পাতা 3 মোট 7
الركن الثاني: الإيمان بالملائكة
দ্বিতীয় রুকনঃ ফিরিশ্তাদের প্রতি ঈমান
(১) ফিরিশ্তাদের পরিচয়ঃ
ফিরিশ্তাদের প্রতি ঈমানঃ দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করা যে, আল্লাহ্ তা'আলার অনেক ফিরিশ্তা রয়েছেন। তিনি তাদেরকে নূর (জ্যোতি) হতে সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টিগতভাবে তারা আল্লাহর অনুগত। তারা কখনও আল্লাহর আদেশের অবাধ্য হননা, বরং যা আদিষ্ট হন তা পালন করেন। তারা দিবা রাত্রি আল্লাহর তাসবীহ্ (পবিত্রতা) বর্ণনায় রত, কখনও ক্লান্ত হননা। তাদের সংখ্যা আল্লাহ্ তা'আলা ব্যতীত কেউ জানেনা। আর আল্লাহ তাদেরকে বিভিন্ন প্রকার (কর্মের) দায়িত্ব অর্পণ করেছেন।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
وَلَـكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَالْمَلآئِكَةِ
[سورة البقرة، الآية:177]
অর্থঃ ((বরং বড় সত্কাজ হলো এই যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর, কিয়ামত দিবসের উপর, এবং ফিরিশ্তাদের উপর।))[সূরা আল-বাক্বারা,আয়াত-১৭৭]
তিনি আরো বলেনঃ
كُلٌّ آمَنَ بِاللّهِ وَمَلآئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لاَ نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّن رُّسُلِهِ
[سورة البقرة، الآية:285]
অর্থঃ ((সকলেই বিশ্বাস রাখেন আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফিরিশ্তাদের প্রতি,তাঁর গ্রন্থ সমূহের প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি।))[সূরা আল-বাক্বারা,আয়াত-২৮৫]
জিব্রাঈল (আলাইহিস্ সালাম) এর প্রসিদ্ধ হাদীসে এসেছেঃ যখন তিনি (জিব্রাঈল) আল্লাহর রাসূল ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন-ঈমান, ইসলাম,ও ইহসান,সম্পর্কে।
তিনি (জিব্রাঈল) বলেনঃ আমাকে ঈমান সম্পর্কে অবগত করুণ।
তিনি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ
أن تؤمن بالله وملائكته وكتبه ورسله واليوم الآخر وأن تؤمن بالقدر خيره وشره
অর্থঃ ((ঈমান হলোঃ আল্লাহ তাঁর ফিরিশ্তাদের, তাঁর কিতাব সমূহ, তাঁর রাসূলগণ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান আনা, এবং ভাগ্যের ভাল-মন্দের প্রতি ঈমান আনা।))
ইসলাম ধর্মে ফিরিশ্তাদের প্রতি ঈমানের স্থান ও তার বিধানঃ
ফিরিশ্তাদের প্রতি ঈমান আনা, ঈমানের ছয়টি রুক্নের দ্বিতীয় রুকন বা স্তম্ভ। ফিরিশ্তাদের প্রতি ঈমান আনা ছাড়া কোন ব্যক্তির ঈমান সঠিক ও গ্রহণ যোগ্য হবেনা। সম্মানিত ফিরিশ্তাদের প্রতি ঈমান আনা ওয়াজিব হওয়ার উপর সকল মুসলমান একমত । যারা সকল ফিরিশ্তাদের অথবা তাঁদের আংশিকের অস্তিত্বকে যাদের কথা আল্লাহ্ উল্লেখ করেছেন, অস্বীকার করবে তারা কুফুরী করলো, এবং কুরআন, হাদীস ও ইজমার বিরোধিতা করলো।
আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
وَمَن يَكْفُرْ بِاللّهِ وَمَلاَئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلاَلاً بَعِيداً
[سورة النساء، الآية:136]
অর্থঃ ((যে আল্লাহ্ তা'আলাকে, তাঁর ফিরিশ্তাদেরকে, তাঁর কিতাব সমূহকে এবং তাঁর রাসূলগণকে ও কিয়ামত দিবসকে অস্বীকার করবে, সে পথভ্রষ্ট হয়ে বহুদূরে গিয়ে পড়বে।)) [সূরা আন-নিসা,আয়াত-১৩৬]
(২) ফিরিশ্তাদের প্রতি ঈমান আনার পদ্ধতিঃ
ফিরিশ্তাদের প্রতি সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিত ভাবে ঈমান আনা। সংক্ষিপ্ত ঈমান নিম্নের বিষয় গুলোকে অন্তভর্ুক্ত করে।
প্রথমঃ তাদের অস্তিত্বের স্বীকার করা, তারা আল্লাহর সৃষ্টি জীব, আল্লাহ্ তাদেরকে তাঁর ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তাদের অস্তিত্ব প্রকৃত, তাদেরকে আমাদের না দেখা, তাদের অনুস্তিত্বের অর্থ নয়, কারণ পৃথিবীতে অনেক সুক্ষ্ন সৃষ্টিজীব রয়েছে, তাদেরকে আমরা দেখতে পাইনা, অথচ তারা প্রকৃত পক্ষ্যে রয়েছে।
নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিব্রাঈল আলাইহিস সালামকে তাঁর প্রকৃত আকৃতীতে দু'বার দেখেছেন।
কতিপয় সাহাবী কিছু ফিরিশ্তাদেরকে মানুষের আকৃতীতে দেখেছেন।
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল তার মুসনাদে আব্দুল্লাহ্ বিন মাসউদ হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেনঃ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালাম কে তাঁর নিজস্ব আকৃতীতে ছয় শত পাখা বিশিষ্ট অবস্থায় দেখেছেন। প্রত্যেক পাখা একেক প্রান্ত ঢেকে রেখেছে।
জিব্রাঈলের (আলাইহিস সালাম) প্রসিদ্ধ হাদীস যা ইমাম মুসলিম (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণনা করেছেন, তাতে প্রমাণিত হয় যে, জিব্রাঈল (আলাইহিস্ সালাম) মানুষের আকৃতীতে ধপধপে সাদা পোষাকে, মিশ মিশ কালো চুলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসেছিলেন। তাঁর উপর ভ্রমণের কোন নিদর্শন ছিলনা। সাহাবাদের কেহ তাঁকে চিনতে পারে নাই।
দ্বিতীয়ঃ আল্লাহ্ তাদেরকে যে সম্মান দিয়েছেন, তাদেরকে সেই সম্মান দেওয়া। তারা আল্লাহর বান্দা বা দাস। আল্লাহ্ তাদেরকে সম্মানিত করেছেন, তাদের মর্যাদাকে উঁচু করেছেন এবং তাদেরকে নৈকট্য দান করেছেন। তাদের কেহ্ কেহ্ আল্লাহর ওয়াহী ইত্যাদির রাসূল বা দূত। আল্লাহ্ তাদেরকে যতটুকু ক্ষমতার মালিক করেছেন,তারা ততটুকু ক্ষমতারই মালিক। তার পরও তারা তাদের নিজেদের ও অন্যদের লাভ-ক্ষতির মালিক নয়। এই জন্য আল্লাহ্ ছাড়া তাদেরকে এ রুবুবীয়াতের বা প্রভুত্তের গুনে গুনাম্বিত করা তো দূরের কথা, যেমন-নাসারারা রূহুল কুদ্দুস (জিব্রাঈল আলাইহিস্ সালাম) সম্পর্কে ধারণা করেছে বরং তাদের জন্যে ইবাদাতের কোন অংশ পালন করা বৈধ নয়।
আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
وَقَالُوا اتَّخَذَ الرَّحْمَنُ وَلَداً سُبْحَانَهُ بَلْ عِبَادٌ مُّكْرَمُونَ - لَا يَسْبِقُونَهُ بِالْقَوْلِ وَهُم بِأَمْرِهِ يَعْمَلُونَ
[سورة الأنبياء، الآيتان:26-27]
অর্থঃ ((তারা বললঃ দয়াময় আল্লাহ্ সন্তান গ্রহণ করেছে। তাঁর জন্য কখনও ইহা যোগ্য নয়। বরং তাঁরা (ফিরিশ্তারা) তো তাঁর সম্মানিত বান্দা। তারা আগে বেড়ে কথা বলতে পারেনা এবং তারা তাঁর আদেশেই কাজ করে।)) [সূরা আল-আম্বিয়া,আয়াত-২৬-২৭]
তিনি আরো বলেনঃ
لَا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ
[سورة التحريم، الآية:6]
অর্থঃ ((তারা আল্লাহ্ তা'আলা যা আদেশ করেন,তা অমান্য করেনা এবং যা করতে আদেশ করা হয় তাই করে।)) [সূরা আত-তাহরীম,আয়াত-৬]
প্রত্যেক মুসলিম নর ও নারীর উপর এতটুকু ঈমান আনা ওয়াজেব। তাদের উপর অপরিহার্য যে, ইহা জানবে ও বিশ্বাস করবে। কেননা এ বিষয়ে অজ্ঞতা কোন গ্রহণ যোগ্য ওযর বা কারণ নয়।
ফিরিশ্তাদের প্রতি বিস্তারিত ঈমান আনা নিম্নে বর্ণিত বিষয় গুলোকে অন্তভর্ুক্ত করে।
প্রথমতঃ ফিরিশ্তাদের সৃষ্টির মূল উত্সঃ
আল্লাহ তা'আলা ফিরিশ্তাদের কে নূর হতে সৃষ্টি করেছেন, যেমন-জি্বন জাতিকে আগুন হতে সৃষ্টি করেছেন, এবং আদম সন্তানদেরকে মাটি হতে সৃষ্টি করেছেন, আর তাদের সৃষ্টি হলো আদম আলাইহিস্ সালাম এর সৃষ্টির পূর্বে।
হাদীসে এসেছেঃ
خلقت الملائكة من نور، وخلق الجان من مارج من نار، وخلق آدم مما وصف لكم
[رواه مسلم]
অর্থঃ ((ফিরিশ্তারা নূর হতে, জিনেরা অগি্ন স্ফুলিঙ্গ হতে, আর আদম আলাইহিস্ সালাম মাটি হতে সৃষ্ট।)) [মুসলিম শরীফ]
দ্বিতীয়তঃ ফিরিশ্তাদের সংখ্যাঃ
ফিরিশ্তারা সৃষ্ট জীব, তাদের আধিক্যের জন্যে আল্লাহ্ আয্যা ও জাল্লা ছাড়া তাদের সংখ্যা কেহ জানেনা। আকাশে প্রতি চার আংগুল পরিমাণ জায়গায় একেক জন ফিরিশ্তা সিজ্দারত অথবা দন্ডায়মান অবস্থায় রয়েছেন। সপ্তম আকাশে আল- বায়তুল মা'মুরে সত্তর হাজার ফিরিশ্তা প্রত্যহ প্রবেশ করছেন। তাদের আধিক্যতার জন্যে দ্বিতীয় বার ফিরে আসার সুযোগ পাবেননা।
কিয়ামত দিবসে জাহান্মাম উপস্থিত করা হবে, তার সত্তর হাজার লাগাম হবে। প্রত্যেক লাগামে সত্তর হাজার ফিরিশ্তা হবে, তারা জাহান্মকে টেনে নিয়ে আসবে।
আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
وَمَا يَعْلَمُ جُنُودَ رَبِّكَ إِلَّا هُوَ
