আমাদের টাইপ করা বইগুলোতে বানান ভুল রয়ে গিয়েছে প্রচুর। আমরা ভুলগুলো ঠিক
করার চেষ্টা করছি ক্রমাগত। ভুল শুধরানো এবং টাইপ সেটিং জড়িত কাজে সহায়তা
করতে যোগাযোগ করুন আমাদের সাথে।
<< সূরা তালিকাআল আলা
ভূমিকা (নামকরণ, শানে নুযূল, পটভূমি ও বিষয়বস্তুর জন্য ক্লিক করুন)
নামকরণ :
প্রথম আয়াতে উপস্থাপিত আ’লা শব্দটিকে এর নাম গণ্য করা হয়েছে ।
নাযিলের সময় - কাল :
এর আলোচ্য বিষয় থেকে জানা যায় , এটি একেবারে প্রথম দিকে অবতীর্ণ সূরাগুলোর অন্যতম। ষষ্ঠ আয়াতে “ আমি তোমাকে পড়িয়ে দেবো , তারপর তুমি আর ভূলবে না ” এ বাক্যটিও একথা জানিয়ে দিচ্ছে যে , এটি এমন সময়ে অবতীর্ণ হয়েছিল , যখন রসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভালোভাবে অহী আয়ত্ব করার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেননি। এবং অহী নাযিলের সময় তার কোন শব্দ ভুলে যাবেন বলে তিনি আশংকা করতেন। এই আয়াতের সাথে যদি সূরা ত্বা- হা’র ১১৪ আয়াত ও সুরা কিয়ামাহ’হ ১৬ - ১৯ আয়তগুলোকে মিলিয়ে পড়া হয় এবং তিনটি সূরার সংশ্লিষ্ট আয়াতগুলোর বর্ণনাভংগী ও পরিবেশ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা হয় , তাহলে এখানে উল্লেখিত ঘটনাবলীকে নিম্নোক্তভাবে সাজানো যায় : সর্বপ্রথম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিশ্চয়তা দান করা হয়েছে যে , তুমি চিন্তা করো না , আমি এ বাণী তোমাকে পড়িয়ে দেবো এবং তুমি আর ভুলে যাবে না। তারপর বেশ কিছুকাল পরে যখন সূরা কিয়ামহ নাযিল হতে থাকে তখন তিনি অবচেতনভাবে অহীর শব্দগুলো পুনরাবৃত্তি করতে থাকেন। তখন বলা হয় “ হে নবী ! এই অহী দ্রুত মুখস্ত করার জন্য নিজের জিহ্বা সঞ্চালন করো না। এগুলো মুখস্থ করানো ও পড়িয়ে দেবার দায়িত্ব আমার । কাজেই যখন আমরা এগুলো পড়ি তখন তুমি এর পড়া মনোযোগ সহকারে শুনতে থাকো , তারপর এর মানে বুঝিয়ে দেয়ার দায়িত্বও আমার । ”
শেষবার সূরা ত্বা- হা নাযিলের সময় মানবিক দুর্বলতার কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবার এই পরপর নাযিল হওয়া ১১৩টি আয়াতের কোন অংশ স্মৃতি থেকে উধাও হয়ে যাবার আশংকা করেন , ফলে তিনি সেগুলো স্মরণ রাখার চেষ্টা করতে থাকেন। এর ফলে তাঁকে বলা হয় : “ আর কুরআন পড়ার ব্যাপারে তাড়াহুড়া করো না , যতক্ষণ পর্যন্ত তোমার কাছে এর অহী সম্পূর্ণরূপে পৌঁছে না যায়।” এরপর আর কখনো এমনটি ঘটেনি। নবী ( সা) আর কখনো এ ধরনের আশংকা করেননি। কারণ এ তিনটি জায়গা ছাড়া কুরআনের আর কোথাও এ ব্যাপারে কোন ইংগিত নেই ।
বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য :
এই ছোট্ট সূরাটিতে তিনটি বিষয়বস্তুর অবতারণা করা হয়েছে । এক , তাওহীদ। দুই, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উপদেশ দান । তিন , আখেরাত ।
