আমাদের টাইপ করা বইগুলোতে বানান ভুল রয়ে গিয়েছে প্রচুর। আমরা ভুলগুলো ঠিক করার চেষ্টা করছি ক্রমাগত। ভুল শুধরানো এবং টাইপ সেটিং জড়িত কাজে সহায়তা করতে যোগাযোগ করুন আমাদের সাথে।
কুরআন বুঝা সহজ প্রিন্ট কর ইমেল
লিখেছেন অধ্যাপক গোলাম আযম   
Saturday, 14 April 2007
আর্টিকেল সূচি
কুরআন বুঝা সহজ
কুরআন ও অন্যান্য কিতাবের মধ্যে পার্থক্য
কুরআন যার উপর নাযিল হয়েছে তাঁকে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল
এ আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন করে কুরআন বুঝা কিছুতেই সম্ভব নয়
কুরআনের আন্দোলনমুখী তাফসীর
গোটা কুরআনের পটভূমিঃ
সমাজ বিপ্লবের উপযোগী আন্দোলনের পরিচয়
রাসূল (সাঃ)-এর আন্দোলনের বিভিন্ন যুগ ও স্তর
মাদানী যুগের বড় বড় ঘটনার সময়কাল
মাক্কী সূরার বৈশিষ্ট্য
মাদানী সূরার বৈশিষ্ট্য
কুরআনের অন্যান্য বৈশিষ্ট্য
মাক্কী ও মাদানী সূরার সংখ্যা
মাক্কী যুগের সূরার তালিকা
মাদানী যুগের সূরার তালিকা
মাক্কী যুগের বিভিন্ন স্তরে অবতীর্ণ সূরার শ্রেণীবিন্যাস
মাক্কী ও মাদানী সূরার সংখ্যা ভিত্তিক হিসাব
কুরআনের আলোচ্য বিষয়
কুরআনের আলোচনা কৌশল
আন্দোলনের দৃষ্টিতে অধ্যয়ন
মাক্কী যুগের সূরা অধ্যয়নের টেকনিক (পদ্ধতি বা কৌশল )
নবী কাহিনীর উদ্দেশ্য
আমাদের দাওয়াত
দারসে কুরআনের পদ্ধতি
কোন ধরনের মন কুরআনের মর্মার্থ ধরতে পারে?
কুরআনের পারা ,রুকু, আয়াত ,শব্দ ও অক্ষর সংখ্যা