[سورة المدثر، الآية:31]
অর্থঃ ((আর আপনার পালন কতর্ার বাহিনী সম্পর্কে একমাত্র তিনিই জানেন।)) [সূরা আল-মুদ্দাছির,আয়াত-৩১]
হাদীসে এসেছে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেনঃ
أطَّت السماء وحق أن تئطَّ، ما فيها موضع قدم إلا وفيه ملك ساجد وراكع
অর্থঃ ((আকাশ গর্জন করছে,আর গর্জন করারই কথা। কারণ প্রত্যেক জায়গায় সিজ্দা কারী ও রুকুকারী ফিরিশ্তা রয়েছে।))
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল-বাইতুল মা'মুর সম্পর্কে বলেনঃ
يدخله في كل يوم سبعون ألف ملك لا يعودون إليه
[رواه البخاري ومسلم]
অর্থঃ ((বাইতুল মা‘মুরে প্রত্যহ সত্তর হাজার ফিরিশতা প্রবেশ করেন, তারা দ্বিতীয় বার ফিরে আসার সুযোগ পাবেননা।)) [বুখারী ও মুসলিম ]
তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেনঃ
يؤتي بجهنم يومئذٍ لها سبعون ألف زمام، مع كل زمام سبعون ألف ملك [رواه مسلم]
অর্থঃ ((জাহান্মাম কে নিয়ে আসা হবে, সে দিন তার সত্তর হাজার লাগাম হবে। আর প্রত্যেক লাগামে সত্তর হাজার ফিরিশতা হবে।)) [মুসলিম]
এখানে ফিরিশতাদের এক বিরাট সংখ্যা প্রকাশিত হল। যারা প্রায় (৭০০০০ ৭০০০০=) ৪৯০কোটি জন ফিরিশতা তবে বাকী ফিরিশতাদের সংখ্যা কত হতে পারে? পবিত্রতা সেই সত্তার যিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। তাদেরকে পরিচালনা করেন। তাদের সংখ্যা পরিসংখ্যান করে রেখেছেন।
তৃত্বীয়তঃ ফিরিশতাদের নামঃ কুরআন ও হাদীসে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের জন্যে যে, সকল ফিরিশতাদের নাম উল্লেখ্য করেছেন, তাদের প্রতি ঈমান আনা ওয়াজিব। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন তিনজন।
(১) জিবরীলঃ তাকে জিবরাঈল ও বলা হয়। তিনিই রুহুল কুদ্দস, যিনি ওয়াহী-যা অন্ত-রের সুধা-নিয়ে রাসূলগণের নিকট অবতরণ হন।
(২) মিকাঈলঃ তাকে প্রশান্তি বলা হয়। বৃষ্টি বর্ষণের দায়িত্বে নিয়োযিত, যা জমির জীবিকা স্বরূপ। আল্লাহ যেখানে বর্ষণের আদেশ দেন সেখানে বর্ষণ পরিচালনা করেন।
(৩) ইসরাফীলঃ তিনি শিংগায় ফুতকার দেওয়ার দায়িত্বে রয়েছেন। পার্থিব্য জীবন শেষে পারলৌকিক জীবন শুরু হওয়ার ঘোষনা স্বরূপ এবং এর দ্বারাই, (মৃত) দেহ সমূহের পুনরুজীবন ঘটবে।
চতুর্থতঃ ফিরিশতাদের সিফাত বা বৈশিষ্ট্যঃ ফিরিশতারা প্রকৃত সৃষ্টি জীব। তাদের প্রকৃত শরীর রয়েছে যা সৃষ্টিগত ও চরিত্র গত গুনে গুনাম্বিত, নিম্নে তাদের কিছু গুন বর্ণনা করা হলোঃ
