নামকরণ
সূরার একেবারে প্রথম আয়াতের ( ) বাক্যাংশ থেকে এর নাম গৃহীত হয়েছে । এটি এ সূরার শুধু নামই নয় বরং বিষয়বস্তু অনুসারে এর শিরোনামও । কেননা, আল্লাহ তা’আলা হুদাইবিয়ার সন্ধির আকারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও মুসলমানদেরকে যে মহান বিজয় দান করেছিলেন এসে সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে ।
নাযিল হওয়ার সময়-কাল
৬ষ্ঠ হিজরীর যুল-কা’দা মাসে মক্কার কাফেরদের সাথে সন্ধিচুক্তি সম্পাদনের পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদীনার দিকে ফিরে যাচ্ছিলেন সে সময় এ সূরাটি নাযিল হয় । এ ব্যাপারে সমস্ত রেওয়াত একমত ।
ঐতিহাসিক পটভূমি
যেসব ঘটনার প্রেক্ষিতে সূরাটি নাযিল হয়েছিল তার সূচনা হয়েছিল এভাবে যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন স্বপ্নে দেখলেন, তিনি তাঁর সাহাবীদের সাথে পবিত্র মক্কা নগরীতে গিয়ে উমরা আদায় করেছেন । নবী স্বপ্ন নিছক স্বপ্ন এবং কল্পনা হতে পারে না । বরং তা এক প্রকার অহী । পরবর্তী ২৭ আয়াতে আল্লাহ তা’আলা নিজেও একথা অনুমোদন করেছেন যে, তিনিই তাঁর রসূলকে এ স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন । তাই প্রকৃতপক্ষে এটি নিছক স্বপ্ন ছিল না, বরং মহান আল্লাহর ইংগিত ছিল যার অনুসরণ নবীর ( সা) জন্য জরুরী ছিল ।
বাহ্যিক কার্যকরণ অনুসারে এ নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করা কোনভাবেই সম্ভব বলে মনে হচ্ছিলো না। কাফের কুরাইশরা ৬ বছর যাবত মুসলমানদের জন্য বায়তুল্লাহর পথ বন্ধ করে রেখেছিল এবং এ পুরো সময়টাতে তারা হজ্জ ও উমরাহ আদায়ের জন্য পর্যন্ত কোন মুসলমানকে হারাম এলাকার ধারে কাছে ঘেঁষতে দেয়নি । তাই এখন করে আশা করা যায় যে, তারা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সাহাবীদের একটি দলসহ মক্কায় প্রবেশ করতে দেবে? উমরার জন্য ইহরাম বেঁধে যুদ্ধের সাজ সরঞ্জম সাথে নিয়ে বের হওয়ার অর্থ যুদ্ধ ডেকে আনা এবং নিরন্ত্র হয়ে যাওয়ার অর্থ নিজের ও সংগীদের জীবনকে বিপন্ন করা । এ পরিস্থিতিতে আল্লাহ তা’আলার ইংগিত অনুসারে কিভাবে কাজ করা যেতে পারে তা কেউই বুঝে উঠতে পারছিলো না ।
কিন্তু নবীর পদমর্যাদাই এই যে, তাঁর রব তাঁকে যে নির্দেশই দান করেন তা তিনি বিনা দ্বিধায় বাস্তবায়িত করেন । তাই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর স্বপ্নের কথা দ্বিধিহীন চিত্তে সাহাবীদের বললেন এবং সফরের প্রস্তুতি শুরু করে দিলেন । আশপাশের গোত্রসমূহের মধ্যেও ব্যাপকভাবে ঘোষণা করলেন, আমরা উমরা আদায়ের জন্য যাচ্ছি । যারা আমাদের সাথে যেতে ইচ্ছুক তারা যেন এসে দলে যোগ দেয় । বাহ্যিক কার্যকরণসমূহের ওপর যাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল তারা মনে করলো এরা মৃত্যুর মুখে ঝাঁপ দিতে যাচ্ছে । তাদের কেউই তার সাথে যেতে প্রস্তুত হলো না । কিন্তু যারা সত্যি সত্যিই আল্লাহ ও তার রসূলের প্রতি ঈমান পোষণ করতো পরিণাম সম্পর্কে তারা কোন পরোয়াই করেছিলো না । তাদের জন্য এটাই যথেষ্ট ছিল যে, এটা আল্লাহ তা’আলার ইংগিত এবং তাঁর রসূল এ নির্দেশ পালনের জন্য প্রস্তুত হয়েছেন । সুতরাং এখন কোন জিনিসই আর তাদেরকে আল্লাহর রসূলকে সহযোগিতা করা থেকে বিরত রাখতে সক্ষম ছিল না । নবীর ( সা) সাথে এ বিপজ্জনক সফরে যেতে ১৪শ সাহাবী প্রস্তুত হলেন ।
৬ষ্ঠ হিজরীর যুল-কা’দা মাসের প্রারম্ভে এ পবিত্র কাফেলা মদীনা থেকে যাত্রা করলো । যুল -হুলাইফাতে ১ পৌছে সবাই উমরার জন্য ইহরান বাঁধলেন । কুরবানীর জন্য ৭০ টি উট সাথে নিলেন । এ ছাড়া যুদ্ধের আর কোন উপকরণ সংগে নিলেন না । এভাবে তাঁদের এ কাফেলা লাব্বায়কা, লাব্বায়কা, ধ্বনি তুলে বায়তুল্লাহ অভিমুখে যাত্রা করলো ।
১ । এ স্থানটি মদীনা থেকে মক্কার পথে ৬ মাইল দূরত্বে অবস্থিত । এর বর্তমান নাম বি’রে আলী । মদীনার হাজীগণ এখান থেকেই হজ্জ ও উমরার ইহরাম বেঁধে থাকেন ।
সে সময় মক্কা ও মদীনার মধ্যে যে ধরনের সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল আরবের প্রতিটি শিশুও সে সম্পর্কে অবহিত ছিল । এই তো গত বছরই ৫ম হিজরীর শাওয়াল মাসের কুরাইশরা বিভিন্ন আরব গোত্রের সম্মিলিত শক্তি নিয়ে মদীনার ওপর চড়াও হয়েছিল যার কারণে বিখ্যাত আহযাব যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল । তাই রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন এত বড় একটা কাফেলা নিয়ে তাঁর রক্তের পিয়াসী শত্রুর নিজ এলাকার দিকে যাত্রা করলেন তখণ স্বাভাবিকভাবেই গোটা আরবের দৃষ্টি এ বিস্ময়কর সফরের প্রতি নিবদ্ধ হলো । সংগে সংগে তারা এও দেখলো যে, এ কাফেলা লড়াই করার জন্য যাত্রা করেনি । বরং পবিত্র মাসে ইহরাম বেঁধে কুরবানীর উট সাথে নিয়ে একবারে নিরস্ত্র অবস্থায় বায়তুল্লাহর তাওয়াফের জন্য যাচ্ছে ।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ পদক্ষেপ কুরাইশদেরকে মারাত্মক অসুবিধায় ফেলে দিল । যে পবিত্র মাসগুলোকে শত শত বছর ধরে আরবে হজ্জ ও বায়তুল্লাহর যিয়ারতের জন্য পবিত্র মনে করা হতো যুল-কা’দা মাসটি ছিল তার অন্যতম । যে কাফেলা এ পবিত্র মাসে ইহরাম বেঁধে হজ্জ অথবা উমরার জন্য যাত্রা করেছে তাকে বাধা দেয়ার অধিকার কারো ছিল না । এমনকি কোন গোত্রের সাথে যদি তার শত্রুতা থেকে থাকে তবুও আরবের সর্বজন স্বীকৃত আইন অনুসারে সে তাকে তার এলাকা দিয়ে অতিক্রম করতেও বাধা দিতে পারে না । কুরাইশরা দ্বিধান্বিত হয়ে পড়লো যে, যদি তারা মদীনায় এ কাফেলার ওপর হালমা করে মক্কা প্রবেশ করতে বাধা দেয় তাহলে গোটা দেশে হৈ চৈ শুরু হয়ে যাবে । আরবের প্রতিটি মানুষ বলতে শুরু করবে এটা বাড়াবাড়ী ছাড়া আর কিছুই নয় । আরবের