আল্লাহকে পেতে মাধ্যম গ্রহণ প্রিন্ট কর ইমেল
লিখেছেন শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ   
Thursday, 11 June 2009
আর্টিকেল সূচি
আল্লাহকে পেতে মাধ্যম গ্রহণ
রাসূলগণ দ্বীন প্রচার ও দাওয়াতের মাধ্যম
রাসূলরা কোন প্রকার লাভ ও কল্যাণ বয়ে আনতে পারেননা
শরীয়ত গর্হিত (নিষিদ্ধ) মাধ্যম সমুহ
শরীয়ত সমর্থিত শাফায়াত আর শরীয়ত নিষিদ্ধ শাফায়াত
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাওহীদ পুংখানুপুংখভাবে বাস্তবায়ন করে গেছেন

শরীয়ত সমর্থিত শাফায়াত আর শরীয়ত নিষিদ্ধ শাফায়াত

আল্লাহ তা'আলা বলেন : (বলুনঃ তাঁকে(আল্লাহকে) ছাড়া আর যাদেরকে তোমরা (সুপারিশকারী, ক্ষমতাধর বলে) বিশ্বাস করো তাদেরকে আহবান করো (দেখবে) তারা তোমাদের থেকে বিপদ দুরীভুত করার বা অন্য দিকে ফিরিয়ে দেবারও ক্ষমতা রাখেনা, তারা যাদের আহবান করছে তারা তাদের প্রভূর নিকট কে বেশী নৈকট্য লাভে সমর্থ হবে তার জন্য নেক আমল দ্বারা প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, তারা তাঁর রহমতের আশা করছে, আর তাঁর শাস্তির ভয় করছে, নিশ্চয় আপনার প্রভুর শাস্তি ভয়ানক)। {সূরা আল-ইসরা: ৫৬-৫৭}

এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা এ ঘোষণাই দিচ্ছেন যে, তারা আল্লাহ ছাড়া যাদের আহবান করছে, তারা বিপদমুক্তি বা বিপদের মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখেনা, পক্ষান্তরে তারা তাঁর রহমতের আশা এবং শাস্তির ভয় করছে, আর তারা তাঁর নৈকট্য লাভে ধন্য হওয়ার চেষ্টা করছে, সুতরাং আল্লাহ তা'আলা ফেরেশ্তা ও নবীদের জন্য কেবল তার অনুমতির পরে সুপারিশ করা সিদ্ধ করেছেন। তবে এ সুপারিশ হলো দুআ' করা, আর এতে কোন সন্দেহ নেই যে, সৃষ্ট জগতের একে অপরের জন্য দুআ' করলে তা কাজে লাগে। কেননা এ দুআ' করার নির্দেশ আল্লাহ তা'আলা নিজেই দিয়েছেন, কিন্তু দুআ'কারী, সুপারিশকারী সুপারিশের ক্ষেত্রে আল্লাহর অনুমতি ব্যতিরেকে দুআ' বা সুপারিশ করার ক্ষমতা রাখেনা, ফলে নিষিদ্ধ কোন প্রকার সুপারিশ তারা করতে পারবেনা, যেমনঃ আল্লাহর সাথে শির্ক কারীদের জন্য সুপারিশ, তাদের জন্য দুআ', তাদের পাপমুক্তির জন্য প্রার্থনা করা যাবেনা, আল্লাহ বলেন : (নবী ও মুমীনদের জন্য উচিত নয় (জায়েয নয়) যে তারা শির্ককারী (মুশরিক)দের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে, যখন তাদের কাছে তাদের দোজখবাসী হওয়ার ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে পড়বে, যদিও তারা তাদের নিকটাত্মীয় হোক, আর ইব্রাহীম (আলাইহিস্ সালাম) তার পিতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কেবলমাত্র কৃত অঙ্গীকার পালনার্থে করেছিলেন, কিন্তু যখন তাঁর কাছে স্পষ্ট হলো যে, সে (তার পিতা) আল্লাহর দুশমন তখনি তিনি তার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন)। {সূরা আত্-তাওবা: ১১৩-১১৪}

আল্লাহ তা'আলা মুনাফিকদের সম্পর্কে বলেন: (আপনি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন আর নাই করুন আল্লাহ তাদের কখনো ক্ষমা করবেননা।)। {সূরা আল-মুনাফিকূন: ৬}

সহীহ হাদীসে প্রমাণিত হয়েছে যে, আল্লাহ তা'আলা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে মুনাফিক এবং মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে নিষেধ করেছেন, এবং জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি তাদেরকে ক্ষমা করবেননা, যেমনঃ আল্লাহ তা'আলা তার এক বাণীতে বলেছেনঃ (নিশ্চয়ই আল্লাহ তা'আলা তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করবেননা, আর এটা বাদে যা কিছু (গুনাহ) আছে যাকে তিনি ইচ্ছা করেন ক্ষমা করে দিবেন।)। {সূরা আন্-নিসা: ৪৮}

