুফরী, ফলে যে কেহ ফেরেস্তা ও নবীদেরকে মাধ্যম ধরে তাদেরকে ডাকবে, তাদের উপর ভরসা করবে, তাদের কাছে কোন কল্যাণ লাভের ও অকল্যাণ ঠেকানোর প্রার্থনা করবে (যেমন তাদের কাছে গোনাহ মাফ, অনতরের হেদায়েত, বিপদমুক্তি, অভাব-অনটন দুর করার আহবান জানাবে) সে মুসলমানদের ঐক্যমতে কাফিরদের মধ্যে গণ্য হবে।

আল্লাহ তা'আলা বলেন: (আর তারা বলছে যে, দয়াময় আল্লাহ একজনকে সন্তান হিসাবে গ্রহণ করেছেন অথচ তিনি (একথা থেকে) কতই না পবিত্র ! বরং এরা আল্লাহর সম্মানিত বান্দা। তারা আল্লাহর কথার অগ্রগামী হয়না, আর তারই নির্দেশ পালন করে থাকে, তিনি তাদের সম্মুখে ও পিছনে যা আছে সবই জানেন, তারা আল্লাহ যার উপর খুশী হন সে ছাড়া অন্যদের জন্য সুপারিশ করবেনা, বরং তারা তার ভয়ে সদা ভীত, আর তাদের মধ্য থেকে যে একথা বলবে যে তিনি (আল্লাহ) ছাড়া আমিই মাবুদ তাকে আমি জাহান্নাম দিয়ে প্রতিফল দেব, এভাবেই আমি অত্যাচারীদের শাস্তি বিধান করে থাকি।) {সূরা আল-আম্বিয়া: ২৬-২৯}

আরো বলেন: (মসীহ (ঈসা) কক্ষনো আল্লাহর বান্দাহ হতে লজ্জাবোধ করেননা, অনুরুপ আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্ত ফেরেস্তা গণও নয়, আর যারা তাঁর ইবাদত করতে লজ্জাবোধ এবং অহংকার করবে অচিরেই তিনি তাদের সবাইকে তার কাছে একত্রিত করবেন।) {সূরা আন্-নিসা: ১৭২}

আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন: (আর তারা বলছে রাহমান সন্তান গ্রহণ করেছেন, নিশ্চয়ই তোমরা বড় জঘন্য কথা নিয়ে এসেছ, আকাশ ভেঙ্গে পড়বার উপক্রম হয়, জমিন ফেটে যাবার অবস্থা হয়, আর পাহাড় গুলি নড়ে উঠে, যখন তোমরা রাহমান (আল্লাহ) এর জন্য সন্তান সাব্যস্ত কর, রাহমানের জন্য সন্তান নেয়া কখনো উচিত নহে, আসমান ও জমীনের সবকিছু কেবল তারই বান্দা হিসাবে সদা হাজির, নিশ্চয়ই তিনি তাদের পরিসংখান নিয়েছেন, এবং তাদেরকে নির্ভুলভাবে গণনা করেছেন, আর তাদের প্রত্যেকে কিয়ামতের দিনে একাকী তার নিকট হাজির হবে।) {সূরা মারয়াম: ৮৮-৯৫}

আল্লাহ আরো বলেন: (তারা আল্লাহকে ছেড়ে যারা তাদের কোন উপকার বা অপকার করার ক্ষমতা রাখেনা তাদের ইবাদত করছে আর বলছে এগুলো আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী, বলুন: তোমরা কি আল্লাহকে আসমান ও যমীনের অজ্ঞাত কোন বস্তুর খবর দিচ্ছ? তাঁরই পবিত্রতা, তিনি তারা যে সব শির্ক করছে তার থেকে উর্ধ্বে)। {সূরা ইউনুস: ১৮}

আল্লাহ আরো বলেন : আর আসমানে কত ফেরেশ্তাই না রয়েছে যাদের সুপারিশ সামান্যও কাজে আসবেনা যতক্ষণ না আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সুপারিশ করার অনুমতি দেবেন, যার উপর তিনি সন্তুষ্ট থাকেন তার জন্য )। {সূরা আন্-নাজম: ২৬}

আরো বলেন : (কে এমন আছে যে, তাঁর কাছে তার অনুমতি ব্যতিরেকে সুপারিশ করে?)। {সূরা আল-বাকারাহ: ২৫৫}

আরো বলেন : (আর যদি আল্লাহ আপনাকে কোন বিপদে ফেলেন তবে তিনি ব্যতীত আর কোন উদ্ধারকারী নেই, অনুরূপভাবে যদি তিনি আপনার কোন মঙ্গল চান তার অনুগ্রহে বাধা দেবার কেউ নেই)। {সূরা ইউনুস: ১০৭}