(ক) তাদের সৃষ্টি মহান এবং তাদের শরীর হলো বিশাল আকৃতিরঃ আল্লাহ তা‘য়ালা ফিরিশতাদেরকে শক্তি শালী ও বড় আকৃতীতে সৃষ্টি করেছেন। ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে আসমান ও যমিনে যে বড় বড় কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন, তারা তার উপযোগী।
(খ) তাদের ডানা রয়েছেঃ আল্লাহ তা‘আলা ফিরিশতাদের জন্যে দুই, তিন ও চার বা ততোধিক পাখা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। যেমন- রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিবরীল (আলাইহিস সালাম) কে দেখেছিলেন, তার নিজÈ আকৃতি ছয়শত পাখা বিশিষ্ট অবস্থায়। যা আকাশের প্রান্তভাগ ঢেকে রেখেছিল।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
الْحَمْدُ لِلَّهِ فَاطِرِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ جَاعِلِ الْمَلَائِكَةِ رُسُلاً أُولِي أَجْنِحَةٍ مَّثْنَى وَثُلَاثَ وَرُبَاعَ يَزِيدُ فِي الْخَلْقِ مَا يَشَاءُ
[سورة فاطر، الآية:1]
অর্থঃ ((সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আসমান ও জমিনের স্রষ্টা এবং ফিরিশতাদেরকে করেছেন কতাê বাহক-তারা দুই দুই, তিন তিন ও চার চার পাখা বিশিষ্ট। তিনি সৃষ্টির মধ্যে যা ইচ্ছা বৃদ্ধি করেন।)) [সূরা ফাত্বির,আয়াত-১]
(গ) তাদের পানাহার প্রয়োজন হয় নাঃ আল্লাহ তা‘আলা ফিরিশতাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। তাঁরা পানাহারের মুহতাজ বা মুখাপেক্ষী নন। তারা বিবাহ করেননা, সন্তান ও হয়না।
(ঘ) ফিরিশতারা অন্তর বিশিষ্ট ও জ্ঞানীঃ তাঁরা আল্লাহর সাথে কথা বলেছেন, এবং আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলেছেন। তারা আদম ও অন্যান্য নাবীদের সাথে ও কথা বলেছেন।
(ঙ) তাদের নিজÈ আকৃতি ছাড়া অন্য আকৃতি ধারণ করার ক্ষমতা রয়েছেঃ আল্লাহ স্বীয় ফিরিশতাদেরকে পুরুষ মানুষের আকৃতি ধারণ করার ক্ষমতা দিয়েছেন। ইহা মূর্তি পূজকদের ভ্রান্ত ধারণার খন্ডন। যারা ধারণা করে যে ফিরিশতারা আল্লাহর মেয়ে বা কন্যা। তাদের আকৃতি ধারনের পদ্ধতি আমাদের জানা নেই। তবে তারা এমন সূক্ষ্ম আকৃতি ধারণ করে যে তাদের ও মানুষের মাঝে পার্থক্য করা কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়ে।
(চ) ফিরিশতাদের মৃতুøবরণঃ মালাকুল মাউত বা জান কবজকারী ফিরিশতা সহ সকল ফিরিশতারা কিয়ামত দিবসে মৃতুø বরণ করবেন। অতঃপর আল্লাহ তাদেরকে যে যে দায়িত্ব দিয়েছিলেন, সে দায়িত্ব পালন করার জন্য পুনরুথ্যান করা হবে।
(ছ) ফিরিশতাদের ইবাদাতঃ ফিরিশতারা আল্লাহর অনেক ধরণের ইবাদাত করেন। সালাত, দো'আ, তাসবীহ রুকু, সিজদাহ, ভয়-ভীতি ও ভাল বাসা ইত্যাদি।
তাদের ইবাদাতের বর্ণনা নিম্নরুপঃ
(১) তারা ক্লান্তহীন ভাবে আল্লাহর ইবাদাতে সর্বদায় রত থাকেন।