সমস্ত গোত্র মনে করবে, আমরা খানায়ে কা’বার মালিক মুখতার হয়ে বসেছি । প্রতিটি গোত্রই এ ভেবে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়বে যে ভবিষ্যতে কাউকে হজ্জ ও উমরা করতে দেয়া না দেয়া আমাদের মর্জির ওপর নির্ভরশীল । আজ যেমন মদীনার যিয়ারতকারীদের বাধা দিচ্ছি তেমনি যাদের প্রতিই আমরা অসন্তুষ্ট হবো ভবিষ্যতে তাদেরকেই বায়তুল্লার যিয়ারত করতে বাধা দেব । এটা হবে এমন একটা ভুল যার কারণে সমগ্র আরব আমাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে উঠবে । অপরদিকে আমরা যদি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এত বড় কাফেলা নিয়ে নির্বিঘ্নে আমাদের শহরে প্রবেশ করতে দেই তাহলে গোটা দেশের সামনেই আমাদের প্রভাব প্রতিপত্তি বিনষ্ট হবে । লোকজন বলবে, আমরা মুহাম্মাদের ( সা) ভয়ে ভীত হয়ে পড়েছি । শেষ পর্যন্ত অনেক চিন্তা-ভাবনা ও বিচার -বিবেচনার পর তাদের জাহেলী আবেগ ও মানসিকতাই তাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করলো এবং তারা নিজেদের মুখ রক্ষার জন্য যে কোন মূল্যে এ কাফেলাকে শহরে প্রবেশ করতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলো ।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগেভাগেই বনী কা’ব গোত্রের এক ব্যক্তিকে গুপ্তচর হিসেবে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন যাতে সে যথাসময়ে তাঁকে কুরাইশদের সংকল্প ও গতিবিধি সম্পর্কে অবহিত করতে থাকে । তিনি উসফান ১ নামক স্থানে পৌছলে সে এসে জানালো যে, পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে কুরাইশরা যি-তুয়ায় ২ পৌছেছে এবং তাঁর পথরোধ করার জন্য তারা খালিদ ইবনে ওয়ালিদকে দুই শত অশ্বরোহী সহ কুরাউল গমীম ৩ অভিমুখে অগ্রগামী বাহিনী হিসেবে পাঠিয়ে দিয়েছে । দুই কুরাইশদের চক্রান্ত ছিল এই যে, কোন না কেন উপায়ে নবীর ( সা) সংগী-সাথীদের উত্যক্ত করে উত্তেজিত করা এবং তার পরে যুদ্ধ সংঘটিত হলে গোটা দেশে একথা প্রচার করে দেয়া যে, উমরা আদায়ের বাহানা করে এরা প্রকৃতপক্ষে যুদ্ধ করার জন্যই এসেছিলো এবং শুধু ধোঁকা দেয়ার জন্যই ইহরাম বেঁধেছিল ।
এ খবর পাওয়া মাত্র রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাস্তা পরিবর্তন করলেন এবং ভীষণ কষ্ট স্বীকার করে অত্যন্ত দুর্গম একটি পথ ধরে হারাম শরীফের একেবারে প্রান্ত সীমায় অবস্থিত হুদাইবিয়ায় ৪ গিয়ে পৌছলেন । এখানে খুয’আ গোত্রের নেতা বুদায়েল ইবনে ওয়ারকা তার গোত্রের কতিপয় লোককে সাথে নিয়ে নবীর ( সা) কাছে আসলো এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করলো । আপনি কি উদ্দেশ্যে এখানে এসেছেন? নবী ( সা) বললেনঃ “আমরা কারো বিরুদ্ধে লড়াই করতে আসিনি । আমাদের উদ্দেশ্য শুধু বায়তুল্লাহর যিয়ারত ও তাওয়াফ” । তারা গিয়ে কুরাইশ নেতাদের একথাটিই জানিয়ে দিল । তারা তাদেরকে এ পরামর্শও দিল যে, তারা যেন হারামের এসব যিয়ারতকারীদের পথরোধ না করে । কিন্তু তারা তাদের জিদ বজায় রাখলো এবং নবীকে ( সা) ফিরে যেতে রাজি করানোর জন্য আহাবিশদের নেতা হুলাইস ইবনে আলকামাকে তাঁর কাছে পাঠালো । কুরাইশ নেতাদের উদ্দেশ্য ছিল , মুহাম্মামদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কথা না মানলে সে অসন্তুষ্ট হয়ে ফিরে আসবে এবং এভাবে আহাবিশদের শক্তি তাদের পক্ষে থাকবে । কিন্তু সে এসে যখণ স্বচক্ষে দেখলো, গোটা কাফেলা ইহরাম বেঁধে আছে, গলায় কিলাদা লটকানো কুরবানীর উটগুলে সামনেই দাঁড়িয়ে আছে এবং এ মানুষগুলো লড়াই করার জন্য নয়, বরং বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করার জন্য এসেছে তখন সে নবীর ( সা) সাথে কোন কথাবার্তা না বলেই মক্কায় ফিরে গিয়ে কুরাইশ নেতাদের স্পষ্ট বলে দিল যে, তারা বায়তুল্লাহর মর্যাদার স্বীকৃতি দিয়ে তা যিয়ারত করতে এসেছে । তোমরা যদি তাদের বাধা দাও তাহলে আহাবিশরা কখনো তোমাদের সহযোগিতা করবে না । তোমরা নিষিদ্ধ বিষয়কে পদদলিত করবে আর আমরা সাহয্য-সহযোগিতা করবো এ জন্য আমরা তোমাদের সাথে মিত্রতাবন্ধনে আবদ্ধ হইনি ।
১ । এ স্থানটি মদীনা থেকে মক্কাগামী পথে মক্কা থেকে প্রায় দু’দিনের দূরত্বে অবস্থিত । অর্থাৎ উটের পিঠে এখান থেকে মক্কা পৌছতে দু’দিন লেগে যায় ।
২ । মক্কার বাইরে উসফানগামী পথের ওপর অবস্থিত একটি স্থান ।
৩ । উসফান থেকে মক্কা অভিমুখে আট মাইল দূরে অবস্থিত ।
৪ । জেদ্দা থেকে মক্কাগামী সড়কের যে স্থানে হারাম শরীফের সীমা শুরু হয়েছে এ স্থানটি ঠিক সেখানে অবস্থিত । বর্তমানে এ স্থানটির নাম শুমাইসি । মক্কা থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১৩ মাইল ।
অতপর কুরাইশদের পক্ষ থেকে মাসউদ সাকাফী আসলো এবং সেও নিজের পক্ষ থেকে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভাল-মন্দ সব দিক বুঝিয়ে তাঁকে মক্কায় প্রবেশ করার সংকল্প থেকে বিরত রাখতে চাইলো । নবী ( সা) বনী খুযআ গোত্রের নেতাকে যে জওয়াব দিয়েছিলেন তাকেও সে একই জওয়াব দিলেন । অর্থাৎ আমরা লড়াই করার উদ্দেশ্যে আসিনি, বায়তুল্লাহের মর্যাদা প্রদর্শনকারী হিসেবে একটি ধর্মীয় কর্তব্য পালন করার জন্য এসেছি । ফিরে গিয়ে উরওয়া কুরাইশদের বললোঃ আমি কায়সার, কিসরা এবং নাজ্জাসীর দরবারে গিয়েছি । কিন্তু আল্লাহর শপথ!আমি মুহাম্মাদের ( সা) সংগী-সাথীদেরকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি যেমন নিবেদিত প্রাণ দেখেছি তেমন দৃশ্য বড় বড় বাদশাহর দরবারেও দেখেনি । এদের অবস্থা এই যে, মুহাম্মাদ ( সা) অযু করলে তারা এক বিন্দু পানিও মাটিতে পড়তে দেয় না, সবাই তো নিজেদের শরীর ও কাপড় মেখে নেয় । এখন চিন্তা করে দেখ, তোমরা কার মোকাবিলা করতে যাচ্ছো?
