আল্লাহকে পেতে মাধ্যম গ্রহণ প্রিন্ট কর ইমেল
লিখেছেন শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ   
Thursday, 11 June 2009
আর্টিকেল সূচি
আল্লাহকে পেতে মাধ্যম গ্রহণ
রাসূলগণ দ্বীন প্রচার ও দাওয়াতের মাধ্যম
রাসূলরা কোন প্রকার লাভ ও কল্যাণ বয়ে আনতে পারেননা
শরীয়ত গর্হিত (নিষিদ্ধ) মাধ্যম সমুহ
শরীয়ত সমর্থিত শাফায়াত আর শরীয়ত নিষিদ্ধ শাফায়াত
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাওহীদ পুংখানুপুংখভাবে বাস্তবায়ন করে গেছেন

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাওহীদ পুংখানুপুংখভাবে বাস্তবায়ন করে গেছেন

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার উম্মতের জন্য তাওহীদের বাস্তব প্রয়োগ করে দেখিয়েছেন। তাদের সামনে থেকে শির্কের সাথে সম্পর্ক রাখে এমন যাবতীয় পথ রুদ্ধ করে গেছেন। আর এটাই মুলতঃ কালেমা তাইয়্যেবা "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" (আল্লাহ ছাড়া সঠিক কোন ইলাহ - মাবুদ নেই) এর বাস্তব রুপ। কেননা "ইলাহ" বা মাবুদ বলতে তো সেই স্বত্বাকেই বুঝায় যাকে অন্তরের যাবতীয় পরিপূর্ণ ভালবাসা, সম্মান, শ্রেষ্টত্ব, মর্যাদা, ভয় ও আশার মাধ্যমে উপাসনা করা হয়।

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করতে যেয়ে সাহাবাদের বলেছেনঃ (তোমরা একথা বলোনা যে, যা আল্লাহ, এবং যা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইচ্ছা করেছেন, বরং এভাবে বলো যে, যা আল্লাহ ইচ্ছা করেন, অতঃপর যা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইচ্ছা করেন। {হাদীসটি ইমাম আহমাদ তার মুসনাদে বিশুদ্ধ সনদ বর্ণনা করেছেন।}

অন্য একজন তাঁকে বললঃ যা আল্লাহ ইচ্ছা করেন, এবং আপনি ইচ্ছা করেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ (তুমি কি আমাকে আল্লাহর শরীক বানিয়েছ? বল : যা কেবলমাত্র আল্লাহ ইচ্ছা করেন।)। {হাদীসটি ইমান নাসায়ী তার সুনানে হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন।}

আরো বলেন : (যে শপথ করতে ইচ্ছা করে সে যেন আল্লাহর নামে শপথ করে, নতুবা চুপ থাকে)। {বুখারী, মুসলিম}

আরো বলেন : (যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর নামে শপথ করবে সে অবশ্যি শির্ক করলো)। {হাদীসটি ইমাম আহমাদ তার মুসনাদে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণনা করেছেন।}

আর ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) কে সম্বোধন করে তিনি বলেছিলেনঃ (যখন তুমি কোন কিছু চাইবে তখন শুধু আল্লাহর কাছেই চাইবে, আর যখন সাহায্য প্রার্থনা করবে, তখন আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করবে, তোমার জন্য যা বরাদ্ধ তা লিখে কলম শুকিয়ে গেছে, সমস্ত সৃষ্টি জগত যদি তোমার ভাল করার জন্য উঠে পড়ে লেগে যায়, তবুও আল্লাহ যা লিখেছেন তার বাইরে তোমার জন্য কোন কল্যাণ বয়ে আনতে পারবেনা, আর যদি তারা তোমার ক্ষতি করার শত চেষ্টাও করে তার পরও তোমার ভাগ্যের লিখার বাইরে তোমার ক্ষতি সাধন করতে পারবেনা।) {তিরমিযী (বিশুদ্ধ)}

আরো বলেছেনঃ (খ্রীষ্টানরা যেভাবে মরিয়ম পুত্র ঈসার ব্যাপারে সীমলংঘন করেছে তোমরা সেভাবে আমার প্রশংসায় সীমালংঘন করোনা, কেননা আমিতো কেবলমাত্র একজন দাস- বান্দাহ, সুতরাং তোমরা বলঃ আল্লাহর বান্দা (দাস) ও তাঁর রাসূল।) {সহীহ্ বুখারী}

আরো বলেন : (হে আল্লাহ ! আমার কবরকে পুজা করা হয় এমন প্রতিমায় পরিণত করোনা)। {হাদীসটি ইমাম আহমাদ তার মুসনাদে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণনা করেছেন।}