আরো বলেন : (তাদের কেহ মারা গেলে আপনি কক্ষনো তাদের কবরের পাশে দাঁড়াবেননা, নিশ্চয়ই তারা আল্লাহ ও তার রাসূলের সাথে কুফরী করেছে, এবং ফাসেক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে)। {সূরা আত্-তাওবা: ৮৪}

আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন: (তোমরা তোমাদের রবকে কাতর স্বরে এবং চুপিসারে ডাক, নিশ্চয়ই তিনি সীমালঙ্ঘন কারীদের পছন্দ করেননা)। {সূরা আল-আ’রাফ: à§«à§«}

অর্থাৎ: দুআ' করতে যেয়ে সীমালঙ্ঘনকারীদের আল্লাহ পছন্দ করেননা।

আর দুআ' করতে গিয়ে সীমালঙ্ঘন বলতে আল্লাহর কাছে এমন কিছু চাওয়া ও গন্য, যা আল্লাহ তা'আলা কক্ষনো কবুল করবেননা। যেমনঃ নবী না হওয়া স্বত্বেও কেহ আল্লাহর কাছে নবীদের স্থান প্রার্থনা করা, অথবা আল্লাহর অবাধ্য হতে হয় এমন কিছু চাওয়া, যেমনঃ কুফরী, ফাসেকী, গুনাহের কাজে সাহায্য চেয়ে দুআ' করা।

মোট কথাঃ সুপারিশকারী হলোঃ

১. ঐ ব্যক্তি যাকে আল্লাহ তা'আলা সুপারিশ করার অনুমতি দিবেন।

২. আর তার সুপারিশ হতে হবে এমন দুআ' দ্বারা যাতে সীমালঙ্ঘন নেই।

৩. (সুপারিশকারীদের) মধ্যে যদি কেহ তার নিকট এমন কোন দুআ' চায় যা তার জন্য উপযুক্ত নয়, তখন তার সে দুআ' কবুল করা হবেনা, তাকে এরকম দোআ করতে নিষেধ করা হবে। কেননা যাদেরকে আল্লাহ তা'আলা সুপারিশকরার অনুমতি দিয়েছেন তারা হলেন রাসূল সমপ্রদায়, তাদেরকে আল্লাহ তা'আলা কোন ক্রমেই অন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখেননা। যেমন নুহ (আলাইহিস্ সালাম) বললেনঃ (আমার পু্ত্র আমার পরিবারের সদস্য, আর আপনার অঙ্গিকার যথাযথ, আর আপনি সর্বাপেক্ষা বিজ্ঞ বিচারক)। {সূরা হূদ: ৪৫} আল্লাহ তা'আলা বললেনঃ (হে নুহঃ সে তোমার পরিবারের (দলভুক্তদের) মধ্যে নয়, কারণ, তার কর্মকান্ড সুন্দর নয়, সুতরাং যার সম্পর্কে তোমার জ্ঞান নেই সে ব্যাপারে আমার কাছে প্রার্থনা করোনা, যেন তুমি মূর্খদের অন্তর্ভূক্ত না হও সে ব্যাপারে তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, তিনি বললেনঃ হে প্রভু ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি আমি যা জানিনা তা তোমার কাছে প্রার্থনা করার থেকে, যদি তুমি আমাকে ক্ষমা না কর এবং রহমত না কর তবে আমি হব ক্ষতিগ্রস্থদের একজন)। {সূরা হূদ: ৪৬-৪৭}

৪. আর আল্লাহর কাছে দুআ'কারীর দুআ' এবং সুপারিশকারীর সুপারিশ আল্লাহ তা'আলা কতৃক পুর্ব নির্ধারিত তাকদীরের (ভাগ্যের) অনুকুলেই হবে, তারই ইচ্ছার প্রতিফলন সেখানে ঘটবে, তিনিই তো এদের দুআ' ও সুপারিশ কবুল করবেন, তিনিই (আল্লাহই) যাবতীয় উপায় উপকরণের সৃষ্টিকর্তা এবং এর দ্বারা কার্যোদ্ধারের হোতা, আর সুপারিশ ও দুআ' মুলত ঐ সমস্ত উপায়, উপকরণের মধ্যে যা আল্লাহ তা'আলা কতৃক ভাগ্যে (তাকদীরে) নির্ধারিত রয়েছে।

