আল্লাহকে পেতে মাধ্যম গ্রহণ প্রিন্ট কর ইমেল
লিখেছেন শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ   
Thursday, 11 June 2009
আর্টিকেল সূচি
আল্লাহকে পেতে মাধ্যম গ্রহণ
রাসূলগণ দ্বীন প্রচার ও দাওয়াতের মাধ্যম
রাসূলরা কোন প্রকার লাভ ও কল্যাণ বয়ে আনতে পারেননা
শরীয়ত গর্হিত (নিষিদ্ধ) মাধ্যম সমুহ
শরীয়ত সমর্থিত শাফায়াত আর শরীয়ত নিষিদ্ধ শাফায়াত
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাওহীদ পুংখানুপুংখভাবে বাস্তবায়ন করে গেছেন

শরীয়ত গর্হিত (নিষিদ্ধ) মাধ্যম সমুহ

পূর্ব বর্ণিত মাধ্যম সাব্যস্তকারীদের কথা ও দাবী নাকচ করার জন্য কুরআনে এতবেশী দলীল-প্রমাণাদি দেওয়া হয়েছে যে, এই ছোট্ট নিবন্ধে সে সবের স্থান সংকুলান হবার কথা নয়, কেননা রাজা ও প্রজার মাঝে মধ্যস্থতা করার তিনটি কারণ থাকতে পারে:

প্রথমত: হয়ত তারা তাকে এমন সংবাদ পৌঁছাবে যা রাজার কাছে অজানা রয়ে গেছে, ফলে রাজার কাছ থেকে তার প্রজাদের কাছে কোন প্রকার সাহায্য পৌঁছার জন্য এমন কিছু মধ্যস্থতাকারী দরকার যারা তাকে তা জানিয়ে দিবে, এমন রাজাও এরকম মধ্যস্থতা কারীর সাহায্যের প্রয়োজন অনুভব করছে।

যদি অবস্থা এ রকমই হয়, এবং কেউ বলে বা মনে করে যে, আল্লাহ তা'আলা তার বান্দাদের অবস্থা জানার জন্য ফেরেশ্তা বা নবীদের সংবাদ দেয়ার মুখাপেক্ষী, তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে, বরং আল্লাহ তা'আলা মানুষের অন্তরের মাঝে যা গোপন রেখেছে, বা যা অন্তরের মাঝে গোপন করতে চেষ্টা করবে সবই জানেন, আসমান ও জমীনের এমন কিছু নেই যা তিনি জানেন না, তিনি সবকিছু দেখেন এবং শুনেন, বান্দার বিভিন্ন প্রকার চাহিদা পুরণের জন্য বিভিন্ন ভাষার হরেক রকমের শব্দ তিনি শুনতে পান, কারো কথা শুনতে যেয়ে অপর কারো কথা বাধ সাধে না, প্রার্থনার ভীড় তাকে তাতে সাড়া দিতে কোন প্রকার বিভ্রান্তিতে ফেলেনা, অনবরত আর্জীতেও তিনি অধৈর্য্য হন না।

দ্বিতীয়ত: রাজা ও প্রজাদের মধ্যে মধ্যস্থতা গ্রহণ করার দ্বিতীয় কারণ এ হতে পারে যে, বাদশাহ তার প্রজাদের পরিচালনা, ও শত্রুদের মোকাবিলা করায় অক্ষম, ফলে সে তার দীনতা, হীনতা ও অক্ষমতা থেকে মুক্তির জন্য কিছু সাহায্যকারীর প্রয়োজন অনুভব করছেন।

কিন্তু আল্লাহ তা'আলার জন্য হীনতা বশত: কোন সাহায্যকারী, বন্ধু অবিভাবক নেই বা প্রয়োজন নেই, (ফলে তার মধ্যে এবং তার বান্দাদের মধ্যে মাধ্যম গ্রহণের কি যুক্তি থাকতে পারে?)আল্লাহ তা'আলা বলেন: ( বলুন: তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের আহবান করছ তারা আসমান ও যমীনের অণু পরিমাণেরও মালিক নয়, আর এ দুটোয় (আসমান ও যমীনে) তার কোন শরীক বা অংশীদার নেই, যেমনিভাবে তার কোন সাহায্যকারী নেই )। {সূরা সাবা: ২২}