(২) তারা একনিষ্টতার সাথে আল্লাহ তা‘আলার জন্যে ইবাদাত করেন।
(৩) তারা নাফারমানী বর্জন করে সর্বদায় আনুগত্যে মাশগুল থাকেন, কেননা তারা মা‘সুম অথাêত নাফারমানী ও পাপাচার হতে মুক্ত।
(৪) অধিক ইবাদাত করার সাথে সাথে আল্লাহর জন্য বিনয়-নম্রতা প্রকাশ করা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
يُسَبِّحُونَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لَا يَفْتُرُونَ
[سورة الأنباء، الآية:20]
অর্থঃ ((তারা রাত্রি দিন তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা করে এবং ক্লান্ত হয়না।)) [সূরা আল-আম্বিয়া,আয়াত-২০]
পঞ্চমতঃ ফিরিশতাদের কর্ম সমূহঃ ফিরিশতারা অনেক বড় বড় কাজ সম্পাদন করেন, যার দায়িত্ব আল্লাহ তাদেরকে দিয়েছেন।
সে কাজ গুলো নিম্নরূপঃ
(১) আরশ বহন করা।
(২) রাসূলগণের উপর ওয়াহী অবতীর্ণের দায়িত্ব প্রাপ্ত ফিরিশতা।
(৩) জান্নাত ও জাহান্নামের পাহারাদার।
(৪) উদ্ভিদ, বৃষ্টি বর্ষণ ও বাদল পরিচালনার দায়িত্ব প্রাপ্ত।
(৫) পাহাড়-পর্বতের দায়িত্ব প্রাপ্ত।
(৬) শিংগায় ফুতকারের দায়িত্ব প্রাপ্ত ফিরিশতা।
(৭) আদম সন্তানের কর্ম লিপিবদ্ধ করার দায়িত্ব প্রাপ্ত।
(৮) আদম সন্তানকে হিফাজত করার দায়িত্ব প্রাপ্ত। আল্লাহ যখন আদম সন্তানের উপর কোন কাজ নিধাêরন করেন, তখন তারা তাকে পরিত্যাগ করেন, অতঃপর আল্লাহ তাদের জন্য যা নিধাêরণ করেছিলেন, তা পতিত হয় বা সংঘটিত হয়।
(৯) মানুষের সাথে থাকার ও তাদেরকে কল্যানের দিকে আহ্বানের দায়িত্ব প্রাপ্ত।
(১০) জরায়ুতে বীর্য সঞ্চার, মানুষের (দেহে) অন্তরে আত্না প্রক্ষেপ, তার রিযিক, কর্ম ও সৌভাগ্য বা দূর্ভাগ্য লিপিবদ্ধে দায়িত্ব প্রাপ্ত ফিরিশতা।
(১১) মৃতুøর সময় আদম সন্তানের আত্না কবজ করার দায়িত্ব প্রাপ্ত ফিরিশতা।
(১২) মানুষকে কবরে জিজ্ঞাসাবাদ এবং উত্তর অনুযায়ী শান্তি বা শাস্তি প্রদানে দায়িত্ব প্রাপ্ত।
(১৩) নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর তাঁর উম্মতের সালাম পৌঁছানোর দায়িত্ব প্রাপ্ত ঐ। তাই মুসলিম ব্যক্তি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর তার সালাম প্রেরণের জন্য তাঁর কাছে (তাঁর কবরের কাছে) ভ্রমণের প্রয়োজন হয় না। বরং পৃথিবীর যে কোন স্থান হতে তাঁর উপর সালাম, ও দরুদ পাঠ করাই যথেষ্ট। কারণ ফিরিশতারা তার সালাম পৌঁছিয়ে দেন। মাসজিদে নাবাবীতে এক মাত্র নামাজ পড়ার উদ্দেশে ভ্রমণ করা বৈধ রয়েছে। উল্লেখিত এ প্রসিদ্ধ কাজ সমূহ ব্যতীত তাদের (ফিরিশতাদের) আরো অনেক কাজ রয়েছে। নিম্নে এর প্রমাণ বর্ণিত হলো-
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