উপায় - উপকরন গ্রহনের মাপকাঠি

এখন এটা স্পষ্ট হলো যে, দুআ' ও সুপারিশ মুলত আল্লাহ কতৃক পুর্ব নির্ধারিত কার্যসিদ্ধির উপায়-উপকরণ সমুহের একটি মাত্র। তিনিই এগুলোর মাধ্যমে কোন কিছু বান্দাকে দিবেন বলে ভাগ্য লিপিবদ্ধ করার সময় নির্ধারন করে রেখেছেন।

তবে, উপায় উপকরণ গ্রহনের পরে সম্পূর্ণভাবে এর প্রতি ঝুকে পড়া, এর উপরই ভরসা করে বসা আল্লাহর একত্ববাদে শির্ক করারই নামান্তর। {টিকা: যদি উপায়-উপকরণ গ্রহণকারী মনে করে যে, এ সমস্ত উপায়-উপকরণ সমূহ স্বতন্ত্রভাবে কার্যসিদ্ধির ব্যাপারে প্রভাব ফেলে কার্যসিদ্ধি করে, এতে উপায়-উপকরণের যোগদানদাতা আল্লাহ্ তা’আলার কোন হাত নেই, এরকম কিছু মনে করার অর্থই হলো আল্লাহর একত্ববাদে শির্ক করা।}

আর কোন কিছু অর্জনের ক্ষেত্রে উপায়-উপকরণ বলে প্রমাণিত হওয়া স্বত্বেও সে সমস্ত উপায়-উপকরণ সমুহ গ্রহণ না করা, বা মেনে না নেয়া স্থুলবুদ্ধির পরিচায়ক।

অনুরূপভাবে, কার্যোদ্ধারের জন্য উপায় অবলম্বন করা থেকে সম্পূর্ণভাবে বিরত থাকা শরীয়তের উপর অপবাদ দেয়ার শামিল। {বরং প্রত্যেক মুমীনের উপর ওয়াজিব সে যেন শরীয়ত সমর্থিত উপায় অবলম্বন করে তারপর আল্লাহর উপর ভরসা করে, কেননা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক লোককে বলেছেনঃ (তুমি তোমার উট প্রথমে বেধে রাখ, তার পর আল্লাহর উপর ভরসা কর) হাদীসটি ইমাম তিরমিযি বর্ণনা করেছেন এবং হাসান (গ্রহণযোগ্য) বলে মত প্রকাশ করেছেন।}

বরং বান্দাকে অবশ্যই আল্লাহর কাছে দুআ', প্রার্থনা, অনুরাগ করা উচিত, তাঁকে ভালবাসা উচিত, যাতে করে আল্লাহ তা'আলা এগুলোর বিনিময়ে তার কার্যসিদ্ধির যে কোন ব্যবস্থা করে দেন।

মহৎ ব্যক্তি যেমন সাধারণ লোকের জন্য দুআ' করতে পারেন তেমনিভাবে সাধারণ লোকও মহৎ ব্যক্তির জন্য প্রার্থনা (দুআ') করতে পারেন। সর্ব সাধারণের জন্য মহৎ ব্যক্তির দুআ'র উদাহরণ হিসাবে পেশ করা যায় সাহাবায়ে কিরাম কতৃক রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষনের জন্য দুআ' ও সুপারিশ চাওয়া, অনুরুপভাবে উমর (রাদিয়াল্লাহু আন্হু) কতৃক আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আন্হুম) এর কাছে আল্লাহর নিকট দুআ' করার অনুরোধ করা, তেমনিভাবে কিয়ামতের দিন সমস্ত মানুষ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং অন্যান্য নবীদের কাছে আল্লাহর দরবারে সুপারিশের প্রার্থনা করা। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সমস্ত সুপারিশকারীদের প্রধান এবং বিভিন্ন প্রকার সুপারিশের মালিক হওয়া স্বত্বেও উম্মতের কাছে তার জন্য দুআ' করার আহবান জানিয়েছেন, যদিও তাঁর এ আহবান উম্মতের কাছে চাওয়া পাওয়া হিসাবে নয়, বরং এ নির্দেশ তাঁর অপরাপর নির্দেশের মতই, এ নির্দেশ পালনকারী আনুগত্যকারী হিসাবে গণ্য হবে, ফলে উম্মতের সাওয়াব লাভের পাশাপাশি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য প্রত্যেক আমলকারীর আমলের সমপরিমাণ সওয়াব লিখা হবে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কতৃক দুআ' করার এ আহবান জানানো সাধারণ কতৃক মহৎলোকের জন্য প্রার্থনা (দোআ') করার বৈধতার যথার্থ প্রমাণ। যেমন সহীহ বুখারী ও মুসলিমে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন: (তোমরা যখন মুয়াজ্জিনের ধ্বনী শুনতে পাও তখন তোমরা সে (মুয়াজ্জিন) যেমনটি বলে তেমনটি বলবে, তারপর আমার উপর দরূদ পড়বে, কেননা যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ পড়বে, আল্লাহ তা'আলা তার প্রতি দশবার দরূদ পড়বেন (তাকে প্রশংসার সাথে স্মরণ করবেন), তারপর তোমরা আমার জন্য অসীলা প্রার্থনা করিও, কারণ অসীলা বেহেস্তের এমন একটি বিশেষ স্থানের নাম, যা কেবলমাত্র আল্লাহর এক বান্দাহর জন্যই নির্দিষ্ট, আর আমি আশা করছি আমিই হবো সে বান্দাটি, সুতরাং যে আল্লাহর কাছে আমার জন্য অসীলার প্রার্থনা করবে কিয়ামতের দিন সে আমার সুপারিশ (শাফায়াত) দ্বারা ধন্য হবে।)