দূতদের আসা যাওয়া ও আলাপ -আলোচনা চলাকালীন সময়ে গোপনে নবীর ( সা) সেনা শিবিরে আকস্মিক হামলা চালিয়ে সাহাবীদের উত্তেজিত করা এবং যুদ্ধের অজুহাত হিসেবে কাজে লাগানো যায় তাদের দ্বারা এমন কোন কাজ করানোর জন্য কুরাইশরা বারবার চেষ্টা চালাতে থাকে । কিন্তু সাহাবায়ে কিরামের ধৈর্য ও সংযম এবং নবীর ( সা) বিচক্ষণতা ও দূরদৃষ্টি তাদের সমস্ত অপেচেষ্টা ব্যর্থ করে দেয় । তাদের চল্লিশ পঞ্চাশজন লোকের একটি দল একদিন রাত্রিকালে এসে মুসলমানদের তাঁবুর ওপরে পাথর নিক্ষেপ ও তীর বর্ষণ করতে থাকে । সাহাবা কিরাম, তাদের সবাইকে বন্দী করে নবীর ( সা) সামনে হাজির করেন । কিন্তু তিনি তাদের সবাইকে ছেড়ে দেন । অপর এক ঘটনায় ঠিক ফজর নামাযের সময় তানঈমের ১দিক থেকে ৮০ ব্যক্তির একটি দল এসে আকস্মিকভাবে হামলা করে বসে । তাদেরকেও বন্দী করা হয় । নবী ( সা) তাদেরকেও মুক্ত করে দেন । এভাবে কুরাইশরা তাদের প্রতিটি ধূর্তামি ও অপকৌশলে ব্যর্থতার সম্মুখীন হতে থাকে ।
১ । মক্কার হারাম সীমার বাইরে অবস্থিত একটি স্থানের নাম , মক্কার লোকেরা সাধারণত এখানে এসে ওমরার জন্য ইহরাম বাঁধে এবং ফিরে গিয়ে ওমরাহ আদায় করে ।
অবশেষে নবী ( সা) নিজের পক্ষ থেকে হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুকে দূত হিসেবে মক্কায় পাঠান এবং তাঁর মাধ্যমে কুরাইশ নেতাদের জানিয়ে দেন যে, আমরা যুদ্ধের উদ্দেশ্যে নয়, বরং বায়তুল্লাহ যিয়ারতের উদ্দেশ্যে কুরবানীর পশু সংগে নিয়ে এসেছি । বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ও কুরবানী করে ফিরে যাব । কিন্তু তারা এতে স্বীকৃতি হলো না এবং হযরত উসমানকে ( সা) মক্কাতে আটক করলো। এ সময় এ খবর ছড়িয়ে পড়লো যে, হযরত উসমানকে ( সা) হত্যা করা হয়েছে তাঁর ফিরে না আসায় মুসলমানরাও নিশ্চিত হয়ে গেলেন যে, খবরটা সত্য । এখন অধিক সংযম প্রদর্শনের আর কোন অবকাশ ছিল না । মক্কা প্রবেশের ব্যাপারটি ছিল ভিন্ন জিনিস । সে জন্য শক্তি প্রয়োগের কোন চিন্তা আদৌ ছিল না । কিন্তু যখন দূতকে হত্যা করার ঘটনা পর্যন্ত ঘটলো তখণ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হওয়া ছাড়া মুসলমানদের আর কোন উপায় থাকলো না । সুতরাং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সমস্ত সাহাবীকে একত্রিত করলে এবং তাদের নিকট থেকে এ মর্মে বাইয়াত গ্রহণ করলেন যে, আমরা এখন এখান থেকে আমৃত্যু পিছু হটবো না । অবস্থার নাজুকতা বিচার করলে যে কেউ উপলব্ধি করবেন যে, এটা কোন মামুলি বাইয়াত ছিল না । মুসলমানদের সংখ্যা ছিল মাত্র ১৪শত । কোন যুদ্ধ সরঞ্জামও তাদের সাথে ছিল না । নিজেদের কেন্দ্র থেকে আড়াই শত মাইল দূরে একেবারে মক্কার সীমান্তে অবস্থান করেছিলেন তারা সেখানে শত্রু তার পুরো শক্তি নিয়ে আক্রমণ করতে পারতো এবং আশপাশের সহযোগী গোত্রগুলোকে ডেকে এনে তাদের ঘিরে ফেলতে পারতো । এসব সত্ত্বেও শুধু একজন ছাড়া গোটা কাফেলার সবাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাতে হাত রেখে জীবনের ঝূঁকি নিতে দ্বিধাহীন চিত্তে প্রস্তুত হয়ে গেল । তাদের নিষ্ঠাপূর্ণ ঈমান এবং আল্লাহর পথে নিবেদিত প্রাণ হওয়ার এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর কি হতে পারে? এটিই ইসলামের ইতিহাসে “বাইয়াতে রিদওয়ান” নামে খ্যাত।
পরে জানা গেল যে, হযরত উসমানকে হত্যা করার খবর মিথ্যা ছিল । হযরত উসমানকে নিজেও ফিরে আসলেন এবং কুরাইশদের পক্ষ থেকে সন্ধির আলোচনা করার জন্য সুহাইল ইবনে আমরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলও নব্যীর (সা) শিবিরে এসে পৌঁছল। নবী (সা) এবং তাঁর সংগী-সাথীদের আদৌ মক্কায় প্রবেশ করতে দিবে না - কুরাইশরা তাদের এ জিদ ও একগুয়েমী পরিত্যাগ করেছিলও । তবে নিজেদের মুখ রক্ষার জন্য তারা পীড়াপীড়ি করছিলো যে, নবী (সা) এ বছর ফিরে যাবেন এবং আগামী বছর আসতে পারবেন । দীর্ঘ আলাপ আলোচনার পর যেসব শর্তের ভিত্তিতে সন্ধি পত্র লেখা হলো তা হচ্ছেঃ
( ১) উভয় পক্ষের মধ্যে দশ বছর যুদ্ধ বন্ধ থাকবে এবং এক পক্ষ অপর পক্ষের বিরুদ্ধে গোপনে বা প্রকাশ্যে কোন প্রকার তাৎপরতা চালাবে না ।
( ২) এ সময়ে কুরাইশদের কেউ তার অভিভাবের অনুমতি ছাড়া যদি পালিয়ে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে চলে যায় তাহলে তিনি তাকে ফেরত দেবেন । কিন্তু তাঁর সংগী-সাথীদের কেউ কুরাইশদের কাছে চলে গেলে তারা তাকে ফেরত পাঠাবে না ।
( ৩) যে কোন আরব গোত্র যে কোন পক্ষের মিত্র হয়ে এই চুক্তির অন্তরভুক্ত হতে চাইলে তার সে অধিকার থাকবে ।
