রিয়াদুস্ সালেহীন - প্রথম খণ্ড |
লিখেছেন ইমাম মুহিউদ্দীন ইয়াহ্ইয়া আন-নববী | |
Thursday, 21 January 2010 | |
بسم الله الرحمن الرحيم
সমস্ত- প্রকাশ্য ও গোপন কাজে ইখলাস ও নিয়্যাত আবশ্যক
মহান আল্লাহ বলেনঃ ‘আর তাদেরকে এই মর্মে আদেশ করা হয়েছে যে, তারা যেন আল্লাহর দ্বীনের প্রতি একনিষ্ট হয়ে কেবল তাঁরই বন্দেগী করে; আর তারা যেন (একাগ্রচিত্তে) নামাজ কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে আর এটাই হলো সঠিক ও সুদৃঢ় বিধান।’ (সূরা বাইয়েন্যাহঃ ৫) وَقالَ تَعَالَى : (( لَنْ يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلا دِمَاؤُهَا وَلَكِنْ يَنَالُهُ التَّقْوَى مِنْكُمْ )) - الحج : 37 তিনি আরো বলেনঃ তোমাদের (কুরবানীর পশুর) গোশত ও রক্ত কোনটাই আল্লাহর নিকট পৌঁছে না, তাঁর নিকটে পৌঁছে শুধু তোমাদের পরহেজগারী। (সূরা হজ্বঃ ৩৭) وَقالَ تَعَالَى : (( قُلْ إِنْ تُخْفُوا مَا فِي صُدُورِكُمْ أَوْ تُبْدُوهُ يَعْلَمْهُ اللَّهُ )) - آل عمران : 29 তিনি আরো বলেনঃ হে নবী! লোকদেরকে বলে দাও, তোমরা কোন বিষয় মনে গোপন রাখো কিংবা প্রকাশ করো, তা সবই আল্লাহ জানেন। (সূরা আলে-ইমরানঃ ২৯)
1- وعن أمير المؤمِنين أبي حَفْصٍ عمرَ بنِ الخطابِ بنِ نُفَيْلِ بنِ عبدِ العُزّى بن رياحِ بنِ عبدِ اللهِ بن قُرْطِ بن رَزاحِ بنِ عدِي بنِ كعب بنِ لُؤَيِّ بنِ غالبٍ القُرشِيِّ العَدويِّ صلى الله عليه وسلم، قالَ : سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم ، يقُولُ : (( إنّمَا الأَعْمَالُ بالنِّيّاتِ ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امرِىءٍ مَا نَوَى ، فَمَنْ كَانَتْ هجرته إلى الله ورسوله ، فهجرته إلى الله ورسوله ، ومن كانت هِجْرَتُهُ لِدُنْيَا يُصيبُهَا ، أَوْ امْرَأَةٍ يَنْكَحُهَا ، فَهِجْرَتُهُ إِلى مَا هَاجَرَ إِلَيْه )) . مُتَّفَقٌ عَلَى صِحَّتِهِ . رَوَاهُ إمَامَا الْمُحَدّثِينَ ، أبُو عَبْدِ الله مُحَمَّدُ بْنُ إسْمَاعيلَ بْن إبراهِيمَ بْن المُغيرَةِ بنِ بَرْدِزْبهْ الجُعْفِيُّ البُخَارِيُّ ، وَأَبُو الحُسَيْنِ مُسْلمُ بْنُ الحَجَّاجِ بْنِ مُسْلمٍ الْقُشَيريُّ النَّيْسَابُورِيُّ رضي اللهُ عنهما فِي صحيحيهما اللَّذَيْنِ هما أَصَحُّ الكُتبِ المصنفةِ .