অনুরূপভাবে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উমর (রাদিয়াল্লাহু আন্হু) কে উমরার উদ্দেশ্যে মক্কা যাওয়ার প্রাক্কালে বিদায় লগ্নে বলেছিলেনঃ (আমাকে তোমার দুআ'য় ভুলনা ভাই)। {এর সনদে আসেম ইবনে আবদুল্লাহ নামীয় একজন দুর্বল বর্ণনাকারী রয়েছেন।}

এতে বুঝা যাচ্ছে যে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মাতের কাছে তাঁর জন্য দুআ' করতে বলেছেন। তবে তাঁর জন্য দুআ' করা দ্বারা আমরা যেমন সওয়াব পাব ঠিক তেমনিভাবে তিনিও তার অধিকারী হবেন, কারণ সহীহ হাদীসে এসেছে তিনি বলেছেনঃ (কেহ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা, আর কেহ ভ্রান্ত পথে ডাকলে যতজন তার অনুসারী হবে প্রত্যেকের গুনাহের সমান ভাগ সে পাবে, তবে অন্যদের গোনাহে কোন প্রকার কমানো হবেনা)। {সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪}

আর যেহেতু রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ই উম্মাতকে সর্বপ্রকার হিদায়াতের দিকে আহবান করেছেন সেহেতু যতজনই তার অনুসরণ করবে সবার সওয়াব তাঁর জন্য নির্দিষ্ট হয়ে যাবে। অনুরুপভাবে তারা যখন তাঁর উপর দরূদ পড়ে তখন আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে প্রত্যেক বারের বিনিময়ে দশবার প্রশংসার সাথে স্মরণ করেন। আর রাসূলের জন্য তাদের দুআ' কবুল হওয়ার পাশাপাশি তাদের যত সওয়াব হওয়ার কথা তার সম পরিমাণ সওয়াব রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য নির্ধারিত হয়ে যাবে। ফলে দুআ' দ্বারা বান্দার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে সওয়াব হওয়ার সাথে সাথে আল্লাহ তা'আলার অসীম দান হিসাবে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও এর দ্বারা উপকৃত হবেন।

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অপর এক বিশুদ্ধ বর্ণনায় এসেছে তিনি বলেছেনঃ (যখন কোন মুসলমান বান্দা তার এক ভাইয়ের জন্য অগোচরে দুআ' করে তখন আল্লাহ তা'আলা একজন ফেরেশ্তা নিয়োগ করে দেন, ফলে সে যখনই তার জন্য কোন দুআ' করে তখন ঐ ফেরেশ্তা বলেঃ আমীন (কবুল কর) আর তোমার জন্যও অনুরূপ হোক)। {সহীহ্ মুসলিম}

অন্য হাদীসে এসেছেঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : (সবচেয়ে দ্রুত গৃহীত দুআ' হলো একজন কতৃক অন্য জনের অগোচরে কৃত দুআ'।)। {এর সনদে আব্দুর রহমান বিন যিয়াদ নামীয় একজন দুর্বল বর্ণনাকারী রয়েছেন।}

সুতরাং বুঝা গেল যে, অপরের জন্য দুআ' করলে যিনি দুআ' করেন এবং যার জন্য দুআ' করা হয় উভয়েই লাভবান হয়ে থাকে, যদিও যিনি দুআ' করবেন তার মর্যাদা যার জন্য দুআ' করবেন তার চেয়ে বেশী। ফলে কোন মুমীন তার ভাইয়ের জন্য দুআ' করলে দুআ' কারী ও দুআ'কৃত ব্যক্তি উভয়েই উপকৃত হয়ে থাকেন।

