আমাদের টাইপ করা বইগুলোতে বানান ভুল রয়ে গিয়েছে প্রচুর। আমরা ভুলগুলো ঠিক করার চেষ্টা করছি ক্রমাগত। ভুল শুধরানো এবং টাইপ সেটিং জড়িত কাজে সহায়তা করতে যোগাযোগ করুন আমাদের সাথে।
রাসায়েল ও মাসায়েল ৬ষ্ঠ খন্ড প্রিন্ট কর ইমেল
লিখেছেন সাইয়্যেদ আবুল আ'লা মওদূদী   
Monday, 28 February 2011
আর্টিকেল সূচি
রাসায়েল ও মাসায়েল ৬ষ্ঠ খন্ড
গ্রন্থকার পরিচিতি
১। আল্লাহর অস্তিত্ব সম্পর্কে সংশয় নিরসন
২। আল্লাহ ও তাঁর রসুলগণের মধ্যে পার্থক্য করা
৩। জীবজন্তুর উপর দয়া
৪। পাঁচ ওয়াক্ত ও পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায
৫। হানাফি মাযহাবে কি কিছু কিছু মাদক দ্রব্য হালাল?
৬। আদালতের রায় কি শুধু জাহেরীভাবেই কার্যকর, নাকি বাতেনীভাবেও কার্যকর?
৭। সুন্নাহর আইনগত মর্যাদা
৮। সাহরির শেষ সময় কোনটি?
৯। একটি হাদিস থেকে সুদের বৈধতা প্রমাণের অপচেষ্টা
১০। মুসলিম উম্মাহর বহু গোষ্ঠিতে বিভক্তি এবং মুক্তি লাভকারি গোষ্ঠি
১১। কালো খেজাব লাগানো কি বৈধ?-১
১২। কালো খেজাব কি বৈধ?-২
১৩। তাকদীর প্রসঙ্গ
১৪। গোমরাহী ও হেদায়েত
১৫। সূরা আন নাজমের প্রাথমিক আয়াত কয়টির ব্যাখ্যা
১৬। যাকাতকে প্রচলিত করের সাথে যুক্ত করা যায় না
১৭। পিতামাতার অধিকার
১৮। লোহার আংটি পরা কি জায়েয?
১৯। উশর ও খারাজের কয়েকটি সমস্যা
২০। উশরযোগ্য ফল ফসল কি কি?
২১। মোজার উপর মসেহ করার বিধান
২২। কারো সম্মানে দাঁড়ানো কি জায়েয?
২৩। 'প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ দান করা' সংক্রান্ত কুরআনের আদেশের ব্যাখ্যা
২৪। অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানদের ভরণ পোষণ প্রসঙ্গে
২৫। কবর আযাব
২৬। কুরআন শিক্ষাদান ও অন্যান্য ধর্মীয় কাজের পারিশ্রমিক নেয়া কি বৈধ?
২৭। ইসলামের ফৌজদারী দণ্ডবিধি সংক্রান্ত কিছু ব্যাখ্যা
২৮। বেতের নামাযে দোয়া কুনূত
২৯। লাইসেন্স ক্রয় বিক্রয়
৩০। কিবলার দিক নির্ণয়ের শরিয়তসম্মত বনাম বিজ্ঞানসম্মত পন্থা
৩১। মৃত ব্যক্তির জন্য ফিদিয়া দান, শোক ও কুরআন খতম
৩২। কয়েদি সৈন্যরা কি নামায কসর করবে
৩৩। পবিত্র কুরআন ও গুপ্ত ওহি
৩৪। ব্যভিচারের অপবাদ
৩৫। কোন কোন প্রাণী হালাল বা হারাম
৩৬। কুরবানীর চামড়া সম্পর্কে শরিয়তের বিধান
৩৭। মৃত ব্যক্তির চামড়া সম্পর্কে শরিয়তের বিধান
৩৮। মৃত প্রাণীর চামড়া সম্পর্কে আরো আলোচনা
৩৯। জবাই হালাল হওয়ার জন্য কি বিস্
৪০। যাকাত সংক্রান্ত কিছু খোলামেলা কথা
৪১। নগদ পুঁজির যাকাত ও তার নিসাব
৪২। বাইয়ে সালাম
৪৩। হযরত আলী রা.-এর জন্য সূর্যকে ফিরিয়ে দেয়ার ঘটনা কি সত্য?
৪৪। কুরাইশের ১২ জন খলিফা ও 'ফিতনায়ে আহলাস'
৪৫। আল্লাহ ও রসূলের কোনো উক্তি কি মানুষকে কর্মবিমুখ করতে পারে?
৪৬। আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করা সত্ত্বেও দৈন্যদশার কারণ কি?
৪৭। হযরত আলী রা.-এর বর্ম চুরি-১
৪৮। হযরত আলী রা.-এর বর্ম চুরি-২
৪৯। ইসলামের দৃষ্টিতে গানবাজনা ও নারী পুরুষের মেলামেশা
৫০। আব্দুল্লাহ বিন উবাইর জানাযা
৫১। ইমাম ইবনে তাবারি কি শিয়া ছিলেন?
৫২। ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে আপোস নিষ্পত্তির অধিকার
৫৩। ইসলামের উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে অভিযোগ
৫৪। শরিয়তের দৃষ্টিতে ওয়াকফের সংজ্ঞা ও বিধান
৫৫। আত্মহননকারীর জানাযা নামায
৫৬। হারুত মারুত ফেরেশতাদ্বয় সম্পর্কে এক ভিত্তিহীন অলীক কাহিনী
৫৭। 'চাটান' সম্পাদকের নিকট দুটো চিঠি
৫৮। হাদিস অস্বীকার করা ও স্বীকার করা
৫৯। হাদিস বিরোধী গোষ্ঠির বিভ্রান্তিকর প্রচারণা
৬০। একটি হাদিস সম্পর্কে আপত্তি ও তার জবাব
৬১। সন্তান পালনে নারীর অধিকার
৬২। স্তনের দুধ পানে বিয়ে হারাম হওয়া
৬৩। পারিবারিক আইন ও অর্পিত তালাক
৬৪। ফাসিদ বিয়ে ও বাতিল বিয়ে
৬৫। রসূল সা. কি হযরত সওদা রা. কে তালাক দিতে চেয়েছিলেন?
৬৬। উম্মুল মুমিনীন হযরত সওদার বিয়ে সম্পর্কে আরো আলোচনা
৬৭। কতোখানি দুধ পান করলে বিয়ে হারাম হয়?
৬৮। পিতামাতার আদেশে স্ত্রী তালাক দেয়া যায় কি?
৬৯। রসুল সা.-এর একাধিক বিয়ের যৌক্তিকতা ও সার্থকতা
৭০। বেলুচিস্তানের বাগদান প্রথা
৭১। লটারি ও নির্বাচনী লটারি
৭২। সমবায় সমিতি