১. আমীরুল মুমিনীন উমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) বর্ননা করেন, আমি রাসূলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, সকল কাজের প্রতিফল কেবল নিয়্যাতের ওপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক ব্যক্তিই নিয়্যাত অনুসারে তার কাজের প্রতিফল পাবে। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সন্তুষ্টির) জন্য হিজরত করেছে, তার হিজরত আল্লাহ ও রাসূলের সন্তুষ্টির জন্য সম্পন্ন হয়েছে বলে গণ্য করা হবে। পক্ষান্তরে যার হিজরত দুনিয়া হাসিল করা কিংবা কোন নারীকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে সম্পন্ন হবে, তার হিজরত সে লক্ষ্যেই নিবেদিত হবে।
2- وعن أمِّ المؤمِنينَ أمِّ عبدِ اللهِ عائشةَ رضي الله عنها ، قالت : قالَ رسول الله صلى الله عليه وسلم : (( يغْزُو جَيْشٌ الْكَعْبَةَ فإِذَا كَانُوا بِبَيْدَاءَ مِنَ الأَرضِ يُخْسَفُ بِأَوَّلِهِمْ وآخِرِهِمْ )) . قَالَتْ : قلتُ : يَا رَسُولَ اللهِ ،كَيْفَ يُخْسَفُ بأوَّلِهِمْ وَآخِرِهِمْ وَفِيهمْ أسْوَاقُهُمْ وَمَنْ لَيْسَ مِنْهُمْ ؟! قَالَ : (( يُخْسَفُ بِأَوَّلِهِمْ وَآخِرِهِمْ ثُمَّ يُبْعَثُونَ عَلَى نِيّاتِهمْ )) مُتَّفَقٌ عَلَيهِ . هذَا لَفْظُ الْبُخَارِيِّ .
২. উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ একটি সেনাদল কা'বার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আক্রমন চালাতে যাবে। তারা যখন সমতল ভূমিতে পৌঁছবে, তখন তাদেরকে সামনের ও পিছনের সমস্ত লোকসহ ভূমিতে ধ্বসিয়ে দেয়া হবে। হযরত আয়েশা(রা) জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! কিভাবে আগের ও পরের সমস্ত লোকসহ তাদেরকে ধ্বসিয়ে দেয়া হবে? যখন তাদের মধ্যে অনেক শহরবাসী থাকবে এবং অনেকে স্বেচ্ছায় ও সাগ্রহে তাদের সাথে শামিল হবে না? রাসূলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আগের ও পরের সমস্ত লোককেই ভূমিতে ধ্বসিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর লোকদের নিয়্যাত অনুসারে তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে। 3- وعن عائِشةَ رضيَ اللهُ عنها ، قَالَتْ : قَالَ النبي صلى الله عليه وسلم : (( لا هِجْرَةَ بَعْدَ الفَتْحِ ، وَلَكِنْ جِهَادٌ وَنِيَّةٌ ، وَإِذَا اسْتُنْفِرْتُمْ فانْفِرُوا )) مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ .
وَمَعناهُ : لا هِجْرَةَ مِنْ مَكّةَ لأَنَّهَا صَارَتْ دَارَ إسلاَمٍ .
৩. হযরত আয়েশা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মক্কা বিজয়ের পর আর হিজরত করার অবকাশ নেই। তবে জিহাদ ও নিয়্যাত অব্যাহত রয়েছে। তোমাদেরকে যখন জিহাদের জন্য ডাক দেয়া হবে, তখন তোমরা অবশ্যই ঘর থেকে বেরিয়ে পড়বে। (বুখারী ও মুসলিম)