কেহ যদি অন্যকে বলেঃ আমার জন্য দুআ' করো এবং তার উদ্দেশ্য থাকে উভয়েরই লাভ হওয়া, তাহলে সেও তার অপর ভাই সৎ কাজে একে অপরের সহযোগী হলো, কারণ সে ঐ ব্যক্তিকে এমন বস্তুর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে যাতে উভয়ই উপকৃত হতে পারে। আর অপর ব্যক্তিও এমন কাজ করেছে যাতে উভয়েরই লাভ হয়।

ব্যাপারটা এরকম হলো যেমন কেহ অপরকে নেক্কার ও পরহেজগার হতে বলল,্এতে নির্দেশপালনকারী তার কাজের সওয়াব পাবে, আর নির্দেশকারীও তার মত সওয়াবের অধিকারী হবে কেননা সেই এটা করতে তাকে উদ্বুদ্ধ করেছে।

বিশেষ করে ঐ সমস্ত দুআ'র ব্যাপারে তা সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ যা করার জন্য আল্লাহ তা'আলা তার বান্দাদের নির্দেশ দিয়েছেন, যেমনঃ আল্লাহ তা'আলা বলেন : (হে নবী আপনি নিজের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন, এবং ঈমানদার নর-নারীদের জন্যও)। {সূরা মুহাম্মাদ: ১৯}

এ আয়াতে আল্লাহ তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে ক্ষমা চাইতে বলেছেন। অন্য আয়াতে বলেছেনঃ (আর তারা যদি আপন নাফসের উপর অত্যাচার করার পরে আপনার কাছে ধর্ণা দেয়, এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, অনুরূপভাবে রাসূলও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে তবে তারা অবশ্যই আল্লাহকে অধিক তাওবা কবুলকারী এবং অত্যন্ত দয়াশীল পাবে)। {সূরা আন্-নিসা: ৬৪}

এখানে লক্ষ্যনীয় বিষয় এই যে, আল্লাহ তাআলা তাদের ক্ষমা চাওয়া এবং রাসূলের ক্ষমা প্রার্থনার কথা বলেছেন, আর আল্লাহ তা'আলা তার কোন সৃষ্টিকে অপর সৃষ্টির কাছে ঐ সময়ই কিছু চাইতে বলেন যখন সৃষ্টি জগতের কাছে তা চাওয়ার অনুমতি দেয়া থাকে।

আল্লাহ কতৃক বান্দার জন্য যে কোন প্রকার নির্দেশ - ফরজ, মুবাহ, মুস্তাহাব যাই হোক না কেন তা - পালন করা আল্লাহর ইবাদত, আনুগত্য এবং তাঁরই নৈকট্য বলে বিবেচিত। পক্ষান্তরে তা নির্দেশ পালনকারীর জন্য নেককার ও আদর্শবান হওয়ার উপর প্রমাণবহ। আর এ গুলো করতে সক্ষম হওয়াও আল্লাহ কতৃক তার উপর বর্ষিত সর্বশ্রেষ্ঠ রহমত হিসাবে ধরে নিতে হবে। বরঞ্চ বান্দার উপর আল্লাহর সর্ব উৎকৃষ্ট নেয়ামত হলো তার ঈমান নসীব হওয়া। আর ঈমান যেহেতু মুখে উচ্চারণ ও আমল করার নাম সেহেতু যখনই কেহ নেক্কাজ বেশী করে করবে তখনই তার ঈমানের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে, আর এটাই মুলতঃ সত্যিকার নেয়ামত যা সুরায়ে ফাতিহায় বর্ণিত হয়েছে। (ঐ সমস্ত লোকদের পথ(দেখান) যাদের উপর আপনি করুনা বর্ষন করেছেন)। {সূরা আল-ফাতিহা: ৭} আর যা অন্য আয়াতে এসেছে (আর যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের অনুসরণ করবে তারা আল্লাহর নেয়ামত প্রাপ্তদের সাথে সম্পৃক্ত হবে)। {সূরা আন্-নিসা: ৩৯}

বরং দ্বীন ও ঈমানের নেয়ামত ব্যতীত অন্যান্য নেয়ামত সমুহ সত্যিকারের নেয়ামত কিনা এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। যদিও সুনির্দিষ্ট মত হলো যে, দ্বীন ও ঈমানের নেয়ামত ছাড়া অন্যান্য নেয়ামত একদিক থেকে নেয়ামত হিসাবে ধরা হবে যদিও তা পরিপূর্ণ নিয়ামত বলা যায়না।