তাওহীদের শিক্ষাকে প্রথম আয়াতের একটি বাক্যের মধ্যেই সীমিত করে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে : আল্লাহর নামে তাসবীহ পাঠ করো। অর্থাৎ তাঁকে এমন কোন নামে স্মরণ করা যাবে না যার মধ্যে কোন প্রকার ত্রুটি , অভাব , দোষ , দুর্বলতা বা সৃষ্টির সাথে কোন দিক দিয়ে কোন প্রকার মিল রয়ে গেছে। কারণ দুনিয়ায় যতগুলো ভ্রান্ত আকীদার জন্ম হয়েছে তার সবগুলোর মূলে রয়েছে আল্লাহ সম্পর্কিত কোন না কোন ভুল ধারণা । আল্লাহর পবিত্র সত্তার জন্য কোন ভুল ও বিভ্রান্তিকর নাম অবলম্বন করার মাধ্যমে এ ভুল ধারণাগুলো বিকশিত হয়েছে। কাজেই আকীদা সংশোধনের জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন হচ্ছে , মহান আল্লাহকে কেবলমাত্র তাঁর উপযোগী পূর্ণ গুণান্বিত ও সর্বাঙ্গ সুন্দর নামে স্মরণ করতে হবে।
এরপর তিনটি আয়াতে বলা হয়েছে , তোমাদের এমন এক রবের তাসবীহ পাঠ করার হুকুম দেয়া হয়েছে যিনি বিশ্ব জাহানের প্রতিটি জিনিস সৃষ্টি করেছেন। তার মধ্যে সমতা কায়েম করেছেন। তার ভাগ্য তথা তার ক্ষমতাগুলোর সীমারেখা নির্ধারণ করেছেন এবং যে কাজের জন্য তাকে সৃষ্টি করা হযেছে তা সম্পন্ন করার পথ তাকে বাতলে দিয়েছেন। তোমরা নিজের চোখে তাঁর ক্ষমতার বিস্ময়কর ও বিচিত্র প্রকাশ দেখে চলছো। তিনি মাটির বুকে উদ্ভিদ ও গাছপালা উৎপন্ন করেন আবার সেগুলোকে প্রাণহীন আবর্জনায় পরিণত করেন । তিনি ছাড়া আর কেউ বসন্তের সজীবতা আনার ক্ষমতা রাখেন না আবার পাতাঝরা শীতের আগমন রোধ করার ক্ষমতা ও কারো নেই।
তারপর দু’টি আয়াতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উপদেশ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে : এই যে কুরআন তোমার প্রতি নাযিল হচ্ছে এর প্রতিটি শব্দ কিভাবে তোমার মুখস্ত থাকবে , এ ব্যাপারে তুমি কোন চিন্তা করো না। একে তোমার স্মৃতিপটে সংরক্ষিত করে দেয়া আমার কাজ। একে তোমার স্মৃতিপটে সংরক্ষিত রাখার পেছনে তোমার নিজম্ব কোন কৃতিত্ব নেই। বরং এটা আমার মেহেরবানীর ফল। নয়তো আমি চাইলে তোমার স্মৃতি থেকে একে মুছে ফেলতে পারি।
এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলা হয়েছে : প্রত্যেক ব্যক্তিকে সঠিক পথে পরিচালিত করার দায়িত্ব তোমাকে দেয়া হয়নি। বরং তোমার কাজ হচ্ছে শুধুমাত্র সত্যের প্রচার। আর এই প্রচারে সরল পদ্ধতি হচ্ছে , যে ব্যক্তি উপদেশ শুনতে ও তা মেনে নিতে প্রস্তুত থাকে তাকে উপদেশ দাও। আর যে ব্যক্তি তাতে প্রস্তুত নয় তার পেছনে লেগে থাকার প্রয়োজন নেই। যার মনে ভুল পথে চলার অশুভ পরিণামের ভয় থাকবে সে সত্য কথা শুনে তা মেনে নেবে এবং যে দুর্ভাগা তা শুনতে ও মেনে নিতে চাইবে না সে নিজের চোখেই নিজের অশুভ পরিণাম দেখে নেবে।