( ৪) মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ বছর ফিরে যাবেন এবং আগামী বছর উমরার জন্য এসে এ শর্ত তিনদিন মক্কায় অবস্থান করতে পারবেন যে, সাজ-সরঞ্জামের মধ্যে শুধু একখানা করে তরবারি ছাড়া আর কোন যুদ্ধ সরঞ্জাম সাথে আনতে পারবেন না । মক্কাবাসীরা উক্ত তিন দিন তাদের জন্য শহর খালি করে দেবে যাতে কোন প্রকার সংঘর্ষের পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয । কিন্তু ফিরে যাওয়ার সময় এখানকার কোন অধিবাসীকে সংগে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি তাঁর থাকবে না ।
যে সময় এ সন্ধির শর্তসমূহ নির্ধারিত হচ্ছিলো তখন মুসলমানদের পুরা বাহিনী অত্যন্ত বিচলিত বোধ করেছিলেন । যে মহত উদ্দেশ্য সামনে রেখে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসব শর্ত মেনে নিচ্ছিলেন তা কেউই বুঝে উঠতে পারছিলো না । এ সন্ধির ফলে যে বিরাট কল্যাণ অর্জিত হতে যাচ্ছিলো তা দেখতে পাওয়ার মত দূরদৃষ্টি করোই ছিল না । কুরাইশদের কাফেররা একে তাদের সফলতা মনে করেছিলো আর মুসলমানরা বিচলিত হচ্ছিলো এই ভেবে যে, তারা নীচ হয়ে এ অবমাননাকর শর্তাবলী গ্রহণ করবে কেন? এমন কি হযরত উমরের ( রা) মত গভীরদৃষ্টি সম্পন্ন জ্ঞানীজনের অবস্থা ছিল এই যে, তিনি বলেনঃ ইসলাম গ্রহণের পরে কখনো আমার মনে কোন সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি হয়নি । কিন্তু এ যাত্রায় আমিও তা থেকে রক্ষা পাইনি । তিনি বিচলিত হয়ে হযরত আবু বকরের ( রা) কাছে গিয়ে বললেনঃ “তিনি কি আল্লাহর রসূল নন? আমরা কি মুসলমান নই? এসব লোক কি মুশরিক নয়? এসব সত্ত্বেও আমরা আমাদের দীনের ব্যাপারে এ অবমাননা মেনে নেব কেন?” তিনি জবাব দিলেনঃ “হে উমর তিনি আল্লাহর রসূল আল্লাহ কখনো তাঁকে ধ্বংস করবেন না” । এরপরও তিনি ধৈর্যধারণ করতে পারলেন না । রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গিয়ে তাঁকেও এ প্রশ্নগুলো করলেন । হযরত আবু বকর ( রা) তাকে যে জবাব দিয়েছিলেন নবীও ( সা) তাঁকে সেরূপ জবাব দিলেন । এ সময় হযরত উমর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে যে কথাবার্তা বলেছিলেন তার জন্য তিনি পরবর্তী সময়ে দীর্ঘদিন পর্যন্ত লজ্জিত ও অনুতপ্ত ছিলেন । তাই তিনি অধিক পরিমাণে দান-খয়রাত এবং নফল নামায আদায় করতেন । যাতে আল্লাহ তা’আলা তাঁকে মাফ করে দেন ।
এ চুক্তির দু’টি শর্ত লোকজনের কাছে সবচেয়ে বেশী অসহনীয় ও দুর্বিসহ মনে হচ্ছিলো । এক, ২ নম্বর শর্ত । এটি সম্পর্কে লোকজনের বক্তব্য হলো এটি অসম শর্ত । মক্কা থেকে পালিয়ে আসা লোকদের যদি আমরা ফিরিয়ে দেই তাহলে মদীনা থেকে পালিয়ে আসা লোকদের তারা ফিরিয়ে দেবে না কেন? এর জবাবে নবী ( সা) বললেনঃ যে আমাদের এখান থেকে পালিয়ে তাদের কাছে চলে যাবে সে আমাদের কোন কাজে লাগবে? আল্লাহ যেন তাকে আমাদের থেকে দূরেই রাখেন । তবে যে তাদের ওখান থেকে পালিয়ে আমাদের কাছে চলে আসবে তাকে যদি আমরা ফিরিয়েও দেই তাহলে তার মুক্তিলাভের অন্য কোন উপায় হয়তো আল্লাহ সৃষ্টি করে দেবেন । দ্বিতীয় যে জিনিসটি লোকজনের মনে দ্বিধা-সংশয় সৃষ্টি হচ্ছিলো সেটি ছিল সন্ধির চতুর্থ শর্ত । মুসলমানগণ মনে করেছিলেন, এটি মেনে নেয়ার অর্থ হচ্ছে গোটা আরবের দৃষ্টিতে আমরা যেন ব্যর্থ হয়ে ফিরে যাচ্ছি । তাছাড়া এ প্রশ্নও মনে সন্দেহ সৃষ্টি করেছিল যে, নবী ( সা) তো স্বপ্নে দেখেছিলেন , আমরা মক্কায় বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করেছি । অথচ এখানে আমরা তাওয়াফ না করেই ফিরে যাওয়ার শর্ত মেনে নিচ্ছি । নবী ( সা) ব্যাখ্যা দিয়ে বললেনঃ চুক্তির শর্ত অনুসারে এ বছর যদি না-ও হয় তাহলে আগামী বছর ইনশায়াল্লাহ, তাওয়াফ হবে ।
যে ঘটনাটি জ্বলন্ত আগুনে ঘি ঢালার কাজ করলো তা হচ্ছে, যে সময় সন্ধি চুক্তিটি লিপিবদ্ধ করা হচ্ছিলো ঠিক তখন সুহাইল ইবনে আমরের পুত্র আবু জানদাল কোন প্রকারে পালিয়ে নবীর ( সা) শিবিরে গিয়ে হাজির হলেন । তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং মক্কার কাফেররা তাকে বন্দী করে রেখেছিলো । এ সময় তাঁর পায়ে শিকল পরানো ছিল এবং দেহে নির্যাতনের চিহ্ন ছিল । তিনি নবীর ( সা) কাছে আবেদন জানালেন , আমাকে এ অন্যায় বন্দীদশা থেকে মুক্ত করুন । এ করুণ অবস্থা দেখে সাহাবায়ে কিরামের পক্ষে ধৈর্যধারণ করা কঠিন হয়ে পড়লো । সুহাইল ইবনে আমর বললোঃ চুক্তিপত্র লেখা শেষ না হলেও চুক্তির শর্তাবলী সম্পর্কে আপনার ও আমাদের মধ্যে সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে । অতএব এ ছেলেকে আমার হাতে অর্পণ করুন । রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার যুক্তি মেনে নিলেন এবং আবু জানদালকে জালেমদের হাতে তুলে দিলেন ।