আর যে দ্বীনের নেয়ামত দ্বারা ধন্য হওয়া প্রত্যেকের জন্য ওয়াজিব তা হলোঃ আল্লাহর যাবতীয় নির্দেশাবলী সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া, চাই সে সমস্ত নির্দেশাবলী অবশ্য করনীয় নির্দেশ হোক বা দিক নির্দেশনা পূর্ণ নির্দেশই হোক। আর এই কামিয়াবীর পথই প্রত্যেক মুসলমানকে খুজতে হবে। কেননা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্কীদা মতে আল্লাহই ভাল কাজ করার এবং ভাল হওয়ার মত নেয়ামত প্রদান করেন। আর যারা ভাগ্যকে অস্বীকার করে তাদের নিকট প্রত্যেকে ভাল কাজ ও মন্দ কাজ করার ক্ষমতা রাখে, তবে ভাল কাজ করার ক্ষমতা বেশী হওয়াই তার জন্য নেয়ামত হিসাবে ধরা হবে। (এ মত শুদ্ধ নহে)।

মোট কথাঃ সৃষ্টি জগতের একে অপরের কাছে কিছু চাওয়া, চাই তা ওয়াজিব বস্তু হোক, বা মুস্তাহাব বস্তুই হোক, এই চাওয়া আল্লাহ তা'আলা ঐ সময়েই অনুমোদন করেন যখন এ চাওয়াতে তার (প্রার্থনাকারীর) কোন সুনির্দিষ্ট স্বার্থ থাকবে।

কেননা আল্লাহ তা'আলা বান্দার কাছে একমাত্র তার কাছেই কেউ ক্ষমা প্রার্থনা করুক এটাই চান। সুতরাং অন্য কারো কাছে সেটা কিভাবে চাইতে বলতে পারেন? বরং অত্যাবশ্যক প্রয়োজন ব্যাতিরেকে মানুষের জন্য একে অপরের কাছে কিছু চাওয়া হারাম করেছেন।

সুতরাং (যদি কেউ অন্য কাউকে দুআ' করতে বলে তখন) যদি তার উদ্দেশ্য থাকে যে, দুআ'কারীর স্বার্থ অথবা দুআ' যার জন্য করা হয়েছে, এবং দুআ'কারী উভয়েরই যুগপৎ স্বার্থ অর্জিত হবে, তবে সে এ দুআ' চাওয়া দ্বারা আল্লাহর দরবারে সাওয়াবের অধিকারী হবে। আর যদি (তার দুআ' চাওয়া দ্বারা) শুধুমাত্র তার নিজের স্বার্থ সিদ্ধিই উদ্দেশ্য হয়, যার কাছে দুআ' চাওয়া হয়েছে সে ব্যক্তির কোন প্রকার স্বার্থ হাসিল হোক এটা তার মনে না আসে তবে এটা শরীয়ত সম্মত দুআ' চাওয়া নহে, ফলে এতে দুআ'প্রার্থী কোন সওয়াবের অধিকারী হবেনা। আর এ রকমের দুআ' চাওয়া আল্লাহ তা'আলা কক্ষনো অনুমোদন করেন না। বরং তার থেকে নিষেধ করেন। কারণ এটা শুধু তার নিজ স্বার্থ সিদ্বির প্রচেষ্টা, যিনি তার জন্য দুআ' করবেন তার কোন স্বার্থের খেয়াল রাখা হয়নি।

আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে তার ইবাদত করতে, তার দিকে ধাবিত হতে, তার বান্দাদের প্রতি ভাল ব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়েছেন। (সুতরাং শুধুমাত্র নিজের স্বার্থের জন্য অপরকে দুআ' করতে বলে তার কাছে যে চাওয়া হলো তা শরীয়ত সম্মত কিভাবে হতে পারে?)।

তবে যদি কারো কাছে দুআ' চাওয়া দ্বারা কোন কিছুই উদ্দেশ্য না থাকে (প্রার্থিত বা প্রার্থনাকারীর স্বার্থ কোনটাই উদ্দেশ্য না হয়) আল্লাহর ভালবাসার আকাংখা, তাঁর অনুরাগী হওয়ার বাসনা না থাকে (যা নামাজ দ্বারা অর্জিত হয়), বা মানুষের প্রতি দয়ার ইচ্ছা না হয় (যা যাকাত প্রদানের মাধ্যমে সম্ভব হয়ে থাকে) তাহলে সে যদিও এ রকম চাওয়া, দুআ' দ্বারা গুনাহগার হবেনা, কিন্তু এর মাঝে এবং যাতে উপরোল্লেখিত বস্তু সমুহ সম্বলিত থাকবে তার মাঝে বিরাট পার্থক্য রয়েছে, কারণ এখানে একটা পার্থক্য লক্ষ্যনীয় যে, কোন কোন বিষয় সম্পন্ন করার জন্য আল্লাহ তা'আলা নির্দেশ দেন, আবার কোন কোন বিষয় করার অনুমতি দেন, এতদোভয়ের মধ্যে অনেক তফাৎ রয়েছে।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সত্তর হাজার লোক বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবে, তাদের বিশেষত্ব হলো, তারা কারো কাছে ঝাঁড় ফুঁক চায়না যদিও ঝাঁড়, ফুঁক গ্রহণ করা জায়েয।