সবশেষে বক্তব্যের সমাপ্তি টেনে বলা হয়েছে : সাফল্য কেবল তাদের জন্য যারা আকীদা - বিশ্বাস , কর্ম ও চরিত্রে পবিত্রতা ও নিস্কলুষতা অবলম্বন করবে এবং নিজেদের রবের নাম স্মরণ করে নামায পড়বে। কিন্তু লোকেরা শুধুমাত্র এ দুনিয়ার আরাম আয়েশ এবং এর স্বার্থ ও আশা আনন্দের চিন্তায় বিভোর হয়ে আছে। অথচ তাদের আসলে আখেরাতের চিন্তা করা উচিত। কারণ এ দুনিয়া তো ক্ষণস্থায়ী । অন্যদিকে আখেরাত চিরস্থায়ী। আর দুনিয়ার নিয়ামতের তুলনায় আখেরাতের নিয়ামত অনেক বেশী ও অনেক উন্নত পর্যায়ের । এ সত্যটি কেবল কুরআনেই মানুষকে এই একই সত্যের সন্ধান দেয়া হয়েছিল।
﴿بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى﴾ ১) ( হে নবী ) তোমার সুমহান রবের নামরে তাসবীহ পাঠ করো৷১ 
﴿الَّذِي خَلَقَ فَسَوَّىٰ﴾ ২) যিনি সৃষ্টি করেছেন এবং সমতা কায়েম করেছেন৷ ২ 
﴿وَالَّذِي قَدَّرَ فَهَدَىٰ﴾ ৩) যিনি তাকদীর গড়েছেন৩ তারপর পথ দেখিয়েছেন৷৪ 
﴿وَالَّذِي أَخْرَجَ الْمَرْعَىٰ﴾ ৪) যিনি উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছেন৷৫ 
﴿فَجَعَلَهُ غُثَاءً أَحْوَىٰ﴾ ৫) তারপর তাদেরকে কালো আবর্জনায় পরিণত করেছেন৷৬ 
﴿سَنُقْرِئُكَ فَلَا تَنسَىٰ﴾ ৬) আমি তোমাকে পড়িয়ে দেবো , তারপর তুমি আর ভুলবে না৷৭ 
﴿إِلَّا مَا شَاءَ اللَّهُ ۚ إِنَّهُ يَعْلَمُ الْجَهْرَ وَمَا يَخْفَىٰ﴾ ৭) তবে আল্লাহ যা চান তা ছাড়া ৷৮ তিনি জানেন প্রকাশ্য এবং যা কিছু গোপন আছে তাও৷৯ 
﴿وَنُيَسِّرُكَ لِلْيُسْرَىٰ﴾ ৮) আর আমি তোমাকে সহজ পথের সুযোগ সুবিধা দিচ্ছি৷  
﴿فَذَكِّرْ إِن نَّفَعَتِ الذِّكْرَىٰ﴾ ৯) কাজেই তুমি উপদেশ দাও , যদি উপদেশ উপকারী হয়১০ 
﴿سَيَذَّكَّرُ مَن يَخْشَىٰ﴾ ১০) যে ভয় করে সে উপদেশ গ্রহণ করে নেবে৷১১ 
﴿وَيَتَجَنَّبُهَا الْأَشْقَى﴾ ১১) আর তার প্রতি অবহেলা করবে নিতান্ত দুর্ভাগাই , 
﴿الَّذِي يَصْلَى النَّارَ الْكُبْرَىٰ﴾ ১২) যে বৃহৎ আগুনে প্রবেশ করবে , 
﴿ثُمَّ لَا يَمُوتُ فِيهَا وَلَا يَحْيَىٰ﴾ ১৩) তারপর সেখানে মরবেও না, বাঁচবেও না ৷১২ 
﴿قَدْ أَفْلَحَ مَن تَزَكَّىٰ﴾ ১৪) সে সফলকাম হয়েছে , যে পবিত্রতা অবলম্বন করেছে ১৩ 
﴿وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهِ فَصَلَّىٰ﴾ ১৫) এবং নিজের রবের নাম স্মরণ করেছে ১৪ তারপর নামায পড়েছে ৷ ১৫ 
﴿بَلْ تُؤْثِرُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا﴾ ১৬) কিন্তু তোমরা দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দিয়ে থাকো৷১৬ 
﴿وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ وَأَبْقَىٰ﴾ ১৭) অথচ আখেরাত উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী৷১৭ 
﴿إِنَّ هَٰذَا لَفِي الصُّحُفِ الْأُولَىٰ﴾ ১৮) পূর্বে অবতীর্ণ সহীফাগুলোয় একথাই বলা হয়েছিল , 
﴿صُحُفِ إِبْرَاهِيمَ وَمُوسَىٰ﴾ ১৯) ইবরাহীম ও মূসার সহীফায়৷১৮ 
|