4- وعن أبي عبدِ اللهِ جابر بن عبدِ اللهِ الأنصاريِّ رَضي اللهُ عنهما ، قَالَ : كُنَّا مَعَ النَّبيِّ صلى الله عليه وسلم في غَزَاةٍ ، فَقالَ : (( إِنَّ بالمدِينَةِ لَرِجَالاً ما سِرْتُمْ مَسِيراً ، وَلاَ قَطَعْتُمْ وَادِياً ، إلاَّ كَانُوا مَعَكمْ حَبَسَهُمُ الْمَرَضُ )) . وَفي روَايَة : (( إلاَّ شَرَكُوكُمْ في الأجْرِ )) رواهُ مسلمٌ . ৪. হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ্ আল-আনসারী (রা) বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এক যুদ্ধে শরীক হলাম, তখন তিনি বলেন, মদীনায় এমন কিছু লোক রয়েছে, তোমরা যেখানেই সফর কর এবং যে উপত্যকা অতিক্রম কর, সেখানেই তারা তোমাদের সঙ্গে থাকে। রোগ-ব্যাধি তাদেরকে আটকে রেখেছে। (মুসলিম) অন্য বর্ণনা মতে, তারা সওয়াবে তোমাদের সাথেই শরীক থাকবে। ইমাম বুখারী এই হাদীসটি হযরত আনাস (রা) থেকে এভাবে বর্ননা করেছেন। তিনি বলেনঃ আমরা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে তাবুক যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পর তিনি বলেনঃ আমরা মদীনায় আমাদের পেছনে এমন কিছু লোক রেখে গিয়েছিলাম, আমরা যে গিরিপথ এবং যে ময়দানই অতিক্রম করেছি তারা (যেন) আমাদের সাথেই ছিল। এক ধরনের ওযর তাদেরকে আটকে রেখেছে। 5- وعن أبي يَزيدَ مَعْنِ بنِ يَزيدَ بنِ الأخنسِ رضي الله عنه ، وهو وأبوه وَجَدُّه صحابيُّون ، قَالَ : كَانَ أبي يَزيدُ أخْرَجَ دَنَانِيرَ يَتَصَدَّقُ بِهَا ، فَوَضعَهَا عِنْدَ رَجُلٍ في الْمَسْجِدِ ، فَجِئْتُ فأَخذْتُها فَأَتَيْتُهُ بِهَا . فقالَ : واللهِ ، مَا إيَّاكَ أرَدْتُ ، فَخَاصَمْتُهُ إِلى رسولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم ، فقَالَ : (( لكَ مَا نَوَيْتَ يَا يزيدُ ، ولَكَ ما أخَذْتَ يَا مَعْنُ )) رواهُ البخاريُّ . ৫. হযরত মা’ন ইবনে ইয়াযিদ ইবনে আখ্নাস রাদিয়াল্লাহু আনহুম বর্ণনা করেনঃ (মা’ন, তার পিতা, দাদা সবাই সাহাবী ছিলেন) আমার পিতা ইয়াজিদ সদকা করার জন্য (স্বর্ন মুদ্রা) বের করলেন এবং মসজিদে গিয়ে এক ব্যক্তিকে তা দিয়ে দিলেন। আমি লোকটির কাছ থেকে তা ফেরত নিয়ে আমার পিতার কাছে চলে এলাম। আমার পিতা বললেনঃ আল্লাহর কসম! এটা তো আমি তোমাকে দেয়ার মনস্থ করিনি। এরপর আমরা এ বিষয়টাকে রাসূলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পেশ করলাম। তিনি বলেনঃ হে ইয়াজিদ! তুমি তোমার নিয়্যাতে সওয়াব পেয়ে গেছো আর হে মা’ন! তুমি যে মাল নিয়েছো, তা তোমারই। (বুখারী)
6- وعن أبي إسحاقَ سَعدِ بنِ أبي وَقَّاصٍ مالِكِ بنِ أُهَيْب بنِ عبدِ منافِ بنِ زُهرَةَ بنِ كلابِ بنِ مُرَّةَ بنِ كعبِ بنِ لُؤيٍّ القُرشِيِّ الزُّهريِّ رضي الله عنه ، أَحَدِ العَشَرَةِ المشهودِ لهم بالجنةِ رضي الله عنه ، قَالَ : جاءنِي رسولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَعُودُنِي عَامَ حَجَّةِ الوَدَاعِ مِنْ وَجَعٍ اشْتَدَّ بي ، فقُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ ، إنِّي قَدْ بَلَغَ بي مِنَ الوَجَعِ مَا تَرَى ، وَأَنَا ذُو مالٍ وَلا يَرِثُني إلا ابْنَةٌ لي ، أفأَتَصَدَّقُ بِثُلُثَيْ مَالِي ؟ قَالَ : (( لا )) ، قُلْتُ : فالشَّطْرُ يَا رَسُولَ اللهِ ؟ فقَالَ : (( لا )) ، قُلْتُ : فالثُّلُثُ يَا رَسُولَ اللهِ ؟ قَالَ : (( الثُّلُثُ والثُّلُثُ كَثيرٌ - أَوْ كبيرٌ - إنَّكَ إنْ تَذَرْ وَرَثَتَكَ أغنِيَاءَ خيرٌ مِنْ أنْ تَذَرَهُمْ عَالَةً يتكفَّفُونَ النَّاسَ ، وَإنَّكَ لَنْ تُنفِقَ نَفَقَةً تَبْتَغي بِهَا وَجهَ اللهِ إلاَّ أُجِرْتَ عَلَيْهَا حَتَّى مَا تَجْعَلُ في فِيِّ امْرَأَتِكَ )) ، قَالَ : فَقُلتُ : يَا رسولَ اللهِ ، أُخلَّفُ بعدَ أصْحَابي ؟ قَالَ : (( إِنَّكَ لَنْ تُخَلَّفَ فَتَعملَ عَمَلاً تَبتَغي بِهِ وَجْهَ اللهِ إلاَّ ازْدَدتَ بِهِ دَرَجةً ورِفعَةً ، وَلَعلَّكَ أنْ تُخَلَّفَ حَتّى يَنتَفِعَ بِكَ أقْوَامٌ وَيُضَرَّ بِكَ آخرونَ . اللَّهُمَّ أَمْضِ لأصْحَابي هِجْرَتَهُمْ ولاَ تَرُدَّهُمْ عَلَى أعقَابهمْ ، لكنِ البَائِسُ سَعدُ بْنُ خَوْلَةَ )) يَرْثي لَهُ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أنْ ماتَ بمَكَّة . مُتَّفَقٌ عليهِ . ৬. হযরত আবু ইসহাক সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্আস (রা) বর্ননা করেনঃ আমি বিদায় হজ্জের বছরে খুব কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লে রাসূলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার খোঁজ খবর নিতে এলেন। আমি নিবেদন করলামঃ হে আল্লাহর রসূল! আমার রোগের তীব্রতা আপনি লক্ষ্য করছেন। আমি অনেক ধন-মালের অধিকারী। কিন্তু আমার উত্তরাধিকারী শুধুমাত্র আমার মেয়েই। এমতাবস্থায় আমি কি আমার সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ সদকা করে দিতে পারি? রাসূলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘না’। আমি নিবেদন করলামঃ ‘তাহলে অর্ধেক পরিমাণ (দান করে দেই)? তিনি বলেনঃ না। আমি পুনরায় নিবেদন করলামঃ ‘তাহলে এক তৃতীয়াংশ (দান করে দেই)? তিনি বলেনঃ ‘হাঁ’, এক -তৃতীয়াংশ দান করতে পার।’ অবশ্য এটাও অনেক বেশি অথবা বড়। তোমাদের উত্তরাধিকারীগণকে একেবারে নিঃস্ব অবস্থায় না রেখে তাদেরকে বিত্তবান অবস্থায় রেখে যাওয়াই শ্রেয়, যেন তাদেরকে মানুষের সামনে হাত পাততে না হয়। তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যা কিছুই ব্যয় করবে, এমনকি তোমার স্ত্রীর মুখে যে খাবার তুলে দিবে, তার সবকিছুরই সওয়াব (প্রতিদান) তোমাকে দেয়া হবে। এরপর আমি (বর্ননাকারী আবু ইসহাক) বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমার সঙ্গী সাথীগণের (মদীনায়) চলে যাবার পর আমি কি পেছনে (মক্কায়) থেকে যাবো? তিনি বললেনঃ পিছনে থেকে গেলে তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে কাজই করবে, তাতে তোমার সম্মান ও মর্যাদা অত্যন্ত বেড়ে যাবে। আশা করা যায়, তুমি দীর্ঘ জীবন লাভ করবে। ফলে কিছু লোক তোমার দ্বারা উপকৃত হবে, আবার অন্য কিছু লোক তোমার দ্বারা কষ্ট পাবে। হে আল্লাহ! আমার সাহাবীদের হিজরত পূর্ণ করে দাও এবং তাদেরকে ব্যর্থতার কবল থেকে রক্ষা কর। তবে সা’দ ইবনে খাওলা যথার্থই কৃপার পাত্র। মক্কায় তাঁর মৃত্যু ঘটলে রাসূলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মর্মে সমবেদনা জ্ঞাপন করেন যে, তিনি হিজরতের সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হন। [বুখারী: ১/২২(৫৬) ও মুসলিম: ৫/৭১(১৬২৮)(৫)]
7- وعنْ أبي هريرةَ عبدِ الرحمانِ بنِ صخرٍ رضي الله عنه ، قَالَ : قَالَ رَسُوله صلى الله عليه وسلم : (( إنَّ الله لا ينْظُرُ إِلى أجْسَامِكُمْ ، ولا إِلى صُوَرِكمْ ، وَلَكن ينْظُرُ إلى قُلُوبِكمْ وأعمالكم )) .