এখানে একথা বলা উদ্দেশ্য যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার বান্দার মাঝে রাজা ও প্রজার মাঝে যে রকম মাধ্যম থাকে সে রকম কিছু মাধ্যম সাব্যস্ত করবে সে আল্লাহর সাথে শরীক করল এবং মুশরিক হলো। বরং তাদের এ সমস্ত কর্মকান্ড দ্বারা তারা আরবের পৌত্তলিক মুশরিকদের দ্বীনের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাবে যারা (তাদের উপাস্য দেবদেবীসমুহ দেখিয়ে) বলত যে, এগুলো (মুর্তি) নবীদের এবং নেক্কার লোকদের প্রতিমুর্তি মাত্র, এরা এমন কিছু মাধ্যম যাদেরকে মাধ্যম ধরলে আমরা আল্লাহর নৈকট্য পাব। {টিকা: আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ (আর যারা আল্লাহ্‌ ছাড়া অনেক অভিভাবক গ্রহণ করেছে (এ ব্যাপারে তাদের বক্তব্য হলো ) আমরা তো কেবল আল্লাহর কাছে সুপারিশ করে তারা তাঁর নৈকট্যে পৌঁছাবে এ বিশ্বাসে এদের ইবাদত করে থাকি নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ তা‘আলা তাদের ঝগড়ার মিমাংসা করবেন নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ তা‘আলা মিথ্যুক, অস্বীকারকারী এবং কাফিরদের হেদায়েত দেন না (সূরা আয-যুমার - à§©)} এরকম বলা ও বিশ্বাস করা শির্ক তথা আল্লাহর সাথে অন্য কিছুকে তার ইবাদত ও সার্বভৌমত্বে শরীক করারই নামানতর। আল্লাহ তা'আলা নাসারাদের এ মতকে প্রত্যাখ্যান করতে গিয়ে বলেন: (তারা তাদের আলেম ও আবেদ দেরকে আল্লাহ ছাড়া তাদের রব (হালাল-হারামকারী) বানিয়ে নিয়েছে। অথচ তাদেরকে শুধু এক মা'বুদ (আল্লাহ) এর ইবাদত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। তিনি ব্যতীত আর কোন যথার্থ মা'বুদ নেই, তারা তাঁর সাথে যাদেরকে অংশীদার বানাচ্ছে তার থেকে তিনি কতইনা পবিত্র!)। {সূরা আত্-তাওবাহ্: à§©à§§}

আল্লাহ আরো বলেন: (আর যখন আমার বান্দাগণ আপনাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে তখন (বলুন): নিশ্চয়ই আমি নিকটে। আহবানকারীর আহবানে সাড়া দেই, যখনি সে আমাকে আহবান করে। সুতরাং আমার ডাকেই তারা সাড়া দিক, (আমার কাছেই তারা দুআ' কবুলের কামনা করুক) আর আমার উপরই তারা ঈমান আনুক যাতে করে তারা সঠিক পথ পেতে পারে)। {সূরা আল-বাকারাহ্: ১৮৬}

অর্থাৎ আমি যখন তাদেরকে আদেশ বা নিষেধের ডাক দিব তখন যেন তাতে তারা (আনুগত্যের মাধ্যমে) সাড়া দেয়, আর আমার উপর একথা বিশ্বাস করুক (ঈমান রাখুক) যে, তারা যদি কাকুতি মিনতি ভরে আমার কাছে প্রার্থনা করে আমি তাদের ডাকে সাড়া দিব।

আল্লাহ তা'আলা বলেন : (সুতরাং যখনি আপনি অবসর হবেন তখনি তাঁর ইবাদতে গভীর ভাবে মনোনিবেশ করুন, আর আপনার প্রভুর প্রতিই অনুরাগী হোন।) {সূরা আশ্-শারাহ্: ৭-৮}

আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন : (আর যখন সাগর বক্ষে তোমরা বিপদগ্রস্থ হও তখন তিনি ব্যতীত অপর যাদের তোমরা ডেকে থাক তারা (যেন) হারিয়ে যায়।) {সূরা আল-ইসরা: ৬৭}

তিনি আরো বলেন : (বলতো কে বিপদগ্রস্থ যখন তাকে ডাকে তখন তার আহবানে সাড়া দিয়ে তাকে বিপদমুক্ত করেন? এবং কে তোমাদেরকে যমীনে পূর্ববর্তীদের স্থলাভিষিক্ত করেন?) {সূরা আন্-নমল: ৬২}