<h1>২৪। অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানদের ভরণ পোষণ প্রসঙ্গে</h1>
প্রশ্ন : মুসলমানদের বর্তমান সমাজে বহু অন্যায় রীতিপ্রথা চালু রয়েছে, যা সাধারণ মানুষের অধিকার হরণ ও নির্যাতনের কারণ হয়ে দেখা দেয়। এ ধরনের একটি কুপ্রথা সম্পর্কে শরিয়তের বিধান জানতে চাই। স্বামী-স্ত্রীর অবনিবণার কারণে স্ত্রী তালাকপ্রাপ্তা হলে ছোট বা দুগ্ধপোষ্য শিশুকে মায়ের হাতে সমর্পণ করা হয়। কিন্তু এই শিশুদের ভরণপোষণের ব্যাপারটা খুবই জটিল রূপ ধারণ করে। পিতা এই দায়িত্ব গ্রহণ করেনা। সাধারণত এই গুরুভার মায়ের ঘাড়ে চাপানো হয়। এ ব্যাপারে ইসলামের আইন কি? সন্তানদের ভরণপোষণের দায়িত্ব পিতার উপর বর্তে কিনা? যদি বর্তে তবে কতোদিন পর্যন্ত? এ ব্যাপারে হানাফি মাযহাবের অনুসৃত নীতি জানতে পারলে ভালো হয়। কেননা এতদঞ্চলের বেশিরভাগ হানাফি মাযহাবের অনুসারী। এ ব্যাপারটা যদি আদালত পর্যন্ত গড়ায় তবে আদালতও সচরাচর স্বামী স্ত্রী যে মাযহাবের অনুসারী, সেই অনুসারেই রায় দিয়ে থাকে। কুরআন ও হাদিসে এ সম্পর্কে কোনো নীতি নির্দেশ থাকলে তাও জানাবেন, যাতে এ ধরনের ঘরোয়া বিরোধ ঘরোয়া পরিবেশেই মিটমাট করে ফেলা যায়।

জবাব : হানাফি মাযহাব অনুসারে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে তালাক বা বিচ্ছেদ ঘটে গেলে স্ত্রী যদি নিজের শিশু পালনের অধিকার প্রয়োগ করে ছোট শিশুদেরকে নিজের কাছে রাখে, তবে এই লালন পালনকালীন শিশুর ভরণপোষণের যাবতীয় ব্যয়ভার পিতাকে বহন করতে হবে। আর পিতা বেঁচে না থাকলে তার উত্তরাধিকারীদেরকে বহন করতে হবে। দুগ্ধপোষ্য শিশুর বেলায় তো যতোদিন দুধ খাওয়ানো চলবে ততোদিন শিশুর মায়ের ভরণপোষণও পিতাকে বহন করতে হবে। এ বিষয়টা পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। সূরা আল বাকারার ২৩৩ আয়াতে বলা হয়েছে :
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
"মায়েরা তাদের সন্তানদেরকে পুরো দুই বছর দুধ খাওয়াবে, যার দুধ খাওয়ানোর মেয়াদ পূর্ণ করার ইচ্ছে আছে তার জন্য। আর যে পুরুষের সন্তান, তার দায়িত্ব মায়েদের ভরণপোষণ প্রচলিত রীতি মোতাবেক প্রদান করবে।"