৪. কুরআনের আন্দোলনমুখী তাফসীর

ছাত্র জীবন থেকেই বাংলা ও ইংরেজী ভাষায় প্রকাশিত তাফসীর থেকে কুরআন বুঝবার চেষ্টা করেছিলাম । আলেম না হলে কুরআন বুঝা সম্ভব নয় মনে করেই এ চেষ্টায় ক্ষান্ত দিলাম । ১৯৫৪ সালে মরহুম আবদুল খালেক সাহেবের দারসে কুরআন কিছুদিন শুনে সহজ মনে হল । জানতে পারলাম যে মাওলানা মওদূদী (রঃ) - এর লিখিত তাফহীমুল কুরআন থেকেই তিনি দারস দেন । তখন নতুন উৎসাহ নিয়ে এ তাফসীর অধ্যয়নে মনোযোগ দিলাম।
ক. তাফহীমুল কুরআনের বৈশিষ্ট্য
তাফহীমুল কুরআন যে বৈশিষ্ট্যের দরুন বিশেষ মর্যাদার অধিকারী তা এ তাফসীরখানা না পড়া পর্যন্ত বুঝে আসতে পারে না । মধু কেমন তা খেয়েই বুঝতে হয় । অন্যের কথায় মধুর স্বাদ ও মিষ্ঠতা সঠিকভাবে জানা সম্ভব নয়। নবুয়াতের ২৩ বছর রাসূল (সা) কালেমা তাইয়্যেবার দাওয়াত থেকে শুরু করে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সব ক্ষেত্রেই ইকামাতে দ্বীনের যে মহান দায়িত্ব পালন করেছেন সে কাজটি করবার জন্য কুরআন পাক নাযিল হয়েছে । রাসূল (সা) -এর নেতৃত্বে পরিচালিত ইসলামী আন্দোলনের বিভিন্ন অবস্থায় ও পরিবেশে আল্লাহ পাক প্রয়োজন মতো যখন যে হেদায়াত পাঠিয়েছেন তা-ই গোটা কুরআনে ছড়িয়ে আছে । তাই কুরআনকে আসল রূপে দেখতে হলে রাসূল (সা)-এর ২৩ বছরের সংগ্রামী জীবনের সাথে মিলিয়ে বুঝবার চেষ্টা করতে হবে । তাফহীমুল কুরআন এ কাজটিই করেছে । এখানেই এর বৈশিষ্ট্য।
খ. কুরআন বুঝবার আসল মজা
তাফহীমুল কুরআন একথাই বুঝাবার চেষ্টা করেছে যে , রাসূল (সাঃ) -এর ঐ আন্দোলনকে পরিচালনা করার জন্যই কুরআন এসেছে। তাই কোন সূরাটি ঐ আন্দোলনের কোন যুগে এবং কি পরিবেশে নাযিল হয়েছে তা উল্লেখ করে বুঝানো হয়েছে যে ঐ পরিস্থিতিতে নাযিলকৃত সূরায় কী হেদায়াত দেয়া হয়েছে । এভাবে আলোচনার ফলে পাঠক রাসূল (সাঃ) এর আন্দোলনকে এবং সে আন্দোলনে কুরআনের ভুমিকাকে এমন সহজ ও সুন্দরভাবে বুঝতে পারে যার ফলে কুরআন বুঝবার আসল মজা মনে -প্রাণে উপলব্দি করতে পারে।
তাফহীমুল কুরআন ঈমানদার পাঠককে রাসূল (সা) - এর আন্দোলনের সংগ্রামী ময়দানে নিয়ে হাযির করে । দূর থেকে হক ও বাতিলের সংঘর্ষ না দেখে যাতে পাঠক নিজেকে হকের পক্ষে বাতিলের বিরুদ্ধে সক্রিয় দেখতে পায় সে ব্যবস্থাই এখানে করা হয়েছে । ইসলামী আন্দোলনের ও ইকামাতে দ্বীনের সংগ্রামে রাসূল (সা) ও সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) - কে যে ভূমিকা পালন করতে হয়েছে তা এ তাফসীরে এমন জীবন্ত হয়ে উঠেছে যে পাঠকের পক্ষে নিরপেক্ষ থাকার উপায় নেই । এ তাফসীর পাঠককে ঘরে বসে শুধু পড়ার মজা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে দেয়না । তাকে ইসলামী আন্দোলনে উদ্বুদ্ধ করে । যে সমাজে সে বাস করে সেখানে রাসূলের সেই সংগ্রামী আন্দোলন না চালালে কুরআন বুঝা অর্থহীন বলে তার মনে হয় । তাফহীমুল কুরআন কোন নিষ্ক্রিয় মুফাসসিরের রচনা নয় । ইকামাতে দ্বীনের আন্দোলনের সংগ্রামী নেতার লেখা এ তাফসীর পাঠককেও সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার তাকিদ দেয় । এটাই এ তাফসীরের বাহাদুরী।
গ. সব তাফসীর এ রকম নয় কেন ?
কারো মনে এ প্রশ্ন জাগতে পারে যে তাফহীমুল কুরআনে আন্দোলনমুখী যে তাফসীর পাওয়া যায় তা অতীতের বিখ্যাত তাফসীরগুলোতে নেই কেন ? তারা কি কুনআন ঠিকমতো বুঝেননি? এ প্রশ্নের জওয়াব সুস্পষ্ট হওয়া দরকার ।
চৌদ্দশ বছর আগে আল্লাহর রাসূল (সা) কুরআনের ভিত্তিতে সমাজ ও রাষ্ট্র এমনভাবে গড়ে তুলেছিলেন যে প্রায় বারশ বছর বিশ্বে মুসলমানদেরই নেতৃত্ব ছিল। খোলাফায়ে রাশেদার ত্রিশ বছর ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা শতকরা একশ ভাগই চালু ছিল । এরপর খেলাফতের স্থলে রাজতন্ত্র চালু হলেও শিক্ষাব্যবস্থা ,আইনব্যবস্থা ,অর্থব্যবস্থা ইসলাম অনুযায়ী চলতে থাকে । ইসলামী শাসনব্যবস্থায় ক্রমে ক্রমে ত্রুটি দেখা দেবার ফলে বারশ বছর পর শাসনক্ষমতা অমুসলিমদের হাতে চলে যায় ।
যে বারশ বছর মুসলিম শাসন ছিল তখন যেসব তাফসীর লেখা হয়েছে , মুসলিম সমাজে কুরআনের শিক্ষা ব্যাপক করাই উদ্দেশ্য ছিল । ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম থাকার কারণে কুরআনকে আন্দোলনের কিতাব হিসাবে ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন তখন ছিল না ।
যখন ইংরেজ শাসন এ উপমহাদেশে ইসলামকে জীবনের সকল ক্ষেত্র থেকে উৎখাত করে কুরআনের বিপরীত শিক্ষা ,সভ্যতা ও সংস্কৃতি চালু করল তখন নতুন করে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের আন্দোলন জরুরী হয়ে পড়ল । শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলবী (রঃ) থেকেই এ চিন্তার সূচনা হয় । এ চিন্তাধারার ধারকগনই মুজাহিদ আন্দোলন গড়ে তোলেন এবং উত্তর পশ্চিম সীমান্তে একটি ইসলামী রাষ্ট্রও কায়েম করেন । ১৮৩১সালে বালাকোটের যুদ্ধে নেতৃবৃন্দ শহীদ হলেও ইসলামকে বিজয়ী করার চিন্তাধারা বিলুপ্ত হয়নি।
মাওলানা মওদূদী (রঃ) ঐ চিন্তাধারার স্বার্থক ধারক হওয়ার সাথে সাথে নিজেই ইসলামী আন্দোলনের নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন করার ফলে আন্দোলনের দৃষ্টিতে কুরআনকে বুঝাবার গুরুত্ব উপলব্ধি করেছেন । তাই তাঁর তাফসীর স্বাভাবিকভাবেই আন্দোলনমুখী হয়েছে।


সর্বশেষ আপডেট ( Monday, 09 November 2009 )