সন্ধি চুক্তি শেষ করে নবী ( সা) সাহাবীদের বললেনঃ এখানেই কুরবানী করে মাথা মুড়ে ফেলো এবং ইহরাম শেষ করো । কিন্তু কেউ-ই তাঁর জায়গা থেকে একটুও নড়লেন না । নবী ( সা) তিনবার আদেশ দিলেন কিন্তু দুঃখ, দুশ্চিন্তা ও মর্মবেদনা সাহাবীদের ওপর এমন প্রবল প্রভাব বিস্তার করেছিলো যে, তারা যার যার জায়গা হতে একটু নড়াচড়া পর্যন্ত করলেন না । নবী ( সা) সাহাবীদের আদেশ দিচ্ছেন কিন্তু তারা তা পালনের জন্য তৎপর হচ্ছেন না এমন ঘটনা একটি ক্ষেত্র ছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের গোটা নবুওয়াত জীবনে আর কখনো ঘটেনি । এতে নবী ( সা) অত্যন্ত দুঃখ পেলেন । তিনি তাঁর তাঁবুতে গিয়ে উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে সালামার কাছে নিজের মনের কষ্টের কথা প্রকাশ করলেন । হযরত উম্মে সালামা বললেন, আপনি চুপচাপ গিয়ে নিজের উট কুরবানী করুন এবং ক্ষৌরকার ডেকে মাথা মুড়ে ফেলুন । তাহলে সবাই স্বতস্ফূর্তভাবে আপনাকে অনুসরণ করবে এবং বুঝবে , যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা পরিবর্তিত হওয়ার নয় । হলোও তাই । নবীকে ( সা) এরূপ করতে দেখে সবাই কুরবানী করলো, মাথা মুড়ে কিংবা চুল ছেঁটে নিল এবং ইহরাম থেকে বেরিয়ে আসলো । কিন্তু দুঃখ ও মর্ম যাতনায় তাদের হৃদয় চৌচির হয়ে যাচ্ছিলো ।
এরপর এ কাফেলা যখন হুদাইবিয়ার সন্ধিকে নিজেদের পরাজয় ও অপমান মনে করে মদীনার দিকে ফিরে যাচ্ছিলো তখন দাজনান ১ নামক স্থানে ( অথবা কারো কারো মতে কুরাউল গামীম) এ সূরাটি নাযিল হয় যা মুসলমানদের জানিয়ে দেয় যে, এ সন্ধিচুক্তি যাকে তারা পরাজয় মনে করেছে তা প্রকৃতপক্ষে বিরাট বিজয় । এ সূরা নাযিল হওয়ার পর নবী ( সা) মুসলমানদের একত্রিত করে বললেনঃ আজ আমার ওপর এমন জিনিস নাযিল হয়েছে যা আমার জন্য দুনিয়া ও দুনিয়ার সবকিছুর চেয়েও বেশী মূল্যবান । তারপর তিনি এ সূরা তেলাওয়াত করলে এবং বিশেষভাবে হযরত উমরকে ডেকে তা শুনালেন । কেননা, তিনিই সবচেয়ে মনোকষ্ট পেয়েছিলেন ।
১ । মক্কা থেকে প্রায় ২৫ মাইল দূরবর্তী একটি স্থান ।
ঈমানদারগণ যদিও আল্লাহ তা’আলার এ বাণী শুনেই সন্তুষ্ট ও পরিতৃপ্ত হয়েছিলেন । তবুও খুব বেশী সময় যেতে না যেতেই এ চুক্তির সুফলসমূহ এক এক করে প্রকাশ পেতে থাকলো এবং এ চুক্তি যে সত্যিই একটা বিরাট বিজয় সে ব্যাপারে আর কারো মনে কোন সন্দেহ থাকলো না ।
একঃ এ চুক্তির মাধ্যমে আরবে প্রথমবারের মতে ইসলামী রাষ্ট্রের অস্তিত্ব মেনে নেয়া হলো । এর পূর্ব পর্যন্ত আরবদের দৃষ্টিতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর সংগী -সাথীদের মর্যাদা ছিল শুধু কুরাইশ ও আরব গোত্রসমূহের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারী একটি গোষ্ঠী হিসেবে তারা তাদের সমাজচ্যুত ( Out law) বলেই মনে করতো । এখন তাঁর সাথে চুক্তি সম্পদানের মাধ্যমে কুরাইশরা নিজেরাই ইসলামী রাষ্ট্রের অধিকারভুক্ত এলাকার ওপর তার ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব মেনে নিল এবং দুটি রাজনৈতিক শক্তির যারা সাথে ইচ্ছা মৈত্রী চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়ার পথ খুলে দিল ।
দুইঃ কুরাইশরা এ যাবত ইসলামকে ধর্মহীনতা বলে আখ্যায়িত করে আসছিলো । কিন্তু মুসলমানদের জন্য বায়তুল্লাহর যিয়ারতের অধিকার মেনে নিয়ে তারা আপনা থেকেই যেন একথাও মেনে নিল যে, ইসলাম কোন ধর্মহীনতা নয়, বরং আরবে স্বীকৃতি ধর্মসমূহের একটি এবং অন্যান্য আরবদের মত এ ধর্মের অনুসারীরাও হজ্জ ও উমরার অনুষ্ঠানসমূহ পালনের অধিকার রাখে । কুরাইশদের অপপ্রচারের ফলে আরবের মানুষের মনে ইসলামের বিরুদ্ধে যে ঘৃণার সৃষ্টি হয়েছিলো এতে সে ঘৃণাও অনেকটা হ্রাস পেল ।
তিনঃ দশ বছরের জন্য যুদ্ধ বিরতি চুক্তি হওয়ার ফলে মুসলমানগণ নিরাপত্তা ও শান্তিলাভ করলেন এবং গোটা আরবের আনাচে কানাচে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে এত দ্রুত ইসলামের প্রচার চালালেন যে, হুদাইবিয়ার সন্ধি পরবর্তী দু’বছর লোক মুসলমান হলো সন্ধি পূর্ববর্তী পুরো ১৯ বছরেও তা হয়নি । সন্ধির সময় যেখানে নবীর ( সা) সাথে মাত্র ১৪ শত লোক ছিলেন । সেখানে মাত্র দুই বছর পরেই কুরাইশদের চুক্তিভংগের ফলে নবী ( সা) যখন মক্কায় অভিযান চালান তখন দশ হাজার সৈনিকের এক বিশাল বাহিনী তাঁর সাথে ছিল । এটা ছিল হুদাইবিয়ার সন্ধির সুফল ।
চারঃ কুরাইশদের পক্ষে থেকে যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর অধিকারভুক্ত এলাকায় ইসলামী সরকারকে সুদৃঢ় করার এবং ইসলামী আইন-কানুন চালু করে মুসলিম সমাজকে একটি পূর্ণাঙ্গ সভ্যতা ও সংস্কৃতি হিসেবে দাঁড় করানোর সুযোগ লাভ করেন । এটিই সেই মহান নিয়ামত যে সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা সূর মায়েদার ৩ আয়াতে বলছেনঃ “আজ আমি তোমাদের দীনকে তোমাদের জন্য পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের জন্য আমার নিয়ামতকে পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের দীন হিসেবে ইসলামকে গ্রহণ করলাম । “ ( ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা মায়েদার ভূমিকা এবং টীকা ১৫) ।