এ আয়াতে যদিও শিশুর পরিবর্তে তার মায়ের ভরণপোষণের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু এ কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, দুধ খাওয়ানো মায়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব যখন পিতার উপর অর্পিত হচ্ছে, তখন দুধ খাওয়া শিশুর ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বত:সিদ্ধভাবেই পিতার উপরই অর্পিত হয়। স্ত্রী যখন নিজের ভরণপোষণের দায়িত্ব বহন করেনা, তখন সন্তানের ব্যয় নির্বাহের দায়িত্ব তার উপর কিভাবে চাপানো যায়? এভাবে দুধ খাওয়ানোর মেয়াদকালে যখন শিশু ও তার মায়ের ভরণপোষণের ভার পিতার উপর অর্পিত, তখন দুধ খাওয়ার মেয়াদের পর যদি শিশু কিছুকাল মায়ের তত্ত্বাবধানে থাকে, তবে সে সময় মায়ের উপর নিজের ভরণপোষণের সাথে সাথে সন্তানেরও ভরণপোষণের ভার অর্পণ করা যুক্তি ও ন্যায়বিচারের আলোকে সমীচীন হতে পারেনা। পিতাকে কুরআনে -------------- (সন্তানের মালিক) বলে অভিহিত করা হয়েছে। অর্থাৎ সন্তান পিতারই অধিকারভুক্ত। কাজেই তার ভবিষ্যত ও মঙ্গলামঙ্গলের তদারকি ও দায়দায়িত্ব তাকেই বহন করতে হবে।

হেদায়া গ্রন্থে তালাক সংক্রান্ত অধ্যায়ে ---------------  "সন্তানের উপর কার অধিকার ও দায়দায়িত্ব বেশি" এই শিরোনামে গ্রন্থকার বলেন : ---------------- সন্তান মায়ের কাছে থাকলেও তার ব্যয় নির্বাহের জন্য পিতা দায়ি। হেদায়ার ব্যাখ্যামূলক গ্রন্থ 'ফাতহুল ক্বাদীরে' এ উক্তির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইবনুল হুমাম বলেন :
"পিতার উপর এ দায়িত্ব বর্তাবে যদি সে জীবিত থাকে। সে যদি মারা গিয়ে থাকে তবে উত্তরাধিকারী রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়ের উপর উত্তরধিকারের মাত্রা অনুপাতে দায়িত্ব বর্তাবে।"
পরবর্তীতে হেদায়ার ভরণপোষণ সংক্রান্ত অধ্যায়ে এ কথারই পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। প্রথমে বলা হয়েছে :
"অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের ভরণেপোষণের জন্য পিতা দায়ি। এ দায়িত্বে তার কোনো অংশীদার নেই।"
কিছু পরে আবার বলা হয়েছে : "অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানের ভরণপোষণের ভার পিতার উপর অর্পিত।"

হানাফি মাযহাবের সাধারণ ফতোয়া হলো, পুত্র সন্তানের সাত বছর ও কন্যা সন্তানকে নয় বছর লালন পালনের অধিকার মায়ের রয়েছে। এই মেয়াদকালে সে যদি দ্বিতীয় বিয়ে করে কিংবা এমন পুরুষকে বিয়ে করে যার সাথে তার কন্যা সন্তানদের বিয়ে চির নিষিদ্ধ (মুহাররম), তাহলে সন্তানদেরকে নিজের তত্ত্বাবধানে রাখার অধিকার মায়েরই বেশি। এই মেয়াদকাল উত্তীর্ণ হওয়ার পর পিতা দাবি করলে সন্তানকে ফেরত নিতে পারে।

আমার জানা মতে প্রচলিত আইনেও মায়ের তত্ত্বাবধানে থাকাকালে সন্তানদের ভরণপোষণের ভার পিতার উপরই অর্পিত। তথাপি এতে যদি কোনো সংশয় বা বিরোধ দেখা দেয়, তাহলে হানাফি মাযহাবের দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলামি আইনের বিধিব্যবস্থা কি, তা সংক্ষেপে উপরে বর্ণিত হলো। [তরজমানুল কুরআন, সেপ্টেম্বর ১৯৭১]



সর্বশেষ আপডেট ( Friday, 04 March 2011 )