আরো বলেন : (মানুষের জন্য আল্লাহ যে রহমতের দরজা খুলেন সেটায় বাধা প্রদান কারী কেউ নেই, আর যদি বন্ধ করেন তবে সেটা তিনি ছাড়া প্রবাহিত কারীও কেউ নেই)। {সূরা আল-ফাতির: ২} আরো বলেন : (বলুন: তোমরা কি দেখতে পাচ্ছনা তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের আহবান করছ, যদি আল্লাহ আমার কোন ক্ষতি বা বিপদ দিতে ইচ্ছা করেন তারা কি আমাকে সে বিপদ থেকে মুক্ত করতে সক্ষম? অথবা তিনি যদি আমার প্রতি রহমত করার ইচ্ছা করলে তারা কি সে রহমত রোধ করতে পারবে? বলুন: আমার আল্লাহ আমার জন্য যথেষ্ট, নির্ভরকারীগণ যেন তার উপরই নির্ভর করে)। {সূরা আয্-যুমার: ৩৮} পবিত্র কুরআনে এ ধরনের অনেক আয়াত এসেছে।

আলেমগন নবীদের ওয়ারিস

আর ধর্মীয় জ্ঞানে গুণান্বিত আলেম ও মাশায়েখগণকে যদি রাসূল ও তার উম্মতের মাঝে এই মর্মে মাধ্যম নির্ধারণ করা হয় যে, তারা তাদের কাছে দ্বীন প্রচার করবে, তাদের শিক্ষিত, শিষ্টাচারী বানাবে, তাদেরকে আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করবে, যদি মাধ্যম গ্রহণ দ্বারা এটা উদ্দেশ্য নেয়া হয় তবে তা সম্পূর্ন সত্য ও বাস্তব। এই আলেমগণ যখন কোন ব্যাপারে একমত হয় তবে তাদের এই ঐক্যমত শরীয়তে অকাট্য দলীল হিসাবে গৃহিত হবে; কারণ তারা কোনদিন বিভ্রান্তির উপর একমত হবেনা, যদি তারা কোন ব্যাপারে পরস্পর বিভিন্ন মতের উৎপত্তি হতে দেখে তখন সাথে সাথে তারা এটাকে আল্লাহ ও তার রাসূলের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যায়; কারণ একক ভাবে তাদের কেউই ভুলভ্রান্তি মুক্ত নহেন, বরং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কথা ছাড়া সমস্ত মানুষের কথাই গ্রহণ করা বা ত্যাগ করা যেতে পারে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: (আলেমগণ নবীদের ওয়ারিস (উত্তরাধিকারী) তবে বাস্তবে নবীগণ দীনার, দিরহাম উত্তরাধিকার ভিত্তিতে রেখে যাননি, বরং তারা রেখে গেছেন শরীয়তের জ্ঞান, ফলে যে তা (ইলম) গ্রহণ করতে পেরেছে, সে পরিপূর্ণ অংশ নিতে সক্ষম হয়েছে)। {আবূ দাউদ ও অন্যান্যরা উত্তম সনদে বর্ণনা করেছেন।}

আর যে তাদেরকে মাধ্যম বানানো দ্বারা এটা উদ্দেশ্য নেয় যে, রাজা ও প্রজাদের মাঝে যেমন দারোয়ান থাকে তেমনি এরাও আল্লাহ ও তার বান্দাদের মাঝে দারোয়ান হিসাবে কাজ করে থাকেন। তারাই আল্লাহর দরবারে বান্দার চাহিদা তুলে ধরবে, আল্লাহ তার বান্দাদেরকে তাদের মাধ্যমেই সৎপথ দিয়ে থাকেন, রিজিক বন্টন করে থাকেন যেমন রাজা বাদশাদের দরবারে একান্ত লোকেরা নিজেদের নৈকট্যের খাতিরে রাজার কাছ থেকে মানুষের জন্য সুযোগ সুবিধা আদায় করে নেন। অথবা বাদশার দরবারী লোকদের কথা সাধারণ লোকের চেয়ে বেশী গ্রাহ্য হবে মনে করে তাদের দ্বারা সুপারিশ করে কিছু আদায় করার চেষ্টা করেন, যদি মাধ্যম মানা দ্বারা এ ধরনের অর্থ গ্রহণ করা হয়, তবে সে সম্পূর্নভাবে কাফের হয়ে যাবে, আল্লাহর সাথে শির্ককারীদের (মুশরিকদের) দলভূক্ত বলে বিবেচিত হবে, যদি তাওবা করে তবে ক্ষমা করা হবে, নতুবা (মুরতাদ হিসাবে) হত্যা করা হবে, কেননা এরা স্রষ্টাকে সৃষ্টির সাথে তুলনা করছে, আর আল্লাহর অনেক সমকক্ষ স্থির করে নিচ্ছে (শরীক বানাচ্ছে)।



সর্বশেষ আপডেট ( Monday, 27 June 2011 )