আরো বলেন : (তোমরা আমার কবরকে সম্মিলন স্থল পরিণত করোনা, আর আমার উপর দরূদ পড়তে থাক, কেননা তোমরা যেখানেই থাক, সেখান থেকেই তোমাদের দরূদ আমার কাছে পৌঁছে যায়)। {হাদীসটি ইমাম আহমাদ তার মুসনাদে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণনা করেছেন।}

তিনি তাঁর মৃত্যু শয্যায় বলেছিলেন : (ইহুদী ও নাসারাদের প্রতি আল্লাহর লানত পতিত হোক, তারা তাদের নবীদের কবরগুলোকে মাসজিদে রূপান্তরিত করেছে)। এর দ্বারা তিনি তারা যা করেছে তা থেকে দুরে থাকার জন্য লোকদের সাবধান করে দিচ্ছেন, আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন : যদি এ সমস্ত কর্মকান্ড হওয়ার ভয় না থাকতো তাহলে তাঁর (রাসূলের) কবরকে প্রকাশ্য স্থানে দেয়া হতো, কিন্তু তার কবরকে মসজিদে রুপান্তরিত করার ভয় করা হচ্ছিল। {বুখারী, মুসলিম}

এ বিষয়টি এতই ব্যাপক যে, এখানে তা লিখে শেষ করা যাবেনা।

মু'মিন ব্যক্তি মাত্রই জানে যে, আল্লাহ তা'আলা সব কিছুর রব, পালনকর্তা ও মালিক। তবে আল্লাহ তা'আলা সমস্ত উপায় উপকরণাদি, এবং কোন কিছু সংঘটিত হওয়ার জন্য বিশেষ বিশেষ কারণও সৃষ্টি করেছেন তা অস্বীকার করা যায়না, যেমনঃ উৎপাদনের জন্য বৃষ্টিকে আল্লাহ তা'আলা কারণ হিসাবে দেখিয়েছেন, মু'মিন মাত্রই তা স্বীকার করে, আল্লাহ তা'আলা বলেন: (আর আল্লাহ আকাশ থেকে যে পানি অবতীর্ণ করেন তা দ্বারা ভূমিকে মৃতু্যর পর জীবিত করেন, আর জমীনে ছড়িয়ে দেন যাবতীয় জীব জন্তু)। {সূরা আর-বাকারাহ্: ৬৪} অনুরূপভাবে বিভিন্ন বস্তুর সৃষ্টির কারণ হিসাবে চাঁদ ও সূর্যকে নির্ধারণ করেছেন।

তেমনিভাবে শাফায়াত ও দুআ'কে (এর দ্বারা যা অর্জিত হয় তা হাসিলের) উপায়, উপলক্ষ, বা উপকরণ হিসাবে স্থির করেছেন,) যেমন মৃত ব্যক্তির লাশের উপর নামাজ আদায় করা, এটাকে আল্লাহ তা'আলা তার রহমত লাভের উপায়, আর মুসল্লীদের জন্য সওয়াবের ভাগী হওয়ার উপকরণ হিসাবে অনুমোদন করেছেন। (তবে এ ব্যাপারে মূল কথা হলোঃ এ সমস্ত মাধ্যম, উপায়, উপকরণ শরীয়ত কতৃক স্বীকৃত ও নির্ধারিত হতে হবে।)

জায়েয উপায় অবলম্বন, আর হারাম উপায় অবলম্বন

কোন কিছু অর্জনের জন্য উপায় অবলম্বন, বা স্বার্থ সিদ্ধির উপলক্ষ নির্ধারনে তিনটি ব্যাপার জানা অত্যাবশ্যক:

এক : এ কথা বিশ্বাস করতে হবে যে, এ সমস্ত উপায় উপকরণ সমূহ অবলম্বন উদ্দেশ্য হাসিলে স্বয়ংসম্পূর্ণ নহে, বরং এর সাথে অন্যান্য বেশ কিছু উপকরণ যোগ হতে হবে, এতদসত্বেও তা অর্জনে বাধা বিঘ্নও আছে, তা দূরীভূত হতে হবে, ফলে যখন সর্ব প্রকার উপকরণের কোর্স পূর্ণ না হয়, এবং বাধা সমুহ দূরীভূত না হয়, তখন সে উদ্দেশ্য হাসিল হয়না, বা সে বস্তু অস্তিত্বে আসেনা।