(আরো বলুনঃ সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য যিনি কোন সন্তান গ্রহণ করেননি, তার রাজত্বে কোন অংশীদার নেই, হীনতা বশত: তার কোন বন্ধুও নেই, আর তার শ্রেষ্ঠত্বই বেশী করে বর্ণনা কর)। {সূরা আল-ইসরা: ১১১}

কার্য্য সিদ্ধির স্বার্থে যত প্রকার উপায় উপকরণ আছে তার সবগুলির স্রষ্টা, রব ও মালিক হলেন তিনি আল্লাহ, কারও কাছে তিনি মুখাপেক্ষী নন, সবাই তার মুখাপেক্ষী, সুতরাং রাজা বাদশাদের সাথে তার তুলনা চলেনা, কারণ রাজা বাদশাগণ মধ্যস্থতাকারীদের সাহায্যের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন, ফলে এরা (মধ্যস্থতাকারীরা) মুলত তার রাজত্বের অংশীদার।

অথচ আল্লাহ তা'আলার রাজত্বে কারও কোন অংশীদারিত্ব নেই, বরং শুধু তিনি (আল্লাহ) ছাড়া যথাযথ কোন মা'বুদ নেই, তার কোন শরীক নেই, তারই সার্বভৌমত্ব, সমস্ত প্রশংসা, তিনি যা ইচ্ছা তা করতে পারেন।

তৃতীয়ত: রাজা ও প্রজাদের মধ্যে মাধ্যম গ্রহণের তৃতীয় আরেকটি কারণ এও হতে পারে যে, হয়ত: বাদশা বাইরের কোন প্রকার চাপ ছাড়া তার প্রজাদের কল্যাণ বা দান দাক্ষিণ্য করতে নারাজ, তখন বাদশাকে যারা উপদেশ দেয় ও সম্মান করে, যারা তার সাথে উঠাবসা করে, হাসি তামাসা করে এমন লোক তাকে যদি প্রজাদের ব্যাপারে সম্বোধন করে তবে প্রজাদের চাহিদা পুরণে সে উদ্বুদ্ধ হবে, তখন মাধ্যম নেয়া হতে পারে, কেননা তখন উপদেশ দানকারীর উপদেশ কিংবা রং তামাশাকারীর অনুরাগ বিরাগের কারণে বাদশা তা করতে বাধ্য হন।

কিন্তু আল্লাহ তা'আলা সব কিছুরই পালনকর্তা রব, সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী, সন্তানের প্রতি মায়ের স্নেহের চেয়ে যার দয়া অনেক বেশী, যার ইচ্ছায়ই সব কিছু সংঘটিত হয়ে থাকে, তিনি যা ইচ্ছা করেন তা হয়, আর যা ইচ্ছা করেননা তা হয়না, তিনি এই সমস্ত ব্যাপারে যেমন কারো থেকে উপদেশ নেয়া, কাউকে সম্মান দেখানো, কারো অনুরাগ বিরাগে পড়া থেকে অনেক উর্ধ্বে। কেননা, তিনি যখন বান্দাদেরকে একে অপরের উপকারার্থে পরিচালনা করার ফলে কারও প্রতি দয়া, দুআ', সুপারিশ করে তখন এসব কিছু তিনিই তার মনের মধ্যে সৃষ্টি করে থাকেন, সুতরাং এখানে আল্লাহকে উদ্বুদ্ধকারী কোন কিছুর কল্পনা করা বাতুলতা বৈ কিছুই নয়।