৭. হযরত আবু হুরায়রা (রা) বর্ননা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, আল্লাহ তা’আলা তোমাদের চেহারা ও দেহের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন না; বরং তোমাদের অন্তর ও কর্মের প্রতি লক্ষ্য আরোপ করেন।
8- وعن أبي موسى عبدِ اللهِ بنِ قيسٍ الأشعريِّ رضي الله عنه ، قَالَ : سُئِلَ رسولُ الله صلى الله عليه وسلم عَنِ الرَّجُلِ يُقاتلُ شَجَاعَةً ، ويُقَاتِلُ حَمِيَّةً، ويُقَاتِلُ رِيَاءً، أَيُّ ذلِكَ في سبيلِ الله ؟ فقال رَسُول الله صلى الله عليه وسلم : (( مَنْ قَاتَلَ لِتَكونَ كَلِمَةُ اللهِ هي العُلْيَا ، فَهوَ في سبيلِ اللهِ ))
৮. হযরত আবু মুসা আশ’আরী (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞস করা হলোঃ এক ব্যক্তি শৌর্য-বীর্য প্রদর্শনের জন্য, এক ব্যক্তি আত্ম-গৌরব ও বংশীয় মর্যাদার জন্য এবং অপর এক ব্যক্তি লোক দেখানোর জন্য লড়াই করে। এদের মধ্যে কে আল্লাহর পথে জিহাদ করে? রাসূলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি কেবল আল্লাহর কালেমাকে বুলন্দ করার জন্য লড়াই করে সে-ই আল্লাহর পথে রয়েছেন।
9- وعن أبي بَكرَةَ نُفيع بنِ الحارثِ الثقفيِّ رضي الله عنه : أَنَّ النَّبيَّ صلى الله عليه وسلم ، قَالَ : (( إِذَا التَقَى المُسلِمَان بسَيْفَيهِمَا فالقَاتِلُ وَالمَقْتُولُ في النّارِ )) قُلتُ : يا رَسُولَ اللهِ ، هذا القَاتِلُ فَمَا بَالُ المقْتُولِ ؟ قَالَ : (( إنَّهُ كَانَ حَريصاً عَلَى قتلِ صَاحِبهِ )) مُتَّفَقٌ عليهِ .
৯. হযরত আবু বাকরাহ নুফাই’ ইবনে হারিস সাকাফী (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন দু’জন মুসলমান তরবারী কোষমুক্ত করে পরস্পর লড়াইয়ে লিপ্ত হয়, তখন হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়েই জাহান্নামের যোগ্য হয়ে যায়। আমি নিবেদন করলাম; হে আল্লাহর রাসূল! হত্যাকারীর জাহান্নামের হকদার হওয়াটাতো বুঝলাম; কিন্তু নিহত ব্যক্তির জাহান্নামী হওয়ার কারণটা কী? রাসূলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ কারণটা হলো এই যে, সে তো তার প্রতিপক্ষকে হত্যা করতে চেয়েছিল।
10- وعن أبي هريرةَ رضي الله عنه ، قَالَ : قالَ رَسُول الله صلى الله عليه وسلم : (( صَلاةُ الرَّجلِ في جمَاعَةٍ تَزيدُ عَلَى صَلاتهِ في سُوقِهِ وبيتهِ بضْعاً(1) وعِشرِينَ دَرَجَةً ، وَذَلِكَ أنَّ أَحدَهُمْ إِذَا تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الوُضوءَ ، ثُمَّ أَتَى المَسْجِدَ لا يُرِيدُ إلاَّ الصَّلاةَ ، لاَ يَنْهَزُهُ إِلاَّ الصَلاةُ : لَمْ يَخْطُ خُطْوَةً إِلاَّ رُفِعَ لَهُ بِهَا دَرجَةٌ ، وَحُطَّ عَنْهُ بها خَطِيئَةٌ حَتَّى يَدْخُلَ المَسْجِدَ ، فإِذا دَخَلَ المَسْجِدَ كَانَ في الصَّلاةِ مَا كَانَتِ الصَّلاةُ هِي تَحْبِسُهُ ، وَالمَلائِكَةُ يُصَلُّونَ عَلَى أَحَدِكُمْ مَا دَامَ في مَجْلِسِهِ الَّذِي صَلَّى فِيهِ ، يَقُولُونَ : اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ ، اللَّهُمَّ تُبْ عَلَيهِ ، مَا لَم يُؤْذِ فيه ، مَا لَمْ يُحْدِثْ فِيهِ )) . مُتَّفَقٌ عليه ، وهذا لفظ مسلم .