পাঁচঃ কুরাইশদের সাথে সন্ধি হয়ে যাওয়ার পর দক্ষিণ দিক থেকে শান্তি লাভের এ সুফলও পাওয়া গেল যে, মুসলমানগণ উত্তর ও মধ্য আরবের সমস্ত বিরোধী শক্তিকে অতি সহজেই বশীভূত করে নেয় । হুদাইবিয়ার সন্ধির মাত্র তিন মাস পরেই ইহুদীদের সবচেয়ে বড় দুর্গ খায়বার বিজিত হয় এবং তারপর ফাদাক, ওয়াদিউল কুরা, তায়ামা ও তাবুকের মত ইহুদী জনপদেও একের পর এক মুসলমানদের কর্তৃত্বধীনে চলে আসে । তারপর মধ্য আরবের যেসন গোত্র ইহুদী ও কুরাইশদের সাথে গাঁটছড়া বেঁধেছিলো তার সবগুলোই এক এক করে মুসলমানদের শাসনাধীন হয়ে পড়ে । হুদাইবিয়ার সন্ধি এভাবে মাত্র দু’বছরের মধ্যে আরবে শক্তির ভারসাম্য এতটা পাল্টে দেয় যে, কুরাইশ এবং মুশরিকদের শক্তি অবদমিত হয়ে পড়ে এবং ইসলামের বিজয় নিশ্চিত হয়ে যায় ।
যে সন্ধিচুক্তিকে মুসলমানগণ তাদের ব্যর্থতা আর কুরাইশরা তাদের সফলতা মনে করেছিলো সে সন্ধিচুক্তি থেকেই তারা এসব সুফল ও কল্যাণ লাভ করে । এ সন্ধিচুক্তির যে বিষয়টি মুসলমানদের কাছে সবচেয়ে বেশী অপছন্দনীয় ছিল এবং কুরাইশরা তাদের বড় বিজয় বলে মনে করেছিলো তা হচ্ছে, মক্কা থেকে পালিয়ে মদীনায় আশ্রয় গ্রহণকারীদের ফিরিয়ে দেয়া হবে কিন্তু মদীন থেকে পালিয়ে মক্কায় গমনকারীদের ফিরিয়ে দেয়া হবে না । কিন্তু অল্প কিছুদিন যেতে না যেতেই এ ব্যাপারটিও কুরাইশদের স্বার্থের পরিপন্থী হয়ে দাঁড়ালো এবং অভিজ্ঞতার আলোকে জানা গেল যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুদূরপ্রসারী দৃষ্টি কি কি সুফল দেখে এ শর্তটি মেনে নিয়েছিল । সন্ধির কিছুদিন পরেই মক্কার একজন মুসলমান আবু বাসীর কুরাইশদের বন্দীত্ব থেকে পালিয়ে মদীনায় চলে আসেন । কুরাইশরা তাকে ফেরত দেয়ার দাবী জানালো এবং নবীও ( সা) চুক্তি অনুযায়ী মক্কা থেকে যারা তাকে বন্দী করে নিয়ে যেতে এসেছিলো তাদের কাছে হস্তান্তর করলেন । কিন্তু মক্কা যাওয়ার পথে সে আবার তাদের বন্দীত্ব থেকে নিজেকে মুক্ত করে এবং লোহিত সাগরের যে পথ ধরে কুরাইশদের বাণিজ্য বহর যাতায়াত করতো সে পথের একটি স্থানে গিয়ে আশ্রয় নেয় । এরপর থেকে যে মুসলমানই কুরাইশদের বন্দিত্ব থেকে নিজেকে মুক্ত করার সুযোগ করতে পারতো সে-ই মদীনায় যাওয়ার পরিবর্তে আবু বাসীরের আশ্রয়ে চলে যেত । এভাবে সেখানে ৭০ জনের সমাবেশ ঘটে এবং তারা কুরাইশদের কাফেলার ওপর বারবার অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে তাদের অবস্থা শোচনীয় করে তোলে । অবশেষে তাদেরকে মদীনায় নিয়ে যাওয়ার জন্য কুরাইশরা নিজেরাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আহবান জানায় । এভাবে হুদায়বিয়ার চুক্তির ঐ শর্তটি আপনা থেকেই রহিত হয়ে যায় ।
এ ঐতিহাসিক পটভূমি সামনে রেখে সূরাটি অধ্যায়ন করলে তা ভালভাবে বোধগম্য হতে পারে ।
﴿لِّيَغْفِرَ لَكَ اللَّهُ مَا تَقَدَّمَ مِن ذَنبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ وَيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكَ وَيَهْدِيَكَ صِرَاطًا مُّسْتَقِيمًا﴾
২) যাতে আল্লাহ তোমার আগের ও পরের সব ক্রটি-বিচ্যুতি মাফ করে দেন, ﴿هُوَ الَّذِي أَنزَلَ السَّكِينَةَ فِي قُلُوبِ الْمُؤْمِنِينَ لِيَزْدَادُوا إِيمَانًا مَّعَ إِيمَانِهِمْ ۗ وَلِلَّهِ جُنُودُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا﴾
৪) তিনিই তো সে সত্তা যিনি মু’মিনদের মনে প্রশান্তি নাযিল করেছেন ﴿لِّيُدْخِلَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَيُكَفِّرَ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ ۚ وَكَانَ ذَٰلِكَ عِندَ اللَّهِ فَوْزًا عَظِيمًا﴾
৫) (এ কাজ তিনি এ জন্য করেছেন) যাতে ঈমানদার নারী ও পুরুষদেরকে ﴿وَيُعَذِّبَ الْمُنَافِقِينَ وَالْمُنَافِقَاتِ وَالْمُشْرِكِينَ وَالْمُشْرِكَاتِ الظَّانِّينَ بِاللَّهِ ظَنَّ السَّوْءِ ۚ عَلَيْهِمْ دَائِرَةُ السَّوْءِ ۖ وَغَضِبَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ وَلَعَنَهُمْ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَهَنَّمَ ۖ وَسَاءَتْ مَصِيرًا﴾
৬) আর যেসব মুনাফিক নারী ও পুরুষ এবং মুশরিক নারী ও পুরুষ আল্লাহ সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করে ﴿وَلِلَّهِ جُنُودُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ وَكَانَ اللَّهُ عَزِيزًا حَكِيمًا﴾