আর তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে পরিচালিত করে বা তিনি জানেন না এমন জিনিস তাকে জানিয়ে দেয়, বা রব কতৃক কাউকে ভয় বা কারও কাছে কিছু আশা করে এমন কিছুর অস্তিত্ব নেই, এজন্যই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ (তোমাদের মাঝে এ কথা যেন কেহ না বলে যে, হে আল্লাহ যদি তোমার ইচ্ছা হয় আমাকে মাফ কর, যদি ইচ্ছা হয় আমাকে দয়া কর, বরং দৃঢ়ভাবে প্রার্থনা কর, কেননা তাকে বাধ্যকারী কেউ নেই)। {সহীহ্ বুখারী: ১১/১১৮, মুসলিম: ২৬৭৯}

যে সমস্ত সুপারিশকারী তার দরবারে সুপারিশ করবেন তারা তার অনুমতি ব্যতীত কক্ষনো সুপারিশ করবেন না।

আল্লাহ তা'আলা বলেন : (কে সে ব্যক্তি যে তার অনুমতি ব্যতীত সুপারিশ করে? )। {সূরা আল-বাকারাহ্: ২৫৫}

আল্লাহ আরো বলেন : (তারা (সুপারিশকারীগণ) আল্লাহর সন্তুষ্টি প্রাপ্ত ব্যক্তিদের জন্যই শুধু সুপারিশ করবেন)। {সূরা আল-আম্বিয়া: ২৮}

আল্লাহ আরো বলেন : (বলুন আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে তোমরা উপাস্য হিসাবে বিশ্বাস করেছিলে তাদেরকে আহবান করো (দেখবে) তারা আসমান ও জমীনের অনু পরিমাণেরও মালিক নহে, আর এ দুটোতে না আছে তাদের কোন অংশীদারিত্ব, এমনিভাবে তাদের থেকে তাঁর কোন সাহায্যকারীও নেই, আর তাঁর নিকট অনুমতি ব্যতীত কোন সুপারিশই গ্রহণযোগ্য হবেনা)। {সূরা সাবা: ২২, ২৩}

এ আয়াত সমুহে আল্লাহ তা'আলা এ কথা স্পষ্ট ভাবে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি ব্যতীত আর যাদেরকে ডাকা হয় তাদের না আছে কোন কিছুর পূর্ণ মালিকানা, না আছে অংশীদারিত্ব, আবার তারা তাঁর জন্য সাহায্যকারীও নহে, আর তার অনুমতি ব্যতিরেকে তাদের সুপারিশও গ্রহণযোগ্য নহে।

এগুলি রাজা বাদশাদের থেকে সম্পূর্ন ভিন্ন, কেননা রাজা-বাদশাদের কাছে সুপারিশকারীর মালিকানা থাকতে পারে, আবার কখনো কখনো সে তাদের মালিকানায় অংশীদারও হতে পারে, নতুবা তাদের রাজত্ব রক্ষায় সাহায্য সহযোগিতা করতে পারে।