الَّذِينَ يَحْمِلُونَ الْعَرْشَ وَمَنْ حَوْلَهُ يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيُؤْمِنُونَ بِهِ وَيَسْتَغْفِرُونَ لِلَّذِينَ آمَنُوا
[سورة غافر، الآية:7]]
অর্থঃ ((যারা আরশ বহন করে এবং যারা তার চার পাশে আছে, তারা তাদের পালনকতাêর সপ্রশংসা পবিত্রতা বর্ণনা করে, তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মু‘মিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।)) [সূরা গাফির,আয়াত-৭]
তিনি আরো বলেনঃ
قُلْ مَن كَانَ عَدُوّاً لِّجِبْرِيلَ فَإِنَّهُ نَزَّلَهُ عَلَى قَلْبِكَ بِإِذْنِ اللّهِ
[سورة البقرة، الآية:97]
অর্থঃ ((আপনি বলে দিন, যে কেউ জিবরাঈলের শক্র হয়-যেহেতু তিনি আল্লাহর আদেশে এ কালাম আপনার অন্তরে নাযিল করেছেন।)) [সূরা আল-বাক্বারা,আয়াত-৯৭]
তিনি আরো বলেনঃ
وَلَوْ تَرَى إِذِ الظَّالِمُونَ فِي غَمَرَاتِ الْمَوْتِ وَالْمَلآئِكَةُ بَاسِطُواْ أَيْدِيهِمْ أَخْرِجُواْ أَنفُسَكُمُ
[سورة الأنعام، الآية:93]
অর্থঃ ((যদি আপনি দেখেন যখন জালেমরা মৃতুø-যন্ত্রনায় থাকে এবং ফিরিশতারা Èীয় হস্ত প্রসারিত করে বলে, বের কর Èীয় আত্না।)) [সূরা আল-আনআম,আয়াত-৯৩]
ষষ্টয়তঃ আদম সন্তানের উপর ফিরিশতাদের অধিকারঃ
(ক) তাদের প্রতি ঈমান আনা।
(খ) তাদেরকে ভাল বাসা, সম্মান করা,ও তাদের মযাêদা বর্ণনা করা।
(গ) তাদেরকে গালি দেওয়া, মযাêদা ক্ষুন্য করা,ও তাদেরকে নিয়ে হাসি রহস্য করা হারাম।
(ঘ) ফিরিশতারা যা অপছন্দ করেন তা হতে দূরে থাকা। কারণ,আদম সন্তানরা যাতে কষ্ট পায়,তারাও তাতে কষ্ট পায়।
ফিরিশতাদের প্রতি ঈমান আনার সুভ-ফলাফলঃ
(ক) ঈমান পরিপূর্ণ হয়। কারণ তাদের প্রতি ঈমান আনা ছাড়া কারো ঈমান পরিপূর্ণ হবেনা।
(খ) তাদের সৃষ্টি কতাêর মহত্ব বা শ্রেণ্ঠত্ব ও তাঁর শক্তি ও রাজত্বে জ্ঞান অর্জন। কারণ, সৃষ্টি কতাêর, শ্রেণ্ঠত্ব হতে সৃষ্টি জীবের শ্রেণ্ঠত্ব প্রকাশ পায়।
(গ) তাদের গুনাগুন, তাদের অবস্থা, ও কর্ম জানার মাধ্যমে মুসলিম ব্যক্তির ঈমান বৃদ্ধি পায়।
(ঘ) আল্লাহ তা‘আলা যখন মু‘মিনদেরকে ফিরিশতা দিয়ে হিফাজত করেন, তখন তাদের (মু‘মিনদের) শান্তি ও তৃপ্তি অর্জন হয়।
(ঙ) ফিরিশতাদেরকে ভাল বাসাঃ তাদের ইবাদাত সঠিক পন্থায় হওয়ায় ও মু‘মিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার কারণে।
(চ) খারাপ ও নাফারমানী পূর্ণ কাজকে অপছন্দ করা।
(ছ) আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের গুরুত্ব দেন এই জন্য তাঁর প্রশংসা করা। যেমন আল্লাহ ঐ সকল ফিরিশতাদের কাউকে তাদেরকে (বান্দাদেরকে) হিফাজতের,ও কর্ম লিখার ইত্যাদি কল্যাণ জনক কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন।
|