তিনি আরো বলেন : (আসমান ও জমীনে যারা আছে তারা তার কাছেই চায়, প্রত্যেক দিন তিনি (আল্লাহ) কোননা কোন কাজে আছেন।) {সূরা আর্-রহমান: ২৯}

অর্থাৎ দুআ' কবুল করেন, গুনাহ মাফ করেন, কাউকে সম্মানিত করেন, আবার অন্য কাউকে অসম্মানিত করেন ইত্যাদি।

আল্লাহ তা'আলা পবিত্র কুরআনে তার একত্ববাদের কথা বর্ণনা করেছেন, সাথে সাথে যাবতীয় শির্কের মুলোৎপাটিত করেছেন। যাতে করে কেউ আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় না করে, তাঁর কাছ ছাড়া অন্য কারো কাছে কোন কিছুর কামনা বা আশা না করে, তিনি ব্যতীত অন্য কারো উপরে ভরসা না করে।

আল্লাহ তা'আলা বলেন : (সুতরাং তোমরা মানুষকে ভয় করোনা, আমাকে ভয় করো, আর আমার আয়াতের (শরয়ী আয়াত বা নিদর্শনাবলী যেমন কুরআনের আয়াত সমুহ, অথবা প্রাকৃতিক নিদর্শনাবলী এগুলোর) বিনিময়ে স্বল্প মূল্য গ্রহণ করোনা।) {সূরা আল-মায়িদাহ্: ৪৪}

আরো বলেন : (শয়তান শুধু তোমাদেরকে তার মুরুব্বীদের ভয় দেখাচ্ছে অতএব যদি তোমরা ঈমানদার হও তাহলে তাদেরকে ভয় না করে আমাকেই ভয় করো।) {সূরা আলে-ইমরান: ১৭৩}

অর্থাৎ শয়তান শুধুমাত্র মুরুব্বী, বন্ধু, অনুসারীদের অনিষ্টের ভয়ই তোমাদের দেখাচ্ছে। (তাদের ভয় পেওনা।)।

আল্লাহ তা'আলা আরোও বলেন : (আপনি কি এদের দেখেননা যাদেরকে বলা হয়েছে যে, তোমরা তোমাদের হাত নিয়ন্ত্রণ করো, (আক্রমণ করোনা) নামায কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর, অতঃপর যখন তাদের উপর জি্বহাদ ফরজ করা হলো তখন তাদের মধ্যকার একদল লোক আল্লাহ তা'আলা কে যে রকম ভয় করা উচিত, মানুষ (কাফের) দেরকে সে রকম ভয়, কিংবা তার চেয়েও বেশী ভয় পেতে লাগল।) {সূরা আন্-নিসা: ৭৭}

তিনি আরো বলেন : (নিশ্চয়ই আল্লাহর মসজিদ সমুহ কেবল ঐ লোকই আবাদ করে যে আল্লাহ ও পরকালের উপর ঈমান এনেছে, নামাজ কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে, আর আল্লাহ ছাড়া অপর কাউকে ভয় করেনা।) {সূরা আত্-তাওবা: ১৮}

আরো বলেন : (আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, আল্লাহকে ভয় পাবে, এবং তাকওয়া অবলম্বন করবে, তারাই সফলকাম হবে।) {সূরা আন্-নূর: ৫২}

এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা একটা বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, আনুগত্য হবে আল্লাহর ও তার রাসূলের, কিন্তু ভয় ও তাকওয়া শুধুমাত্র আল্লাহকেই করতে হবে।

তিনি আরো বলেন : (আর যদি তারা আল্লাহ ও তার রাসূল যা তাদের দিয়েছেন তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকত, এবং বলতঃ আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট, আমাদেরকে আল্লাহ তাঁর রহমতে আরো বাড়িয়ে দিবেন, আর তাঁর রাসূলও আমাদেরকে প্রদান করবেন।) {সূরা আত্-তাওবা: ৫৯}

অন্য আয়াতেও আল্লাহ তা'আলা বলেছেনঃ (যাদেরকে লোকেরা বলল যে, নিশ্চয়ই তোমাদের বিরুদ্ধে অনেক লোক একত্রিত হয়েছে, তোমরা তাদের ভয় করো, তখনি এ কথা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে দিল এবং তারা বললঃ আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, আর তিনি কতইনা ভাল কার্য সম্পাদন কারী)। {সূরা আলে-ইমরান: ১৭৩}



সর্বশেষ আপডেট ( Monday, 27 June 2011 )