১০. হযরত আবু হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ পুরুষদের পক্ষে জামা’য়াতে নামায আদায় করার সওয়াব তার ঘরে ও বাজারে নামাজ পড়ার চেয়ে পঁচিশ গুন বেশি। এই কারণে যে, কোন ব্যক্তি যখন খুব ভালভাবে ওযু করে নামাজের উদ্দেশ্যে মসজিদে গমন করে এবং নামাজ ছাড়া তার মনে আর কোন উদ্দেশ্য থাকে না, তখন মসজিদে প্রবেশ না করা পর্যন্ত তার প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে তার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং তার একটি গোনাহ্ মাফ হয়ে যায়। মসজিদে প্রবেশ করে যতক্ষণ পর্যন্ত সে নামাযের অপেক্ষায় বসে থাকে, ততক্ষণ সে নামাযের অনুরূপ সওয়াবই পেতে থাকে। আর যে ব্যক্তি নামায আদায়ের পর কাউকে কষ্ট না দিয়ে অযুসহ মসজিদে অবস্থান করে, ততক্ষণ ফেরেশতারা তার মার্জনার জন্য এই বলে দোয়া করতে থাকেঃ হে আল্লাহ! একে তুমি ক্ষমা করে দাও; হে আল্লাহ এর তওবা কবুল কর; হে আল্লাহ! এর প্রতি তুমি দয়া প্রদর্শন কর।
11- وعن أبي العبَّاسِ عبدِ اللهِ بنِ عباسِ بنِ عبد المطلب رضِيَ اللهُ عنهما ، عن رَسُول الله صلى الله عليه وسلم ، فيما يروي عن ربهِ ، تباركَ وتعالى ، قَالَ : (( إنَّ اللهَ كَتَبَ الحَسَنَاتِ والسَّيِّئَاتِ ثُمَّ بَيَّنَ ذلِكَ ، فَمَنْ هَمَّ (1) بحَسَنَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كَتَبَها اللهُ تَبَارَكَ وتَعَالى عِنْدَهُ حَسَنَةً كامِلَةً ،وَإنْ هَمَّ بهَا فَعَمِلَهَا كَتَبَهَا اللهُ عَشْرَ حَسَناتٍ إِلى سَبْعمئةِ ضِعْفٍ إِلى أَضعَافٍ كَثيرةٍ ، وإنْ هَمَّ بِسَيِّئَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كَتَبَهَا اللهُ تَعَالَى عِنْدَهُ حَسَنَةً كَامِلةً ، وَإنْ هَمَّ بِهَا فَعَمِلَهَا كَتَبَهَا اللهُ سَيِّئَةً وَاحِدَةً )) مُتَّفَقٌ عليهِ .