আর যারা রাজা বাদশাদের কাছে সুপারিশ করেন তারা বাদশার অনুমতি নেন্না, বাদশা তাদের নিকট প্রয়োজন আছে বিধায় তাদের সুপারিশ কবুল করতে বাধ্য হন, আবার কখনো কখনো তাদের ভয়ে ভীত হয়ে সুপারিশ গ্রহণ করে থাকেন, অনুরুপভাবে কোন কোন সময় তাদের উপকারের বিনিময় ও পুরস্কার দিতে গিয়ে তাদের কথা মানতে বাধ্য হন, আর এজন্যই রাজা বাদশাগণ আপন ছেলে- সন্তান স্ত্রী-পরিজনের সুপারিশ ও গ্রহণ করে থাকেন, তারা তাদের সন্তান সন্ততি পরিবার পরিজনের কাছে ঋণী থাকেন, কারণ যদি তার সন্তান সন্ততি বা স্ত্রী তার থেকে বিমুখ হয় তবে তাকে ভীষণ সমস্যায় পড়তে হবে সুতরাং তাদের সন্তুষ্টির খাতিরে তাদের সুপারিশ ও গ্রহণ করে থাকে, এমনিভাবে সে তার দাস দাসীর সুপারিশ গ্রহণেও বাধ্য হয়, কারণ যদি তার সুপারিশ গ্রহণ করা না হয় তাহলে তার অবাধ্য হওয়া বা ক্ষতি করার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। বান্দার কাছে বান্দার সুপারিশ সব গুলিই এ ধরনের। কারণ তারা অনুরাগ বা বিরাগের কারণেই সুপারিশ গ্রহণ করে থাকে, কিন্তূ আল্লাহ তা'আলা তিনি কারও কাছ থেকে কোন কিছুর আশা করেন না, কাউকে ভয় ও করেন না, কারো কাছে তিনি মুখাপেক্ষী ও নন। বরং তিনিই কেবল অমুখাপেক্ষী অন্য সব কিছুই তার মুখাপেক্ষী, আল্লাহ বলেন : (সাবধান ! নিশ্চয়ই আসমান ও জমীনের সবকিছু আল্লাহর আর যারা আল্লাহ ছাড়া অনেক অংশীদার (শরীক)দের আহবান করে তারা কেবল ধারণার অনুসরণ করে চলছে, তারা শুধুমাত্র মিথ্যাই বলছে)। {সূরা ইউনুস: ৬৬}

তারপরই বলছেনঃ (তাঁরই পূর্ণাঙ্গ পবিত্রতা, তিনি অমুখাপেক্ষী, আসমান ও জমীনের সবকিছু তারই)। {সূরা ইউনুস: ৬৮}

আর মুশরিকগণ সুপারিশের এ ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়েই তাদের জন্য অনেক সুপারিশকারী গ্রহণ করার মাধ্যমে শির্ক করেছিল।

আল্লাহ বলেন: (তারা আল্লাহ ছাড়া যারা তাদের কোন উপকার বা অপকার কিছুই করতে পারেনা এমন সব বস্তুর ইবাদত করছে আর বলছেঃ এরা আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী, বলুনঃ তোমরা কি আসমান ও জমীনের এমন কোন সংবাদ দিচ্ছ যা তিনি জানেন না? তাদের অংশীদার কৃত বস্তু সমুহ থেকে তিনি কতই না পবিত্র, আর কত উচুতেই না তার অবস্থান)। {সূরা ইউনুস: ১৮}

আরো বলেন: (আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে তারা (তাদের ভক্তি অর্ঘ্য ও ধন সম্পদ) উৎসর্গের মাধ্যমে ইলাহ (উপাস্য) হিসাবে বেছে নিয়েছে, তারা কেন তাদেরকে সাহায্য করেনি? বরং তারা তাদের কাছ থেকে হারিয়ে গেছে, আর এটা (আল্লাহ ছাড়া অন্য ইলাহ নির্ধারণ করা) তাদের সম্পূর্ণ মিথ্যা অপবাদ যে অপবাদ তারা দিচ্ছিল।)। {সূরা আল-আহকাফ: ২৮}

আল্লাহ তা'আলা মুশরিকদের মাধ্যম গ্রহণের কারণ তাদের মুখের ভাষায় বর্ণনা করছেন, (আমরা এদের ইবাদত এ জন্যই করি যে, এরা সুপারিশ করে আমাদেরকে আল্লাহর নৈকট্য লাভে সহায়তা করবে)। {সূরা আয্-যুমার: ৩}

আরো বলেন : (কোন নবী তার অনুসারীদেরকে এও নির্দেশ দিবেনা যে, তোমরা ফেরেশ্তা এবং নবীদেরকে রব (হালালকে হারাম কারী, হারামকে হালালকারী) হিসাবে গ্রহণ কর, সে কি তোমাদেরকে মুসলমান হওয়ার পরে কুফরী(করা)র নির্দেশ দিবে?)। {সূরা আলে-ইমরান: ৮০}



সর্বশেষ আপডেট ( Monday, 27 June 2011 )