৭) আসমান ও যমীনের সকল বাহিনী আল্লাহর কর্তৃত্বাধীন৷ তিনি মহাজ্ঞানী ও কৌশলী৷﴿لِّتُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُعَزِّرُوهُ وَتُوَقِّرُوهُ وَتُسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلًا﴾
৯) যাতে হে মানুষ, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান আন, তাঁকে সাহায্য কর, তাঁর প্রতি সম্মান ও মর্যাদা দেখাও এবং সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা কর৷﴿إِنَّ الَّذِينَ يُبَايِعُونَكَ إِنَّمَا يُبَايِعُونَ اللَّهَ يَدُ اللَّهِ فَوْقَ أَيْدِيهِمْ ۚ فَمَن نَّكَثَ فَإِنَّمَا يَنكُثُ عَلَىٰ نَفْسِهِ ۖ وَمَنْ أَوْفَىٰ بِمَا عَاهَدَ عَلَيْهُ اللَّهَ فَسَيُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا﴾
১০) হে নবী যারা তোমার হাতে বাইয়াত করছিলো প্রকৃতপক্ষে তারা আল্লাহর কাছেই বাইয়াত করছিলো৷ ﴿سَيَقُولُ لَكَ الْمُخَلَّفُونَ مِنَ الْأَعْرَابِ شَغَلَتْنَا أَمْوَالُنَا وَأَهْلُونَا فَاسْتَغْفِرْ لَنَا ۚ يَقُولُونَ بِأَلْسِنَتِهِم مَّا لَيْسَ فِي قُلُوبِهِمْ ۚ قُلْ فَمَن يَمْلِكُ لَكُم مِّنَ اللَّهِ شَيْئًا إِنْ أَرَادَ بِكُمْ ضَرًّا أَوْ أَرَادَ بِكُمْ نَفْعًا ۚ بَلْ كَانَ اللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرًا﴾
১১) হে নবী (সা)! বদ্দু আরবদের ﴿بَلْ ظَنَنتُمْ أَن لَّن يَنقَلِبَ الرَّسُولُ وَالْمُؤْمِنُونَ إِلَىٰ أَهْلِيهِمْ أَبَدًا وَزُيِّنَ ذَٰلِكَ فِي قُلُوبِكُمْ وَظَنَنتُمْ ظَنَّ السَّوْءِ وَكُنتُمْ قَوْمًا بُورًا﴾
১২) (কিন্তু আসল কথা তো তা নয় যা তোমরা বলছো); বরং তোমরা মনে করি নিয়েছে যে, রসূল ও মু’মিনগণ নিজেদের ঘরে কখনই ফিরতে পারবে না৷ এ খেয়ালটা তোমাদের অন্তরে খুব ভাল লেগেছিল ﴿وَمَن لَّمْ يُؤْمِن بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ فَإِنَّا أَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ سَعِيرًا﴾
১৩) আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি যারা ঈমান আনেনি এমন কাফেরদের জন্য আমরা দাউ দাউ করে জ্বলা অগ্নি কুণ্ডলি তৈরী করে রেখেছি৷﴿وَلِلَّهِ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ يَغْفِرُ لِمَن يَشَاءُ وَيُعَذِّبُ مَن يَشَاءُ ۚ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَّحِيمًا﴾
১৪) আকাশ মণ্ডলী ও পৃথিবীর বাদশাহীর (প্রভূত্ব ও প্রশাসন ক্ষমতা) একচ্ছত্র মালিক একমাত্র আল্লাহ৷ তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে দেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন৷ আল্লাহ-ই ক্ষমাশীল ও করুণাময়৷ ﴿سَيَقُولُ الْمُخَلَّفُونَ إِذَا انطَلَقْتُمْ إِلَىٰ مَغَانِمَ لِتَأْخُذُوهَا ذَرُونَا نَتَّبِعْكُمْ ۖ يُرِيدُونَ أَن يُبَدِّلُوا كَلَامَ اللَّهِ ۚ قُل لَّن تَتَّبِعُونَا كَذَٰلِكُمْ قَالَ اللَّهُ مِن قَبْلُ ۖ فَسَيَقُولُونَ بَلْ تَحْسُدُونَنَا ۚ بَلْ كَانُوا لَا يَفْقَهُونَ إِلَّا قَلِيلًا﴾
১৫) তোমরা যখন গনীমাতের মাল লাভ করার জন্য যেতে থাকবে তখন এ পিছনে রেখে যাওয়া লোকেরা তোমাকে অবশ্যই বলবে যে, আমাদরকেও তোমাদের সাথে যেতে দাও৷ ﴿قُل لِّلْمُخَلَّفِينَ مِنَ الْأَعْرَابِ سَتُدْعَوْنَ إِلَىٰ قَوْمٍ أُولِي بَأْسٍ شَدِيدٍ تُقَاتِلُونَهُمْ أَوْ يُسْلِمُونَ ۖ فَإِن تُطِيعُوا يُؤْتِكُمُ اللَّهُ أَجْرًا حَسَنًا ۖ وَإِن تَتَوَلَّوْا كَمَا تَوَلَّيْتُم مِّن قَبْلُ يُعَذِّبْكُمْ عَذَابًا أَلِيمًا﴾
১৬) এ পিছনে রেখে যাওয়া বদ্দু আরবদেরকে বলে দাওঃ “খুব শীঘ্রই তোমাদেরকে এমন সব লোকের সাথে লড়াই করার জন্য ডাকা হবে যারা বড়ই শক্তি সম্পন্ন৷” তোমাদেরকে তাদের সাথে যুদ্ধ করতে হবে, কিংবা তারা অনুগত হয়ে যাবে৷ ﴿لَّيْسَ عَلَى الْأَعْمَىٰ حَرَجٌ وَلَا عَلَى الْأَعْرَجِ حَرَجٌ وَلَا عَلَى الْمَرِيضِ حَرَجٌ ۗ وَمَن يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ۖ وَمَن يَتَوَلَّ يُعَذِّبْهُ عَذَابًا أَلِيمًا﴾
১৭) যদি অন্ধ, পংগু ও রোগাক্রান্ত লোক জিহাদে না আসে তাহলে কোন দোষ নেই ৷﴿لَّقَدْ رَضِيَ اللَّهُ عَنِ الْمُؤْمِنِينَ إِذْ يُبَايِعُونَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِي قُلُوبِهِمْ فَأَنزَلَ السَّكِينَةَ عَلَيْهِمْ وَأَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِيبًا﴾