১১. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) বর্ননা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মহিমান্বত প্রভূর সূত্রে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা সৎ কাজ ও পাপ কাজে সীমা চিহ্নিত করে দিয়েছেন এবং সেগুলোর বৈশিষ্ট্য স্পষ্টভাবে বিবৃত করেছেন। অতএব, যে ব্যক্তি কোন সৎ কাজে সংকল্প ব্যক্ত করেও এখন পর্যন্ত তা সম্পাদন করতে পারেনি, আল্লাহ তার আমলনামায় একটি পূর্ণ নেকি লিপিবদ্ধ করার আদেশ দেন। আর সংকল্প পোষণের পর যদি উক্ত কাজটি সম্পাদন করা হয়, তাহলে আল্লাহ তার আমলনামায় দশটি নেকী থেকে শুরু করে সাত'শ, এমনকি তার চেয়েও কয়েকগুন বেশি নেকী লিপিবদ্ধ করে দেন। আর যদি সে কোন পাপ কাজের ইচ্ছা পোষণ করেও তা সম্পাদন না করে, তবে আল্লাহ তার বিনিময়ে তার আমলনামায় একটি পূর্ণ নেকী লিপিবদ্ধ করেন। আর যদি ইচ্ছা পোষনের পর সেই খারাপ কাজটি সে করেই ফেলে, তাহলে আল্লাহ তার আমলনামায় শুধু একটি পাপই লিখে রাখেন।
12- وعن أبي عبد الرحمان عبدِ الله بنِ عمرَ بن الخطابِ رضيَ اللهُ عنهما ، قَالَ : سمعتُ رسولَ الله صلى الله عليه وسلم ، يقول : (( انطَلَقَ ثَلاثَةُ نَفَرٍ مِمَّنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حَتَّى آوَاهُمُ المَبيتُ إِلى غَارٍ فَدَخلُوهُ، فانْحَدرَتْ صَخْرَةٌ مِنَ الجَبَلِ فَسَدَّتْ عَلَيْهِمُ الغَارَ ، فَقالُوا : إِنَّهُ لاَ يُنْجِيكُمْ مِنْ هذِهِ الصَّخْرَةِ إِلاَّ أنْ تَدْعُوا اللهَ بصَالِحِ أعْمَالِكُمْ .
১২. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) বর্ণনা করেন, আমি রাসূলে আকরাম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ পুর্বেকার যুগে তিন ব্যক্তি কোথাও যাচ্ছিল। পথিমধ্যে বৃষ্টি এসে পড়ল। তারা রাত কাটনোর জন্য একটি পর্বত গুহায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হলো। কিন্তু তারা গুহায় প্রবেশ করার সাথে সাথে একটি পাথর খণ্ড গড়িয়ে এসে গুহার মুখ বন্ধ করে দিল। তারা স্থির করল যে, তাদের নেক আমলকে অসীলা বানিয়ে আল্লাহর কাছে দো’আ করলে এই কঠিন বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। তাদের একজন দোয়া করলঃ হে আল্লাহ! আমার পিতা-মাতা অত্যন্ত বৃদ্ধ, আমি আমার পরিবার-পরিজনের আগেই তাদেরকে দুধ পান করাতাম। একদিন আমায় জ্বালানী কাঠের সন্ধানে অনেক দূরে যেতে হলো। আমি যখন রাতে বাড়ি ফিরে এলাম, তখন আমার পিতা-মাতা ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। আমি দুধ নিয়ে যথারীতি তাদের কাছে গিয়ে দেখি, তারা ঘুমিয়ে পড়েছেন। তাদেরকে জাগিয়ে তোলা আমি সমীচীন মনে করলাম না। আবার তাদের খাওয়ার পূর্বেই পরিবারের লোকদের দুধ পান করানোও সঙ্গত মনে হলো না। আমি দুধের পেয়ালা হাতে নিয়ে রাতভর পিতা-মাতার কাছে দাঁড়িয়ে রইলাম। তাদেরকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলা আমি সঙ্গত মনে করলাম না। এদিকে বাচ্চারা আমার পায়ের কাছে বসে ক্ষুধায় কাঁদছিল। এই অবস্থায় সকাল হয়ে গেল এবং তারা ঘুম থেকে জেগে উঠলেন। আমি তাদরেকে দুধ পান করালাম। হে আল্লাহ! আমি যদি এ কাজটি তোমার সন্তুষ্টির জন্য করে থাকি, তাহলে আমার ওপর থেকে পাথরের এই বিপদ দূর করে দাও। এতে পাথর খণ্ড কিছুটা দূরে সরে গেল বটে, কিন্তু গুহা থেকে কেউ বেরিয়ে আসতে পারল না।
|
|
সর্বশেষ আপডেট ( Friday, 28 September 2012 ) |