অথচ আল্লাহ তা'আলা যা ইচ্ছা করেন তাই হয়, যদিও মানুষ তা ইচ্ছা না করুক, আর মানুষ যা চায় তা আল্লাহর ইচ্ছা না হলে কক্ষনো হবে না।

দুই : কোন বস্তুকে কোন বিষয় অর্জনের ক্ষেত্রে উপায়- উপকরণ হিসাবে বিশ্বাস করতে হলে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট অকাট্য জ্ঞান থাকতে হবে, নতুবা তা উপায় হিসাবে বিশ্বাস করা জায়েয হবেনা। সুতরাং কেহ বিনা দলীলে কোন উপায় নির্ধারণ করলে বা শরীয়তের নিষিদ্ধ পন্থায় কোন কিছু অর্জনের উপায় উপকরণ অবলম্বন করলে তা বাতিল হতে বাধ্য, যেমনঃ কেহ যদি ধারণা করে যে, মানত করা বালা মুসিবত, বিপদাপদ দুরীকরণে বা কোন অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে, নেয়ামত লাভের উপায় হবে, তার এ ধারনা প্রত্যাখ্যাত হবে, কারণ বুখারী ও মুসলিমে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে মানত করার নিষেধাজ্ঞা এসেছে, তিনি বলেছেনঃ (মানত কোন কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না, অর্থাৎ ভাল করার কোন ক্ষমতা মানতের নেই, বরং কৃপনের থেকে তা কিছু বের করে আনে মাত্র।)

তিনঃ ধর্মীয় কোন কাজে যতক্ষণ পর্যন্ত কোন উপায় উপকরণ শরীয়ত সম্মত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোন কিছু অর্জনের ক্ষেত্রে তা উপায় উপকরণ হিসাবে স্থির করা যাবেনা, কেননা ইবাদতের মূল ভিত্তি হল আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কতৃক নির্দিষ্ট পন্থা (অর্থাৎ যা সুনির্দিষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তার উপরই শুধু নির্ভর করা) সুতরাং কোন মানুষের জন্য এটা জায়েয হবেনা যে, সে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে, আর তাকে আহবান করবে, যদিও সে মনে করে যে, এটা তার কতক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য উপায় উপকরণ অবলম্বন মাত্র। আর এ জন্যই শরীয়ত বিরোধী বিদ'আত দ্বারা আল্লাহর ইবাদাত করা যাবেনা, যদিও বিদআতকারী মনে করে যে, সে ইবাদত করছে, এবং এতে তার উদ্দেশ্য সফল হচ্ছে; কেননা কখনো কখনো শয়তান কোন মানুষকে যখন সে শির্ক করে তখন তার উদ্দেশ্য হাসিলে সহায়তা করে থাকে, আবার কখনো কখনো কুফরী, নাফরমানী, দ্বারা মানুষের কিছু কিছু উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয়ে থাকে, কিন্তু তাই বলে তা করা জায়েয হয়ে যাবে না; কেননা এর মাধ্যমে যে সুবিধা সে অর্জন করছে তার থেকে অনেক বেশী গুণ ক্ষতির সম্মুখীন তাকে হতে হচ্ছে। আল্লাহ তা'আলা যাবতীয় ক্ষতিকারক, অনাসৃষ্টিতে সহায়ক, ফাসাদ সৃষ্টিকারক বস্তু বন্ধ করতে, বা পারত পক্ষে তা নিয়ন্ত্রণ করতে ও কমাতে তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে প্রেরণ করেছেন, সুতরাং আল্লাহ যা কিছুর নির্দেশ দিয়েছেন তা উপকারী হওয়াই মুখ্য, আর যা কিছু থেকে নিষেধ করেছেন তা ক্ষতিকারী, বা তাতে অপকারী দিকটাই প্রধান।

এ বিষয়টি আরো অনেক বেশী ব্যাখ্যার দাবী রাখে কিন্তু এ সামান্য কিছু কাগজে তার স্থান সংকুলান সম্ভব নয়।

আল্লাহ সবচেয়ে বেশী জানেন।

সমাপ্ত

অনুবাদক পরিচিতি: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

এম.এম (ঢাকা), লিসান্স, এম.এ, এম.ফিল, পি এইচ, ডি (মদীনা)

সহকারী অধ্যাপক, চেয়ারম্যান, আল-ফিকহ বিভাগ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যলয়, কুষ্টিয়া

বাংলাদেশ

বইটি প্রকাশ ও প্রচারে

ইমাম ইবনে তাইমিয়া ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ।



সর্বশেষ আপডেট ( Monday, 27 June 2011 )