১৮) আল্লাহ মু’মিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন যখন তারা গাছের নিচে তোমরা কাছে বাইয়াত করছিলো৷ ﴿وَعَدَكُمُ اللَّهُ مَغَانِمَ كَثِيرَةً تَأْخُذُونَهَا فَعَجَّلَ لَكُمْ هَٰذِهِ وَكَفَّ أَيْدِيَ النَّاسِ عَنكُمْ وَلِتَكُونَ آيَةً لِّلْمُؤْمِنِينَ وَيَهْدِيَكُمْ صِرَاطًا مُّسْتَقِيمًا﴾
২০) আল্লাহর তোমাদরকে অঢেল গনীমতের সম্পদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যা তোমরা লাভ করবে৷ ﴿وَأُخْرَىٰ لَمْ تَقْدِرُوا عَلَيْهَا قَدْ أَحَاطَ اللَّهُ بِهَا ۚ وَكَانَ اللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرًا﴾
২১) এ ছাড়া তিনি তোমাদেরকে আরো গনীমতের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যা তোমরা এখনো পর্যন্ত লাভ করতে পারনি৷ কিন্তু আল্লাহ তা পরিবেষ্টন করে রেখেছেন৷ ﴿وَلَوْ قَاتَلَكُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَوَلَّوُا الْأَدْبَارَ ثُمَّ لَا يَجِدُونَ وَلِيًّا وَلَا نَصِيرًا﴾
২২) এ মুহূর্তেই এসব কাফের যদি তোমাদের সাথে লড়াই বাধিয়ে বসতো তাহলে অবশ্যই পৃষ্ঠপ্রদর্শন করতো এবং কোন সহযোগী ও সাহায্যকারী পেতো না৷ ﴿سُنَّةَ اللَّهِ الَّتِي قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلُ ۖ وَلَن تَجِدَ لِسُنَّةِ اللَّهِ تَبْدِيلًا﴾
২৩) এটা আল্লাহর বিধান যা পূর্ব থেকেই চলে আসছে৷ ﴿وَهُوَ الَّذِي كَفَّ أَيْدِيَهُمْ عَنكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ عَنْهُم بِبَطْنِ مَكَّةَ مِن بَعْدِ أَنْ أَظْفَرَكُمْ عَلَيْهِمْ ۚ وَكَانَ اللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرًا﴾
২৪) তিনিই সেই সত্তা যিনি মক্কা ভূমিতে তাদের হাত তোমাদের থেকে আর তোমাদের হাত তাদের থেকে ফিরিয়ে দিয়েছেন তাদের ওপর তোমাদেরকে আধিপত্য দান করার পর৷ তোমরা যা কিছু করছিলে আল্লাহ তা দেখছিলেন৷ ﴿هُمُ الَّذِينَ كَفَرُوا وَصَدُّوكُمْ عَنِ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَالْهَدْيَ مَعْكُوفًا أَن يَبْلُغَ مَحِلَّهُ ۚ وَلَوْلَا رِجَالٌ مُّؤْمِنُونَ وَنِسَاءٌ مُّؤْمِنَاتٌ لَّمْ تَعْلَمُوهُمْ أَن تَطَئُوهُمْ فَتُصِيبَكُم مِّنْهُم مَّعَرَّةٌ بِغَيْرِ عِلْمٍ ۖ لِّيُدْخِلَ اللَّهُ فِي رَحْمَتِهِ مَن يَشَاءُ ۚ لَوْ تَزَيَّلُوا لَعَذَّبْنَا الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا﴾
২৫) এরাই তো সেসব লোক যারা কুফরী করেছে, তোমাদেরকে মসজিদে হারামে যেতে বাধা দিয়েছে এবং কুরবানীর উটসমূহকে কুরবানী গাহে পৌঁঠতে দেয়নি৷ ﴿إِذْ جَعَلَ الَّذِينَ كَفَرُوا فِي قُلُوبِهِمُ الْحَمِيَّةَ حَمِيَّةَ الْجَاهِلِيَّةِ فَأَنزَلَ اللَّهُ سَكِينَتَهُ عَلَىٰ رَسُولِهِ وَعَلَى الْمُؤْمِنِينَ وَأَلْزَمَهُمْ كَلِمَةَ التَّقْوَىٰ وَكَانُوا أَحَقَّ بِهَا وَأَهْلَهَا ۚ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا﴾
২৬) এ কারণেই যখন ঐ সব কাফেররা তাদের মনে জাহেলী সংকীর্ণতার স্থান দিল ﴿لَّقَدْ صَدَقَ اللَّهُ رَسُولَهُ الرُّؤْيَا بِالْحَقِّ ۖ لَتَدْخُلُنَّ الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ إِن شَاءَ اللَّهُ آمِنِينَ مُحَلِّقِينَ رُءُوسَكُمْ وَمُقَصِّرِينَ لَا تَخَافُونَ ۖ فَعَلِمَ مَا لَمْ تَعْلَمُوا فَجَعَلَ مِن دُونِ ذَٰلِكَ فَتْحًا قَرِيبًا﴾
২৭) প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তাঁর রসূলকে সত্য স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন- যা ছিল সরাসরি হক৷ ﴿هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَىٰ وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ ۚ وَكَفَىٰ بِاللَّهِ شَهِيدًا﴾
২৮) আল্লাহই তো সে মহান সত্তা যিনি তাঁর রসূলকে হিদায়াত ও সত্য দীন দিয়ে পাঠিয়েছেন যেন তাকে সমস্ত দীনের ওপর বিজয়ী করে দেন৷ আর এ বাস্তবতা সম্পর্কে আল্লাহর সাক্ষই যথেষ্ট৷﴿مُّحَمَّدٌ رَّسُولُ اللَّهِ ۚ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ ۖ تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِّنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا ۖ سِيمَاهُمْ فِي وُجُوهِهِم مِّنْ أَثَرِ السُّجُودِ ۚ ذَٰلِكَ مَثَلُهُمْ فِي التَّوْرَاةِ ۚ وَمَثَلُهُمْ فِي الْإِنجِيلِ كَزَرْعٍ أَخْرَجَ شَطْأَهُ فَآزَرَهُ فَاسْتَغْلَظَ فَاسْتَوَىٰ عَلَىٰ سُوقِهِ يُعْجِبُ الزُّرَّاعَ لِيَغِيظَ بِهِمُ الْكُفَّارَ ۗ وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ مِنْهُم مَّغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا﴾
২৯) মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল৷ আর যারা তাঁর সাথে আছে তারা কাফেরদের বিরুদ্ধে আপোষহীন